The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Manasi Ganguli

Classics

5.0  

Manasi Ganguli

Classics

মনে পড়ে সেইসব দিন

মনে পড়ে সেইসব দিন

6 mins
1.5K


প্রতিটি মানুষের স্কুলের জীবনটাই বোধহয় সবথেকে সুন্দর। স্কুলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নস্টালজিয়া। ক্লাসরুম,ব্ল্যাকবোর্ড,ডাস্টার এসব যেন পরবর্তী জীবনে বড় টানে। আর সেসময়ের বন্ধুরাই বোধহয় সারা জীবন বন্ধু হয়ে থাকে,বন্ধু আর পরবর্তী জীবনে তেমন হয় না বোধহয়,অন্তত মিতার তাই মনে হয়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মিতার মনে পড়ে তার স্কুল জীবনের কথা, কত স্মৃতি ভিড় করে আসে মনে। রীতা,মিতা দুই বোন। রীতা ৬,মিতা সবে ৪ পেরিয়েছে। বাবা দুজনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,"লাল ড্রেস পর়বি না নীল ড্রেস?" মিতার লাল খুব পছন্দ,বলে উঠল,"লাল ড্রেস পর়ব"। কনভেন্ট স্কুল,নীল ড্রেস ইংলিশ মিডিয়ামের,লাল অর্থাৎ মেরুন ড্রেস বাংলা মিডিয়াম। দুই বোনকে অতঃপর স্কুলে ভর্তির জন্য পাঠানো হলো মাস্টারমশাইকে দিয়ে,উনি দুজনকে ভর্তি করে দিলেন। রীতা ক্লাস টু,মিতা কেজি। রীতাটা শান্ত,মিতা দুষ্টু ভারী। বিরাট স্কুল,দুই বোনেরই খুব পছন্দ হল। স্কুলে ভর্তি হয়ে বাড়ি ফিরে ঠাম্মিকে দু'হাত প্রসারিত করে মিতা বলেছিল,"ঠাম্মি আমি এত্ত বড় স্কুলে ভর্তি হয়েছি"।

     প্রেয়ারের পর ক্লাসে গেলে প্রথম দিন ক্লাসটিচার মেরী অঞ্জলীদি রোল কল করার সময় বুঝিয়ে দিলেন 'প্রেজেন্ট প্লিজ' বলতে। মিতা সেই প্রথম দিনেই আবদার করে বলল,"আমার চারটে নাম,ঠাকুমার দেওয়া সরস্বতী,দিদিমার দেওয়া বেবী,বাবার দেওয়া আদরের নাম বুলকা আর ভাল নাম মিতা। সবকটা নাম ধরে ডাকলে তবেই প্রেজেন্টপ্লীজ বলব।"ক্লাসটিচার একগাল হেসে ওর গাল টিপে আদর করে বললেন,"তাই হবে"। সেইমতো উনি রোজই চারটে নাম ধরে ডাকতেন। একদিন শুধু 'মিতা রায়' বলে ডাকায় বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে ওনার পেটে এক ঘুসি। উনি কিন্তু বকেন নি বা বাড়িতে অভিযোগ জানান নি, আদর করে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। ছিলেন একজন বুলবুলদি,টিফিনের সময় কোলে বসিয়ে টিফিন খাওয়াতেন,না হলে মিতা ছুড়ে ফেলে দিত টিফিন আর বলতেন,"তোর বাড়িতে আর কাজল নেই?" মা যে খুব মোটা করে কাজল পরিয়ে দিতেন মেয়ের যাতে নজর না লাগে। কেজিতে পড়ার সময় একটা ঘুমের পিরিয়ড থাকত। সেইসময় বেঞ্চে বসে হাইবেঞ্চে মাথা রেখে ঘুমাতে হত।অনেকেই ঘুমিয়ে পড়ত,দুষ্টু মিতা হাইবেঞ্চে মাথা নামিয়ে পাশের মেয়েটির সাথে খুনসুটি করত। ক্লাসটিচার পায়চারি করতেন,কাছে এলেই চোখ বুজে ঘুমের ভান করত। যতই দুষ্টু হোক, মাথাটা ছিল খুব পরিষ্কার,পরীক্ষায় কিন্তু ফার্স্ট আর তাই ভালোবাসাও পেত সবার কাছে। প্রতি সাপ্তাহিক পরীক্ষায় তার সব সাবজেক্টে লালকার্ড অর্থাৎ সব থেকে ভাল নম্বর থাকত।

    দুই বোনে রিক্সা করে স্কুলে যেত,কত কথা দুজনের হত সেসময়। মিতা দুষ্টু হলেও দিদির সব কথা মেনে নিত। দিদি যা বলত তাই ঠিক ওর কাছে। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে স্কুল,পথে যাবার সময় মাইকে জোরে গানের আওয়াজ কানে আসতেই মিতা জিজ্ঞেস করে,"মাইকে অতজোরে আওয়াজ হয় কেন রে দিদি?" দিদিও সবজান্তার মতো গম্ভীর গলায় উত্তর দিল, "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম মাইকে কথা বলেছিলেন তো তাই"। মিতার বিশ্বাস দিদি সব জানে,আর তাই মেনে নেয় সে সেকথা। স্কুল থেকে ফেরার পথে দুই বোনে একটা দোকান থেকে লজেন্স কিনে খেত। সে বড় আনন্দের দিন ছিল ওদের। 

   স্কুলে নাচের ক্লাস,গানের ক্লাস,ব্রতচারী ক্লাসে বাগান করা,ড্রিল এসব নানারকম অ্যাক্টিভিটি ছিল। মিতার এসব খুব ভাল লাগত আর টিফিন পিরিয়ডে ছিল খেলা। নিচু ক্লাসে টিফিনঘরে টিফিন খেতে হত আর তাতেই ধরা পড়ল মিতা টিফিন ফেলে দেয়। সেই থেকেই বুলবুলদি ওকে কোলে বসিয়ে খাওয়াতে শুরু করলেন। স্কুলে নিয়মানুবর্তিতা ভীষণভাবে মেনে চলা হত় তাই ছোট্ট থেকেই মিতা ও অন্যান্য ছাত্রীদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা মজ্জাগত হয়ে যায়।

     ক্লাস ফোর থেকে ফাইভে উঠলে,রীতা সেভেনে, বাবার কি মনে হল,আরো ভাল স্কুল বলে বাড়ির কাছের একটি স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। পুরনো স্কুল,বন্ধুদের ছেড়ে এসে রীতা,মিতা খুব কষ্ট পেয়েছিল। দুটো স্কুলের মধ্যেও অনেক পার্থক্য,আগেরটা ছিল মিশনারি স্কুল সেখানে ক্রিসমাস পালন হত দুর্গা পূজায় ছুটি কম থাকত। ওই স্কুলের মত পরের স্কুল অত শৃঙ্খলাপরায়ণ নয়,মানিয়ে নিতে কষ্ট হয় ওদের,খাপ খাওয়াতে সময় লাগে। তবে এই স্কুলের গেটের বাইরের হজমিগুলি,বুনোকুল খেতে রীতা-মিতার দারুন লাগে। আর আকর্ষণ ছিল স্কুলের সামনে বইয়ের দোকান। পুনোদার দোকান থেকে স্কুলে ঢোকার সময় স্বপনবুড়োর গোয়েন্দা গল্পের বই নিয়ে ঢুকত ওরা স্কুলে। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে গোগ্রাসে সেসব গল্প গিলে আবার স্কুলফেরত বইটি জমা দিত পুনোদার দোকানে। ওদের মত কয়েকটি ভাল ছাত্রীকে গল্পের বই পড়তে দিত। এভাবেই নীহাররঞ্জন গুপ্ত, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এনাদের গোয়েন্দা গল্প পড়ত রীতা-মিতা। বাড়িতে ছিল শরৎ,বঙ্কিম,রবীন্দ্ররচনাবলী। সেসব অবসরে পড়ত বিশেষ করে শরৎচন্দ্রের বই তখন ওদের খুব প্রিয়। তাছাড়াও স্কুলের লাইব্রেরী,বাড়ির কাছের একটা লাইব্রেরী থেকে বই এনে দেদার পড়ত ওরা। সুখের জীবন,দায় নেই,দায়িত্ব নেই,কেবল পড়াশোনা, খেলাধুলা,খাওয়া আর ঘুম।

    মিতা অঙ্ক,ইংরেজিতে খুব ভাল,এতে ওকে কেউ হারাতে পারে না,ওর একচেটিয়া অধিকার। এছাড়াও বাংলা,ইতিহাস,বিজ্ঞান,হিন্দী,সংস্কৃত,সবেতেই তুখোড়। যদিও ক্লাস ফাইভে ঐকিক নিয়মের অঙ্ক শিখতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল ওকে।কিছুতেই বুঝতে পারছিল না বলে ওর শাস্তি হয়েছিল স্কুলের ছুটির পর ১০০ বার অঙ্কটা করে,টিচারকে দেখিয়ে তবে তার ছুটি মিলবে। সেই একবারই জীবনে শাস্তি পাওয়া। একমাত্র দুর্বলতা ওর ভূগোলে,কিছুতেই পড়তে ভাল লাগত না। ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠার সময় ভূগোল বাদে সব সাবজেক্টে হায়েস্ট মার্কস পেলে স্কুলের টিচাররা বলেন "কি পড়বি তুই সায়েন্স না আর্টস?" মিতা সায়েন্সটাই বেছে নেয়। মনে পড়ে ক্লাস এইটে একবার বাংলা টিচার কবিতা মুখস্থ ধরায় কেউ বলতে পারে না,একমাত্র মিতা ছাড়া,আর তাই পুরো ক্লাস দাঁড়িয়ে,মিতা কেবল বসে। মিতার অস্বস্তি লাগে,পড়া পেরে যেন অপরাধ করে ফেলেছে ও। ক্লাস এইটেই সংস্কৃত ক্লাসে টিচার রুমাকে ক্লাস থেকে আগেই বার করে পড়াতে শুরু করতেন,ও সংস্কৃত একদম পারত না আর অন্যদের ডিস্টার্ব করত বলে ওকে পছন্দ করতেন না। একবার মিতার শরীর খারাপ হওয়ায় দুদিনের জন্য স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় ক্লাস টিচার সুপ্রভাদি চুপ করে ক্লাসে বসেছিলেন,কিছু পড়ান নি দুদিন,যদিও মিতা কোনোদিন স্কুলে অনুপস্থিত হত না,তার জন্য প্রতিবছর একটা প্রাইজ ওর ছিল বাঁধা ছিল। একবার স্কুলে যাবার কিছু আগেই শুরু হল শিলাবৃষ্টি,মাটি বিছিয়ে মুড়ি-মুড়কির মতো শিল পড়ে রয়েছে। বাবা বারণ করলেন স্কুলে যেতে,মিতার সে কি কান্না। অবশেষে বৃষ্টি থামল এবং বাবা অনুমতি দিলেন। চোখের জল মুছে মিতা ছুটল স্কুলে। বাড়ির থেকে বেশি দূর ছিল না স্কুল, হাঁটাপথ। স্কুলে গিয়ে দেখে ওদের ক্লাসে মাত্র ন'জন উপস্থিত,পড়াশোনা হল না সেদিন,মিতাও জানত রেনি ডে হয়ে যাবে,তবু স্কুল অ্যাবসেন্ট সে হবে না। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় একবার ক্লাস টেনের ইকনোমিকস ক্লাস থেকে দিদি ডেকে পাঠান মিতাকে, তাকে ইকনোমিকস এর ডিমান্ড সাপ্লাই এর উপর কিছু বুঝিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর দেয় সে। উনি ক্লাস টেনের মেয়েদের বলেন,"দেখো ক্লাস নাইনের সায়েন্সের মেয়ে, যে ইকোনমিক্সের কিছু জানে না সেও বুঝে উত্তরটা দিল, আর তোমরা বুঝতেই পারলে না "। এরপর যা হবার তাই হল,ক্লাস টেনের মেয়েরা ওর সঙ্গে আর কথা বলত না। ক্লাস টেন থেকে শাড়ি পড়ে স্কুল যেতে হত,সাদা লাল পাড় শাড়ি,মিতা গুছিয়ে পর়তে পারত না, স্কুলে গেলেই ছুটে আসত মুনমুন,ওকে ভাল করে শাড়িটা পরিয়ে দিত। সেই মুনমুন হঠাৎ একদিন মারা গেলে খুব কষ্ট পেয়েছিল ও। স্কুলজীবনে এরকম কত স্মৃতি মনে পড়ে ওর,মনে পড়ে ক্লাস নাইনে পড়ার সময় সবিতার বিয়ে হয়ে গেল। যদিও মিতার থেকে দু'তিন বছরের বড় ছিল ও তবু ক্লাসের বন্ধুর বিয়ে,দারুণ উত্তেজনা। বন্ধুরা সব দল বেঁধে শাড়ি পড়ে নিমন্ত্রণ খেতে যাওয়া,সেসব কি আনন্দের দিন ছিল।

     ক্লাস টেনে বাংলা টিচার একদিন বললেন, "একজন জীবিত কবির নাম বল"। সবাই সমস্বরে বলে ওঠে, "দিদি কাজী নজরুল ইসলাম"। আসলে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অন্যান্য কবিতার বই পড়ার অভ্যাস মিতার কেন ক্লাসে কারোরই ছিল না তখন। গল্পের বই দেদার পড়লেও কবিতা কেবল পাঠ্যপুস্তকেরগুলোই পড়ত ওরা। দিদি হেসে বললেন, "তোমাদের জন্যই উনি বেঁচে আছেন এখনও"। সবাই হো হো করে হেসে উঠল। তখন দিদি কয়েকজন জীবিত কবির নাম বললেন। ক্লাস টেনে ওঠা মানে ওরা তখন সিনিয়র,আর তখন ওরা বিভিন্ন টিচারের নামকরণ করত যেটা ওরাই জানত,টিচাররা এসব জানতেন না।

  মিতা ছোট থেকে পড়াতে ভালোবাসত,তাই ক্লাসের দুর্বল মেয়েদের অফ টাইমে,কখনওবা ছুটির দিনে বাড়িতে ডেকে পড়া বোঝাত। এতে তারা উপকৃত হত, মিষ্টি স্বভাবের জন্য সবাই তাকে ভালবাসতে।

   কত মিষ্টি মধুর স্মৃতি কত বা বেদনাবিধুর ভিড় করে আজ মনে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে। মনে হয় বড় মধুর ছিল সেসব দিনগুলো,যদি ফিরে পাওয়া যেত আবার। স্কুলে প্রতিবছর পাওয়া কত পুরস্কার আজও মিতার বুকশেলফে সাজানো,সেখানেই স্কুল ম্যাগাজিনে লেখা দিয়ে তার লেখা শুরু,এখনও লিখে চলেছে সে। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics