Manab Mondal

Abstract Drama Romance

4.3  

Manab Mondal

Abstract Drama Romance

রূপকথার গল্পের মতো

রূপকথার গল্পের মতো

4 mins
276


সুন্দর বন নাম সাথে পরিচিত হই আমি আপনার‌ মতোই ভূগোল বইএর পাতায়। একটু বড় হতে দেখা হলো। আয়লা পর পর একটা সেচ্ছাসেবী সংগঠন এর সাথে ত্রান বিতরণ করতে গিয়েছিলাম। বাদা নদীর দেশ সুন্দর বন। রাজনীতি লোকজনের সদিচ্ছার অভাব। নদী বাঁধ ভাঙে ফি বছর এখানে, ঝড় জল হলেই। আমাদের মতো সেলফি বাবুরা ফি বছর হাজির হই এই সুন্দর বনে তখন ত্রান নিয়ে এই সুযোগে বনভোজন করা হয়ে যায়। সুপ্রান্তিক সাথে এই সুন্দর বনে জন্য ও কিছু টা ঘনিষ্ঠতা হলো। নীলাঞ্জনা চলে গেছে সবে সবে। ব্যথা ভুলতে নতুন কোন কাজ নিজেকে যুক্ত করতে । আমি কয়েকটা লৌকিক দেব দেবীর ছবি পোস্ট করেছিলাম সোস্যাল মিডিয়া তে। সাথে সাথেই ওর ফোন।

সুন্দর বন নিজস্ব একটা সংস্কৃতি আছে। এখনকার দেব দেবী রা খুবই সাধারণ। তবে একটু উপডেটে বলতে পারেন। তাই দক্ষিণ রায় হাতে আপনি বন্দুক দেখতে পাবেন। তবে এদের জনপ্রিয় দেব দেবীদের অস্তিত্ব পুরানে টুরানে পাবেন না। এদের দাবিদাবাও কম এদের জন্য ছাপ্পান্ন ভোগ টোগ দিতে হয়না। আসলে ভক্তদের ও চাহিদা কম। যেমন ধরুন, একটু জালে বেশি মাছ পরুক এই আশায় মাটির ঢিপি করে মাকাল ঠাকুর পূজা হয়। বনবিবি দক্ষিণ রায় পূজা দিয়ে প্রার্থনা করে জেনো বাঘমামার সাথে না দেখা হয়।

সুপ্রান্তিকা লোক সংস্কৃতি ওপর গবেষণা মুলক কাজ করছিলো। যদি পুরোটাই লাইব্রেরি ওয়াক। খুব বেশি হলে সুন্দর বনের কেটে গড়ে ওঠা শহর তলি, মানে যাদুবপুর, বাঘাযতীন, টালিগঞ্জ, গড়িয়া ক্ষেত্রে সমীক্ষা করেছে। কিন্তু সুন্দর বন কয়েকটি দ্বীপে ও গেছে ফলে মাকাল ঠাকুর, জ্বরাশুর, আটেশ্বর, এরকম অনেক দেবতা আছে যা নিয়ে কাজ করে উঠতে পারি নি। তাই জন্মদিনের উপহার হিসেবে ওর দাবি অনুযায়ী সেবার ছুটি টা সুন্দর বনে ই কাটাবো ঠিক করলাম।


রাম জামাই বাবু, সুন্দর বন মানুষ। কষ্ট করেছিলো আজ সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা। তবে দিদিও স্কুল শিক্ষকা। ভাগ্নে রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র, ভাগ্নি ডাক্তারি পড়ছে , মোটামুটি ভাবে সাত আট বছর হবে ওরা ওদের দেশের বাড়ি মানে সুন্দর বন যাই নি। তবে অসুবিধা হবে না। পাশের বাড়ির লোকজন ও বাড়ি দেখা শোনা করে। অবশ্য দিদি জামাই বাবু ওদের মাসিক কিছু টাকা পয়সা ও পাঠায় ওখানে। 

কোন আঞ্চলিক লোক সমাজকে অসম্মান করা উদ্দেশ্য বলছি না । তবে আপেক্ষিক দৃষ্টি তে সুন্দর বনের মানুষ অশিক্ষিত, না হলে শরীর খারাপ সাত বিবির কিংবা প্যেঁচা প্যেঁচীর থানে যায়।বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থার ধরণ স্পেশালাইস্ট বা বিষয় ভিত্তিক। সুন্দরবনের জলে জঙ্গলে কাজ করা লোকেরা সুন্দরবন বিষয়ে প্রাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা রাখে।যারা মধু কাটে, মৌমাছির উড়ে যাওয়া দেখে বলতে পারে কোনটি 'বোঝাই পোকা' (মধু নিয়ে চাকে ফিরছে) কোনটি 'খালেন পোকা' মধু সংগ্রহ করতে যাচ্ছে।


গাছের কোটর দেখে বলতে পারে সেখানে কী পাখির বাসা আছে বা কী সাপ ঢুকে বসে।মাটিতে গর্ত দেখে বলতে পারে কাইন না কাঁকড়া না কুচে কী থাকতে পারে।একটা মৌচাকের কতটা অংশ কাটা বাদ রাখতে হবে তাহলে সেখান থেকে মাছি ওড়ে যাবে না বা পরবর্তীকালে আবার চাক বানাবে।

নদীর জলের রঙ দেখে বলতে পারে ইলিশ এসেছে কি না?মাছের ঝাঁকের দুর থেকে জলের খেলা দেখে বলতে পারে কী মাছের ঝাঁক?


কাই মাছের কাঁটার যন্ত্রণায় কোন গাছের শিকড় থেঁত করে লাগালে যন্ত্রণা কমতে পারে।


হঠাৎ দায়ের কোপে বা রক্ত ক্ষরণে বা ডায়েরিয়ায় জঙ্গলে থাকা কোন গাছ কাজে লাগতে পারে।

ঐ দিন গুলো তে হঠাৎ চোখে র সামনে ভেসে এলো। এই বাদা জঙ্গলে আমার গাইড হয়েছিল , জামাইবাবু দের বাড়ির কেয়ারটেকার , পূর্নীমা। অনেক বছর পর হঠাৎ সুন্দর বনের কথা মনে পড়লো কেন? কলমীর জেদে আজ সুন্দর বনে হাজির আমরা। হঠাৎ সেইদিন কোলকাতা থেকে কুরিয়ার একটা চেক আর বই এলো । বইটা লেখক নামের জায়গায় দেখলাম আমার নাম। চিঠীর বয়ান দেখে যা বুঝলাম। সুপ্রান্তিকার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, বই টি ওরা প্রকাশ করেছিলো। কিন্তু আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি ওরা। কারণ কোন দিন আমার স্থায়ী ঠিকানা জোগাড় করে ওঠতে পারেনি ওরা। সুপ্রান্তিকাকে রোজ একটি করে চিঠী দিতাম সুন্দর বনের অভিজ্ঞতা নিয়ে। তা দিয়ে ও বই করে ফেলেছে।

আমার ফোন পেয়ে , জামাইবাবু দিদি প্রথমে অবাক হয়েছিলো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওদের দেশের বাড়িতে যেতে দিতে চাইছিলো না। অনেক অনুরোধ পর অনুমতি দিলো। পূনীমাদের ঘরটা ভেঙে গেছে। ওরা জামাইবাবু দের বাড়িটার নিচের ঘর গুলো ই ব্যবহার। কোন কারণে নাকি জামাইবাবু রা ওদের এ বাড়িটা দিয়ে দিয়েছে। আমার চোখ পূর্নীমা খুঁজছিলো। ওর একটা ছেলে হয়েছে , বেশ ফুটফুটে সুন্দর । পরে শুনলাম, এই ছেলের কোন পিতৃপরিচয় নেই। শিক্ষিত সমাজ সিঙ্গেল মাদার চিন্তা ভাবনা কে স্বীকৃতি দিলেও সমাজ মানে না। তাই পূর্নীমা আত্মহত্যা করছিলো।

উপরের ঘরে উঠে দেখলাম। টেবিলের উপর টেডি বিয়ার টা এখনো সুন্দর করে সাজানো আছে। আমি যখন দ্বিতীয় বার সুন্দর বন গিয়েছিলাম তখন ওকে ওটা উপহার দিয়েছিলাম। হঠাৎ ওটা হাতে তুলে পূর্নীমার গায়ের গন্ধ খুঁজতে যাবো পুতুল টা গা থেকে, তখন টেডি বিয়ার পিছনে শক্ত চৌকো একটা বাক্স মতো ঠেকলো। জিপটা খুলে বাক্সটা বেড়ে করে চোখ জল সামলতে পারলাম না। টেবলেট গুলো তাহলে ও কোন দিন খাইনি। কান্না শব্দ পেয়ে কমলি হাজির। ওকে দেখে চোখের জল মুছে ফেললাম। বহুবছর পর আমি কাঁদলাম। ও কিছু বললো না। চুপচাপ ঘর চারদিক টা চোখ ঘুরিয়ে ও চলে গেলো। দিনটা ভালই কাটলো। আজকাল কলমী আমার কাছে শোয় না। আজ কি মন হলো আমার কাছে শোবে বললো। আপত্তি করার উপায় নেই। বিয়ে করা বউ বলে কথা।রাত বেশ গভীর, তখন ও ঘুমাচ্ছে না। আমি বললাম "কিছু বলবে?"

ও বললো" পূর্নীমাকে আমি দেখিনি, কিন্তু ওর ছেলেটা খুব মিষ্টি, আর মেধাবী ও। আমার সাথে বেশ ভাব হয়েছে।তুমি কিছু না মনে করলে। ওকে আমাদের সাথে নিয়ে যাবো। ওর ঠাকুর মার কোনো আপত্তি নেই। "

আমি বললাম " ওর ঠাকুর মার সাথে আমিও কথা বললবো। আমরা ওনাকে ও সঙ্গে নিয়ে যাবো, তুমি "মা "ও পেয়ে যাবে। খুশিতো"

ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমদের দুই জনের শরীর বেয়ে গড়িয়ে গেলো দুই জনের চোখের জল। সত্যি আমাদের জীবন টা যেনো রূপকথার গল্পের মতো সুন্দর।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract