প্রাপ্তি স্বীকার
প্রাপ্তি স্বীকার
জয়িতার আজ বড় আনন্দের দিন। আজ তার একমাত্র মেয়ে প্রাপ্তি ডাক্তারি পাশ করে দেশে ফিরছে। মেয়ের জন্য অপেক্ষারত জয়িতা কখন যেন নিজের অজান্তেই আবার ফিরে গেল তার অতীতের দিনগুলিতে।
তার সাথে সৌগতর সম্পর্ক ছিল অনেকদিনের। দুই পরিবারের সম্পূর্ণ মত ছিল দুজনের বিয়েতে। একদিন রাতে হঠাৎ করে জয়িতা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং বেশকিছু টেস্টের পর জানা যায় যে সে কোনদিন মা হতে পারবে না। এই শুনে সৌগতর বাড়ীরলোকেরা ওদের বিয়েটা ভেঙে দেয়। খুব কষ্ট হয়েছিল জয়িতার। মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু অতিকষ্টে সে আবার নিজের দৈনন্দিন জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করতে থাকল তাই স্কুল ছুটির পর বেশ কয়েকটা টিউসনি শুরু করল। যতক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকা যায় এই আর কি। শনিবারগুলিতে স্কুল ও পড়ানো শেষ করে ওর কলকাতা থেকে ফিরতে একটু বেশিই দেরি হয়। এরকমই একদিন রাতে ট্রেন থেকে নেমে রেললাইনের পাশের রাস্তা দিয়ে আসার সময় শুনতে পেল একটা সদ্যজাত শিশুর কান্না। রেললাইনের পাশের এই জায়গাটা রাত ন‘টার পর একদম ফাঁকা হয়ে যায় তাই হয়ত কেউ বাচ্চাটাকে দেখতে বা তার কান্না শুনতে পায়নি। এই ভাবতে ভাবতে সে এগিয়ে গেল বাচ্চাটার কাছে। একটি ফুটফুটে মেয়ে সন্তান। পরম স্নেহে তুলে নিল বুকে। আর সেদিন থেকেই সে এই মেয়েটির মা। অবাঞ্ছিত সন্তান বলে বাচ্চাটির খোঁজ করেনি কেউ। সেদিন থেকে কোনদিন জয়িতা আর দুঃখ পায়নি সৌগত তার জীবন থেকে চলে যাওয়ার জন্য। প্রাপ্তি এখনও পর্যন্ত জানে জয়িতাই তার মা। অনেকবার সে জিজ্ঞাসা করেছে তার নাম প্রাপ্তি কেন। কিন্তু জয়িতা ঠিকমত তার প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। কিন্তু আজ সে ভাবছে তার মেয়েকে বলবে সব কথা আর বলবে তাকে পেয়েই সে পেয়েছিল মাতৃত্বের স্বাদ। জয়িতা মনে মনে ঠিক করল আজকে প্রাপ্তির প্রাপ্তি স্বীকারটা সেরে ফেলবে সে।