Ananya Podder

Classics Inspirational Others

3.8  

Ananya Podder

Classics Inspirational Others

সৎ মা

সৎ মা

9 mins
2.1K


রুমি তখনও মায়ের মাথার পাশে বসে আছে | আস্তে আস্তে মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে, ঠিক যেমন মা দিতো তার মাথায় আদর করার সময় | খুব ইচ্ছে করছে, মায়ের পাশে শুয়ে মায়ের হাতটা নিজের বুকের উপর দিয়ে রাখতে | ছোটো বেলা থেকে মায়ের এই হাতটা গায়ের উপর না চাপালে রুমির কোনোদিন ঘুমই আসতো না | বাবার সাথে সারাদিন খেলাধুলা, হুটোপুটি করা, দাবা খেলা, লুডো খেলা সব কিছু চললেও দিনের শেষে মা-ই ছিলো রুমির শেষ আশ্রয় | সেই শেষ আশ্রয় আজ শেষ হয়ে গেল |

ছোটবেলা থেকে অমৃতাই ছিলো রুমির জীবনে এমন একটা মানুষ, যার সাথে রুমিকে কখনো কোনোদিন কোনো কিছু ভেবে করতে হয়নি | এক অদ্ভূত রসায়ন ছিলো মা বেটির মধ্যে | এই এক পলকে ঝগড়া, তো আরেক পলকে ভাব হয়ে যেত | মায়ের উপর প্রচন্ড রেগে গেলে বা খুব আদর করতে ইচ্ছে করলে মাকে কখনো কখনো মেরেও দিতো রুমি | মা খুব রাগ করতো | রুমি যখন রেগে গিয়ে বলতো, " তুমি খুব বাজে, তুমি খুব পচা | চলে যাও তুমি আমার কাছ থেকে | "... তখন অমৃতাও রেগে গিয়ে বলতো, " বেশ তো, চলেই যাব | তোর বাবাকে বল, তোর জন্য আরেকটা মা এনে দেবে | "

ব্যস, ওতেই রুমির সব জারিজুরি শেষ হয়ে যেত | সৎ মা !! ... ওরে বাবা !! ... ওটি চলবে না | রুমি সিনেমা, আর গল্পের বই থেকে জেনেছে, সৎ মা কেমন হয়?? ... আর রুমির জীবনে তার মায়ের আগে তার বাবাই আসতে পারলো না, তো আবার কোত্থেকে আর কোন মা আসবে??

সত্যি, মা টা যেন কেমন ছিলো | কী অদ্ভূত !!... রুমি বুঝতেই পারতো না মাকে | বাবা যখন কোনো দামী জামা, জুতো বা প্রয়োজনের বাইরে কিছু কিনে দিতো বা কিনে দিতে চাইত, মায়ের কী রাগ হয়ে যেত তাতে | কোনোদিন বুঝতেই চাইত না, রুমির এসব জিনিস কত্ত ভালো লাগে | মা বলতো, " প্রয়োজনের বাইরে কিচ্ছুটি পাবে না তুমি | ".... খুব রাগ হতো রুমির |

কিন্তু রুমি আবার দেখেছে, রুমির পড়াশুনার জন্য মা কেমন অবলীলায় বই কিনেছে | এমনকি, গল্পের বই কিনে দেওয়াতেও মায়ের কখনো না ছিলো না | মা বলতো, " জ্ঞান হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড়ো গুরু | তার হাত ধরেই ঈশ্বরের পৃথিবীকে চিনতে পারবি, জানতে পারবি | "

অমৃতা খুব পড়া পাগল ছিলো | রুমিকে সবসময় বোঝাতো, " লেখাপড়া ভালো করে কর, বাবা | জীবনে নিজের পরিচয় তৈরী করতে গেলে এটাকেই হাতিয়ার বানাতে হবে | "


রুমি শুনতো মায়ের কথা | কিন্তু সবসময় কী ভালো লাগতো পড়তে?? ... তাই মাঝে মধ্যে ফাঁকিও দিতো | আর তখনই বাড়িতে লেগে যেত ধুন্ধুমার কান্ড | চিৎকার চেঁচামেচির শেষে একটাই কথা বলতো অমৃতা, " আমার কথা শুনিস না তো তুই | দেখ, যেদিকে দুচোখ যাবে, চলে যাব | তখন থাকিস তুই | সৎ মা এসে আদর করে বড়ো করে তুলবে আর শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে গৃহকর্মে নিপুণা গৃহবধূ হয়ে জীবন কাটিও | "


মায়ের এই একটা ব্ল্যাকমেলই রুমি ঠান্ডা হয়ে যেত | রুমি জানতো, তার মা সত্যিই পাগল | জীবনে রুমি কোথাও হেরে যাবে, এ যেন সহ্যই করতে পারতো না অমৃতা | তাই নিজের পছন্দের অন্যথা হলেই বাড়ি ছাড়ার হুমকি আর তার সাথে সাথে সৎ মায়ের আগমনের পরিকল্পনা শোনাতো |


অথচ পড়াশুনার বাইরে অমৃতা তার মেয়েকে কোনো বাঁধনে বড়ো করেনি | মুক্ত মনে মেয়ের বন্ধু হয়ে মেয়ের সব অত্যাচার হাসি মুখে মেনে নিয়েছে | বিছানায় শায়িত মায়ের গালে আজও রুমি আলতো করে মেরে বলে, " পাগল মা, আমার | "

মাঝখানে রুমির মোবাইলে একটা ফোন আসে, ডাক্তার কাকুর ফোন | বললেন, " রুমি, চার ঘন্টা তো এখনও হয়নি | আমি আসছি, একটু দেরী হবে | "


পাশের বাড়ির ঠাকুমা একবার ঘরে ঢুকে বলল, " রুমিরে, মৃতদেহ টা ছেড়ে উঠিস না যেন | ধরেই বসে থাকিস | "

রুমির কানে কেমন লাগলো | মৃতদেহ?? .... তার মা, আজ মৃতদেহ !!.... কই কাল রাতেও তো তার মা হয়ে তার আর বাবার সাথে কতো গল্প করেছিল |... পাশের বাড়ির জিনিয়া যার তার কাছে জিনিসের বায়না করে বলে ওর মা খুব পেটাচ্ছিলো কাল রাতে | তখন মা বলেছিল খাবার টেবিলে বসে, " আমার রুমি কোনোদিন ওরকম ছিলো না | ".... তারপর রুমির বাবার দিকে তাকিয়ে বলে, " তোমার মনে আছে, আমি রুমিকে বলেছিলাম, যে, বাবা মা ছাড়া আর কারোর কাছে যদি কোনোদিন কিছু চাও, তবে বাবা মায়ের কাছ থেকে আর কোনোদিন কিছু পাবে না | সেই ভয়েই হোক, বা, আমায় খুশি রাখতেই হোক, রুমি কোনোদিন তোমার মায়ের কাছে বা দাদু দিদার কাছেও কোনোদিন কিছু চায়নি | "


মায়ের কথায় রুমি মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে, " তোমার মতো ব্ল্যাকমেলার আর দুজন আছে !!.... তুমি ঠিক জানতে, কোথায় কখন কাকে, কিভাবে ব্ল্যাকমেল করতে হবে | "

" ঠিক বলেছিস রুমি | নাহলে সেবার যখন তুই থিরুভানান্থাপুরামে যেতে চাইলি না তোর মায়ের সামনেই গলব্লাডার অপারেশন হবে বলে, তখন কি করলো, বল | বলল, ডাক্তারই দেখাবো না, যদি না রুমি হোস্টেল যায় | " পাশ থেকে উসকিয়েছিলো বাবা |


" ঠিক বলেছো বাবা | সেদিন মায়ের ব্যবহারে আমার মনে হয়েছিল যে আমার মা সৎ মায়ের চেয়েও খারাপ |"

" সেই জন্যই বোধহয় রেগে গেলে আমায় সৎ মা বলে ডাকিস?? "

" বলবো না তো কি করবো?? ... তুমি সেদিন আমায় কুকুর তাড়া করে তাড়িয়েছিলে |..... কি বলেছিলে, মনে আছে তোমার?? .... যতক্ষণ আমি বাড়ি না ছাড়বো, ততক্ষন তুমি ডাক্তার দেখানো, ট্রিটমেন্ট, অপারেশন কিছুই করাবে না |.... খুব কান্না পেয়েছিলো সেদিন | তোমার অপারেশনের দিনে তোমার পাশে থাকতে চেয়েছিলাম | তুমি সেই সুযোগও দাওনি |.... ভালোবাসার নামে তুমি শুধু ব্ল্যাকমেলই করে গেছো আমাকে | তোমার মতো মা থাকলে সৎ মায়ের দরকার পড়ে না | "


মা ঝাঁঝিয়ে উঠেছিল | " কি করতিস তুই এখানে থেকে?? ... তুই কি ডাক্তার?? ... তার চেয়ে তুই যেখানে থাকলে আমি বেশি নিশ্চিন্ত থাকতাম, সেখানেই পাঠিয়েছি তোকে | আমার অপারেশনের পরে আমি যেভাবে ভুগেছিলাম, তুই আর যেতিস না সেই বিদেশ বিভুঁইয়ে আমাকে ফেলে | তাহলে আজ কি করে বলতাম, যে, আমার মেয়ে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার !!"


সত্যিই, আজ যে রুমি ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের একটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অঙ্গ, সেটাও তো মায়েরই স্বপ্ন ছিলো | সেই ছোটো বেলায় মায়ের চোখ দিয়েই তো ওই আকাশের চাঁদ, তারাকে ভালোবাসতে শিখেছিল রুমি | আর আজ তার মাই চলে গেল ওই চাঁদ তারাদের দেশে |

এমন সময় বাইরে কিসের একটা হট্টগোল শোনা গেল | কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলো রুমি যে ডাক্তার কাকু ঘরে ঢুকেছেন | তখনও বাইরের গন্ডগোলটা থামেনি |


ডাক্তার কাকু বললেন, " যা তো রুমি, বাবা কে শান্ত করে ঘরে নিয়ে আয় | "

ডাক্তার কাকুকে মায়ের কাছে বসিয়ে দিয়ে রুমি উঠে যায় | নিচের ঘরে তখন বাবা তুমুল চিৎকার করছে, " বেরিয়ে যাও এখনই, নইলে আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো | "

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ভদ্রমহিলা | তিনিও বেশ জোর গলায় বললেন, " ডাকো পুলিশকে | কিন্তু আমি রুমির সাথে দেখা না করে কিছুতেই যাব না | "

রুমি এই তর্কের মধ্যেই বাবার পাশে এসে দাঁড়ায় | শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে , " কি হয়েছে বাবা?? .... কে ইনি?? "

" কেউ না, তুই তোর মায়ের কাছে গিয়ে বস | "

রুমি বাবার কথা মতো চলেই যাচ্ছিলো | ভদ্রমহিলা চিৎকার করে উঠলেন, " যেও না রুমি, একটু দাঁড়াও | " .... তারপর রুমির বাবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, " সাহস থাকলে বলো নিখিল, আমি কে?? ... সত্যিটা জানার পরেও যদি রুমি আমায় চলে যেতে বলে, তবে আমি কথা দিচ্ছি, আমি আর কোনোদিন আসবো না | "

রুমি এবার ঘুরে দাঁড়ায় | বাবার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে, " কি হয়েছে বাবা?? ... আমাকে খুলে বলো | কে ইনি?? ... আর কি এমন সত্যি আছে, যেটা আমি জানিনা | "

" বেশ, তুই যখন জানতেই চাস, তখন শোন্ | তোর সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন সে তোকে জন্ম দিয়েছেন, তবে তিনি তোর মা কিনা জানিনা | "

" মানে??? ".... বাবার কথায় রুমি স্তম্ভিত হয়ে যায় |.... " কি বলছো তুমি?? .... ইনি আমার মা হতে যাবেন কেন?? .... আমার মা তো ওই বিছানায়... "

রুমির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ভদ্রমহিলা বলেন, " উনি তোমার সৎ মা, তোমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী, আমার ছোটো বোন | "

রুমি বাবার দিকে উদ্ভ্রান্তের মতো তাকিয়ে থাকে | নিখিল বাবু রুমির মাথায় হাত রাখেন | তারপর বলেন, "তোর মা চায়নি কখনো, তুই সত্যিটা জানিস | তাই কোনোদিন তোকে জানাইনি আমরা | "

তারপর নিখিল বাবু বলে চলেন, " তোর সামনে যাকে দেখছিস, ইনি অজন্তা, আমার প্রথম স্ত্রী | অজন্তার মতের বিরুদ্ধেই তোর দাদু আমার সাথে ওর বিয়ে দেন | অজন্তা একটি ছেলেকে ভালোবাসতো | কিন্তু আমাদের বিয়ের সময় সে এখানে বর্তমান ছিলো না বলে অজন্তা আমাকে বিয়েও করে নেয় | বছর দুয়েক মোটামুটি দাম্পত্য জীবন ছিলো আমাদের | অজন্তা যখন দুমাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন ওর জীবনে ওর পুরোনো প্রেমিক ফিরে আসে | ও আমার কাছ থেকে মুক্তি চায়, কিন্তু ওকে আমি ছাড়তে চাইনি | কি করে ছাড়বো বল?? ... ওর গর্ভে যে তখন তুই ছিলি !! .... আমি ওকে কিছুতেই ছাড়তে চাইনি, তাই রাগে পড়ে অজন্তা ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল | কিন্তু আমি সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে গেলে ও আর তুই দুজনেই বেঁচে যাস সে যাত্রায় | ওকে অনেক বুঝিয়েছিলাম আমরা সবাই মিলে | কিন্তু ও কিছুতেই তোর মা হতে চায়নি |... তখন বাধ্য হয়েই ওকে ডিভোর্স দিয়েছিলাম আমি, কিন্তু একটা শর্তে --- তোকে পৃথিবীতে আনার পরেই অজন্তা ওর প্রেমিকের সাথে যেতে পারবে |.... মাত্র সাত দিনের মেয়েকে আমার কোলে ফেলে দিয়ে নিজের সুখের সন্ধানে ছুটে ছিলো ও | ও কি করে তোর মা হয়?? বল তুই !!!.... সেই সাত দিনের দুধের শিশুকে কোলে তুলে নিয়েছিল অমৃতা |.... শুধু তোর মা হওয়ার জন্যই আমার স্ত্রী হয়েছিল সেদিন | যাতে তোর আদর ভালোবাসায়, যত্নে কোনো ঘাটতি না পড়ে, তাই কোনোদিন দ্বিতীয় সন্তান চায়নি |.... আজ এত বছর বাদে অজন্তা ফিরে এসেছে তার মাতৃত্বের অধিকার বুঝে নিতে | এর আগেও দুবার এসেছিল, কিন্তু ওকে আমি তোর আর তোর মায়ের সামনে আসতেই দিইনি | "

নিখিলবাবু এক নাগাড়ে কথা গুলি বলে থামলেন | হাফাচ্ছিলেন, তাই রুমি উঠে গিয়ে বাবার হাতে এক গ্লাস জল ধরালো |

অজন্তা এবার মুখ খুললেন | বললেন, " তুমি চাওনি বলেই তোমার কথায় চলে গিয়েছিলাম | কিন্তু আজ যখন অমৃতা নেই, তখন রুমির সত্যিটা জানতে আপত্তি কোথায়?? ... রুমির মা থাকতে রুমি কেন মা হারানোর কষ্ট পাবে | যে চলে গেছে, সে তো রুমির মা নয়, সে তো রুমির সৎ মা | "

এতক্ষনে রুমি নীরবতা ভাঙলো | দৃঢ় কণ্ঠে বলল, " আপনি ঠিকই বলেছেন, যে চলে গেছেন, সে আমার সৎ মা | সে কেন আমার সৎ মা জানেন?? ... কারণ সে আমার জন্মদাত্রী না হয়েও আমার প্রতি তার মাতৃত্বের, তার স্নেহ ভালোবাসায় সে ভীষণ সৎ ছিলেন | তার মাতৃত্বের সততায় আমি কোনোদিন জানতেই পারিনি আমি তার গর্ভজাত নই | বরং, সারাজীবন সে আমাকে সৎ মা এনে দেবার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে গেছেন | আমি তাকে কতবার বলেছি, তুমি সৎ মায়ের চেয়েও বাজে | সে হাসি মুখে সব মেনে নিয়েছেন, কারণ তিনি জানতেন তার উর্দ্ধে কেউ নেই | আমার প্রতি তার অধিকারই সবচেয়ে বেশি |


তাই আমার সৎ মাকে আমার করেই থাকতে দিন | আর মাতৃহারার কথা বলছেন আপনি?? .... আমি মাতৃহারা কোনোদিনই হবো না | তার কারণ, আমার সৎ মা তার শরীরে বিলীন হবে, কিন্তু তার মাতৃত্বের সততায় সে আমার মনে এমন জায়গা তৈরী করে রেখেছেন যে, আমি যতদিন বাঁচবো বা আমার নাম যতদিন থাকবে এই পৃথিবীর বুকে ততদিন আমার মা আমার মধ্যেই বেঁচে থাকবেন | আপনার এই বাড়িতে আজই শেষ আসা | আপনি আমার বাবার প্রথম স্ত্রী হতে পারেন, কিন্তু আপনি আমার কেউ কোনোদিন ছিলেন না, আর কেউ কোনোদিন হবেনও না | আপনি এখন আসতে পারেন | আমি আর আমার বাবা আমার মায়ের দেহের শেষকৃত্য করবো | "

কথাগুলি বলে রুমি বাবার হাতটা ধরে সোজা উপরে চলে আসে | তখন ডাক্তার কাকু রুমিকে বলেন, " ডেথ সার্টিফিকেট তৈরী করে দিয়েছি | এবার তোরা মাকে নেওয়ার ব্যবস্থা কর | "


.... তারপর রুমির বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেন, " দুঃখ করিস না নিখিল | এ মৃত্যু যে পরম শান্তির মৃত্যু | ঘুমের মধ্যেই চলে গেল অমৃতা | তোদের বিষন্ন মুখ ও কোনোদিন দেখতে চায়নি, তাই নিঃশব্দে চলে গেল, বিনা কষ্টে | এ যে অমৃতার পুণ্যেরই ফল |

নিখিল বাবু মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন, " কষ্ট পেলি কি তুই রুমি সত্যিটা জেনে?"

" না, বাবা, আজ মায়ের প্রতি আমার আদর, ভালোবাসা আরও বেড়ে গেল | মুখের উপর কতবার বলেছি, তুমি সৎ মায়ের চেয়েও বাজে, অথচ মায়ের চেহারায় আমি এত টুকু গ্লানি দেখিনি কোনোদিন | মা শুধু সন্তানকে দেহেই ধারণ করেন না, তিনি সন্তানকে তার মনে, তার আত্মাতেও ধারণ করেন | তাই পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে বাবা, তাহলে পরের জন্মে যেন এই সৎ মাকেই পাই, আর সেই সৎ মা'টা যেন একজন পাক্কা ব্ল্যাকমেলার হয় | তার ব্ল্যাকমেইলেই তো এই জীবনটা এত সুন্দর করে সেজে উঠল আমার | বলো বাবা !"


বাবা মেয়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শায়িত সেই ব্ল্যাকমাইলারের দিকে তাকিয়ে থাকে | জীবনের শেষ কিছুক্ষণ তাকে দুচোখের পাতায় ধরে রাখতে চায় দুজন | এমন ব্ল্যাকমেলার কজন পায় এমন ভাগ্য করে !



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics