STORYMIRROR

Krishna Banerjee

Classics

4  

Krishna Banerjee

Classics

মেঘলা আকাশ

মেঘলা আকাশ

7 mins
476

                         মেঘলা আকাশ 

                          কৃষ্ণ ব‍্যানার্জী

                   আকাশের মেঘের সাথে মানুষের জীবনের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের জীবনে যখন খারাপ সময় চলতে থাকে তখন আমরা অনেকেই সেই সময়টাকে কালিমালিপ্ত আকাশের মতই মনে হয়। আমরা সেই মুহুর্তটাকেই মানিয়ে নিতে পারিনা। যারজীবনের উপরদিয়ে এই অন্ধকার আচ্ছন্ন সময় অতিবাহিত হয় একমাত্র সেই বুঝতে পারে সেইসময়টা তার জীবনে কতটা কঠিন? তবে এখানেও একটা মজার বিষয় আছে যেটাকে আমরা এরিয়ে যাই বা যেটাকে বূঝতেই চাইনা। আকাশ যখন ঘন কালো মেঘে আবৃত হয় তখন তার মাঝে মাঝে বিদ‍্যুৎ রূপে একটা আলোর ঝলক বেড়িয়ে আসে। অর্থৎ সকল অন্ধকারের  পিছনে একটা আলো অবশ‍্যই থাকে। আর মানুষের জীবনে সেই আলোর উৎস হলো অর্থ এবং ক্ষমতা। তুমি যদি পর্যাপ্ত অর্থের মালিক হও তাতেও তোমার সকল অপরাধের ক্ষমা হয়ে যাবে আর তোমার হাতে অর্থের পাশাপাশি যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে তুমি অপরাধ করতেই পারোনা।

                           মূল গল্পে অনুপ্রবেশ করবার পূর্বে এই বিবরন লিপিবদ্ধ করলাম তার বেশ কিছু কারণ বর্তমান বিষয়টি আপনারা উপলব্ধি করতে পারবেন তখনই যখন সমগ্র গল্পটি পড়বেন আশুন আলাপ করিয়ে দি কাকুলি বাগের সাথে। বতর্মানে তিনি রায‍্যের ক্ষমতায় বিরাজমান দলের M.L.A.। বছর দশেক পূর্বে এই কাকুলি দেবীর জীবনেও এসেছিল এক ভয়ানক মেঘলা আকাশ। হয়তো সেই দিনটা এসেছিল পরের এই দিনটাকে তার জীবনের সাথে জুড়তে। আজ যদি সেই দিনটা না আসতো তাহলে কাকুলি বাগ শান্তিপূরের ছোট্ট গ্রামের ছোট্ট ঘরটাকে তার দুই সন্তানকে বাঁচাতে রাতের পর রাত নিজেকে বেচেই যেত। 

                               আশুন আপনাদের বোঝবার সুবিধার্থে একঝলক দেখে নেই কাকুলি বাগের মেঘে ঢাকা অতীত টাকে। একটা ছোট্ট গ্রামের গরীব পরিবারের বৌ হয়ে আসে কাকুলি। কাকুলির স্বামী একজন দিন মজুর কিন্তু মানুষ হিসাবে তার একটা ভালো প্রতিচ্ছবি রয়েছে সমাজে। পধচন্ড সৎ ব‍্যক্তি সে বিয়ের পর বছর চারেক বেশ সুখের সাথেই কাটছিলো কাকুলির জীবন চার বছরে তার দুটো সন্তান হয় তাদের। একটি পুত্র সন্তান আর একটি কন‍্যা সন্তান। গ্রামের লোকের কাছে কাকুলি একজন সতিলক্ষ্মী নারী হিসাবে পরিগনিত হয়। সব কিছুই বেশ ভালোভাবেই চলছিল কিন্তু কিভাবে যে সব কিছু বদলে যেতে লাগল হঠাৎ করে কিছু মানুষের পাল্লায় পড়ে তার হাসবেন্ড ধিরে ধিরে মদ‍্যপ হয়ে উঠতে থাকে সে। কাকুলি বোঝাবার চেষ্টা করলে সে বলে পুরুষ মানুষ অনেক চিন্তা মাথায়, একটু আধটু নাখেলে হয়না। কাকুলির জীবনে কালো মেঘ ছেয়ে যায় তারজীবনে। কয়েকটা বছরের মধ‍্যেই তছনছ হয়ে যেতে লাগলো তার সংসারটা। হাঁড়িতে চালনেই অথচ মদের পয়সা তার চাই। মদ না পেলে কাকুলির উপর চলে অকথ‍্য অত‍্যাচার। বাচ্চাদুটোও অভূক্ত থাকে দিনেরপর দিন। নিরুপায় হয়ে বেশ কিছু অর্থ মহাজনের কাছথেকে ধারনিয়েছিল সে, সময় মতো ফিরিয়ে দিতে না পাড়ায় চরম অপমানের মুখমুখি হতে হয় কাকুলিকে। বিষয়টা সে তারস্বামীকে জানায় কিন্তু বড়ের কোন পজেটিভ প্রতক্রিয়া পায়না কাকুলি। কি করবে কিছুতেই বুঝতে পারছিোনা কাকুলি, অবশেষে মহাজনের কাছে একটা চাকরির আবেদন নিয়ে যায় সে আর ঠিক সেই সময় তার সুযোগটা নিয়ে নেয় মহাজন। অনেক চেষ্টা করেও কাকুলি কিছুই করে উঠতে পারেলা অবশেষে নিজেকে সমর্পন করে মহাজনের কাছে। 

                              কাকুলির জীবনে একটা নতুন অধ‍্যায়ের সূচনা ঘটলো। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস গ্রামের ক্ষমতাবান মানুষদের বসিভূত করে ফেললো কাকুলি। সবটাই গোপনে চলছিল কোন সমস‍্যাই ছিলোনা কিন্তু কথায় রয়েছে মানুষের চোখ খুব খারাপ, কাকুলির ফুলেফেঁপে ওঠার ঘটনা বহু মহিলার মন‍েই প্রশ্ন জাগে কিভাবে এত স্বচ্ছন্দে চলছে ধিরে ধিষয় টাকে ফলো করতে থাকে  অনেকগুলো চোখ, অবশেষে একদিন বিষয়টার মুখমুখি হয়ে পড়ে হাতে নাতে ধরাপড়েযায় কাকুলি। গ্রামের মহিলারা বিচারসভা বসায় সেইদিন কাকুলিকে কেউই সাপোর্ট করলোনা, গ্রামের লোকেরাতো কোন ছার তার স্বামী, সন্তানরাও তাকে সঙ্গদিলোনা। যে প্রধান কাকুলির দেহটাকে ফুলের সাথে তুলোনা করতো সেই আজ তাকে ছিনাল মাগী থেকে আরম্ভ করে যতপরনাস্তি কথাবার্তা বলেন। অবশেষে বিচারের রায় হয় তাকে এই গ্রামে থাকতে দেওয়া যাবেনা।

                                      কোন প্রত‍্যুত্বর নাকরেই কাকুলি প্রধানের রায় মেনে নেই এবং সেদিনই সে গ্রামছেরে পারিদেয় শহরের পথে। একটা যোগাযোগ মাধ‍্যমের মাধ‍্যদিয়েই কোলকাতার এক বস্তিতে এসে ওঠে সে, সেখানথেকেই আবার যাত্রা শুরু করে সে। কয়েকমাসের মধ‍্যেই সে বহু নামিদামি মানুষের সয‍্যাসঙ্গিনী হয় সে। রূপ কমছিলোনা কাকুলির শহরের জলবাতাসে  নিজেকে নিপুন ভাবে সাজিয়ে নিয়েছে। এখন আর তাকে দেখে মনেই হয়না কোন একদিন সে গ্রামের মেয়ে গ্রামের বোধু ছিলো। এখন কাকুলি মানে শহরের আলট্রা মর্ডান কলগার্ল। আজকের ডেটে নেতাথেকে মন্ত্রী শিল্পপতী থেকে ব‍্যাবসায়ি তাকে চেনেনা এমন কেউ নেই। বছর খানেকের মধ‍্যেই কাকুলি বস্তি ছেরে ফ্লাটে সিফ্ট করে গিয়েছে সে। একটা গাড়িয়ো তাকে কেউ ভালোবেসে গিফট করেছে। আজ হয়তো অনেকেই তাকে দেখলে চিনে উঠতে পারবেনা। মাঝেমধ‍্যে যখন ও একা থাকে তখন ছেলে মেয়েদের কথা খুব মনে পরে তার যতই

 হোক আফটারঅল একজন মাতো সে।

                               একরাতে কাকলির কাস্টমার হলেন ফ্লিম জগতের একজন প্রডিউসার। প্রথম দেখাতেই কাকুলিকে সে মনে মনে সিলেক্ট করে ফেলে, তারপর তার কথা বার্তা ব‍্যবহার, চালচলন সব কিছুই তার গল্পের চরিত্রের সাথে মিলে যায়। কথপকথনের মধ‍্যদিয়েই লোকটি তাকে বলে তুমিযদি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাও তাহলে কি করবে। কাকুলি বলে যেটা কোনদিন হবার নয় সেটা ভেবে কিলাভ বলুন? লোকটি আবার বলেন সেটা অবশ‍্য ঠিকি বলেছেন, তবুয়ো ধরুন সূযোকটা পেয়েই গেলেন তাহলে কি করবেন। কাকুলি পেকটা সাজিয়ে লোকটার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে আমি ওসব পাড়ি থোরেই না বাবু ও সব স্বপ্ন আমাকে দেখাস না। তার মানে সুযোগ পেলে করবে তাইতো। কাকুলি একটু লাজুক ভাবে বলে যদি কেউ শিখিয়ে নিতে পারে তবে আমিও চেষ্টা করে দেখতে পারি। এবার ফলের থালাটা এগিয়ে দিয়ে বলে পয়সা খরচ করে এতবরো হোটেলে নিয়ে এসেছে বাজে কথা বলে সময় নষ্ট না করাই ভালো সময় কিন্তু থেমে থাকবেনা বুঝলেন, ভদ্রলোক  পেকটা শেষ করে  এক টুকরো আপেল মুখে দিয়ে মানিব‍্যাগ থেকে একটা কার্ড বারকরে তার হাতে দেয় সাথে সাথে কন্ট্রাকের টাকাটা মিটিয়ে বলে আগামীকাল এই ঠিকানায় যোগাযোগ করবেন ফিল্মে অভিনয়ের সুযোগটা হলেও হয়ে যেতে পাড়ে। কাকুলি বলে কিন্তু যে কাজের জন‍্য টাকা দিলেন সেটইতো করলেন না। লোকটি বললো ওটা ডিউ রইলো সময় মতো নিয়ে নেবো।

                               এর পর এক বছর কেটে গিয়েছে এখন কাকুলি একজন আইকন, তার নাগাল পাওয়াই ভার কিন্তু সেযে অকৃতজ্ঞ নয় তা সে বুঝিয়ে দিয়েছে সেই ব‍্যক্তিকে একদিন যে কাকুলিকে এই প্লাটফর্মটা দিয়েছিল আজ সে একটা দৃর্ঘটনায় নিজের চলার ক্ষমতা হারিয়েছেন তিনি, অর্থের অভাব নেই তার কিন্তু পাশে থাকার মতো কেউ নেই তার। তার চিকিৎসার সামগ্রিক দ্বায়ীত্ব নিয়ে বিভিন্ন ব‍্যস্ততার মধ‍্যদিয়ে তাকে আবার নকল পা লাগিয়ে হাটার অবস্থায় নিয়ে আসে কাকুলি। লোকটি কাকুলিকে তারজীবনের অংশহিসাবে পেতে চেয়েছিল বটে কিন্তু এখানেও কাকুলি নিজের সততার প্রমান দিলো সে তাকে বলল আপনি নেতান্তই ভালো মানুষ সব কিছু যেনেও আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন কিন্তু আমি সারাজীবন আপনার পাশে থাকবো কিন্তু সংসার করতে পারবোনা কারণ আমার স্বামী সন্তান  রয়েছে।

                               ছবি সুপারহিট হবারপর একটা সাংবাদিক সন্মেলনে এক কঠিন প্রশ্নের মুখমুখি হয় কাকুলি। এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করে আপনি কলগার্ল থেকে নায়িকা হলেন কোটি কোটি মানুষের মনে স্থান করেনিয়েছেন এই বিষয়টা অনেকেই জানেন কিন্তু আমাদের কাছে খবর আছে এর আগে আপনি কোন এক গ্রামের বধু ছিলেন, আমরা যানতে চাই বধু থেকে কলগার্ল হলেন কিভাবে। কাকুলি বলে দেখুন মানুষ নরম স্থানেই আঘাত করে। আর একজন পুরুষ যখন তারস্ত্রীর অবলম্বন টুকুয়ো না হতে পাঅ তখন সংসার বাঁচতে তার স্ত্রীকে পথে নাবতেই হয় আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগান সমাজের সম্ভ্রান্ত মানুষেরদল যারা আদপে মানব রূপে অশুর। এদের চোখগুলো রক্ত চোষা ভ‍্যাম্পেয়ার দেল মতো খুঁজে বেড়ায় অসহায় নারীদের। পড়ের প্রশ্ন গ্রামথেকে শহরে আসলেন কি ভাবে? আমার প্রয়োজন ঐ গ্রামের হারমাদ গুলোর ফুরিয়ে গিয়েছিল তাই নিজেদের বাঁচাতে আমাকেই ছুঁড়েফেলে দিলো। পরের প্রশ্ন আপনি যদি জানতে পাড়েন ঐ গ্রামের কোন মানুষ বিপদে পড়ে আপনার স্বরণাপর্ণ হয় তখন…….,প্রশ্ন সম্পূর্ণ হবার আগেই কাকুলি বলে আমি ওদের কাছে পড় হতে পাড়ি কিন্তু ওরাযে আমার আপনজন ওদের বিপদে আমি সর্বদাই ওদের পাশেই থাকবো। শেষ প্রশ্ন আপনার স্বামী - সন্তানরাওতো আপনাকে ভূল বুঝেছে ওদের নিয়ে আপনার কি বিচার হবে। কাকুলি বলেন কিসের বিচার স্বামীতো আমার পরম গুরু ওনার বিচার করবার আমার কি ক্ষমতা আছে আর সন্তান ওরাযে আমার দেহের রক্ত রক্তকে শাস্তিদেওয়া মানে নিজেকে শাস্তিদেওয়া। আমারো কিছু ভূল ছিলো সেই থেকেই ওদের অভিমান হয়েছে অভিমান ভাঙলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, এবার আমাকে উঠতে হবে কিছুক্ষণ পরেই একটা অ‍্যাডসুট আছে।

                                    পোগ্রামটা লাইভ হচ্ছিলো গ্রামের বেশকিছু মানুষ সেটাকে দেখে তাদের ভূলটা বুঝতে পারে। কাকুলির স্বামী সন্তানরাও পোগ্রাম শুনে বোঝতে পারে লোকের কথায় তারা কতখানি অন‍্যায় করেছে কাকুলির সাথে। গ্রামের লোকেরা একহয়ে ঠিক করে যারা যারা কাকুলির সাথে এমন অন‍্যায় করেছে তারা তাদের কাউকেই ছারবেনা সাজা তাদের পেতেই হবে। পরেরদিন সকল অপরাধীদের একজায়গায় করে তারাও ফোনে লাইভ ভিডিও করে কাকুলির উদ্দেশ্যে বলে, যদি সম্ভব হয় আমাদের ক্ষমা করে দিয়ো আমরা সুধু তোমাকেই ভূল বুঝেছি, কাকুলির হাসবেন্ড বলে তোমার সাথে যা ঘটেছে তার জ‍ন‍্য দ্বায়ী আমি একটিবার আমাকে ক্ষমা করে দাও। এই লাইভ দেখার পর কাকুলি আর বসে থাকতে পারেনা নিজেই গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে যায় নিজের গ্রামে। সকলে তাকে বরণ করে নেই। বাচ্চাদুটো এসে মা বলে জড়িয়ে ধরে তাকে। কাকুলি সকলকে দেখতে পায় কিন্তু তার স্বামী কোথা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কিছু দূরে একটা গাছের আড়ালে  দাঁড়িয়ে আছে সে, কাকুলি সেখানে গিয়ে বলে তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কেন? সে বলে কোন মুখে তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো বলতে পারো। কাকুলি বলে মুখের দরকার নেই অধিকার নিয়ে দাঁড়াবে সেদিন যতটা অধিকার ছিলো আজও ঠিক ততটাই আছে। কাকুলির স্বামী ছুটে এসে তাকে বুকে টেনে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দাও কাকুলি তাকে আঁকরিয়ে ধরে বলে এমনটা বলেনা আমার পাপ হবেযে…….।

                     সকল যুদ্ধের পর একটা শান্তির  পরিবেশ কাকুলি বর্তমান শাসক দলের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে বিপুল ভোটে জিতে M.L.A নির্বাচিত হয়েছে। আজ আর সে সমাজ চুতো নয়, সকলের কাছে এক আইকন হিসাবে পরিচিত সে।

                        🙏 সমাপ্ত 🙏



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics