Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

4  

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

নলজাতক

নলজাতক

4 mins
299


ত্রয়োদশ পর্ব


জোচ্চুরি ঠগবাজি কিম্বা খুন ধর্ষণ যাই হোক না কেন প্রাকৃতিক নিয়মেই তা' বৃদ্ধি পায় । এই অভ্যাস পশু পাখি সবারই আছে । তফাৎ শুধু বিবেকবোধে । মানুষের বিবেক আছে তাই এত শোরগোল । পশু পাখিদের বিবেক নেই - তাই তা' অনায়াসেদৃষ্ট ।

বদমাশ বাঁড়ুজ্যের বিবেক আছে, বুদ্ধিও আছে । শ্যামলের মত চট করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয় না ।

ঋতাভরী দেবীকে শ্যামল জানিয়ে দিয়েছিল নলজাতকটি ভূপেশের সন্তান নয় । সামওয়ান এলস্ এর শুক্রাণু এবং সঞ্চারীর ডিম্বানু নিষিক্ত করে ল্যাবরেটরীতে শিশুটির জন্ম হয়েছে ।

ঋতাভরী দেবী এই পাপকে লালনপালন করছেন । ভূপেশ যখন জানতে পারল এই ধরণের কথাবার্তায় তার মা অত্যন্ত ক্ষুণ্ণ হয়েছেন নিজেকে আর সামলে রাখতে পারল না । ডাক্তারবাবুকে সে নিজে শুক্রাণু দিয়ে এসেছে আর সঞ্চারীর ডিম্বানুতে তা তাদের চোখের সামনে নিষিক্ত করে টিউবে সংরক্ষিত করা হয়েছে ।

অতএব এটা যে ফলস্ প্রপাগাণ্ডা ছাড়া অন্য কিছু নয় - সে কথা ভূপেশ এবং সঞ্চারী উভয়েই জানে । তথাপি মায়ের আত্মম্ভরিতায় তারা দু'জনেই অতিষ্ঠ। 

ইদানিং সঞ্চারীর ভূপেশকে যাদুকর বলতেও দ্বিধা করছে না । এখানেই বদমাশ বাঁড়ুজ্যের সার্থকতা । গ্রামে থাকতে সঞ্চারীকে আপন করার লালসা ঢেকে রাখতে এতদিন সে কোনরকম কার্পণ্য করেনি। এমনকি ওরা যেদিন গ্রাম ছেড়ে চলে আসে সেদিনও মামুলি দু'চারকথা ছাড়া বিশেষ বাধা দেয়নি ।

আসলে সে জানত যেখানেই যাক তার লম্বা হাত তাদেরকে ঠিক নাগালে পাবে । পেয়েও গেছে । বদমাশ বাঁড়ুজ্যে ওরফে কদাকার রূপেশ্বর ব্যানার্জী এবার সরাসরি হিলটন রোডের বাড়ি থেকে সঞ্চারীকে তুলে নিতে চলে এল ।

সিংদরজার কলিং বেলে হাত দিতেই কারেন্ট খেল রূপেশ্বর । আজ শ্যামলকে না নিয়েই চলে এসেছে একলাই। নইলে এ সব কাজ ওইই করত ।

যাই হোক, কারেন্ট খেয়ে তার শরীর দুলে উঠল । মাথা চিনচিন করতে লাগল । ব্যাগ থেকে ফ্লাস্ক বের করে গরম কফি খেল । 

একটু থিতু হতেই পকেট থেকে ফোন বের করে সঞ্চারীকে ফোন করল । 

- হ্যালো ! আমি ব্যানার্জীদা বলছি । তোমার দরজায় দাঁড়িয়ে আছি । 

সঞ্চারী আই হোল থেকে দেখে নিল সত্যিকারের কে এসেছে । ঋতাভরী দেবী দোতলায় ঘুমোচ্ছেন । খাওয়া দাওয়ার পর দুপুরে রোজই তিনি ঘুমোতে যান । ভূপেশ বাড়িতে নেই । সম্ভবত অফিস যাবার নামে আবার কবরে শুয়ে আছে হয়তো ।

দরজা খুলে রূপেশ্বরকে দেখে সঞ্চারী খুশি হল ।

রূপেশ্বর বলল - ডেকেছ কেন বল !

সঞ্চারী তার সন্তানের জন্মবৃত্তান্ত বলতে লাগল । 

রূপেশ্বর বলল - ভূপেশবাবু কোথায় ?

- দেখ গিয়ে কবরে শুয়ে আছে ।

- মানে ? ও কি কবরের ডাক পেয়েছে আবার ?

- মনে তো তাই হয় । এই দেখ - তোমাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি । চল ভেতরে চল ।

রূপেশ্বর বলল - না থাক । এ সময় ভেতরে গেলে অনর্থ হতে পারে । কেউ দেখে ফেলবে। নাও, বল আমাকে কি করতে হবে ?

সঞ্চারী বলল - তেমন কিছু না । শুধু ভূপেশকে ফেরাতে হবে । ও যাতে সংসারী হয় তার বন্দোবস্ত করে দিতে হবে ।

এ জন্য তোমাকে যত টাকা লাগে দেব ।

সেই লোমহীন ভুরু দুটো কুঁচকে গেল রূপেশ্বরের । মুখটা যেন একটু বেশীই বেঁকে গেল । এটাই তার হাসিমুখ । খুশিমুখ ।

বলল - এর চার্জ কিন্তু একটু বেশীই পড়বে । ভালোমত ভেবে সম্মতি দিও কিন্তু । আমাকে তো চেন - কথার খেলাপি আমি একদম পছন্দ করি না ।

সঞ্চারী বলল - তোমার দাবী কত ?

রূপেশ্বর বলল - আর লাখে হবে না । তোমার তো অঢেল টাকা । তাও বেশী চাইব না । কোটি দশেক পেলেই কাম তামাম ।

সঞ্চারী স্তম্ভিত হয়ে গেল । 

- এত টাকা জীবনে দেখিনি । দশ লাখ দিতে পারি - যা গয়নাগাটি আছে সব দিয়ে দেব । শুধু প্লীজ তুমি আমার স্বামীকে বাঁচাও। 

হো হো করে হেসে উঠল রূপেশ্বর । তারপর পকেট থেকে সাইলেন্সর লাগানো পিস্তল বের করে গুলি চালিয়ে দিল । গুলি সোজা গিয়ে লাগল কপালে । বাঁচল না ভিক্টিম । এমন যন্ত্রণাহীন মৃত্যু জীবনে দেখেনি সঞ্চারী । ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল। 

রূপেশ্বর সঞ্চারীকে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেল । বলা বাহুল্য, সদর দরজা বন্ধ করতে তার ভুল হয়নি ।

সঞ্চারী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে । রূপেশ্বর কোলে তুলে ওকে বিছানায় ফেলে দিল । 

তারপর মুখে চোখে জল দিয়ে, ব্লটিং পেপারের ধোঁয়া দিয়ে ওর জ্ঞান ফেরাল ।

সাক্ষাৎ যমকে চোখের সামনে দেখে সঞ্চারী আবার জ্ঞান হারাল । 

রূপেশ্বর দ্বিতীয়বার জ্ঞান ফেরাবার চেষ্টা না করে । বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেল ।

যাকে গুলি করে মেরে ফেলেছে তার লাশ তখনও

নলজাতক

পড়ে । লোকে লোকারণ্য। পুলিশও এসে গেছে । সুযোগ বুঝে রূপেশ্বর কেটে পড়ল ।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics