নতুন সর্ম্পক
নতুন সর্ম্পক
—মৌ তোমাকে তখন এত করে বললাম ফাইনালাইজ করার আগে এসে একবার নিজের চোখে ফ্ল্যাটটা দেখে যাও। আসবে যাবে ফ্ল্যাইটে তাও নাকি তুমি ছুটিই পেলেনা। আর এলে বিয়ের একদিন আগে। আর বৌভাতের পরদিনই আমরা এখানে সিফ্ট করলাম। তবুও তো আমি চেষ্টা করছি। এত তাড়াতাড়ি কি সব হয়?—আমি সব মানছি অনি। কিন্তু তুমি তো জানো যে ট্রান্সফার নিলাম বলে আমাকে আসার আগে ওখানকার সব কাজ শেষ করে আসতে হলো তাই ছুটি পেলাম না। তাই বলে তোমার নিজের একটা রুচি থাকবেনা? ফ্ল্যাট পছন্দ করলে তাও এমন জায়গায় যেখানে পাশেই একটা বস্তি। জাস্ট ভাবা যায়না।
—মৌ তুমি ভুল করছ ওরাও তো মানুষ। আর ওরা তোমাকে কোনোরকম বিরক্ত করছেনা। আর এই যে রতনের মা ও রতন আমাদের ঘরের ও এই অ্যাপার্টমেন্টের সব কাজ করে ওরাও ঐ বস্তিতেই থাকে। ওরা না থাকলে এত সহজে কাজের লোক পেতে?
—তোমাকে কিছু বলাই বেকার বুঝলে অনি। যাক, আমি বেরোলাম। ফিরতে রাত হবে, মায়ের কাছে যাবো।
রাত এগারোটার সময় অফিসের গাড়ি মৌকে মেন রোডে নামিয়ে দিয়ে গেল।
মেন রোড থেকে বেশ কিছুটা হেঁটে এসে তারপর মৌদের অ্যাপার্টমেন্টে আসার গলিতে ঢুকতে হয়। মেন রোড থেকে হেঁটে আসার সময় বুঝতে পারল দুটো লোক বাইক এ করে ওর পিছু নিয়েছে এবং ওকে উদ্দেশ্য করে বাজে বাজে কথা বলছে। একটু রাত
হলেই এদিকটা ফাঁকা হয়ে যায়। সে তাড়াতাড়ি হাঁটতে শুরু করল। লোকদুটোও বাইকের গতি বাড়ালো। প্রচন্ড ভয় করতে লাগলো। হঠাৎ দেখল রতন পিছন থেকে এসে মৌয়ের সামনে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গে তার থেকে বড় আরো একটি ছেলে রয়েছে। ওদের দেখে বাইকটা একটু দূরে চলে গেলো।
রতন বলল ‘দিদি কখন থেকে তোমাকে দেখছি, তুমি কি তাড়াতাড়ি হাঁটছ। তুমি এত ঘামছ কেন?শরীর খারাপ লাগছে? চল তোমাকে বাড়ি পৌঁছেদি। ভয় পেয়োনা এটা আমার দাদা।
মৌ যে বস্তি কে সহ্য করতে পারেনা সেখানের দুটি ছেলের কথাতেই সে আজ ভরসা পেলো। সে ওদের সাথে বাড়ির পথে পা বাড়ালো। মৌকে ওদের সাথে যেতে দেখে বাইকের লোক দুটোও তাড়াতাড়ি বাইক নিয়ে চলে গেল। মৌ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জিজ্ঞাসা করল ‘তোরা এত রাতে কোথায় গিয়েছিলি?’ রতন বলল ‘মা পাশের পাড়ায় যে বাড়িতে কাজ করে ওরা রাতে ভাত দেয় তাই আমি আর দাদা আনতে গিয়েছিলাম। ওদের সাথে কথা বলতে বলতে মৌ অ্যাপার্টমেন্টের সামনে পৌঁছে গেল। মৌ বলল ‘এবার তোরা বাড়ি যা, আমি যেতে পারবো।’ ওরা নিজেদের বস্তির দিকে যেতে পা বাড়ালে মৌ ওদের ডেকে বলল ‘শোন আমি যদি তোদের কিছু দিই নিবি?’ এই কথা শুনে ওরা একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে শুরু করল। এবার মৌ নিজেই ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে ব্যাগ থেকে দুটো রাখী বের করে ওদের দুজনের হাতে বেঁধে দিল। অফিসে যাওয়ার পথে কিনেছিল ভাইকে পরাবে বলে কিন্তু অফিসের কাজে দেরি হয়ে যাওয়ায় আর বাপের বাড়ি যেতে পারেনি সে।