স্বাধীনতা
স্বাধীনতা
মা অনেক দিন ধরে তোমাকে একটা কথা বলব ভাবছিলাম। কিন্তু আর বলা হয়ে ওঠেনি।
-কী বলবি বল।
-কয়েকদিন ধরে দেখছি তোমার কাশিটা খুব বেড়েছে। দীপ্তিও বলছিল তোমার এখানে খুব কষ্ট হচ্ছে। এত ছোট ঘর, ঠিক মতো হাওয়া বাতাস ঢোকে না। তুমিও ঠিক মতো আরামে থাকতে পারছ না। আমরাও সারাদিন বাইরেই থাকি। তোমার ঠিক মতো দেখাশোনা করতে পারছিনা। তাই আমি ভাবছিলাম...
-থেমে গেলি কেন? বল কি ভাবছিলিস।
-তোমাকে যদি কোনো বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসি তাহলে তুমি ওখানে আরামে থাকতে পারবে। ওখানে তোমার মতো আরও অনেকে আছে। তোমার ভালোও লাগবে। তুমি তোমার মতো স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করবে। তুমি যাবে মা?
-তুই কিছু চেয়েছিস আর তোর মা তোকে সেটা দেয়নি এরকম তো কোনোদিন হয় নি। আর তুই তো আমাকে স্বাধীনতা দিতে চাইছিস। আমি না কি করে বলি বল। আমি যাব।
-তাহলে কালকেই তোমাকে দিয়ে আসব। তুমি তোমার ব্যাগপত্র সব গুছিয়ে রাখো।
পরেরদিন সকালে ...
-মা, তুমি সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছ তো? আর দেরী করো না তাড়াতাড়ি গাড়িতে ওঠো।
-আমাকে একটা ফোন কিনে দিবি? তাহলে তোদের ফোন করে কথা বলতাম।
-ফোনের দরকার নেই। ওখানে সবকিছুই আছে। তোমার কোনো অসুবিধা হবে না।
-আচ্ছা চল তাহলে।
ঘন্টা দুয়েক পরে একটা তিনতলা বাড়ির সামনে এসে ওদের গাড়িটা থামল। মৈত্রেয়ী দেবী বুঝতে পারছেন না ওনার ছেলে ওনাকে আসলে কোথায় নিয়ে এসেছে।
-মা, গাড়ি থেকে নামো। আমরা এসে গেছি।
-কিন্তু বাবু, আমরা কোথায় এলাম?
ছেলে কোনো উত্তর না দিয়ে মাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে গেল। বাড়ির ভেতরে এসে দেখলেন বাড়িটা বেশ সুন্দর করে সাজানো। হাতে একটা বড় কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওনার বউমা দীপ্তি। সাথে ওনার নাতনি টুকি, দুই মেয়ে-জামাই সবাই। উনি কিছু বলার আগেই ওরা সবাই বলে উঠল-হ্যাপি বার্থডে।
এত খুশি, এত আনন্দ উনি আশাই করেননি। কাল রাত থেকে কত কিছুই না ভাবছিলেন আর আজ সব কিছু কেমন উলোট-পালোট হয়ে গেল। ব্যাগ থেকে ঘুমের ওষুধের কৌটোটা বের করে ফেলে দিয়ে বললেন- তুই যদি আমাকে সত্যি সত্যি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতিস আমি তাহলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে মরেই যেতাম। ওরকম স্বাধীনতা আমার দরকার নেই।
-মরে যেতে দিলে তো। আমি কাল রাতেই সব ওষুধ পালটে ভিটামিনের ট্যাবলেট ভরে দিয়েছিলাম। মা, এটা তোমার বাড়ি। এখানে আমরা সবাই একসাথে থাকব। এসো মা কেকটা কেটে ফেল। আজ আমরা আমাদের দুই মায়ের জন্মদিন পালন করব। একজন আমাদের জন্মদাত্রী মা আর একজন হলো আমাদের জন্মভূমি মা। দুজনকেই তাদের ৭৪তম জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা।
(সমাপ্ত)