#ME TOO
#ME TOO
বুকের ভেতর যন্ত্রণা মোচড় দেয় অহরহ,অজান্তে কখনও বা একান্তে চোখ ফেটে বেরিয়ে আসে জল। সবে কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পা রেখেছে তখন প্রিয়া। কলেজে ভর্তি হবে কত আনন্দ তার। নির্দিষ্ট দিনে চাকরির কারণে বাবা বা মা ছুটি নিতে না পারায় নিজের বন্ধু নামী কলেজের প্রিন্সিপালকে দায়িত্ব দেন বাবা মেয়েকে নিয়ে গিয়ে তাঁর কলেজে ভর্তি করে দিতে। তিনি সানন্দে রাজি হয়ে যান প্রিয়াকে নিয়ে যেতে। গাড়ি করে যাবার সময় পাশে বসা প্রিয়ার কাঁধে হাত রাখলে সে সংকুচিত হয়ে পরে। উনি কিন্তু থামেননি,প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে কাছে, নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়েছিলেন। এতটুকু সময় অপচয় না করে,তার বুকে হাত রেখেছিলেন। এমনটা মোটেই ভাবতে পারেনি সে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী এই মানুষটা সম্বন্ধে,যাকে মনে মনে এতদিন সে শ্রদ্ধা করে এসেছে। এই অতর্কিত আক্রমণে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল সে। রাগে,দুঃখে,অপমানে চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসছিল তার কিন্তু চেঁচাতে পারেনি,বিদ্রোহ করতে পারেনি সেদিন সে বাবার বন্ধুর বিরুদ্ধে। সামনে ড্রাইভার যাতে কিছু বুঝতে না পারে তাই মেনে নিয়েছিল সে চুপটি করে। এখানেই থামেননি তিনি,এরপর কলেজে পড়াকালীন যখনতখন নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠাতেন প্রিয়াকে আর তার শ্রীলতাহানি করতেন। বাবা-মাকেও বলতে পারেনি সে কারণ বাড়িতে ছিল অমায়িক এই ভদ্রলোক বেশি লম্পটের অবাধ যাতায়াত। বাবা-মায়ের সঙ্গে এসে গল্প করতেন। যেদিন আসতেন, প্রিয়াকে ডেকে তার সঙ্গে কন্যাসম আচরণ করতেন। চলে যাবার পর বাবা-মা তাঁর সম্বন্ধে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে
ন। তাঁর সম্বন্ধে খারাপ কিছু ভাবতেও পারতেন না তাঁরা আর শুধু তাঁরাই নন,সকলেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তাই প্রিয়া পারেনি এসব মাকে জানাতে। কলেজ ছেড়ে ইউনিভার্সিটি গেলেও এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় নি সে।
দীর্ঘ ১০ বছর ধরে প্রিয়া এই যন্ত্রণা ভোগ করে চলেছে। মনের ভেতর তার গ্লানি,হাসতে ইচ্ছে করে না তার মোটে। আজ সে এক কলেজের অধ্যাপিকা,রয়েছে বাড়ি থেকে বেশ অনেকটা দূরে। পড়াশোনা ছাড়া আর কোনও বিনোদন নেই তার,কারো সাথে বেশি মেলামেশাও করে না সে। পুরনো দিনগুলো বিভীষিকার মত তার বুকে চেপে বসে আছে,মনের ভেতর অদম্য রাগ চেপে রাখে সে সর্বদা,এক প্রতিশোধস্পৃহা কুরে কুরে খায় তাকে। সুযোগও এসে গেল। বিদেশে অনেক আগে শুরু হলেও আগের বছর থেকে ভারতে #ME TOO আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে। মনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে শেষে স্থির করে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিয়ে সেও ওই প্রিন্সিপালের মুখোশ খুলে দেবে। একবার এগোয় একবার পিছোয়,বাবা মায়ের কথা মনে হয় ওর। কিন্তু এখন ও স্বাধীন, নিজে রোজগার করে,কিসের ভয় ওর? মুখোশটা খুলে দিতে পারলে যদি যন্ত্রণার কিছুটা লাঘব হয়। এ ধরনের মানুষ হয়তো আরো কত মেয়ের জীবন নষ্ট করে চলেছে। অবশেষে স্ট্যাটাস দিল সে #ME TOO, তার যন্ত্রণার কাহিনী লিখে প্রিন্সিপালের নাম দিয়ে। লাইক কমেন্টের বন্যা চলছে পোস্টে,ছি ছিক্কারে ভরে গেছে প্রিন্সিপালের টাইমলাইন। আহ্ অপার শান্তি,এবার ও একটু শান্তিতে ঘুমাবে। বাবা-মা বারেবারে ফোন করছেন, প্রিয়া ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে।