মিষ্টি গজা
মিষ্টি গজা


ক্লাস টুয়েলভ্ এ পড়া মুনিয়া এবছর না চাইতেই অনুমতি পেয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার। কিন্তু, তবুও তার মন ভালো নেই, কারণ অন্যান্য বছরের মতো এবছর তার বেস্ট ফ্রেন্ড— তার দাদাই তার সাথে নেই।
ছোটবেলা থেকেই মুনিয়া তার ঠাকুরদাকে দাদাই বলে ডাকতো। মুনিয়ার বাবা, মা দুজনেই চাকরি করায় তার সারাদিনের সঙ্গী ছিল তার দাদাই। যত আবদার, যত গল্প দাদাইয়ের কাছে।
সাত মাস হলো মুনিয়ার দাদাই মুনিয়াকে ছেড়ে ভগবানের কাছে চলে গিয়েছেন। বেশ কয়েকবছর ধরে হাই প্রেসার, হাই সুগারে ভুগছিলেন। ডাক্তার খাওয়া দাওয়ার ওপর অনেক নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়েছিলেন। অন্য কিছুতে তেমন অসুবিধে হতো না কিন্তু মিষ্টিপ্রিয় মানুষটি মিষ্টি খেতে না পারাতে মাঝে মাঝে মুনিয়ার কাছে দু:খ প্রকাশ করতেন।
যে বছর মুনিয়া ক্লাস টেন পাশ করলো সেই বছর দুর্গাপূজাতে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য সে খুব বায়না করেছিল। বাবা, মা তো একদম না করে দিলো শোনামাত্র। মুনিয়া এসে তখন দাদাইয়ের কাছে বায়না ধরলো
—প্লিজ, দাদাই একটু বলোনা মাকে আমায় পারমিশন দিতে বন্ধুদের সঙ্গে যাওয়ার। আমি জানি মা তুমি বললে ঠিক মেনে যাবে।
—কিন্তু দিদিভাই মা তো ঠিক বলছে। ঠিক আছে তুমি যখন বলছো আমি বলবো। তবে দিনের বেলায় কাছাকাছি কয়েকটা প্রতিমা দর্শন করেই চলে আসবে কিন্তু।
—ওকে দাদাই। তুমি যেমন বলবে তাই করবো।
শেষ অবধি দাদাইয়ের কথা মেনে মুনিয়া মায়ের পারমিশন নিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল।ফিরে এসে মুনিয়া দাদাইয়ে ঘরে গিয়ে দাদাইকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলো বাবা, মা পাড়ার মন্ডপে গিয়েছে। মুনিয়া তার ব্যাগের ভিতর থেকে চট করে একটা ঠোঙা বের করে দাদাইকে দিয়ে বলল,—দাদাই দ্যাখো তোমার জন্য কি এনেছি। তুমি বলেছিলে না যে তোমাদের ছোটোবেলায় বাড়িতে মিষ্টি গজা তৈরি হতো যেটা তোমার খুব পছন্দ ছিল। আজকে মিলিদের পাড়ায় ঠাকুর দেখতে গিয়ে একটা মিষ্টির দোকানে এটা দেখলাম। আর তাই তোমার জন্য নিয়ে এলাম। তবে একসাথে বেশি খাবে না কিন্তু
—দিদিভাই ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি পাইয়ে দিয়েছি বলে ঘুষ দিচ্ছো দাদাইক(হাসতে হাসতে মুনিয়ার দাদাই বলেছিলেন)।একটা মিষ্টি গজা মুখে দিয়ে বলেছিলেন সে যাইহোক ঘুষ হোক বা গিফ্ট হোক আমার কিন্তু দারুণ পছন্দ হয়েছে—এই বলে তিনি মুনিয়ার মুখে একটা মিষ্টি গজা দিলেন। আর দাদু, নাতনি দুজনেই যেন শৈশবে ফিরে গেলো।
এইসব কথা ভাবতে ভাবতে মুনিয়া কখন যেন তার দাদাইয়ের সাথে কাটানো অতীতে ফিরে গিয়েছিল। হঠাৎ সম্বিৎ ফিরল মায়ের ডাকে। সে মায়ের কাছে গিয়ে বলল—আমার সাথে মিলিদের পাড়ার ঠাকুর দেখতে যাবে? ওদের পাড়ায় একটা মিষ্টির দোকানে ছোটো ছোটো মিষ্টি গজা পাওয়া যায় যেটা দাদাইয়ের খুব ফেভারিট ছিল তোমারও ভালো লাগবে দেখো।
মুনিয়ার মা বুঝতে পারলো যে দাদাইয়ের জন্য মুনিয়ার মন খারাপ লাগছে। তাই মেয়ের দিকে তাকিয়ে —তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে। তোর বাপিকেও সঙ্গে নিয়ে যাবো।