STORYMIRROR

Krishna Banerjee

Classics

4  

Krishna Banerjee

Classics

প্রঞ্জা তোমার জন‍্য

প্রঞ্জা তোমার জন‍্য

3 mins
406

 সুবিমল বাবুর জীবনটাই ছিল প্রঞ্জাময় চোখে তাকে চোখে হারাতেন তিনি। স্ত্রী প্রতিমা গত হবার পর তার একমাত্র আশাভরসা ছিল তার একমাত্র মেয়ে প্রঞ্জা। প্রঞ্জাই ছিল সুবিমল বাবুর কলমের জোর। এখন আর সুবিমল বাবু কলম ধরতে নারাজ। প্রতিমা ভালোবেসেছি প্রতিমাকে, হয়তো প্রানের চাইতেও অধিক কিন্তু প্রঞ্জাকে জন্মদিতে গিয়ে প্রতিমা সঙ্গ ছাড়ল সুবিমলের। স্ত্রীর মৃত‍্যুর জন‍্য প্রঞ্জাকে দ্বায়ী করে বছর তিনেক মেয়ের মুখ দর্শন করেনি সে কিন্তু যখন প্রঞ্জা আদআদ ভাষায় তাকে বাবা বলে ডাকতে আরম্ভ করে তখন তার সকল অভিমান জল হয়ে যায়। ধিরে ধিরে তার জীবনটা হয়ে ওঠে প্রঞ্জাময়। ভগবানের যে তার সাথে কি শত্রুতা । মেয়েকে বুকে ধরে একেরপর এক হিট গল্প তিনি তার পাঠকদের হাতে তুলে দিয়েছেন। তার গল্প পড়ার জন‍্য পাঠকরা যেন সদা প্রস্তুত। একটি আলোচনা সভায় তিনি বলেছিলেন কে বলেছে পাঠক নেই, যদি পাঠক নাই থাকতো তাহলে আমার এত লেখা পড়ে কে। আজ সেই কলম নির্বাক।

                            প্রঞ্জার বয়স তখন বারো বছর, এক কঠিন জ্বরে আক্রান্ত হলো সে। কিছুতেই জ্বর কমেনা তার। অবশেষে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট যেন অভিশাপ হয়ে নেমে এলো সুবিমল বাবুর জীবনে। ব্লাড ক‍্যান্সারে আক্রান্ত তার প্রতিমার মতো ছোট্ট প্রঞ্জা। একটা নোতুন যুদ্ধে ব্রতি হলেন তিনি। ভাক্তাররা কেউ অবশ‍্য আশ্বাস ছারেন নি তারা তাদের শেষ টুকু দিয়ে চেষ্টা করে ছিলেন। সুবিমল বাবুয়ো হয়তো সেই সময় কালটায় তার সবটুকু দিয়ে লিখেছিলেন যাতে অর্থের অভাব না হয়।

                                অবশেষে প্রঞ্জার দশ বছরের লড়াই শেষ হলো। শেষ হয়ে গেল ডাক্তারদের সকল প্রচেষ্রটা। শেষ হয়ে গেল সুবিমল বাবুর সকল অনুপ্রেরণা। সেই ছোট্ট প্রঞ্জা আজ আর বাবা বলে জড়িয়ে ধরেনা তাকে। সুবিমল বাবুর লেখার টেবিলে এখন আর তালে তালে কাগজ কলম নেই আছে সুধু একটি ফ্রেমের দুই পাশে দুটি ছবি। একধারে প্রতিমা আর একধারে প্রঞ্জা। বিশ্বাস করতে পারবেন না দুটো ছবির কি মারাত্মক মিল। প্রঞ্জা যেন প্রতিমার ছেলে বেলা। প্রতিদিন সকাল হচ্ছে সন্ধা হচ্ছে ছবির সামনে বসে দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে তার। বাড়ির ল‍্যান্ড লাইনে ফোনের পর ফোন এসেই চলেছে হরিকাকা ফোন ধরছে আর বলে দিচ্ছে দাদা বাবুর মনের অবস্থা ভালোনেই তাই সে করো সাথেই কথা বলতে চায়না। নিজের সেল ফোনটা ঘরের কোন কোনে পড়েরয়েছে সেটাও তার মনে নেই। হরিকাকা সেটাকে খুঁজে পেতে প্রতিদিন চার্জদিচ্ছে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে সুবিমলবাবু সেদিনতো বলেই দিলো ওটার প্রাণবাঁচিয়ে কি হবে হরিকাকা যাদের বাঁচাবার তাদেরি রাখতে পারলাম না।

                               এভাবেই বছর খানেক কেটে গেল, একদিন সুবিমল বাবু লেখার টেবিলে বসে চা খাচ্ছে হঠাৎ তার সেলফোনটা বেজে ওঠে। হরিকাকা হয়তো ভূল বসতো ফোনটা ঐ টেবিলে রেখে গিয়েছিল। সে ফোনটা ধরবার জন‍্য দু চারবার নক করলো হরিকাকাকে কোন জবাব না পেয় অবশেষে নিজেই ফোনটা ধরলো সুবিমল বাবু। অপর প্রান্তের কন্ঠ শুনে আতকে ওঠে সে এটা কার কন্ঠ শুনছে সে। কয়েক মুহুর্ত পাহাড়ের মতো স্তব্ধ হয়ে গেল সে আবার অপর প্রান্ত থেকে শোনা যায় শুনতে পাচ্ছেন। হুপাহু প্রঞ্জার কন্ঠ, সে বলল শুনছি। অপর প‍্রান্তথেকে ভেসে এলো লিখছেন না কেন? এভাবে কি কোন সমস‍্যার সমাধান হয় আমরা নতুন কিছুর জন‍্য অপেক্ষায় থাকলাম। সুবিমল বলে মাঝে মধ‍্যে তুমি আমায় ফোন করবে মা, তোমার কট্ঠে আমি আমায়র মেয়ের কন্ঠ উপলব্ধি করলাম। অপর প্রান্ত থেকে জবাব আসে করতেপাড়ি তবে একটা শর্ত আছে আপনাকে আবার লিখতে হবে। সুবিমল বলে প্রতিমার পর আমার প্রাণভোমরা ছিলো প্রঞ্জা সেটাও উড়েগিয়েছে কারজন‍্য লিখবো মা। মেয়েটি বলে আমার জন‍্য। সুবিমল বলে আচ্ছে তা হবে কিন্তু তোমার নাম কি। মেয়েটি জানায় প্রঞ্জা রায় ডটার অফ সুবিমল রায়। কয়েক মুহর্তের জন‍্য সঙ্গাহায় সুবিমল। হরি কাকা এসে ডাকায় তার সঙ্গা ফেরে ততক্ষণে ফোনের ওপার বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

                         🙏 সমাপ্ত 🙏


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics