নষ্টা
নষ্টা


১।
উলঙ্গ শরীরটা সামনে টোপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । লজ্জা শরম কিছুই নেই । মনের ভেতরটা কেমন ঝিনঝিনিয়ে উঠছে আজ । বেশ তো আজ রাতের জন্য তাকে কিনে নিয়েছি আমি কিন্তু তাই বলে কি ওকে একটুও সম্মান দিতে নেই । এরকম হাজার কথা ভাবছিলাম যখন , তখন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সোনাগাছির সেই বেশ্যাটি আমায় বলল , কি ড্যাবড্যাব করে দেখে যাচ্ছিস আমায় ? শরীরটা তো খুলে দিয়েছি । খাবি তো খা না । এত বড় বড় মাই , একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না টিপতে , অন্তত হাত দিতে । কেমন যেন শরীর জুড়ে কাঁটা দিয়ে উঠল । কত সহজে এই কথাগুলো বলছে , তাই ভাবছি । ও কি বোঝে না কি চাইছে ও আমার কাছে । সাহস করে উঠে গিয়ে ঘাড়ের কাছটা ছুঁয়ে দেখলাম । অমনি আমার দিকে ঘুরে বলল , এত লজ্জা কেন রে তোর ?? লজ্জা পেলে কি করতে এসেছিস এখানে ??
কিছুই বলতে পারলাম না তৎক্ষণাৎ । তবে আস্তে আস্তে বিছানায় এনে বসালাম ওকে । একটা চাদর দিয়ে শরীরটা ঢেকে দিয়ে প্রশ্ন করলাম , তোমার বাড়ি কোথায় ? বললো , এই কলকাতাতেই । আমি বললাম , বাড়িতে কেউ জানে না তুমি এসব করছ ? দেখলাম , বাড়ির নাম শুনেই ওর চোখের কোনে দু ফোঁটা জল দেখতে পেলাম । বললো , বাড়িতে কেউ নেই ... বাবা , মা দুজনেই মারা গেছে । আর এক বয় ফ্রেন্ড ছিল , তারও কেউ নেই - দুটি বোন শুধু । তাদের দেখাশোনার জন্য একটা ফার্মে চাকরি করত । একদিন ট্রেন থেকে পড়ে দুটো পা কাটা পড়ে । সঙ্গী হিসেবে ওর দায়িত্বটুকু পালন করছি আমি । কিন্তু এইভাবে !! ওকে বললাম । ও বললো , তা কি করব বলুন , নষ্টা মেয়েকে যে ছেলেটি জীবনে জায়গা দিয়েছে , এই অনেক নয় কি ?? নষ্টা !! শুনেই কেমন ঘাবড়ে উঠলাম । কি বলতে চাইল ও আমাকে , এই জীবনটার কথা নাকি অন্য কোন ইতিহাস ওর জীবনের !!
২।
রাত গভীর হতে লাগল । এদিকে আমার সামনে সেই নষ্টা , আর পিছনে অনেক দায়িত্ব । তার সেই শরীরটা মাঝে মাঝে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেছি , দেখেছি তার উরু নাভি বা বক্ষের ডগায় হালকা চুম্বন করে । কিন্তু প্রতিবার এক অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া হয়েছে , আমার জন্যই আজ এ নষ্টা নয় তো ! এভাবেই ধীরে ধীরে তার ঠোটেঁর ওপর ঝুকে ঠিক যখন একটা চুম্বন করতে যাব অমনি সে আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিল , বলল , ওই স্থানটির অধিকার একজনের । আপনি বাকি শরীর নিয়ে যা খুশি করুন । আর তাছাড়া তখন থেকে কি চেটে যাচ্ছেন ?? কাজ করবেন না ?? একদিকে আমাদের মেয়েদের বিয়ের আগে যা নিষেধ , এরা কত সহজে তাই করে চলে রাতের পর রাত জুড়ে । বেশ অবচেতন ভাবেই বলে উঠলাম , না । শুয়ে থাকা শরীরটা উঠে বসল , মুখ ফুটে বলল , সে কি !! করবি না । তাহলে এত দাম দিলি কেন ??
তোর গল্প শুনব বলে , শুধু এটুকু বলে উঠলাম । একথা শুনে একবার মুখের দিকে চেয়ে দেখল (সমাজের ভাষায় ) মালটি । তারপর একটা মুচকি হেসে বলল , আমার গল্প কি আর শুনবি ! আমি কে বল ! সমাজ বলে বেশ্যা আর তোরা মাল । দিন রাত কত লোক নিজেদের শখ পূরণ করে এই শরীর কেন্দ্র করে । যন্ত্রনা হয় , তবু সহ্য করি , কেন জানিস ?? একটা ভালবাসা আর একটা জীবনের কথা মাথায় রেখে । যখন তারা স্বর্গ সুখ ভোগ করে তখন আমার নরক যন্ত্রনা ওরা বোঝে না আর বুঝবেও না । দিনে কতবার এই শরীর অচেনা লোকের সামনে খুলে দিই । ওর প্রতি কথায় আগুন বেড় হচ্ছিল , মনে হল পুরো শরীর , মন জ্বলিয়ে ছারখার করে দেবে । আমাকে অবচেতন দেখে মেয়েটি একটা হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো , ছাড় , এসব শুনে লাভ নেই । তার চেয়ে স্বর্গীয় সুখে মেতে ওঠ , সেটাই ভাল হবে । আমি বললাম না , সেটা অন্যায় হবে । সবার মত আমিও হয়ে গেলে , আমি বলে কিছু থাকবে না , তারচেয়ে রাত অনেক বাকি তুই তোর গল্প বলে যা । আমি শুনবোই ।
৩।
বিয়ারের ক্যানটায় দুচুমুক দিয়েই আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । প্রথমে একটু ইতস্তত বোধ করলেও অবশেষে হার মানতেই হল ওর জেদের কাছে । এঁটো ক্যানে একচুমুক দিতেই হল শেষমেষ । তারপর আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল , " এই যে নষ্টা কে দেখছিস , সে একদিন ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল ছিল । আমি বাংলায় মাস্টার্স । " কথাটা শুনে কেমন যেন অবাক হয়ে গেলাম । একজন মাস্টার্স আজ এই ব্যবসায় । ঠিক মেনে নিতে পারছিলাম না কথাগুলো । ও কিন্তু বলে চলল , আমার নাম স্বপ্না , স্বপ্না চৌধুরী । অনেক স্বপ্ন বুকে ছিল একদিন । বাবা একটা ইস্কুলের মাস্টার ছিল আর মা একজন গৃহবধূ । টাকার অভাব হয়ত ছিল , কিন্তু কোনদিন কোন কষ্ট পেতে হয়নি আমায় । যখনি যা চেয়েছি পেয়েছি । কিন্তু ভাগ্য আমার ওপর খুশি ছিল না । এটুকু বলে একটা সিগারেট ধরালো নষ্টা । আমাকেও অফার করে কিন্তু আমি মানা করে দিই । এই দেখে এক গাল হেসে বলতে শুরু করল সে আবার , কোথায় ছিলাম আমরা , হ্যাঁ , বাবা আর মা আর আমার পোড়া কপাল । তখন কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি সবে । ক্যানিং যাওয়ার পথে একটি বাস এক্সিডেন্ট.... এত দূর বলেই কাঁদতে শুরু করে দেয় সে । তাকে স্বান্তনা দিতে বুকে জড়িয়ে ধরি । সেও আমাকে জড়িয়ে ধরে । কি বলব কিছুই ভেবে না পেয়ে শুধু বলে উঠলাম , তারপর ?? নিজের চোখ মুছে নিয়ে আবার এগোতে শুরু করল নষ্টা । তারপর !! সেই বিভীষিকাময় দিন গুলো ধেয়ে এল আমার দিকে । আমার দায়িত্ব নিল আমার পিসেমসাই । পুরোনো কষ্ট গুলো তখনও ভুলতে পারিনি আমি , আর তারই মাঝে শুরু হল আমার ওপর জোর জুলুম অত্যাচার । বাড়ির সব কাজ করতে হত - না করলে ভাগ্যে জুটত মার । অসহ্য !! সে দিনগুলো । তারচেয়ে এই দেহবেচা অনেক সোজা । হ্যাঁ , এখন না হয় লোকে আমায় নষ্টা বলে , তাতে কি হয়েছে ?? শরীরে আঁচড়ায় , কামরায় ; কিন্তু , বুঝলি , তাতেও অনেক শান্তি আছে । ওটা ছিল নরক আর এটা স্বর্গ না হোক , তারই কাছাকাছি কিছু ।
৪।
ঘড়িতে তখন দুটো বাজে । নষ্টা বলে চলেছে তখনও নিজের নরক যন্ত্রণাটা । পিসেমসাই ও পিসিমা কিভাবে তার ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালাতো সবই আজ মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছিল তার । আর আমি এই ভেবে অবাক হয়ে উঠছিলাম যে একজন শিক্ষিত মেয়ে এই পথ কেন বেছে নিল । কি এমন ঘটল তার জীবনে । নষ্টা হয়ে সে এই পাঁকে পা দিল না কি সে এখানে এসে নষ্টা হয়ে উঠল ।
বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে নতুন একটা বিয়ারের ক্যান খুলে বসল সে । গল্পের নেশা ইতিমধ্যে আমাকে পেয়ে বসেছে । তর সইছিল না তাই বলেই ফেললাম , তুমি নষ্টা কি করে হলে ? প্রশ্নটা শুনে কেমন থমকে গেল মেয়েটি । বললো , সেটা তো আপনারাই বানিয়েছেন আমাকে । একজন ধর্ষিতাকে সমাজ যখন ন্যায় দিতে পারে না , তখন তার কাজ করার অধিকার কেন কেড়ে নেওয়া হবে ? ধর্ষিতা !! শুনেই চমকে উঠলাম । আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো , অবাক হলেন নাকি !! হ্যাঁ আমি একজন ধর্ষিতা । এই সমাজ আমাকে করে তুলেছে পতিতা আর আমি শুধু সমাজের আদেশ পালন করছি মাত্র ।
কি সব বলছ তুমি ? কে তোমায় ধর্ষণ করল ?? বেশ অবাক হয়েই প্রশ্নটা পেড়ে দিলাম নষ্টার সামনে । আমার চোখে চোখ মেলাতে পারল না । ওর মুখে ঘেন্যা ভাবটা স্পষ্ট ফুটে উঠল । তারই মধ্যে আস্তে করে বলল , পিসেমসাই । সেই রাতটা কোনদিন ভুলব না আমি , আমাকে ঠেলে দেওয়া হল বেশ্যাদের পথে । বাড়িতে পিসেমসাই আর আমি , পিসিমা গেছেন বাপের বাড়ি । দরজাটা ভেজিয়ে পড়তে বসেছি একটু , ভিতরে ঢুকলেন পিসেমসাই আমার । ঢুকেই দরজাটা বন্ধ করে দিলেন । আমি বললাম , কি করছ !! কিছু না বলে পাগল কুকুরের মত আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল , স্কার্ট টপ ছিড়ে ফেলে দিলেন নিমেষের মধ্যে । লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না উনার দিকে । ওকে থামিয়ে বললাম , তুমি সব হতে দিলে , চ্যাচাওনি । বললো , সে সুযোগ দেয়নি । আমার মুখ বেঁধে বুক পেট কামড়ে খেল কুত্তাটা । পড়ে জানাওনি কাউকে । মুচকি হেসে বললো , মেয়ে তো আমি । এত সহজ হয় না আমাদের পক্ষে এসব কিছু লোককে জানানো । আর এই সুযোগটাই নিল কুত্তাটা আবার । টানা সাতদিন বন্ধ ঘরে চলত আমার যৌনতার পরীক্ষা । এসব কিছু আর সহ্য করা যাচ্ছিল না ।
কি করলে তুমি ? ওকে জিজ্ঞাসা করলাম । নষ্টা একটা সিগারেট ধরাল আমাকে একটা দিল । আমি এবার মানা করতে পারি নি । ধোয়ার ওপাশ থেকে একটা শব্দ ভেসে এল এবার , খুন । এরপর সেখান থেকে পালিয়ে যাই । পুলিশ অনেক খুঁজেছিল কিন্তু পাইনি আর তার একমাত্র কারণ আমার বয়ফ্রেন্ড অনিমেষ হাহা । বুঝলাম সম্পূর্ন নামটা এড়িয়ে গেল । এদিকে ও বলে চললো , আমাকে নিজের ঘরে দীর্ঘ তিন বছর লুকিয়ে রেখেছিল । যেদিন কোর্ট পিসেমসাই কে ধর্ষক উপাধি দিয়ে হত্যাটাকে একটা সেলফ ডিফেন্স ঘোষণা করল , সেদিন প্রথম আত্মসমর্পণ করলাম কোর্টে । আমাকে বেকসুর খালাস করা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু সমাজের চোখে আমার পরিচয়টা সম্পূর্ণ বদলে গেছিল এর পর থেকেই । ওদের কাছে আমি এখন হয়ে গেছিলাম একজন নষ্টা , যার কোন স্থান নেই এই সমাজে । এখন আমার একটাই পথ বাকি -- আত্মহত্যা বা সুইসাইড । বহুবার চেষ্টাও করেছিলাম কিন্তু অনিমেষ আমাকে মরতে দেয় নি । তার দুই বোনের পাশাপাশি আমাকে সম্মান দিয়েছিল , পূর্ণ মর্যাদা দিয়েছিল নিজের স্ত্রী র মতন । এটা ঠিক সামাজিক মতে আমরা এখনো অবিবাহিত , কিন্তু মনের আঙিনায় আমরা স্বামী স্ত্রী । আর তাছাড়া বিয়ে মানে তো মনের মিলন , কি বলেন বাবুমশাই , এতদূর বলেই হা হা করে হাসতে আরম্ভ করল পাগলিটা ।
৫।
নষ্টার জীবনের এক অন্ধকারময় অধ্যায় পার করে এগিয়ে এসেছে জীবন আজ রাতে । সকালের আলো একটু একটু করে ফুটে উঠছে । এদিকে নষ্টার সেই প্রাণ খোলা হাসির মধ্যে কেমন একটা কষ্ট পরিস্কার ফুটে উঠছিল । আস্তে করে নষ্টা কে থামাতে চাইলাম , কিন্তু ওর ওই প্রাণ খোলা হাসি , হোক না সেটা বিদ্রুপ মাত্র , তবু থামাতে দিল না । ক্রমাগত বেরিয়ে আসা হাসিটা থামতে বেশ সময় নিল । তারপর আবার শুরু করল সে । আমরা দুইজন ও ওর দুইবোন একসঙ্গে দিব্বি থাকছিলাম , এর পর থেকে । ছেলেটা একটা প্রাইভেট ফার্মে মজদুর খাটতে ঢুকে গেছিল , মাসে ওই হাজার চারেক মাইনে । খুব সকালে ট্রেন ধরতে হত ওকে । ও বেরিয়ে গেলে আমিও বেরোতাম কোনো কাজ যদি জোটে । অনেক জায়গায় গেছি , অনেকের দ্বারস্থ হয়েছি ; জানো কি উত্তর পেয়েছিলাম । আমি বললাম , কি ? বললো , লোভে ভরা চোখ দুটো এই মাই দুটো দেখলো কাপড়ের ওপর থেকে , তারপর হাতটা এগিয়ে এনেও থামিয়ে দিত , তারপর বলত , বেবি , ইউ আর সো হট । আজ রাত ... একজন দুজন নয় , পাঁচ পাঁচটি অফার এসেছিল আর আমি পালিয়ে বেরিয়েছি শুধু । মাস্টার্স এর দাম এত সস্তা জানলাম সেদিন প্রথম । আমার ডিগ্রি গুলোর থেকে আমার শরীরের দাম তখন অনেক বেশি । অন্যদিকে বাকি যারা একটু ভদ্র তারা আসল গল্পটা না জেনেই , তাড়িয়ে দিত । এ সমাজ জংলীদের জন্য , বন্যদের জন্য , ধর্ষিতা ও খুনিদের জন্য নয় । দিন কেটে রাত হত আর রাত কেটে দিন । আমার জন্য এ সমাজের কাছে কোন মূল্য আর শেষ ছিল না । এত বড় মাপের ব্যর্থতা আমি জীবনেও দেখি নি আর তাই হয়ত আস্তে আস্তে আরো ভেঙে পড়ছিলাম । কথায় আছে , অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায় , আমার ভাগ্যটাও ঠিক সেরকম । একে কোথাও কোন চাকরি জুটছে না যখন , তখন একদিন বিকেলে আর এক দুঃসংবাদ ধেয়ে এল অনিমেষের বন্ধু তথা সহকর্মী আতিফের কাছ থেকে । হাঁফাতে হাঁফাতে বাড়িতে এসে দরজা ধাক্কা দিতে লাগল । তখন দুই বোন ইস্কুলে আর আমি একটু জিরাচ্ছি শুয়ে শুয়ে । আতিফের গলা আমার বেশ চেনা , অনেক বার অনিমেষের সাথে বাড়িতে এসেছে । নষ্টাকে আমার সাথে ওই ঘরে এই প্রথম বেশ স্বচ্ছন্দ মনে হল । ওকে এই রকম খোলামেলা দেখে আমি আরও অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম । আজ ও কোনভাবেই আমার নষ্টা নয় , আজ ও এক স্বপ্নময়ী স্বপ্না । কিছুক্ষনের জন্য ঘর ছেড়ে বাইরে গেছিল , জানিনা কোথায় ,তবে কিছুক্ষনের মধ্যেই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে এল , দেখলাম ওর হাতে একটা ছবি । আমাকে দেখিয়ে বললো , এই আমার অনিমেষ । কি সুন্দর না !! দেখুন । আজ কিন্তু এই সৌন্দর্যে কলঙ্ক লেগে গেছে । সেদিন আতিফ বাড়িতে এসে জানায় যে অনিমেষ ট্রেন থেকে পড়ে গেছে , তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । খবরটা সেদিন ঠিক কি প্রভাব ফেলেছিল সেটা বলতে পারব না , আপাতত , দেখলাম ওর দু চোখ বেয়ে জল বয়ে চলেছে । হঠাৎ সম্পূর্ণ অবচেতন হয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে ঝুলে পড়ল নষ্টা । কি করব কিছুই বুঝতে না পেরে আস্তে করে ওকে সামনের বিছানায় শুইয়ে দিলাম , কয়েক ফোঁটা জল ছিটিয়ে দিলাম পাশে রাখা জগ থেকে । ধীরে ধীরে চোখ খুললো নষ্টা ।
৬।
বাইরে পৃথিবী যখন ধীরে ধীরে জেগে উঠছে , তখন একটি বন্ধ ঘরের ভিতরে আমরা দুজন এক গভীর আলাপে মত্ত । স্বপ্নার বলে যাওয়া গল্পের আড়ালে আমি খুঁজে দেখছি তখন হাজার হাজার দেহ ব্যবসায়ীর যন্ত্রনা । এরা কেউ শখ করে এই কঠিন পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসেনি । হয়ত এমন স্বপ্নারা অনেক কষ্টে এই পথ বেছে নেয় , তবু একটা প্রশ্ন তো মনে জেগে ওঠেই ; এরাও এই গণতান্ত্রিক দেশের একটি অঙ্গ । এদের ভোটে সরকার গঠন হয় যখন , তখন সরকার এই রকম হাজার হাজার স্বপ্নার স্বপ্ন পূরণের জন্য তাদের এই অন্ধকার পরিবেশ থেকে বের করে এনে প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগ কেন নেয় না !!
এরাম হাজার প্রশ্নের ঝড় যখন মাথা জুড়ে তোলপাড় হয়ে চলেছে তখন দেখলাম পাশের বিছানা ছেড়ে উঠে বসেছে আমার নষ্টা । পাশে গিয়ে বসলাম তার , বললাম , তোমার ঠিকানাটা দেবে ?? একবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো , টিটাগর । আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে , যাবার আগে একটা কার্ড ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে গেলাম -- এই আমার ফোন নম্বর । কাল যোগাযোগ কর আর এখন আমি নিচে দাঁড়াচ্ছি , আমার সঙ্গে চল । এ পৃথিবী স্বপ্নার , নষ্টাদের নয় ।