মেজদা
মেজদা
কিশোরগঞ্জ থানার অধীনস্থ বীরপুর গ্রামের আবুল কালাম এর চার ছেলে। আবুল কালাম গ্রামের প্রথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষক ছিলেন।।
অল্প বয়সে মাথার অসুখ হয়ে যায়। বেশি সময় পৃথিবীর বুকে থাকিবার সুযোগ হলোনা।। হঠাৎ করে একদিন পুকুরে গোসল করিতে গিয়া আর উঠিতে পারেনি।। সেদিন তার শেষ দিন।।
মাস্টার মশায়ের মৃত্যুর সময় তার ছোট ছেলের বয়স চার বছর।।
বড়ো ছেলে বদর তখন যুবক।। বাপের মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব তার ঘাড়ে এসে পড়ে।। বদরের সাথে মেজো ভাই বসির মাঠের কাজে সাহায্য করতো।। তবে বাকি সময় ছোট ভাই কে নিয়ে খেলা করিতো। । ছোট ভাইকে যত্ন করে রাখার চেষ্টা করিতো। একটু আঘাত পাইলে বসির দুঃখ পাইতো। সকালে বিদ্যালয়ে রাখিয়া আসিতো বৈকালে বিদ্যালয় থেকে আনিতো।। রাত্রে নিজে নিয়ে বসতো পড়তে।। দাদার সাথে এমন কাছাকাছি সম্পর্ক ছিল একটু দেখিতে না পাইলে কান্না করিতে আরম্ভ করিতো।।
হঠাৎ বড়োদাদার মৃত্যু হলে মেজো দাদার ঘাড়ে দায়িত্ব এসে পড়ে। চাষের জমি দেখা, গাই গরুর যত্ন, বোনেদের বিবাহ দেওয়ার দায়িত্ব, এছাড়াও ছোট ভাই এর পড়াশোনা করার মতো বহু দায়িত্ব এসে পড়ে।। তবে মজবুত মনের মানুষ সামান্য পরিমাণ কাজে আঘাত পান না।।
দেখিতে দেখিতে ছোট ভাই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করিলো।। কলকাতার পড়াশোনা করিবার ঝোঁক চাপলো। ঔষধ নিয়ে পড়াশোনা করিতে কলকাতায় যাইবে। তবে খরচ এতটাই বেশি যে পরিবারের কেউ সাহস করিতে পাড়িলো না।। বসির তার ভাই এর কলকাতার পড়াশোনা করার খবর পেয়ে খুশি হলো।। জমি বেচে খরচ বহন করিবে।। ছোট ভাই এর পড়াশোনা করাবার জন্য বিয়ের বয়স হলেও বিয়ে করিতে রাজি হলো না।।
সারাদিন চাষের কাজ করিতো, কঠিন পরিশ্রম করিতো।এ রকম পরিশ্রম এর কারণ কেউ জিজ্ঞাসা করিলে বলিতো "ভাই এর পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য এমন ভাবে খাটিতে হয়, ভাই এর চাকরি হলে আর এই ভাবে খাটিবো না।।