নাই জগতের বাসিন্দা
নাই জগতের বাসিন্দা
ফুলবনী, মাদারবনী, জোড়বনা পেরিয়ে জঙ্গল ফুঁড়ে মোরাম মাখা পথে যখন গাড়িটা এসে পৌঁছাল ভালুকডির গ্রামে তখন সূর্য্য পশ্চিম পাড়ে হেলে পড়েছে। আসন্ন সন্ধ্যার আগেই গাছের পাতায়, বুনো লতায় ঝিঁ ঝিঁ পোকার বিরক্তিকর ডাক কানে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে। অন্ধকারে আচ্ছন্ন একটি গণ্ডগ্রামের কোন বাসিন্দার ঘরে আলো নেই। টিমটিমে লম্ফ জ্বেলে কুটিরে বদ্ধ কয়েকটি প্রাণী যাদের বেশীর ভাগই বালবাচ্চা, উনুনের পাশে বসে ভাতের হাঁড়ির দিকে চেয়ে আছে। সুকনা মাঝি, লতা হেম্ব্রম, বাচ্চু সোরেন প্রত্যেকের বাড়িতে একই দৃশ্য ।
গ্রামে মোটরগাড়ি ঢুকতেই গ্রাম ভেঙে ছেলে বুড়ো মেয়ে মরদের দল এসে গাড়ি ঘিরে দাঁড়ালো। সকলেই অবাক নেত্রে চেয়ে আছে যন্ত্রদানবটার দিকে । বাচ্চারা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে কি জিনিস।
গোটা গ্রামের কেউ লেখাপড়ার ধার ধারে না। একবেলা জোটাতে নারী পুরুষ নাজেহাল। বন থেকে কেন্দুপাতা, শালপাতা সংগ্রহ করে বিশ মাইল দূরের শহরে বিক্রি করে যা পেত তাই দিয়ে চাল আলু কিনে চাট্টি ফুটিয়ে খেত সন্ধ্যেবেলায়। আর তাই শিশুদের ভীড় উনুনের পাশে।
গাড়ি থেকে নেমে জিজ্ঞেস করলাম দ্রৌপদী মুর্মুকে চেন ?
- কোন দ্রপদী ?
ওই যে গো, শোন নি তোমরা ? দ্রৌপদী মুর্মু আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন !
- সি টো কি রে বাপ ?
- আমাদের রাষ্ট্রপতি গো । তোমাদের মতই আদিবাসী জনের লোক।
- ত' সে কি আমাদের লিয়ে ভাববেক ?
- কেন ভাববে না ? তোমাদের এই দু:খ, কষ্ট তিনিও কি কম পেয়েছেন । দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ হয়ে শোষণ পীড়নের মধ্যেও পড়াশোনা করেছেন । পাশ দিয়েছেন। স্কুলের মাস্টারি করেছেন । উড়িষ্যার মন্ত্রী হয়েছেন। শেষে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল আর এখন তো গোটা দেশের রাষ্ট্রপতি। পদমর্য্যাদায় প্রধানমন্ত্রীরও উপরে।
জানো, উনি তোমাদের মতই অতি সাধারণ।
- সবই ত বুঝলম। আমরা কি পাব ? এই যে আমাদের ঘর নাই, দুয়ার নাই, পেট ভরা খাবার নাই, বনে ঢুকার অধিকার লাই। এগুলান ফিরে পাব ? পারবেক আমাদের লেগে কিছু করতে ? পারবেক লাই । কারণ সে এখন তুমাদের লোক হইচে গো।
অবাক হলাম ওদের কথায় । এই নাইয়ের জগতে তাদেরও যেন বলার বা চাওয়ার সাহস নাই।