নারীর জীবন সংগ্রাম---পরমা
নারীর জীবন সংগ্রাম---পরমা
স্বামী-স্ত্রী আর দুই সন্তান এই চারজন সদস্যের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে হাসিখুশি এক ছোট সুখী পরিবার।উপার্জন বলতে তেমন কিছুই নয়,দৈনতা যাদের নৃত্যদিনের সঙ্গী,তবুও এই দুঃখের সংসারে খাদ্য আর প্রসাধনীর অভাব থাকলেও সুখ শান্তির কোন অভাব ছিল না।পরিবারের সকলেই মিলেমিশে সমস্ত দুঃখ কষ্ট একসঙ্গে ভাগ করে নিতো,বেশ মজাতেই দিন কাটছিল ওদের।এই পরিবারের প্রধান কর্তা হলেন তমাল বাবু।যিনি একটা ছোটখাটো কাজ করে কোনরকমে সকলের পেটে খাদ্যের যোগান দেন।চার জনের এই সুখী সংসারে হটাৎ করেই একদিন স্বামী সন্তান হীন,বিষয় সর্বস্ব হারিয়ে হাজির হন তমাল বাবুর বড় দিদি রমলা দেবী।যিনি ছিলেন কূটনীতিতে সুনিপুনা,বিষবৃক্ষের মত সংসারের গভীরে যার বিষাক্ত শেকড় ব্যাপ্ত করাই ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য।এই দারিদ্রের সংসারে রমলা দেবী একপ্রকার অযাচিত বোঝা স্বরূপ যার ভার সহ্য করা তো তমাল বাবুর পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য কিন্তু কাঁধ থেকে নামানোও ওতো সহজ নয়।অগত্যা রমলা দেবী এই সংসারে চির স্থায়িত্ব লাভ করেন।
ভাই বোন আর পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে এই ভালোবাসার অটুট বন্ধন দেখে ঈর্ষায় জ্বলতে থাকেন রমলা দেবী।কি করে এই সুখী সংসারে চির ধরানো যায় তাই নিয়েই দিনরাত নিজের কুমন্ত্রনার জাল বুনতে থাকেন।উপার্জন বলতে ওই তমাল বাবুর সামান্য কিছু অর্থ যা দিয়ে এই পরিবারের সদস্যদের কোনরকমে দুবেলা দুটো অন্ন জুটে যায়।তমাল বাবুর কন্যা অত্যন্ত মেধাবী এক ছাত্রী,অনেক কষ্ট করে সে তার পড়াশুনা চালিয়ে যায়।তমাল বাবুর স্ত্রী লতা দেবী স্বামীকে অর্থনৈতিক ভাবে কিছু সাহায্য করবার জন্য স্থানীয় এক হস্ত শিল্পের কারখানায় যোগ দেন।মাসিক বেতন খুব বেশি না হলেও ছেলে মেয়ের পড়ার খরচটা কোনরকমে সামলে নিতে পারেন।রমলা দেবী বাঁধ সাধেন মেয়েটির পড়া চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে।
একদিন রাতে খাবার সময় তমাল বাবুর পাশে বসে মন্ত্রণা চালাতে থাকেন রমলা দেবী,বলেন," এত খরচা করে মেয়েকে পড়িয়ে কি হবে?সেই তো একদিন পরের সংসারে যেতেই হবে স্বামীর ঘর আর সন্তান প্রতিপালন করতে,বলি মেয়ে মানুষের ওত পড়ে কাজ নেই,তোর সংসারে একমাত্র আশার প্রদীপ,ওই শিব রাত্রির সলতে তো তোর ছেলে,তুই বরং ওর বিয়ে দিয়ে ওকে সংসারী কর," কুমিরের কান্না কেঁদে আড়চোখে তমাল বাবুর দিকে তাকিয়ে আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে থাকেন।রমলা দেবীর এই সমস্ত কথা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শুনছিল পরমা,যে কষ্ট সহ্য করবে তবুও মুখ ফুটে কখনও কিছু বলবে না।প্রচন্ড কষ্টে বুক ফেটে যেতে থাকে পরমার,দৌড়ে যায় নিজের ঘরে।ওর পিসিমনি যে ওর সমস্ত স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করার পরিকল্পনা করেছে।কি করবে পরমা,যে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে অর্থাৎ উপার্জন করে এই পরিবারের উন্নতি করতে চায়,সমস্ত দুঃখের অবসান ঘটিয়ে সকলের মুখে হাসি ফোটাতে চায়।তা কি আর পূর্ণ হবে না,রয়ে যাবে শুধু স্বপ্ন হয়ে,ঢুকরে কেঁদে ওঠে পরমা।
কুপরামর্শ এমন একটা বীজ যা দীর্ঘ দিন কারোর মস্তিষ্কে বপন করার চেষ্টা করতে থাকলে অবশেষে তা মস্তিষ্কের মৃত্তিকায় অঙ্কুরিত হতে বাধ্য।তমাল বাবুর অবস্থাও ঠিক সেইরকম,কুপরামর্শের ফসল স্বরূপ সংসারের চাপ তথা সদস্য সংখ্যা কমাতে পরমার বিবাহ দেবেন ঠিক করেন।তমাল বাবুর এই সিদ্ধান্তে মিতা দেবী অমত প্রকাশ করলেও তমাল বাবু তা অগ্রাহ্য করেন।সামনেই পরমার স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা তমাল বাবু এই শর্তে পরমাকে পরীক্ষা দিতে অনুমতি দেন যে এর পরেই তাকে বিয়ে করে শ্বশুর গৃহে যেতে হবে।পরমা বাধ্য মেয়ের মত বাবার কথায় সম্মতি জানিয়ে নিজের ঘরের দিকে যায়।মিতা দেবী আর কি করবেন,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ের প্রতি এই অন্যায় বিনা প্রতিবাদে মেনে নেবেন,এছাড়া আর কোন পথ তো তার সামনে খোলা নেই।
কোন একটা দরকারে পরমার ঘরে এসে রমলা দেবী দেখেন পরমা জানালার পাশে বসে দূর পানে নীল আকাশের দিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এগিয়ে যান রমলা দেবী, বলেন," মেয়ে মানুষের ওতো শখ কেন বাবু,পড়াশুনা করে বিদ্যাধরি হবে,হুমম,ঢঙ! একেই সংসার চলে না তার ওপর আমার ভাইয়ের ঘাড়ে আর কতদিন বোঝা হয়ে থাকবি,তার থেকে বরং ঘাড় থেকে নেমে বিদেয় হ তো বাপু,আমার ভাই টা একটু শান্তি পাক।" মুখ বাঁকিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গি করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে যান রমলা দেবী।পরমা আর সহ্য করতে পারে না,যে মেয়ের বুক ফাটে কিন্তু মুখ ফোটে না,সে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না,অঝোরে কাঁদতে থাকে।নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে,মেয়ে হয়ে জন্মান কি অপরাধ,মেয়েরা কি সংসারে এতই বোঝা,যে তার কোন চাওয়া-পাওয়া থাকবে না,না কোন আশা- আকাঙ্খা,সবসময় শুধু তাদেরই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে,আর এই পুরুষ শাসিত সমাজ যুগের পর যুগ ধরে তাদের হাড়িকাঠে ঝোলাবে,আর তাদের ইন্ধন দেবে মেয়েদেরই শত্রু এই রমলা দেবীর মত মহিলারা,যারা মেয়ে হয়ে মেয়েদের মর্য্যাদা কি ভাবে করতে হয়,সেটা জানে না।
বাড়িতে এক থমথমে বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।ছোট ছোট জিনিস নিয়ে দুই ভাই বোনের মধ্যে যে হাসি,মজা,খুনসুটি চলতো তাতে এখন ছেদ পড়েছে,দিদির ফ্যাকাশে মুখের দিকে তাকিয়ে ছোট ভাই আর সেই কষ্ট সহ্য করতে পারে না,বলে," এই পিসিমনিকে না,মনে হয় এক্ষুনি বাড়ি পাঠিয়ে দিই,আমাদের সুখের সংসারে পুরো আগুন লাগিয়ে দিলো,তোর জীবনটা পুরো নরক বানিয়ে দিলো রে দিদি।" একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে পরমা ওর ভাই পঙ্কজের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে," গরিবের ওতো স্বপ্ন দেখতে নেই রে ভাই,বিশেষ করে মেয়েদের,পরিবারের জন্য কিছু করা,সেটা বোধহয় আমার দ্বারা আর হবে না।"দুগাল বেয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে পরমার।গরিব ঘরের মেধাবী ছাত্রী হওয়া যে কতবড় অভিশাপ বিশেষ করে সফলতার উচ্চ শিখরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবার স্বপ্ন দেখা,তা এই হার হাভাতে ঘরের মেয়েদের একদম মানায় না।সামনেই ওর ফাইনাল পরীক্ষা,সেইমত প্রস্তুতি নিলেও মানসিক অবস্থা বিশেষ ভালো নয় পরমার।জীবনের স্বপ্নগুলোকে সাকার করতে না পারার এক তীব্র যন্ত্রনা কুঁড়ে কুঁড়ে খায় ওর হৃদয়কে,বেদনা অনুভব করতে থাকে।
রমলা দেবীর উদ্যোগে তমাল বাবু পরমার বিয়ের জন্য পাত্র দেখার তোড়জোড় শুরু করেন,সেইমত এক পাত্রের সঙ্গে ওর বিয়ের সমস্ত পাকা কথা সম্পূর্ণ হয়।পরীক্ষা সমাপ্ত হলেই বিবাহের দিন স্থির করা হবে।পরমার নিজের ভাগ্যকে দুষতে থাকে,নিজেকে অসহায় বোধ হয় ,সমস্ত শক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে কিন্তু তমাল বাবুর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা পরমা কিছুতেই করতে পারবে না,সব কিছু বিনা বাক্য ব্যয় করে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই।পরীক্ষা সমাপ্ত হলে,পরমার মনে এক শঙ্কার আবির্ভাব হয়,যে এবার ওর জীবনের সেই কঠিন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।বিয়ে নামক এক সাংসারিক শৃঙ্খলে সে আবদ্ধ হতে চলেছে,যেখানে স্বামী,সন্তান প্রতিপালনের মধ্যে দিয়েই নারী জীবনের সীমাবদ্ধতা,তার বাইরে গিয়ে কোনকিছু করার অধিকার ওর সীমিত।অসহ্য কষ্ট বুকে নিয়েও যে মেয়েটার মুখ থেকে কখনও টু শব্দটি নির্গত হত না,সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না,অঝোরে কাঁদতে থাকে।
পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে ভালো ফল করে পরমা,বাবা-মা তথা পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করে।মুখে একটা প্রসন্নতার হাসি এনে তমাল বাবুর চরণ স্পর্শ করে আশীর্বাদ নেয় পরমা,আর এক বর প্রাপ্তির আশায় চেয়ে থাকে বাবার মুখ পানে।তমাল বাবু কিছু জিজ্ঞেস করলে পরমা মনে সাহস নিয়ে বলে ওঠে," বাবা! বলছিলাম,আর একবার ভেবে দেখলে হত না,আমি আরও পড়াশুনা করতে চাই,নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই,তোমাদের পাশে দাঁড়িয়ে তোমাদের পায়ে পা মিলিয়ে এই সংসারকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে চাই,একটু কি সুযোগ দেওয়া যায় না বাবা,"পরমার কথায় তমাল বাবুর পিতৃ হৃদয়ে কিছুটা মেয়ের জন্য স্নেহের উদ্রেক হতেই তিনি কিছু বলতে যাবেন,তার আগেই রমলা দেবী পরমার উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন,"উমমম! আরও পড়তে চায়,কত শখ,বলি মেয়ে মানুষের ওত পড়ে হবে কি শুনি,সেই তো স্বামীর ঘর করতে হবে,আর বাবার কাঁধ থেকে নামতে ইচ্ছে করছে না বুঝি,যা এখান থেকে,যা!"তর্জনী তুলে চক্ষু বিস্ফারিত করে বলেন রমলা দেবী।পরমা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না,রমলা দেবীর এই অপমানের তীর্যক বাক্যবান ওর অন্তরকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে থাকে,তমাল বাবুর দিকে অশ্রুপূর্ন নয়নে তাকিয়ে দৌড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে চলে যায়।এসব এতক্ষন দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন মিতা দেবী,মেয়ের দুঃখে মায়ের অন্তর বেদনাহত হতে থাকে,খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে চলে যান।
আর কয়েক দিন পরেই পরমার বিয়ে,তাই বিয়ের যৌতুক সামগ্রী প্রদান করার জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন তা জোগাড় করতে স্বামী -স্ত্রী অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকেন।তমাল বাবুর সামান্য রোজগার আর মিতা দেবীর যা উপার্জন তা দিয়ে বিবাহের মত এত বড় একটা অনুষ্ঠান কিছুতেই নিষ্পন্ন হতে পারে না।সংসারের ভার কমানোর জন্য তমাল বাবু যে পথ অবলম্বন করেছেন তা নিতান্তই সহজ নয়,একেতেই আর্থিক টানাপোড়েন,তার মধ্যে পরমার বিয়ে আসন্ন এই নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না তমাল বাবুর।একদিন কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে তমাল বাবু অসুস্থ হয়ে পড়লে,পথযাত্রীদের সহায়তায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয় তমাল বাবুকে।ডাক্তার পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে দীর্ঘ দিন দুশ্চিন্তা ও সঠিক আহারাদি গ্রহণ না করায় শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন তমাল বাবু,এখন বেশ কিছুদিন সঠিক পথ্য, সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম প্রয়োজন,নচেৎ ওনার প্রাণহানির শঙ্কা প্রবল।এই সংবাদ শোনা মাত্র কান্না ও দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েন মিতা দেবী,সংসারে এই দৈনদশা তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পরিবর্তে আরও এক মহা সংকট নেমে এসেছে ওদের সংসারে,এখন এর থেকে উদ্ধারের পথ কি? এমন সময় কাঁধে কারোর স্পর্শ পেতেই তাকিয়ে দেখেন পরমা,চোখের ইশারায় মিতা দেবীকে আস্বস্ত করে বলে," ভয় নেই,আমিতো আছি,তুমি কিছু চিন্তা করো না মা।"
মিতা দেবী যেন ধরে প্রাণ ফিরে পান,মৃদু হেসে সেখান থেকে দুজনে মিলে প্রস্থান করেন।এদিকে যৌতুকের সমস্ত জোগাড় ঠিক মত করে উঠতে না পারায়,পরমার বিয়েটা ভেঙে দেন মিতা দেবী নিজের হাতে,আর রমলা দেবীর কথা অমান্য করে স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে পরমাকে পরবর্তি ক্লাসে ভর্তি করে দেন।পুনরায় পড়ার সুযোগ পেয়ে পরমা তার অপপ্রয়োগ না করেই একাগ্র চিত্তে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়ে তা পূর্ন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ে।নিজের ও ভাইয়ের পড়ার পাশাপাশি যাতে মিতা দেবীকেও সংসারে কিছু আর্থিক সাহায্য করতে পারে তার জন্য নিজের পড়াশুনার ফাঁকে প্রচুর টিউশন পড়াতে থাকে।
মা আর মেয়ের যৌথ উদ্যোগে বেশ ভালো মতোই কেটে যাচ্ছিল ওদের দিন গুলো।তমাল বাবুর সেবা শুশ্রূষারও কোন খামতি রাখেনি পরমা,বাবাকে সুস্থ করতে যা যা করণীয় তা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে সে।এভাবেই বছর গড়িয়ে পরমা তার পড়াশুনা কমপ্লিট করে এক উচ্চ পদস্থ সরকারি চাকুরী লাভ করে।জীবনে ওর উদ্দেশ্য পূর্ন হয়।নিজেকে প্রতিষ্টিত করবার যে দৃহ প্রত্যয় ছিল ওর মধ্যে সেই অভিস্ট সিদ্ধ হয়।আনন্দে অশ্রুপূর্ন হয়ে ওঠে ওর নয়ন।দরিদ্রের সংসারে মেয়ে হয়ে জন্মানোর যে যন্ত্রনা ওকে তিলে তিলে সহ্য করতে হয়েছে,আজ সেই যন্ত্রণার সমাপ্তি ঘটেছে।উপযুক্ত কন্যা হয়ে পরমা বাবার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসারের উন্নতি কল্পে সাহায্য করার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
রমলা দেবীকে ভুল প্রমাণ করে পরমা,যে সংসারে কেবলমাত্র ছেলেরাই নয়,মেয়েরাও প্রদীপ শিখার মত উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে আলোকপ্রভা ছড়িয়ে দিতে পারে যদি সে সুযোগ পায়।দারিদ্রতার জন্য জীবনে যা কিছু আশা আকাঙ্খা অপূর্ণ রয়ে গিয়েছিল তা ধীরে ধীরে পূর্ণতা লাভ করে পরমার হাত ধরে।অভাব অনটনের রেশ ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকে।মেয়ের এই উত্থান দেখে তমাল বাবু আত্মগ্লানিতে দগ্ধ হতে থাকেন,নিজের কৃতকর্মের কথা চিন্তা করে মরমে ব্যথিত হতে থাকেন যে কন্যা সন্তান বলে তাকে অবজ্ঞা করে হেলায় এই সংসার থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিলেন।পরমার চোখে চোখ তুলে কি ভাবে তাকাবেন সেই কুন্ঠাবোধ তাকে ঘিরে রেখেছিল।কিন্তু কথায় আছে মেয়েদের মন অত্যন্ত নরম,ভালোবাসার অল্প ছোঁয়ায় সেখানে অবলীলা ক্রমে দাগ কাটা যায়।পরমাও তার ব্যতিক্রম নয়,যে সারাজীবন দুঃখ কষ্টের মধ্যেও মুখে রা কাটেনি পর্যন্ত সে কি করে তার জন্মদাতার প্রতি বিরূপ মনভাব পোষণ করতে পারে।সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলে সবাইকে আপন করে নেওয়ার মধ্যে যে উদারতা,মহত্ব প্রকাশ পায় তা তিরস্কারে কোথায়।তাই সব গ্লানি মুছে সকলকে আকড়ে ধরে সুখী জীবন প্রবাহে প্রবাহিত হতে থাকে পরমা, জীবনের আর এক অধ্যায়ের সূচনা করে।
