Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

4  

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

নলজাতক

নলজাতক

4 mins
241


একাদশ পর্ব

বাড়িতে ঢুকেই দেখা হয়ে গেল ঋতাভরী দেবীর সঙ্গে। রাগে এবং ক্ষোভে তাঁর দু'চোখ থেকে যেন আগুন ঠিকরে বেরোচ্ছে। 

তিনি খবর পেয়েছেন যে শিশুটিকে নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখছেন সেই শিশুটি সঞ্চারীর গর্ভজাত নয় । শিশুটি নলজাতক। কলকাতার কোন ফার্টিলিটি সেন্টারে তার জন্ম ।

কে খবর দিল ; যে খবর দিল, সে-ই বা জানল কি করে - এ নিয়ে সঞ্চারীর কোন মাথাব্যথা নেই ।

সঞ্চারী ধরে নিল এই কাজ রূপেশ্বর বাঁড়ুজ্যে ছাড়া অন্য কারও নয় । হ্যাঁ, তার সাগরেদ শ্যামলও বলতে পারে - তবে ব্যানার্জীদার অনুমতি ছাড়া তার পক্ষে বলা অসম্ভব ।

ঋতাভরী দেবী রাগে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে বললেন - এই মুহুর্তে ওই ছেলে নিয়ে এক কাপড়ে বিদেয় নাও । তোমাদের মুখ দেখতে চাই না । আমাকে ঠকানো ? এত স্পর্ধা তোমার হয় কি করে ?

সঞ্চারী অনেক কিছু বলার চেষ্টা করল । কিন্তু শুনছে কে ? শ্রোত্রী নিজেই নাগাড়ে বলে চলেছেন - অনিরুদ্ধ ভূপেশ সবাইকে বাড়ি থেকে তাড়াবো । আর এই যে মহারাণী ! সকাল থেকে কোথায় ছিলে ? নাকি আরও কোন কুকাজ করতে গিয়েছিলে ?

সঞ্চারীর মনে হল বসুধা দ্বিধা হও । আমি এক্ষুনি তোমার কোলে আশ্রয় পেতে চাই ।

ঋতাভরী দেবী বলেই চলেছেন । তাঁর জোরদার কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েছে অনিরুদ্ধও । সাত তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়ে মূল বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে বলল - মাসীমা !

- বেরোও আমার ঘর ছেড়ে এখনই। আর সঙ্গে নিয়ে যাও সাধের বোন আর ভাগ্নেকে । বলি কোন ছল করে আমার ভূপেশকে হাত করে বোনকে গছিয়ে দিলে বল দেখি ?

অনিরুদ্ধ বিনীত কন্ঠে বলল - মাসীমা ! আমার কথাগুলো একটিবার শুনুন । দয়া করে শুনুন মাসীমা, প্লীজ প্লীজ ।

কে শোনে কার কথা । ইতিমধ্যে ভূপেশ এসে পড়ায় ঋতাভরী দেবীর সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল তার উপর ।

- বেরিয়ে যা । বেরিয়ে যা তোরা আমার চোখের সামনে থেকে । কারও কোন কথা শুনতে চাই না। কোন জবাবদিহি চাইছি না । শুধু হুকুম দিচ্ছি এই মুহুর্তে আমার বাড়ি খালি করে চলে যা ।

বলে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেলেন নিজের ঘরে এবং একটার পর একটা খিল দিয়ে বিছানায় বসে কাঁদতে লাগলেন ।

হাজার চেষ্টা করেও তাঁকে টলানো গেল না । মায়ের এই চণ্ডালে রাগের কারণ জানতে সঞ্চারীর কাছে আসতেই সঞ্চারী ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে অনিরুদ্ধকে জাপ্টে ধরল ।

অনিরুদ্ধও এমন অকারণ বিভীষিকার কোন কারণ খুঁজে না পেয়ে বলল - কি হয়েছে তোর ?

সঞ্চারী ভয়ে তখন কাঁপছে। কোনমতে তাকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিতে সঞ্চারী বিছানায় মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলল ।

ভূপেশ নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ কি এমন হ'ল যে ঋতাভরী দেবী এবং সঞ্চারী উভয়ে এমন অস্বাভাবিক আচরণ করছে । মায়ের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন - আবার সঞ্চারীর সামনে আসতেই সে ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করল - কেমন যেন অদ্ভুত মনে হল তার ।

শেষে অনিরুদ্ধকে বলল - তুমি কিছু জানো ?

ঘাড় নেড়ে অনিরুদ্ধ 'না' বলল। ভূপেশ সঞ্চারীর হাত ধরে টেনে তুলল।

সঞ্চারী বলে উঠল - কে তুমি ? মানুষ না মানুষের প্রেতাত্মা ?

ভূপেশ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল - এ কি বলছ তুমি ? আমি ভূপেশ । তোমার হাজব্যান্ড। এই অনিরুদ্ধ - বল না - বোঝাও তোমার বোনকে ।

- কি আর বোঝাবে ? সঞ্চারী ফোঁস ফোঁস করে বলল - নিজের চোখকে তো অবিশ্বাস করতে পারি না ! এ আমি কি দেখে এলাম !

- কি দেখে এলে ? মানে ? তুমি কোথাও গিয়েছিলে নাকি ?

সঞ্চারী নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে বলল - কবরডাঙায় যা দেখলাম, তা যদি সত্যি হয় - তবে তো তুমি মানুষ হতেই পার না ।

ভূপেশ হাঁ করে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। তারপর বলল - মানে ? তুমি বলতে চাইছ আমি কবরডাঙায় গেছলাম?

- গেছলে কি ! তারপর যা করেছ - আমি সব দেখেছি । ট্যাক্সি চালকও দেখেছে ।

অনিরুদ্ধ তখন ঘামতে শুরু করেছে । এ আবার কি ফ্যাসাদে পড়লাম রে বাবা ! কবরডাঙায় ভূপেশ কেন গিয়েছে , কিই বা করেছে জানতে ভূপেশকেই প্রশ্ন করল - সকাল বেলায় কোথায় গিয়েছিলে ?

ইগোতে লাগল ভূপেশের । বলল - বাজারে ।

সঞ্চারী গর্জে উঠে বলল - সেখানে কি লাশ খেতে গেছলে ?

ভূপেশের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল । মুখ চোখে পরিবর্তন দেখা গেল । শরীরের খাঁজে খাঁজে শিরাগুলো ফুলে উঠল ।

কিছু বলতে যাবার আগেই অনিরুদ্ধ ও সঞ্চারী দু'জনেই অজ্ঞান হয়ে গেল ।

( ক্রমশ )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics