STORYMIRROR

Nikhil Mitra Thakur

Classics

4  

Nikhil Mitra Thakur

Classics

সাবিত্রী দেবী মাইতি

সাবিত্রী দেবী মাইতি

3 mins
324

সাবিত্রী দেবী ( মাইতি)

সীতানাথ মাইতি এবং সুখোদা দেবী বাস করতেন অবিভক্ত মেদনীপুর জেলা, বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শহরের নিকট চাঁদরা গ্রামে। তাদের দুই কন্যা ও এক পুত্রের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলেন সাবিত্রী। সাবিত্রী দেবীর জন্ম তারিখ সঠিক জানা না গেলেও মোটামুটি ১৯১২ সালের কাছাকাছি তার জন্ম হয়েছিল। অপূর্ব সুন্দরী সাবিত্রী দেবীর খুবই অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় পার্শ্ববর্তী গ্রামের শ্রী উমাচরণ দের সাথে।

কথিত আছে তমলুকের তথাকথিত বাবু সম্প্রদায়ের লোকজন ১৭ বছরের কিশোরী সাবিত্রী দেবী শশুর বাড়ি থেকে নিভৃতে তমলুকে তুলে নিয়ে আসে। তাদের লোভের চরিতার্থ করতে গিয়ে তার স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে যায়। তারপর থেকে বাবু সম্প্রদায়ের মনোরঞ্জনের জন্য সাবিত্রী দেবী তমলুক শহরে থেকে গেলেন এবং শেষ পর্যন্ত বারবণিতার জীবন বেছে নিতে বাধ্য হলেন।

দরিদ্র কৃষক ঘরের মেয়ে। তাই বর্ণপরিচয় এর সুযোগ ঘটেনি তার। কেননা, গ্রামে গ্রামে তখনও স্কুলে যাওয়ার বার্তা পৌঁছায়নি। অথচ দেশপ্রেম সম্পর্কে যেমন ছিলেন সচেতন তেমনি বিদেশি ইংরেজ অত্যাচারী শাসকের অধীনে পরাধীন ভারতে মানুষের কষ্ট-দুঃখ- যন্ত্রণা সম্পর্কে ছিলেন ওয়াকিবহাল

১৯৩০ সালে ৬ই এপ্রিল গান্ধীজীর ডাকে সারা দিয়ে তমলুক মহকুমার সত্যাগ্রহীরা তমলুক শহরের রাজবাটি হতে গণমিছিল করে লবন আইন ভঙ্গ করার শপথ নিয়ে নরঘাট এর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সেদিন নরঘাট এক বিরাট জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রায় ৩০ হাজার লোক ওই সভায় যোগদান করে। এই সভায় অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য লবনের কালা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে সত্যাগ্রহীদের সাথে যোগ দেয় অষ্টাদশী সাবিত্রী।  

অবশেষে এলো বহুকাঙ্খিত বছর ১৯৪২ সাল। সারা দেশ গর্জে উঠেছে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে। স্বাধীনতা আন্দোলনের আঁতুর ঘর মেদনীপুর জেলায় দেখা গেল সুনামির ঢেউ। এই জেলার অবিভক্ত তমলুক মহাকুমা ছিল আন্দোলনের অন্যতম ঝটিকা কেন্দ্র। ওই বছর ২৯ সেপ্টেম্বর তমলুক মহকুমা থেকে অভিযানে সামিল হয়েছিলেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী তমলুক শহরের দক্ষিণ দিক থেকে আসা প্রায় পাঁচ হাজার নর-নারীর একটি দল শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে সংকরারা ব্রিজের কাছে অবস্থানরত সশস্ত্র ইংরেজ পুলিশ ও মিলিটারির দল শোভাযাত্রার পথ অবরোধ করে এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।

ঘটনা স্থলে নিহত হলেন উপেন্দ্রনাথ জানা, গুরুতর আহত পূর্ণ চন্দ্র মাইতি দুদিন পরে হাসপাতালে মারা গেলেন। সংকরারা ব্রিজের কাছে পড়ে থাকা আহত ব্যক্তিরা যখন একটু জলের জন্য আর্তনাদ করছে তখন পাশের বারাঙ্গনা পল্লী থেকে সাবিত্রী দেবী বালতি ভর্তি জল নিয়ে ছুটে আসেন। সশস্ত্র পুলিশ বন্দুক উঁচিয়ে তাকে তাড়া করলে তিনি তৎক্ষণাৎ ছুটে গিয়ে তার ডেরা থেকে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে বটি ও গতি নিয়ে তেড়ে এলেন। সিপাহীর দল সাবিত্রীর রণরঙ্গিনী মূর্তি দেখে থমকে যাঢ়। সাবিত্রী দেবী রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে সুকৌশলে কয়েকজন গুরুতর আহত দেশপ্রেমিককে তার নিজের ঘরে নিয়ে এসে সারা রাত্রি জেগে সেবা-শুশ্রূষা করেন। কয়েকজন আহত দেশপ্রেমিককে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন। 

১৯৪২ সালে ১৭ ই ডিসেম্বর তমলুক মহাকুমার কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ যথা শ্রী সতীশচন্দ্র সামন্ত,শ্রী অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়, শ্রীশচন্দ্র শ্রী সুশীল কুমার ধারা প্রমুখের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মহাভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র ও তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। ব্রিটিশ সরকারের ত্রাস এই জাতীয় সরকারের সামরিক বাহিনীর নাম ছিল বিদ্যুৎ বাহিনী।

বারাঙ্গনা সাবিত্রী দেবী গোপনে বিদ্যুৎ বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করতেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতের অন্ধকারে গোপনে সংবাদ আদান-প্রদান করতেন। সেই সংবাদ রমেশ করের মাধ্যমে সুশীল বাবুর হাতে পৌঁছে যেত। ভারতের মুক্তি সংগ্রামে অংশ নিয়ে এইভাবে বারাঙ্গনা সাবিত্রী দেবী জীবিত থাকতেই তমলুকের অগ্নিকন্যায় পরিণত হয়েছিলেন। সেই যুগের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে,যেমন, যুগান্তর, বসুমতী, আনন্দবাজার ইত্যাদি পত্রিকাগুলিতে সাবিত্রী দেবীর বীরগাথা প্রকাশিত হয়েছিল।

যদিও বীরাঙ্গনা সাবিত্রী দেবীর শেষ জীবন ছিল অত্যন্ত কষ্টের। চরম দারিদ্রতার মধ্যে দিয়ে কাটে তাঁর শেষ জীবন। তিনি সবদিন ঠিক মতো পেট ভরে খাবার পেতেন না। অবশেষে ১৯৯২ সালে লোক চক্ষুর আড়ালে থাকা বীরাঙ্গনা সাবিত্রী দেবী নীরবে চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics