STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy Thriller

প্রান্তিক প্রেম ষোড়শ পর্ব

প্রান্তিক প্রেম ষোড়শ পর্ব

3 mins
385

পর্ব ১৬

তখন সবে ভোর হয়েছে। পূব দিগন্ত লাল হতে শুরু করেছে । কৃষ্ণা সায়ন্তিকাকে বলল - সব তো শুনলাম। ভাগ্যিস আপনি এসেছিলেন তাই রক্ষে । এবার আপনি একটু বিশ্রাম নিন। আমি না হয় ডাক্তারবাবুর সঙ্গে দেখা করে বাড়ি যাব। দাদাকে যদি ছুটি দিয়ে দেয় সাথে করে নিয়ে যাব।

সায়ন্তিকা বলল - আপনিই বরং বাড়ি চলে যান । স্যারের জ্ঞান ফিরলে আমাকেই চাইবেন তো !

- কেন ? আপনাকে চাইবে কেন ? আমার দাদা; আমাকে না চেয়ে আপনাকে চাইবে কেন ?

- তা ঠিক। তবে কি জানেন ; বেগুনকোদরের ঘটনাগুলো এখনও তাঁর মাথায় আছে। তিনি জানেন তিনিই বৈদ্যনাথ আর আমি তাঁর স্ত্রী সায়নী। সেজন্য মাঝে মাঝেই আমাকে সায়নী ডেকে ভুল করেন । বৈদ্যনাথ মানে সেই স্টেশনমাস্টার তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল সায়নী। ঘটনাটা বলেছি। তাঁর মাথায় রয়েছে তিনি গতজন্মে বৈদ্যনাথ ছিলেন আর আমি ছিলাম তাঁর স্ত্রী।

- অবাক কথা বলছেন আপনি। একটা জলজ্যান্ত মানুষ ; সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে লালিত তাঁর এমন হঠাৎ করে ঐই ধারণা হবে কেন ? বলি, আপনি কিছু তুকতাক করেননি তো ?

সায়ন্তিকা একটু মর্মাহত হল । কিন্তু সময়টা উষ্মা প্রকাশের উপযুক্ত নয় বলে নরম সুরে বলল - এমন কথা বলবেন না। আমি ওনার বন্ধুদের খবর দিয়েছি। ওঁরা কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বেন। আপনি বরং তাঁদের মুখেই শুনে নেবেন! তখন যদি আপনার মনে হয় আমি এ'জন্য দায়ী তাহলে নাহয় আইনকানুন, পুলিশ, কাছারী করবেন। আমি তো পালিয়ে যাব না !

কৃষ্ণা আর কথা বাড়ায় না। বলে - আমিও থেকে যাই। এখন রোগী ছেড়ে যাওয়া ঠিক না।

ইতিমধ্যে ডা' সুবীর বল , প্রখ্যাত মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ হাসপাতালে এসে পড়েন । কৃষ্ণা আদ্যন্ত বর্ণনা করে ডাক্তারে সামনে। 

সায়ন্তিকা বলে - স্যার এমনটা আজ দুদিন ধরে হচ্ছে। 

তীর্যক দৃষ্টি হানে কৃষ্ণা।

- আমি তো কথা বলছি ।

ডা: বল সায়ন্তিকাকে বলেন - আপনি কে?

সায়ন্তিকা তখন আদ্যোপান্ত সব বিবরণ দেয় । ডা: বল চলে যান রোগী দেখতে।

একে একে কযলসাধন, সুকুমার, হরি বাগাড়িয়া হাসপাতালে চলে আসেন । কৃষ্ণাকে সকলে মিলে ঘটনার বিবরণ দেন। ডা: ডল ফিরে এসে বলেন - পেশেন্টের ভয়হেতু এ সব হয়েছে। উনি এখন সম্পূর্ণ

সুস্থ। আপনার বাড়ি নিয়ে গিয়ে কয়েকদিন বিশ্রামে রাখুন । তবু যদি কোন অসুবিধা বোঝেন - এই নিন আমার কার্ড ( কৃষ্ণার হাতে দিয়ে ) এতে আমার মোবাইল নং আছে কল দেবেন। বাড়িতে গিয়ে দেখে আসব। 

ওনারা মদনমোহনকে ছুটি করিয়ে বাড়ি নিয়ে গেলেন। তার আগে কৃষ্ণা বলল - দাঁড়ান, মাকে খবর দি। হয়তো সারা রাত চিন্তায় ঘুমোননি।

কিন্তু তার মা ফোন তুলছেন না। বারবার নো রিপ্লাই হয়ে যাচ্ছে। এক বিশাল চিন্তা মাথায় নিয়ে ওঁরা তৎক্ষণাৎ হাসপাতাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। 

কিন্তু তারপর ?

বাড়ি গিয়ে ওঁরা যা দেখলেন তা কি কেউ কল্পনাও করেছেন ?

মেন গেট এবং বাড়ির সদর দরজা রাতে যেমন খোলা ছিল এখনও তেমনি হাঁ করে রয়েছে। কৃষ্ণা একছুটে ভেতরে গিয়ে চিৎকার করে উঠল । চোর ! চোর ! 

সকলেই ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন । চোর তবে এখনও বাড়ির ভেতরেই আছে।

কৃষ্ণা মা মা বলে ডাকতে ডাকতে উপরে গিয়ে দেখে মায়ের মুখ বাঁধা, শুধু গোঙানী ছাড়া আর কিছু বোঝা যায় না । কমলসাধন, বাগাড়িয়া যেয়ে মুখের বাঁধন খুলে দিলেন । তারপর বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করে বললেন - আপনি চিন্তা করবেন না মা। আমরা এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। 

মা বললেন - মদন কোথায় ?

- ও একদম ঠিক আছে মা। 

কৃষ্না বলল ডাক্তারবাবু বলেছেন কয়েকদিন রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু চুরি হল কি করে ? তুমি সদর দরজা খোলা রেখেছিলে ?

- যা করবার তোরাই করেছিস। আমি কি ওগুলো কখনও করেছি। সুযোগ বুঝে দুজন লোক এসে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সব নিয়ে গেছে।

- বেশী কিছু নিতে পারেনি মা। মদন এসে বলল - ও তুমি চিন্তা কর না। শুধু যে দুটো আলমারিতে কাপড় জামা ছিল তার কিছু নিয়ে গেছে। তবে ধরা পড়ে যাবে। 

- কি ভাবে ?

- জানো না ? ছ ছখানা সিসিটিভি লাগানো আছে তাতে সব ধরা আছে। পুলিশকে দিলেই...

পুলিশে খবর দেওয়া হল । আর সিসিটিভির ফুটেজ মোবাইল ও ল্যাপটপে ডাউনলোড করে ওঁরা সবাই মিলে দেখতে লাগলেন।

- ও মা ! এ তো মন্টু গো ! আর একটা গোবরা। গোবর্ধন নস্কর। পাঁড় মাতাল একটা। হতচ্ছাড়া এমন বাড়িতে ঢুকল যেখানে ছ ছখানা পোষ্য । আসুক পুলিশ। বাহাদুরি বের করছি! মদনমোহন বীরত্বের সঙ্গে কথাগুলো বললেন। 

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics