STORYMIRROR

Nikhil Mitra Thakur

Classics

4  

Nikhil Mitra Thakur

Classics

ফতেমা ওয়াজেদ

ফতেমা ওয়াজেদ

3 mins
281

ফতেমা ওয়াজেদ

পরাধীন ভারতবর্ষের মেদিনীপুর শহরের একজন নামকরা উকিল ছিলেন আব্দুল ওয়াজেদ সাহেব। তার বোন ছিলেন ফতেমা ওয়াজেদ। ফতেমাদেবীর বিয়ে হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তার স্বামী তাকে তালাক দেন। সেই সময়ে সমাজ ব্যবস্থা এমনই ছিল যে তালাক দেওয়া মহিলাদের সমাজ পরিত্যক্ত হিসেবে বিচার করা হতো। বিনা দোষে অন্ধ সামাজিক বিচারের পরিহাসে ফাতেমা দেবীকে সমাজ পরিত্যক্ত হয়ে জীবন যাপন করতে হতো।

তিনি সেলাই ফোঁড়াই করে সামান্য কিছু রোজগার করতেন। আর সেই রোজগারে দিনযাপন করতেন। এই সূত্রেই অপরূপা দেবীর বাড়িতে ফাতেমা দেবীর যাতায়াত শুরু হয়েছিল এবং তাদের পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। অপরূপাদেবীর বাড়িতে তখন কিশোর ক্ষুদিরাম থাকতেন। খুব স্বাভাবিকভাবে ফতেমা দেবী অনেকদিন থেকে কিশোর ক্ষুদিরামকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন।

ক্ষুদিরামের সাহস, বীরত্ব, আদর্শনিষ্ঠ,হার না মানা মনোভাব ফতেমাদেবীকে কিশোর ক্ষুদিরামের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই কিশোরটি দেশপ্রেমের এক অগ্নিশিখা। জাত ধর্মের সমস্ত রকম ব্যবধান ঘুচিয়ে তিনি ক্ষুদিরামকে ভাইয়ের আসনে বসিয়ে পুজা করতেন। স্নেহ, শ্রদ্ধা,ভক্তি সহকারে তিনি প্রায়ই নিজের বাড়িতে ডেকে ক্ষুদিরামকে সাধ্যমতো খাওয়াতেন।

ফতেমাদেবী বুঝতে পেরেছিলেন ক্ষুদিরামরা অন্য জাতের মানুষ। দেশের প্রয়োজনে এরা নিজের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি,নিরাপদ আশ্রয় সবকিছু অনায়াসে বিসর্জন দিতে পারে। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি এদেরকে মোহিত করে না। তিনি আরো উপলব্ধি করেছিলেন ভারতবর্ষের সকল নারীর উচিত এদের মত কিশোরদের বাঁচিয়ে রাখা। কেননা এরা বাঁচলে তবেই দেশ বাঁচবে। সমাজ ও সভ্যতা বিকাশের পথে এগিয়ে যেতে পারবে।  

অন্যদিকে ক্ষুদিরামও সমাজে অবহেলিত লাঞ্ছিত মানুষদের দুঃখ কষ্ট একেবারেই সহ্য করতে পারতো না। তাই সে ফতেমা দিদির প্রতি সমাজের এই নিষ্ঠুর আচরণ মেনে নিতে পারেনি কোনদিন। আর তার এই মনোভাবই সমাজ পরিত্যক্তা বিধর্মী ফতেমা দিদির কাছে তাকে টেনে নিয়ে যায়। ধীরে ধীরে উভয়ের মধ্যে এক পবিত্র ভাই বোনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

মজ:ফরপুর বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় ক্ষুদিরাম তখন বিচারাধীন বন্দী হিসেবে মজ:ফরপুর জেলের এক অন্ধকার কুঠুরি বা সেলে আছেন। নানা বাধ্যবাধকতায় ও ইংরেজ শাসকের বিচারের ভয়ে সেই সময় বাংলা, এমনকি মেদিনীপুর থেকে কেউ ক্ষুদিরামকে দেখতে মজ:ফফরপুরে যেতে সাহস পায়নি।

অমৃতলাল ও অপরূপাদেবীর অনুরোধে ও দেশপ্রেমী আত্মভোলা ভাই এর টানে সুদূর মজ:ফরপুরে প্রাণের ক্ষুদিরামকে দেখতে গেলেন বিধর্মী পাতানো দিদি ফতেমা । অথচ ক্ষুদিরামের এই দিদিকে ঘিরে কত কুকথা মানুষ রটিয়েছিল। আর যখন সারা মেদিনীপুর বাসি কেউই মজ:ফরপুরে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারছে না তখন ফতেমা দিদি একাই অত দূরে ভাইটাকে শেষ দেখার জন্য মজ:ফরপুরে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন।

এই ফতেমাদেবীই মজ:ফরপুরের বিখ্যাত আইনজীবী কালিদাস বসুকে ক্ষুদিরামের হয়ে মামলা লড়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। অবশ্য অমৃতলাল ও অপরূপাদেবীর নির্দেশেই ফতেমাদেবী কালিদাস বাবুকে মামলা লড়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। বলা বাহুল্য এই ফতেমা দেবীই ক্ষুদিরামের মামলার যাবতীয় খরচ বহন করেছিলেন।

কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ সমাজের অন্ধ বিচারে

সমাজ পরিত্যক্ত যে নারীর হৃদয়ে ছিল উদারতা, আধুনিকতা ও মানবিকতার এক দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র তিনি হলেন ফাতেমা ওয়াজেদ। ফতেমাদেবী স্বদেশী কোন বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য না হয়েও,বিপ্লবের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা না নিয়েও পরোক্ষভাবে পরাধীন ভারতমাতাকে স্বাধীন করার জন্য নিজের সর্বস্বটুকু দিয়ে চেষ্টা করে গেছেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এইসব অগ্নিকন্যাদের অবদান কোন অংশেই কম নয় এবং তা চিরস্মরণীয়। ইতিহাসের পাতায় তাদের অবদানের কোন উল্লেখ নেই।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics