পূর্ণতার নাম পরিবার।
পূর্ণতার নাম পরিবার।
পূর্ণতার নাম পরিবার
বীজ রোপন থেকে কচি পাতা মেলে পৃথিবীর আলো দেখার ইচ্ছা তো প্রত্যেক বীজের অন্তরে থাকে। যখন ওই বীজে মহিরুহে পরিণত হয়, ছায়াদানে, আশ্রয়দানে বা সৌরভ ছড়িয়ে মৌমাছি আকর্ষণ করে গুনগুন গান শুনতে পারে, মানুষের রঞ্জিত করতে পারে তখন তার ইচ্ছার পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে।
মানুষ পূর্ণতাপ্রাপ্তি পেয়ে থাকে পরিবার। পরিবারে কাটানো অসংখ্য স্মরণীয়,বরণীয় মুহুর্ত সবার জীবনে থাকে। সেদিন মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে।অধীর আগ্রহে বাড়ির সবাই অপেক্ষা করছে কি হয়,কি হয় ভাব নিয়ে। এখনকার মতো এতো বেশি পাশের হার ছিল না। আর ফল প্রকাশের সাথে সাথে ঘরে বসে ফল জানা যেত না। মোবাইল তখন আবিস্কৃত হয় নি। আমাদের গ্রামে ইলেকট্রিক কানেকশন আসেনি, টেলিফোনের কোন গল্পই ছিল না। ১৫ কিমি দূরে একটি গঞ্জে গিয়ে খবর জেনে আসতে হবে।
আমি বের হলাম সাইকেল নিয়ে। বাবা নিজের সাইকেলটা স্বেচ্ছায় আমাকে দিলেন সেদিন, তাই প্রথমেই নিজেকে মনে মনে গর্বিত করে তুললাম। যেটা এতদিন লুকিয়ে বের করে চালানো শিখেছি। সেখানে গিয়ে দেখি অনেক বড়ো লাইন, দাঁড়িয়ে পরলাম লাইনে। একঘন্টা লাইনে থাকার পর আমার পালা এলো। চিরকুটে লিখে রাখা রোল নম্বরটা ওই ভদ্রলোককে দিলাম। উনি খুঁজে আমাকে যে খবর দিলেন তাতে আমার বুকে একটা পরমাণু বোমা বাস্ট করলো। আমি খুব ভালো রেজাল্ট করে মাধ্যমিক পাশ করেছি। আমাদের পরিবার থেকে প্রথম মাধ্যমিক পাশ, তাও আবার এতো ভালো ফল করে।
আনন্দে আত্মহারা আমি, বাড়ির জন্য কয়েকটা আম কিনলাম অবশিষ্ট টাকা দিয়ে। উর্ধশ্বাসে সাইকেল চালাছি। রাস্তায় পলিপ্যাক গলে একটা একটা করে আম রাস্তায় কোথায় পড়ে গেছে টের পেলাম না। অনেকদূর আসার পর দেখি আর একটি আম বেঁচে আছে। ওকে পেকেটে ঢুকালাম। বাড়িতে পৌছে খবরটা দেওয়ার পর বাড়ি শুদ্ধ লোক নিয়ে বাবা পৌছে গেলেন মঙ্গলে। মঙ্গল অভিযান সফল হয়েছে। মাটির বাড়ির খড়ের চালের প্রত্যেকটি কড়ি-বর্গা তেঁতুল খাওয়া জিবের মতো লাফাচ্ছে। সেই মুহুর্ত ঠিক এভাবে কথায় বলে বোঝান সম্ভব নয়। একটা পরিবারে একটা পূর্ণতা প্রাপ্তির ঘটনা যে কতটা আনন্দ দায়ক হতে পারে তা কোন যন্ত্র দিয়ে পরিমাপ করা যায় না।