নববর্ষের কুঁড়ি (পর্ব - ১)
নববর্ষের কুঁড়ি (পর্ব - ১)


"জাস্ট ফাটাফাটি দেখতে এটা। কী দারুণ মানাচ্ছে! আমার পছন্দ আছে বলতে হবে!" নিজেই নিজেকে বাহবা দিয়ে গতরাতে কিনে আনা চকচকে স্মারকটার গায়ে একটা চুমু খেল দেবরূপ বসু। নিজের গ্যাঁটের কড়ি খসিয়ে নিজের জন্য কিনে আনা বত্রিশ তম মেমেন্টো।
হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। অবাক হচ্ছেন, তাই তো? সেটাই তো স্বাভাবিক। অর্পিতাও স্বামীর এই কার্যকলাপ জানতে পেরে আকাশ থেকে পড়েছিল। এখন অবশ্য ব্যাপারটা ওর কাছে আর নতুন কিছু নয়, তাই ও আজ আর অবাক হল না।
অর্পিতা রায়ের সঙ্গে দেবরূপ বসুর বিয়েটা সংবাদপত্রের 'পাত্রী চাই' বিজ্ঞাপন দেখেই। না, অর্পিতা কিন্তু মোটেও দেখতে কুৎসিত নয় যে ওকে বিয়ে করার মতো পাত্র জুটছিল না। আসলে নিজের কেরিয়ার নিয়ে ও এতটাই ব্যস্ত ছিল যে বিয়ে নিয়ে ভাবার সময় পায়নি। নেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ও এখন কলেজের প্রফেসর। বিষয় - রসায়ন। ছোটবেলা থেকেই ফুটপাতের দারিদ্র্য ওকে আঘাত করত। ঘরহারা মানুষের কান্না আর পথশিশুদের করুণ মুখগুলো ওকে ভাবাত ভীষণ ভাবে। ওই মানুষগুলোর মুখে তুলে দেওয়ার জন্য সবসময় ওর ব্যাগে কিছু না কিছু খাবার মজুত থাকত। কখনও যাতায়াতের পথটুকু পায়ে হেঁটে, কখনও বা টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে জমানো টাকা ও তুলে দিত ভিক্ষুকদের হাতে। কিন্তু ও বুঝেছিল, এই পৃথিবীর এত দরিদ্র মানুষের দুঃখ ও একা কোনওভাবেই মোচন করতে পারবে না। তাইই কলেজে পড়াকালীন সময়ে একটা এন.জি.ও'র সাথেও ও যুক্ত হয়েছিল। ভালোই চলছিল, নিজের টিউশনির টাকা জমিয়ে ও সেখানে দান করত। কিন্তু পরে বুঝল, নিঃস্বার্থ মানুষ এই দুনিয়াতে দুর্লভ। ও যে এন.জি.ও'র সদস্য ছিল, সেখানকার কিছু মানুষের এই দানের পুরোটাই দেখনদারি ছিল, প্রকাশের আলোয় নিজেদেরকে জাহির করা। এই ধরনের হীন মনোবৃত্তির সঙ্গে বেশিদিন খাপ খাওয়াতে পারেনি ওর সুন্দর মনটা। তাই বেরিয়ে এসেছিল সেখান থেকে। তারপর চাকরি, পাশাপাশি সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়ানো - এইভাবেই চলছিল বেশ। আশেপাশের কিছু গরীব বাচ্চাকে ও বিনামূল্যে প্রতিদিন বিকেলে এক ঘণ্টা করে পড়াত। এ সবের মাঝে প্রেম-ভালোবাসার অবকাশটুকুও ওর হয়নি। ঠিক করেছিল, বিয়ে করবে না। মা-বাবার প্রচন্ড জোরাজুরিতে অবশেষে ও রাজি হয়। কিন্তু শর্ত ছিল যে পাত্রকে অবশ্যই মানবসেবার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় ওকে সম্পূর্ণ সমর্থন করতে হবে।