Dola Bhattacharyya

Classics

4  

Dola Bhattacharyya

Classics

রাঙামেসোর গল্প

রাঙামেসোর গল্প

4 mins
487


হাসির গল্প পড়েছি অনেক। কিন্তু লিখিনি আগে। কারণ হাসির গল্প লেখা বোধহয় সবচাইতে কঠিন বিষয়। তাই চেষ্টাও করিনি লিখতে। আজ হঠাৎ একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল, যেটা মনে পড়লে আজও হেসে উঠি। আশা করছি ঘটনাটা ভাল লাগবে তোমাদের। 

   আমার বিয়ের মাস খানেক পরের ঘটনা । মাসতুতো দাদার বিয়ে উপলক্ষে বাড়ি শুদ্ধ সবাইকে নেমন্তন্ন করে গেলেন মেজ মাসি । বাবা, মা, ভাই তো যাবেই। আমারও খুব যাবার ইচ্ছে।সেই খড়্গপুরে বিয়ে বাড়ি। অনেক দূরের রাস্তা বলে শ্বশুরবাড়িতে বাড়িতে ঠিক রাজি হচ্ছে না। অবশেষে কর্তামশাই রাজী করালেন তাঁর বাড়ির লোকজন কে। হৈহৈ করে বেরিয়ে পড়লাম আমরা। 

     খাওয়া দাওয়া হৈচৈ করে কয়েকটা দিন খুব ভালো কাটল। বৌভাতের পরেরদিনই আমাদের ফেরার কথা। মেজ মাসি বার বার বলছেন, আরও কয়েকটা দিন থেকে যেতে। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। মনটা খারাপই লাগছিল। পরদিন আত্মীয়দের বেশিরভাগই চলে যাবে। সকলেই দূরে দূরে থাকে। আবার কবে দেখা হবে ঠিক নেই। তাই সকলে ঠিক করেছে, বর কণে ফুল শয্যার ঘরে ঢুকে গেলে, রাতটা সকলে বেশ মজা করে কাটাবে। ফুল শয্যার ঘরে আড়ি পাতার ইচ্ছা ছোট মাসিমণির র। কথাটা শুনতে পেয়ে বোনকে বেশ একটু বকা দিলেন মেজ মাসি, "এসব কি শুনছি! তোরা না শাশুড়ি! একটুও লজ্জা শরম নেই নাকী!" 

বকা খেয়েও দমবার পাত্রী নয় ছোট মাসি । সটান চলল ফুল শয্যার ঘরের দিকে। বিয়ের পরের দিনই ছোটমেসো চলে গিয়েছিল। বৌভাতে আবার আসার কথা ছিল। কিন্তু আসতে পারে নি। তাই ছোটমাসি সারাদিন একটু মনমরা হয়েই ছিল। এখন আবার ফর্মে ফিরেছে দেখছি। বলল "তোরা যদি না যাস, তাহলে আমি একাই যাব ।আরে, এটা তো ফুল শয্যার অনুষ্ঠানের একটা পার্ট। এটা বাদ দিলে চলে নাকী!" ছোট মাসি তো বেনারসী শাড়ির আঁচল দুলিয়ে চলে গেল। বাকিরা তখন গভীর চিন্তায়, ঠিক কি করা উচিৎ। এদিকে অন্য একটা নাটকের স্ক্রিপ্ট ও রেডি। 

ছোটমাসি ফুল শয্যার ঘরের বাইরে একটা ফাঁক ফোকর খুঁজে দিব্যি সেঁটে গেছে সেখানে। হঠাৎ বেনারসীর আঁচলে পড়ল টান। পেছন ফিরেই মাসি তো অবাক। রাঙা মেসো আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে। চোখ দুটো করমচার মতো লাল। মুখে একগাল হাসি। "কি করছো ডার্লিং"! 

"ও মাই গড! এই রাঙাদি, ওই দ্যাখ, তোর বর তোকে ছেড়ে আমাকে ডার্লিং বলছে রে"। ফুল শয্যার ঘরের সামনে থেকে পালাতে পারলে বাঁচে ছোটমাসি। 

কিন্তু পালিয়ে যাবে কোথায়। ছোটমাসির পেছন ছাড়ছে না রাঙা মেসো। ছোটমাসি আর রাঙামাসি দুজনেই আজ বেনারসি পরেছে। দুটো শাড়ি একই রঙের। আসলে রাঙামাসির বিয়ের বেনারসিটা ছোটমাসির এতটাই পছন্দ হয়েছিল, যে, নিজের বিয়ের সময়েও ওই একই রকম শাড়ি নিয়েছিল। ভবিষ্যতের কথা আর কে ভাবে! 

ছোটমাসি তো সবার মাঝে এসে রাগে ফেটে পড়ল, "এসব কি হচ্ছে!সত্যদাদা এমন করছে কেন?" পাশ থেকে ফুলমেসো ফিসফিস করে বলে উঠল, "ভাং খেয়েছে, ভাং। তারপরে আবার মিষ্টিও সাঁটিয়েছে বেশ কিছু"। 

"আ্যঁ! এ শিওর তোমাদের কাজ। রাঙাদি কোথায়!এ্যাই রাঙাদি! মরে গেলি নাকী! দেখে যা তোর বরের অবস্থা। " 

যেন রহস্য গল্প বলছে এমন ভাবে ফুলমেসো বলল," ওই শোনো। শুনতে পাচ্ছো!" 

" কি "! 

" নাকের ডাক।"

" আ্যঁ"! 

"আ্যঁ নয়, হ্যাঁ। তোমার রাঙাদি এখন ঘুমের গভীরে"। 

বিরক্ত হয়ে উঠে পড়ল ছোটমাসি।" ধ্যুর ।সব মাটি করে দিল। যাই। তাহলে শুতেই যাই।"

আমি আর ছোটমাসি একটা ঘরে শুয়েছি। বাকিরা কে কোথায় সেঁধিয়েছিল জানি না। সবে একটু তন্দ্রা মতো এসেছে। হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল ।কেউ যেন আমার হাত ধরে টানাটানি করছে। চোখ খুলে দেখি, রাঙামেসো। তাড়াতাড়ি উঠে বললাম," একী! তুমি এখানে!"

আমাকে জিভ ভেঙিয়ে রাঙামেসো বললে, "তুমি এখানে? কেন? আমার বৌ এর কাছে আমি ছাড়া আর কে থাকবে"! 

বিছানা থেকে থেকে লাফিয়ে উঠেছে ছোটমাসি, "এ্যাই! এ্যাই সত্য দাদা ।ভালো হবে না বলছি। বেরোও এখান থেকে। উঃ! সবে একটু পিঠটা রেখেছি বিছানায়। আর অমনি এলেন উৎপাত করতে। এ্যাই রাঙাদি! উঃ বাবা, এত তাড়াতাড়ি মরলি কেন রে! বলতে বলতে ঘর থেকে ছিটকে বেরোল ছোটমাসি। রাঙামেসো তখন মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করেছে, আমার বৌ যে চলে গেল। এবার আমি কি করব "। 

একটু পরেই মেজমাসি আর রাঙামাসি সবাই কে গালাগাল দিতে দিতে ঘরে ঢুকল। দুজন মিলে রাঙামেসো কে হিড়হিড় করে টানতে টানতে পাতকুয়োর পাড়ে নিয়ে গিয়ে ফেলল। রাঙামাসি ধরে আছে মেসো কে। আর মেজমাসি বালতি করে জল তুলে ঝপাঝপ ঢালছে মেসোর মাথায়। তখন একদম শান্ত হয়ে বসে রয়েছে মেসো। এরপর ঘরে নিয়ে এসে তেঁতুলের সরবত খাওয়ানো হল মেসো কে। দুই মাসির মুখ থেকে তখনও গোলাগুলি বর্ষন চলছে। একটু পরেই ঘুমিয়ে পড়ল রাঙামেসো ।পরদিন সকালে আবার সেই আগের মানুষ। নেশার ঘোরে কি করেছে কিছুই মনে নেই । শুধু রাঙামাসি রেগে গিয়ে কথা বন্ধ করে রেখেছিল মেসোর সাথে। তবে সেটা মাত্র কয়েক দিনের জন্য। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics