মিস্টার বাসু
মিস্টার বাসু
- ও গো, তুমি কই গো!! এস গো!! কি সব্বনাশ হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি এস গো।
চিৎকার শুনে সুমন বাবু তো গেছে ভয় পেয়ে। হলো টা কি! রোজকার মত আজ ও তো তিতলির মা তিতলিকে ঘুম থেকে ডাকতেই গেল। আবার কি সর্বনাশ হলো কে জানে! অবশ্য তার বউ তো! যে কোন ছুতো পেলেই চেঁচিয়ে পাড়া মাত করে দেয়। এরকমই কোনো ছুতো হবে হয়তো। এখনই পাত্তা দেবার দরকার নেই। আরেকবার চেঁচাক ক্ষণ। তারপর যাব।
- কি গো!! কানে সুপারি গুঁজে বসে আছ নাকি! ডাকছি তো। কথা কানে যাচ্ছে না?
নাহ। কিছু একটা উত্তর দিতে হয় এবার।
- বলি, ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মতো চিল্লামিল্লি… না ইয়ে মানে ষাঁড় তো হবে না। মাই ব্যাড.. ক্ষ্যাপা গরুর মতো চেঁচাচ্ছ কেন!?
-রাখো, তোমার ক্ষ্যাপা গরু। তুমি শিগগির এস দেখি।
এবার না গেলে উড়ন্ত থালা বাটি গ্লাস ধেয়ে আসতে পারে। কি দরকার বাবা! থালা বাটি ভেঙে গেলে তাকেই কিনে দিতে হবে। দেখেই আসা যাক কি দাবি।
-বল। কি হল টা কি!
ঘরে ঢুকলেন সুমন বাবু। একি ঘরের অবস্থা! আলমারি খোলা। জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো। তিতলির মা বিছানার উপর দাঁড়িয়ে আর তিতলি খাটের নিচে।
-একি অবস্থা!! তুমি খাটের উপর কেন!!
-সর্বনাশ হয়ে গেছে গো। উত্তেজনায় খাটের উপর উঠে গেছি।
-তিতলি মা, তুই খাটের নিচে কি করছিস! বের হ। কি হয়েছে একটু বল তো। আমি তো কিছুই বুঝছি না।
তিতলি খাটের তলা থেকে বের হল বটে, কিন্তু কাঁদছে কেন ও!বেশ অনেকক্ষণ ধরেই কাঁদছে মনে হচ্ছে। চোখমুখ ফুলে ঢোল। কাঁদতে কাঁদতেই বললো “খাটের তলাতেও নেই তো!”
-কি সব্বনেশে কান্ড। খাটের তলাতেও নেই। ওগো, মেয়ে কি বলছে দ্যাখো। বলছে খাটের তলাতেও নেই।
-আরে কি নেই!! কি নেই খাটের তলাতে।
-সব্বনাশের আর কিছু বাকি নেই। তুমি পাশের ঘরে চল, বলছি সব। তোমার বোনটাই যত নষ্টের গোড়া। সব জানত ও, কিছু বলেনি আমাদের কে।
-রত্না আবার কি করল! সকাল বেলা টিউশনি পড়াতে গেল তো ভালো মানুষটা। তোমরা ওকে খুঁজছো? ও আমায় বলে গেছে কিন্তু, যে আধ ঘন্টার মধ্যে এসেও পড়বে।
-ধুর..তুমি চল পাশের ঘরে। বলছি।
সুমনবাবুর হাত দুটো ধরে টানতে টানতে পাশের ঘরে নিয়ে গেল তিতলির মা। সুমন বাবু কানাকড়িও আঁচ করতে পারছেন না হচ্ছে টা কি!
-আমায় একটু হিন্ট দেবে, ব্যাপার টা ঠিক কি হচ্ছে! যা করছো তাতে তো মনে হচ্ছে রাতে চোর এসে বাড়ির গয়নাগাটি, দলিল .. সব চুরি করে পালিয়েছে। অবশ্য চোর কেন! ডাকাত পড়লেও লোকে এরকম করে না।
-চোর ডাকাত না গো। তবে শিগগিরই বাড়িতে পুলিশ পড়বে।
-কি হয়েছে টা কি!
- তোমার মেয়ে প্রেম করছে। এই সেদিনের মেয়ে, ক্লাস এইটে পড়ে। এইটুকু বয়সে ছি ছি ছি! আর মুখ দেখাতে পারব না সমাজে।
-আমরাও তো প্রেম করেই বিয়ে করেছি , নাকি! মেয়ে না হয় একটু কম বয়সেই প্রেম করছে। এতে এরম হুলস্থুল কান্ড ঘটানোর কি আছে!তাছাড়া এটা ইনফ্যাচুয়েশন হবে হয়তো। প্রেম না।
-আরে শোনোই না। এ সেরম প্রেম নয়। সেই ছেলে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোজ রাতে আমাদের বাড়ি আসছে। তোমার মেয়ে, তাকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে, তোমার বোন নাকি সেই ছেলের ব্যাপারে সব জানেও।
-দাঁড়াও, দাঁড়াও। বলি তোমার মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে একদম!? ছেলে ঢুকছে, থাকছে প্রেম করছে আর আমরা জানতে পারছি না। পেপসি খাবে নাকি ঠান্ডা লস্যি!? মাথাটা তোমার একদম গেছে।ঠান্ডা করতে হবে।
-মেয়ে নিজের মুখে স্বীকার করেছে।
-মে য়ে নি জের মু খে স্বী কার ক রে ছে?
একটু থেমে থেমে কথাটা জিজ্ঞেস করলেন সুমন বাবু।
-না হলে আর বলছি কি!
সুমন বাবুর আরো কাছে সরে এসে ফিসফিসিয়ে তিতলির মা বললো
-ছেলেটাকে তিতলি, বাসু বলে ডাকে।বুঝেছ। বোধ হয় বসু পদবি হবে। তিতলিই বলল ও নাকি রোজ ছেলেটাকে জড়িয়ে ঘুমায়। কাল রাতেও নাকি সে এসেছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। তাই তো এই কান্না।মেয়েটা কোন ছেলের পাল্লায় পড়লো গো! এই, থানায় ডায়রি করতে হবে গো?
মাথা চুলকাচ্ছেন সুমনবাবু। সিনেমার গল্পকে হার মানাচ্ছে তো তার সংসারের গল্প।
-আমি না কিছু বুঝছি না। আমি বরং তিতলিকে একবার জিজ্ঞেস করে আসি।
-আরে ও কিছু বলবে না। আমি বলছি শোনো না। এই দ্যাখো।
মোবাইল টা সুমনবাবুর দিকে এগিয়ে দিল তিতলির মা। মোবাইলের স্ক্রিনে ফেসবুকে কি “বিবেক বসু” নামের একটা প্রোফাইল খোলা। সুমনবাবু ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন
-কি দেখবো এটা!
- এই গো সেই ছেলে। তিতলির ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে পেলাম। হায় রে!! কি হবে এবার!
- বসু পদবি কি সারা বিশ্বে একজন ই আছে?
- দাঁড়াও, ওর প্রোফাইল টা আরেকটু দেখি। কথা বলো না। দেখতে দাও।
সত্যিই সুমনবাবুর অবস্থা তখন শোচনীয়। অর্ধেক জেনে, অর্ধেক বুঝে তার অবস্থা তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। হঠাৎ ই তিতলির মা পাশ থেকে দুটো আঙ্গুল এগিয়ে বললো “একটা ধরো”। পুরোপুরি ঘাবড়ে যাওয়া সুমনবাবু আর কিছু না বলে তর্জনীটিকে ধরলেন। ও মা! পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হয়ে গেল তো। কেঁদেই ফেলল তিতলির মা।
-জিনিসপত্র গোছাও। আমাদের ফ্ল্যাট শিফ্ট করতে হবে। এখানে আর থাকা যাবে না। যে করে হোক কিছু একটা ব্যবস্থা কর।
- কেন ! কি হল!
-তিতলির ফ্রেন্ড লিস্টে দুজন বসু। আর তুমি বিবেক বসুকে চুস করনি।
-আমি কেন কাউকে পছন্দ করব! মাথাটা পুরো গেছে! নাকি!?
-এই তো টুথ ফিঙ্গারটা ধরলে তুমি। এতে বিবেক বসু ছিল না। শতরূপা বসু ছিল। শেষমেষ আমার মেয়ের সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক গো। কি হবে গো! সমাজ কি বলবে গো!
-শোনো, কিছু না জেনেশুনে কি হচ্ছে এগুলো! চুপ কর না! আর শোনো নিকুচি করেছে সমাজের।
সুমনবাবুর উপর হামলে পড়ে তিতলির মা মোবাইল টা দেখাল।
-এই ছেলেটাও হতে পারে দ্যাখ। এর নাম বাসুদেব মাঝি। হয়তো একেই ভালোবেসে ও বাসু বলে ডাকে। হতেও তো পারে। বল। ইস শেষমেষ মাঝির সাথে প্রেম!
- আমি তোমাকে ভালু বাসু। হা! হা!
-তুমি এরম একটা সিরিয়াস কন্ডিশনে ইয়ার্কি মারছ।
হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ!
-রত্না এল বোধ হয়।
- মাঝিও হতে পারে। তুমি দরজা খোল। আমি যাব না।
-উফফ , তুমিও না!!
তিতলিই ছুটে এসে দরজা টা খুলল। রত্না এসছে। কোনো মাঝি ঠাঝি নয়।
-পিসি!!!!
-এ কি! চোখমুখ এমন কেন! কাদঁছিলিস নাকি! হ্যাঁ রে দাদা, তিতলি কাঁদছিল!?
সুমনবাবুকে উত্তর না দিতে দিয়েই তিতলির মা বলল “রত্না! এখন কি হবে বল তো। তুমি কিছু বলতে না আমাদের। আর এখন ছেলেটা মিসিং! কি হবে গো! “
-কোন ছেলে! দাঁড়াও, ঘরে ঢুকি! কি হয়েছে রে দাদা।
-তোমার সাথে কথা আছে পিসি। তুমি ঘরে এস।
রাগ, অভিমান , কান্না জড়ানো সুরেই কথাটা বলে পিসিকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল তিতলি। অবশ্য দশ পনেরো সেকেন্ডের মধ্যে বেরিয়েও এল ওরা। দুজনের মুখেই হাসি তখন।
-উফফ তোমরা না! ছাদ টা খুঁজবে তো।
রত্নার কথা শুনে তিতলির মায়ের হৃদপিন্ড তো রাজধানী এক্সপ্রেসের গতিতে ছুটতে শুরু করল।
-ওগো! সে এখন ছাদে। শুনলে তুমি। ছাদে চল।
রত্না হেসেই বলল “ব্যাপার কি! ছাদে চলো! অনেকটা দিল্লি চলো দিল্লি চলো ফিলিংস আসছে।“
-নিজের মেয়ে তো নয় , বুঝবে না।
অনেকক্ষন নীরব দর্শক হয়ে হ জ ব র ল হয়ে যাওয়া সুমন বাবু তিতলিকে জিজ্ঞেস করেই বসলেন “তিতলি মা, কাকে খুঁজজিলি তুই। বল মা। কনফিউজড হয়ে আছি খুব।“
-পাশু কে বাবা, আমার পাশবালিস টাকে। পিসি সকালে ছাদে রেখে এসেছে আসলে।
ধপ করে সোফায় বসে পড়লেন সুমনবাবু।