সাইনি রায়

Comedy Classics Fantasy

3  

সাইনি রায়

Comedy Classics Fantasy

পেত্নি সংবাদ

পেত্নি সংবাদ

7 mins
846



আমাদের বাড়ির পিছনে একটা ছোট পুকুর আছে।এখন অবশ্য সেটা ডোবায় পরিণত হয়েছে।কিছুদিন আগেও দেখেছি লোকজনকে ছিপ ফেলে মাছ ধরছে ওখান থেকে।এখন সেটাই বুজিয়ে দেওয়ার তাল করছে।তাছাড়া খেজুর গাছ,ডুমুর গাছ সহ নানা ধরণের গাছ আছে পুকুর লাগোয়া ছোট্ট জায়গাটায়।সেখানে নানারকম জানা-অজানা পাখি আসে যা সাধারণত শহরে খুব একটা দেখা যায় না।কাক,বক,মাছরাঙা,পানকৌড়ি তো আছেই।আজ শুধু সুসভ্য মানুষ দুটো পয়সার লোভে নিজের মানসিকতাকে বেচে দিয়ে সুন্দর জীববৈচিত্রকে নষ্ট করতে বসেছে।দিনের বেলা জানলা দিয়ে বা ছাদ দিয়ে ওই সবুজ যতটা সম্ভব উপভোগ করি আর রাতের বেলা শুধুই অন্ধকার আর নিঃঝুম।তবে পাশের পাড়ার আলোগুলো যখন জ্বলে তখন দুর থেকে ও পাড়ার রাস্তা-ঘাট,বাড়ি-ঘর সবই দেখা যায় ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে।

রাতের খাবার সেরে সবে নিজের ঘরে গিয়ে মশারিটা টাঙাচ্ছি,এমন সময় চোখ গেল জানলার বাইরে।পড়শি পাড়ার রাস্তার আলোগুলো জ্বলছে বলে বাড়ি-ঘর-রাস্তা সবই দেখতে পাচ্ছি,কিন্তু সঙ্গে ও কে?স্পষ্ট দেখতে পেলাম-কে একজন মহিলা সাদা কাপড় পড়ে,তার লম্বা চুল খুলে,ঘাড়টা একটু সামান্য ডানদিকে হেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু একি!যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানটায় বাড়ি আছে ঠিক কথা কিন্তু দাঁড়াবার মতো ছাদ বা বারান্দা নেই।অথচ কোনো বাড়িরই সামনে দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে।বুঝতে বাকি রইল না যে সেই নারীমূর্তি আদতে দাঁড়িয়ে নেই আসলে হাওয়ায় ভাসছে,আর তার মুখটা আমার জানলার সোজাসুজি।ভূতে আমি ভয় পাইনা বটে,কিন্তু জীবনে এরকম অভিজ্ঞতা এই প্রথম হওয়াতে একটু ভয়ই পেয়ে গেলাম।কাউকে কিছু জানালাম না।ভয়ে ভয়েই শুতে গেলাম।ঘুম হল না।মাঝে মাঝে একটু তন্দ্রা মতো আসছিল শুধু।তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব কেটে গেলে আবার উঠে সাহস করে বাইরের দিকে তাকালাম।তখনও দেখলাম সেই নারীমূর্তি ওই একইভাবে এদিকেই তাকিয়ে।এরকম করে সারারাত কাটল।কতবার উঠলাম,বাইরে দেখলাম কিন্তু প্রত্যেকবারই সেই একই দৃশ্য।বিছানায় বসে ভাবতে থাকলাম,যেমন আমি ভূতে বিশ্বাস করিনা,তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করি,ফাজলামি করি অশরীরীদের নিয়ে;তাই বোধহয় স্বয়ং পেত্নি এসেছে তাদের অস্তিত্ব বোঝাতে আমার কাছে।কি গেরো রে বাবা!

সকাল তখন আটটা,মিনুমাসি কাজে এসেছে।আমি শুয়ে শুয়ে ওপরের ঘর থেকে শুনতে পাচ্ছি মিনুমাসির বাঁজখাই গলা,"জানো তো বউদি ওপাড়ায় কি হয়েছে?"

আমি অন্যসময় হলে বড় একটা কান পাতিনা মিনুমাসির কথায়।কারণ মিনুমাসি ছড়াতে ভালোবাসে।সবার হাঁড়ির খবর রাখে।আমাদের পাড়ার পিটিআই।কিন্তু কাল রাতের পর থেকে আজকের ব্যাপারটা একটু অন্যরকম।আমি ধড়মড়িয়ে কোনোরকমে খাট থেকে উঠে সটান দৌড় লাগালাম নিচে।তারপর ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মিনুমাসিকে প্রশ্ন করলাম,"কি হয়েছে পাশের পাড়ায়?ভূত দেখা দিয়েছে?"

মিনুমাসি ব্যাজার মুখ করে একটু গম্ভীর হয়েই কথাগুলো আমায় বলল,"জানি তুমি ভূতে বিশ্বাস করো না কিন্তু ওনাদের এভাবে অশ্রদ্ধা করতে নেই।"এই বলে চোখদুটো বুজে দুহাত জড়ো করে কপালে ঠেকিয়ে ভক্তিভরে প্রণাম করে বলল,"বিশ্বাস করো তেনারা আছেন।"এই বলে পাশের পাড়ায় কিভাবে চোর ধরা পড়েছে,সে গল্প সবিস্তারে বলতে শুরু করল।


আমি কি করে মিনুমাসিকে বোঝাই যে অশ্রদ্ধা নয়,ভূতেদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই আমি প্রশ্নটা করেছি।কিন্তু সবাই যেহেতু জানে যে আমি ছোটবেলা থেকেই ভূতে ভয় পাইনা,তাই এই বয়সে এসে হঠাৎ ভূতে ভয় পাচ্ছি শুনে সবাই যদি প্যাঁক দেয় তাই কাল রাতের ব্যাপারটা সবার কাছে বেমালুম চেপে গেলাম।তারপর আবার গুটিগুটি পায়ে আমার ঘরে ফিরে এলাম।সাহস করে বাইরের দিকে তাকালাম।একি!পেত্নি কই?পেত্নি হাওয়া।যাক্ বাবা বাঁচা গেল।তারপর আরো কতবার ওদিকে দেখলাম,পেত্নি আর ফিরে আসেনি।ধড়ে প্রাণ ফিরে এল।দুপুরে ভাত খেতে খেতে ভালো করে ভাবলাম,ভূত নিয়ে যত পড়াশোনা করেছি,সিনেমা দেখেছি,এমনকি মিনুমাসির কাছ থেকেও শুনেছি ভূতেদের বেশ কিছু বিশেষত্বের কথা।এই যেমন-ভূতেদের দাপট নাকি রাতের বেলাতেই বেশি,দিনের বেলায় নৈব নৈব চ ইত্যাদি।এই রে তবে কি আবার রাতের বেলা পেত্নি দর্শন হবে নাকি রে বাবা?না হলেই ভালো।কিন্তু হে আমার ফাটা কপাল!সন্ধ্যে নামতেই ওপাড়ার আলোগুলো জ্বলতেই,আবার পেত্নি দেখা দিল সেই একই রূপে।নিশ্চিন্ত আর হওয়া গেল না।দিনে দেখা নেই অথচ রাতে দেখা দেয়,নিশ্চিৎ পেত্নিই বটে।


কাল রাতে ভয়ে মাথা কাজ করেনি।ফলে জানলাগুলো খোলাই ছিল।আজ আর খোলা রাখতে সাহস পেলাম না।ওই গরমে ঘরের সব জানলাগুলো বন্ধ করে দিলাম।কিন্তু কাঁচের জানলা দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেলাম পেত্নি সেই একইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে।আমিও দিলাম পেত্নির মুখের উপর সপাটে জানলার পর্দাগুলো টেনে।তবু বুক দুরু দুরু করতে লাগল।অশরীরীকে কি ওভাবে আটকানো যায়?একবার ভাবলাম নিচের ঘরে গিয়ে মায়ের সাথে ঘুমাই।কিন্তু তারপর আবার নিজের সাহসের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে বুকে বল এনে এ ঘরেই ঘুমাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।ঘরের টিউবলাইটটা জ্বালিয়ে রাখলাম আর মোবাইল ফোনের ভলিউম কমিয়ে দিয়ে,দক্ষিণেশ্বরের কালীপুজোর ভিডিওটা চালিয়ে দিলাম।কিন্তু স্বস্তি পেলাম না। সারারাত বিছানায় জেগে বসে কাটাতে হল।


আমার দশা এমন হল ভাঙব তবু মচকাবো না।ভাঙা সাহসে ভড় করে আবার তৃতীয় দিন ওই ঘরেই শুতে গেলাম।তবু বাড়িতে কাউকে কিছু জানালাম না।সেই আবার একই কেলেঙ্কারি।জানলা দিয়ে পেত্নি আমায় দ্যাখে,আমি পেত্নিকে দেখি।আমি জানলা বন্ধ করে আবার পর্দা টেনে আলো জ্বালিয়ে মোবাইলে ভজন চালালাম।দুদিন ঘুম হয়নি বলে আজ একটু বেশিই ঘুম ঘুম ভাব।পাখাটা ফুলস্পিডে চালিয়ে গায়ে চাদরটা দিতেই কখন জানি চোখদুটো বুজে এল।ঠিক এমন সময় পেত্নি ওপাড়া থেকে সোজা আমার জানলার কাছে চলে এল।জানলাটা অবশ্য বন্ধ কিন্তু পর্দাদুটো সরে গেল,আর আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম,পেত্নির হাতটা জানলা ভেদ করে আস্তে আস্তে ঘরের ভিতর প্রবেশ করছে আর আমার গলা টিপতে আসছে এবং নাঁকি গলায় 'হিঁহ্হিঁহ্হিঁহ্' করে হাসছে।আমি তো 'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা' বলে ভয়ে হাতদুটো জোড়া করে কাঁদতে কাঁদতে পেত্নিকে বলতে লাগলাম,"হে পেত্নিদেবী আমায় ক্ষমা করুন।আমি বিশ্বাস করি আপনি মানে আপনারা আছেন।দয়া করে আমায় মারবেন না। "এই বলে আরেকটু হলেই খাট থেকে প্রায় পড়তেই যাচ্ছিলাম, মশারিটা দিল বাঁচিয়ে।

চোখ খুলে দেখি ঘর ফাঁকা,জানলার পর্দাটাও দেওয়া,পাখি ডাকছে মানে ভোর হয়েছে।তাহলে কি স্বপ্ন দেখছিলাম?ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়াটা একটু হলেও থামল।কিন্তু আবার বুক দুরুদুরু করতে শুরু করল এই ভেবে যে,ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়!না আজ রাতে আর এ ঘরে নয়।মনে মনে ঠিক করলাম,নিচেই শোব বটে কিন্তু সত্যিটাও কাউকে বলা চলবেনা।বললেই সবাই ভীতু ভাববে।এত তাড়াতাড়ি আমায় উঠতে দেখে স্বাভাবিক ভাবেই মা একটু অবাকই হয়ে গেল।"কিরে এত তাড়াতাড়ি উঠলি যে?ঘুম হয়নি নাকি?"

আমিও আর দেরি না করে ঝটপট উত্তর দিয়ে বসলাম,"হ্যাঁ কদিন ধরেই ভালো ঘুম হচ্ছেনা কেন জানিনা।"বলল,"সে কি রে?শরীর খারাপ নাকি?"তারপর কপালে হাত দিয়ে বলল,"না জ্বর তো নেই।"

আমি বললাম,"না সেসব কিছু না।এমনিই কদিন ঘুম হচ্ছেনা।"

মা আমার মুশকিল আসান করে দিয়ে বলল,"এক কাজ কর কদিন নিচে শুয়ে দেখ।অনেক সময় বিছানা বদল করলে ভালো ঘুম হয়।আর কদিন পরেই সঞ্জয়ের বিয়ে।শরীরটাও তো ঠিক রাখতে হবে।ভালো ঘুম না হলে শরীর ঠিক থাকবে কি করে?"

আমি মায়ের কথা শুনে মানে মানে বেঁচে গেলাম।সে রাত থেকেই মায়ের সঙ্গ নিলাম।কিন্তু সূর্যডুবির পর আবার আমার ঘরে কোন দরকারে গেলেই জানলা দিয়ে দেখতে পেতাম পেত্নি সেই একদৃষ্টে এদিকেই তাকিয়ে।বিয়েবাড়ি এগিয়ে এল।আর নিচে মায়ের সাথে ঘুমোবার ফলে পেত্নির দুশ্চিন্তাটাও অনেকটা মাথা থেকে গেছে।কিন্তু পুরোপুরি যায়নি কারণ আমি ওই ঘরে শুই বা না শুই,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামলেই পেত্নি কিন্তু তার নিয়মমাফিক ঠিক দর্শন দেয় আর সেটা,প্রয়োজনবশতঃ ওই সময়ে ওই ঘরে ঢুকলেই বোঝা যায়।

সঞ্জয়দা আমার খুড়তুতো দাদা।থাকে বাগবাজারে।খাস কুমোরটুলি এলাকা।তাই কুমোরটুলির প্রতিমা তৈরির ছবি তোলার লোভ কিছুতেই ছাড়তে পারলামনা।ডি.এস.এল.আরটা তাই সঙ্গে নিয়ে নিলাম।বিয়ের একদিন আগেই সব আত্মীয়রা জড়ো হলাম বাগবাজারে ওদের বাড়িতে।আমি তো সারাটা দিনই কুমোর পাড়ায় ছবি তুলতে ব্যস্ত।বিষয়টা দাদার চোখ এড়াল না।বলল,"কিরে আমার বিয়েতে এসেছিস না ঠাকুরের ছবি তুলতে এসেছিস?"

আমিও হেসে উত্তর দিলাম,"দুটোই।তাছাড়া তোমার বিয়ে তো কাল।চিন্তা কোরোনা।কাল থেকে আমি তোমার পার্সোনাল ফটোগ্রাফার হয়ে যাব।"

বিয়ে কদিন বেশ ভালোই কাটল।বৌভাতের দিন রাতে কিছুতেই ওরা আসতে দিল না।তাই পরদিন ফেরা গেল।সকালে বেরিয়ে দুপুর দুপুর ফেরবার ইচ্ছা থাকলেও,ফিরতে ফিরতে সেই রাতই হয়ে গেল।বাড়িতে ঢুকে আমার ঘরে গিয়ে ক্যামেরাটা সবে আলমারিতে তুলতে যাব এমন সময়ে মাথায় কি জানি কি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে গেল যে ইচ্ছা হল পেত্নিকে একটু ভালোভাবে কাছ থেকে দেখি।বিশেষ করে ওর মুখটা।কারণ অত দুর থেকে ওর সাদা শাড়ি, খোলা চুল বোঝা গেলেও মুখটা বেশ অস্পষ্ট দেখায়।এমনকি সেদিন যখন পেত্নি গলা টিপতে আসছিল তখনও ওর মুখটা দেখতে পাইনি।মনকে কিছুতেই বোঝাতে পারলাম না,উল্টে জেদ চেপে গেল যে-ডি.এস.এল.আর দিয়ে পেত্নির মুখদর্শন করতেই হবে।একটু একটু ভয়ও করতে লাগল এই ভেবে যে যদি সেদিনের মত পেত্নি কাছে চলে আসে!তবু কুছ পরোয়া না করেই একটু বেপরোয়া হয়েই ডি.এস.এল.আরে বড় লেন্সটা লাগিয়ে তাতে চোখ রাখলাম।দুরে দেখা যাচ্ছে পেত্নিকে।ফোকাস বাড়াতে লাগলাম।পেত্নিও বড় হতে লাগল।জয় মা,বলে ফোকাস আরো বাড়ালাম,পেত্নিও আরো বড় হতে লাগল।এইভাবে ক্রমবর্ধমান ফোকাসের সাথে পেত্নিও বৃদ্ধি পেতে পেতে,ওমা পেত্নি হাওয়া!সে কি?অবশ্য আমার পেত্নির মুখদর্শনের ইচ্ছা থাকলেও পেত্নিরও যে সেই একই ইচ্ছা থাকবে এমন কোন কথা নেই।পেত্নিরও তো একটা ব্যক্তিত্ব আছে।পেত্নি বলে কি মানুষ নয়?ইয়ে মানে মানুষ মরেই তো পেত্নি হয়।এসব আজগুবি কথা ভেবে আমি একটু অবাকই হয়ে গেলাম ক্যামেরায় পেত্নিকে দেখতে না পেয়ে।আবার ফোকাস কমাতে লাগলাম।কিন্তু যাহ্ বাবা,আবার পেত্নি ধরা দিচ্ছে।এ কেমন কথা?যেই ফোকাস বাড়াচ্ছি অমনি পেত্নি হাওয়া আর যেই ফোকাস কমাচ্ছি আবার পেত্নি হাজির।এরকম করে বেশ কিছুক্ষণ চলতে লাগল।প্রত্যেকবারই সেই একই কেস।ফোকাস বাড়ছে তো পেত্নি পালাচ্ছে আর ফোকাস কমাচ্ছি তো পেত্নি ধরা দিচ্ছে।পেত্নি যেন আমার সাথে চোর পুলিশ খেলছে,শুধু দুজনের শুভদৃষ্টি হচ্ছনা ।তারপর আবার মনঃসংযোগ বাড়িয়ে বেশ ভালোভাবে বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করলাম।দেখলাম, ক্যামেরার ফোকাস বাড়াতে বাড়াতে এবং পেত্নির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বাড়তে বাড়তে প্রত্যেকবারই পিছনের বাড়ির দেওয়ালটায় মিশে যাচ্ছে আবার ক্যামেরার ফোকাস কমালে পেত্নিও সেই পুরনো চেহারায় ধরা দিচ্ছে।ওহ্ হরি,এই বলে আমি খুব জোরে জোরে হাসতে লাগলাম।হাসির ঠেলায় আরেকটু হলে হাত থেকে ক্যামেরাটাই যেত পড়ে।উফ্ বাবা রে বাবা,এর জন্যই আমি তিনদিন নাওয়া-খাওয়া ভুলে ঘুমাতে পারিনি!হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে এল।পেত্নি মহাশয়া এই কদিন আমায় বেশ ভালোই বেকুব বানিয়েছেন।ব্যাপারটা আর কিছুই নয়,একটু বুঝিয়ে বলি-আসলে ওখানে একটা বাড়ি আছে,আগেই বলেছি।আর ওই বাড়ি লাগোয়া একটা লাইট আছে,যেটা দুর থেকে বোঝা যায় না।যখন সন্ধ্যে হয় রাস্তার বাকি লাইনগুলোর সাথে ওটাকেও জ্বালানো হয়।বাড়ির রংটা পুরো সাদা,আর ওই লাইটের আলো এমনভাবে ওই বাড়ির সামনের অংশে পড়ে যে দুর থেকে যেন মনে হয় বুঝি কোন নারীদেহ।আর বাড়ির অ্যাসবেস্টসের ছাদের কোনাকুনি আকার যেখানে আলো না পড়ার জন্য কালো দেখায়,সেটা দুর থেকে দেখলে মনে হয় বুঝি কোন মহিলার খোলা চুল।আর অ্যাসবেস্টসের কোনাকুনি অবস্থানের একদিকটা নীচু আর অন্য দিকটা উঁচু বলেই মনে হয় যেন কেউ ঘাড় হেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বুঝি।এই পুরো ব্যাপারটা যেহেতু বাড়িটার সামনের দেওয়ালে দেখা যায়,যেখানে না আছে বারান্দা না আছে ছাদ,তাই মনে হয় কোন নারীমূর্তি হয়ত হাওয়ায় ভাসছে।উফ্ সবটা বুঝে উঠে আমি নিজেই নিজের হাসি আর চেপে রাখতে পারছিনা।এবার থেকে রোজই অকুতোভয় হয়ে পেত্নিকে দেখার সিদ্ধান্ত নিলাম।বাড়িতে আর ব্যাপারটা জানাইনি।বিশেষ করে আমার দাদার জন্য।ছোটবেলায় ও ভূত কেন মুুুখোশ পড়া মানুষ টিভিতে দেখলেও ক্যালেন্ডারে গিয়ে মুখ লোকাত।আর আমি সেসব কথা এখনও লোকের কাছে রাষ্ট্র করে বেড়াই।ও এসব কথা জানতে পারলে কি আমায় ছেড়ে দেবে?এক্ককেবারেই না বরং সবার কাছে গাবিয়ে বেড়াবে।তাই ব্যাপারটা এখানেই ধামাচাপা দিয়ে দিলাম।

---------------------------------------------------------------------


        



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy