রুট থ্রি
রুট থ্রি


পাড়ায় রবিবারের ক্যারামের আসর,ডবলসে খেলা চলছে।দু’গেম আমরা হেরেছি,এবারেরটা জিততেই হবে।নিলে ম্যাচ হারলে,পরের ছ’মাস সর্বত্র আওয়াজ খাওয়া বাঁধা। হঠাৎ আমার পার্টনার শুভদার মোবাইলে একটা ফোন এল। শুভদা একটু আড়ালে সরে গিয়ে কি সব কথাবার্তা চালাতে লাগল, দু-একবার “কি বলছেন বুঝতে পারছি না” কথাটাও শুনলুম যেন ।সে সবে বেশি নজর ছিলনা, তখন আমার দান। ঘুরে যখন আবার শুভদার দান এল তখনও ও ফোনে বোঝাতে ব্যস্ত, “আপনি কি চাইছেন ,ঠিক বুঝতে পারছি না”। নাড়ু একটু গুন্ডা প্রকৃতির,রেগে বলল “এই শুভদা কার ফোন?কি বলছে?” শুভদা হাতদুটো উল্টে বোঝাল ও কিছুই বুঝছে না, আর সঙ্গে সঙ্গে নাড়ুর হাতে ফোনটা চালান করে দিল। নাড়ু ফোনটা কানে দিয়ে,”কে বে?” বলতে গিয়েও পুরো শেষ করে উঠতে পারল না,বরং ওর চোখ মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। কিন্তু তার পরেই উত্তর দিতে গিয়ে তোতলাতে লাগল, “না মানে আপনি ঠিক কা-কাকে চাইছেন ব-ব-বলুনতো?” মনে হল,ওপাশ থেকে দুর্বোধ্য কিছু শুনে,সেসব ওর মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ও এবার ফোনটা আমার হাতে দিয়ে মুক্তি পেল। ততক্ষণে শুভদাকে “কে রে?কে ফোন করেছে?”, জিজ্ঞেস করতে শুভদা বলেছে “আমি চিনিনা ,রং নাম্বার হবে ।“ যাইহোক আমি উৎসাহ ভরে ফোনটা কানে নিতেই শুনলুম, সুন্দর নারীকন্ঠে, সুমিষ্ট টানে কেউ তখনও বলে চলেছে “এটাও জানেন না?” আমি তো আগের কথা কিছুই শুনিনি। মেয়েটিকে বললুম, “কি বলছেন আরেকবার বলবেন কি?” ওপাশ থেকে রেগেমেগে, কাটা কাটা কটা কথা কানে এল, “কি আবার বলব, কতবার তো বললাম, রুট থ্রির ভ্যালুটা কি হবে, বলে দিন না,মনে আসছে না! আমার কাছে ক্যালকুলেটর নেই।“ আমি তো হতভম্ব হয়ে গেলুম। অজানা অচেনা কেউ ফোন করে রুট থ্রির ভ্যালু, এই ক্যারামের আসরে জিজ্ঞেস করতে পারে, এটা আমার ধারনারও বাইরে ছিল। যাই হোক ভ্যালুটা মুখস্থ ছিল, ফট করে বলে দিলুম, ওয়ান পয়েন্ট সেভেন থ্রি টু।শুনে মেয়েটি উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল, খুশিতে ডগমগ হয়ে বলেই ফেলল,” ওহ, বাঁচালেন। থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ, আই লাভ ইউ সুইটহার্ট ,মুয়াঃ।“ শেষে একটা চুমুর শব্দ এবং তৎক্ষণাৎ ফোনটা কেটে গেল। বলাবাহুল্য, শেষের কথাগুলো আর চুমুর শব্দটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছিল। সবার কাছে হিরো বনে গেলুম, যারা সঠিক উত্তর দিতে পারেনি তারা আমার উপর অযথা ঈর্ষায় জ্বলেপুড়ে মরতে লাগল। নাড়ুতো রেগেমেগে বলেই ফেলল “ওঃ, এই ব্যাপার, এ তো আমিও জানতাম, খুব ক্রেডিট নিলি, না?” বলে আমার দিকে কটমট করে তাকাতে লাগল। আমি তো এদিকে তখন হাওয়ায় ভাসছি ,চোখ মুখ লাল ।কাউকে কিছু বলতেও পারছি না,মেয়েটা আমাকে কি বলেছে। বললে, মেরে হয়ত আমারই চামড়া গুটোনো হবে। ওদিকে মনের খুশিটাও চেপে রাখতে পারছি না,কলেজের ভাইভাতে এক্সটারনালের প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিয়ে কখনও এরকম নির্মল আনন্দ হয়নি,হবেও না। ক্যারাম খেলা তো মাথায় উঠল, সহজ শটগুলোও মিস করে ফেললুম। ম্যাচ গোহারান হেরে, শুভদার গালাগাল শুনতে হল,কারও কারও বক্রোক্তিও।
খেলা শেষে ক্যারামবোর্ড তুলে সবাই যখন যে যার বাড়ি যাচ্ছে, চুপি চুপি শুভদাকে বললুম, “শুভদা ,কার ফোন এসেছিল গো, একটু নাম্বারটা দাও না!” শুভদা এমনিতেই এইরকম ম্যাচ হেরে চটে ছিল।আমার উৎসাহ দেখে তিরিক্ষি মুডে বলল ,”কেন রে, কি করবি নাম্বার নিয়ে ?কাকুকে বলব নাকি?” এরপর আর কথা চলে না। বিরস বদনে বাড়ি ফিরে এলুম। কিন্তু তখনও কানে সেই কথাগুলো, মিষ্টি সুরের মতো বাজছিল “আই লাভ ইউ সুইটহার্ট,মুয়াঃ।“