পরিণতি
পরিণতি
পরিণতি
১৪/৫/২৩
সুবলবাবু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। একটা পুকুরের পাড়ে ছোট্ট দু কামরার একটি বাড়ি তৈরি করেছেন। চাকরির সুবাদে প্রতি মাসে যে মাইনেটুকু পান তাতে ঘরে কোন অভাব নেই। স্ত্রী স্বরূপা দেবীর তেমন কোন অভাব অভিযোগও নেই। তাদের দুটি মেয়ে মৌঝিলি ও মৌটুসী। মেয়ে দুটি দেখতে খুব সুন্দর। বেশ সুখে শান্তিতে তাদের মধ্যবিত্তের সংসার চলতে থাকে।
টেনেটুনে সংসার চালিয়েও স্বরূপাদেবী মেয়ে দুটির নাচ ও গান শেখার মাসমাইনে জোগাড় করেন। পড়া শোনার সাথে সাথে নৃত্য গানে পারদর্শিতা অর্জন করে দুটি কন্যা রত্ন। এখানে ওখানে যেখানেই নিত্য গানের যেসব অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা হয় সেখানেই স্বরূপা দেবী তার মেয়েটিকে নিয়ে হাজির হন। মেয়ে দুটি ও বাবা-মাকে নিরাশ করে না অধিকাংশ জায়গা থেকে পুরস্কারের সাথে সাথে সুনাম অর্জন করে বাড়ি ফিরে আসে। সুবলবাবু ও সরপদেবী সন্তান গর্বে বুক ফুলে ওঠে।
দেখতে দেখতে তাদের মেয়ে দুটি বড় হয়ে গেল। বড় মেয়ে মৌঝিলি মাধ্যমিক পরীক্ষায় বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে। পার্শ্ববর্তী স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ার জন্য ভর্তি ও হয়েছে। ছোট মেয়ে মৌটুসী পরের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। সেই বছর শীতের বই মেলায় অনুষ্ঠানের মঞ্চে কোন এক অপরিচিত পরিচালকের নজরে পড়ে সুবল সরুপার দুই কন্যা। তিনি তাদেরকে সিরিয়ালে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেন।
সুবল-স্বরূপার রঙিন ওই গ্ল্যামার জগতের প্রতি মধ্যবিত্ত শুলভ ভীতি থাকলেও লোভ ছিল ষোল আনা। তাই কয়েকদিনের মধ্যেই সেই প্রস্তাবে তারা রাজি হয়ে যায়। বড় মেয়ে মৌঝিলি সিরিয়ালে শুটিং করার জন্য পাড়ি দেয় হিমালয় পাহাড়ের কোন নির্জন গ্রামে। প্রথম দিকে বেশ কয়েকটি সিরিয়ালে কাজ করার সুযোগ পায় মৌঝিলি। সুবল সরুপার মধ্যবিত্ত সংসারে হঠাৎ আসে অর্থের প্লাবন সাথে আসে অহংকারের ফেনা। বাড়িতে আসে নতুন সদস্য বেশ ভালো দামের গাড়ি। তারা আর এখন নিজেদের মধ্যবিত্ত মনে করে না। মনে মনে ভাবে তারা বেশ বড়লোক হয়ে গেছে।
মৌঝিলির আগের মত আর স্বাভাবিক রূপ নেই। এখন তার রূপ ও সৌন্দর্য মেকআপে মোড়া। মৌমাছিদেরও আনাগোনা কমতে থাকে। সিরিয়ালে কাজ পেতে যথেষ্ট প্রতিযোগিতায় পড়তে হয় ওকে। অথচ স্ট্যাটাস মেনটেনের জন্য খরচ এখন অনেক বেড়ে গেছে বহগুন। তাই যে কোন উপায়ে তাকে অর্থ রোজগার করতেই হবে। রোজগারের এই নেশা তাকে বিপথে চালিত করে।
কয়েক বছরের মধ্যেই মৌঝিলির জীবনে নেমে আসে অকাল সন্ধ্যা। অবিবাহিত মৌঝিলি প্রাণের ভিতর অপর এক প্রাণ নিয়ে আত্মহত্যা করে। ততক্ষণে ছোট মেয়ে মৌটুসীও রঙিন জীবনের দিকে অনেকখানি পা বাড়িয়ে দিয়েছে। সুবল সরুপার এখন একমাত্র কামনা মৌটুসী ফিরে আসুক তাদের মধ্যবিত্ত সংসারে ঘর আলো করে। তাদের অর্থ চায়না, চায়না কোন গ্ল্যামার। পুকুর পাড়ে ছোট্ট ঘরে ছেলে-মেয়ের রূপের আলো হৃদয়কে রাখে অনেক ভালো।