মায়ার ছায়া (ধারাবাহিক) ৩
মায়ার ছায়া (ধারাবাহিক) ৩


মায়ার ছায়া (ধারাবাহিক)
৩
শ্রীতমার ঘুম ভাঙলো যখন, তখন প্রথমেই ওর ঐ পরিবেশটা কেমন অচেনা লাগলো। বুঝতে অনেকটা সময় লাগলো। অচেনা ঘর, অচেনা ঘরে অচেনা দেওয়ালের রং, অচেনা বিছানা-বালিশ। একদম অচেনা মানুষ জনের ঘোরাঘুরি। শ্রীতমার সর্বাঙ্গে মারাত্মক ব্যথা, মাথাটা ভারী, মুখটা তিতকুটে বিস্বাদ। মাথাটা একদম কাজ করছে না, চোখটা বুজে আসছে। ঘুমে আবার জড়িয়ে আসছে শ্রীতমার দুই চোখ। বন্ধ চোখেই শ্রীতমা শুনতে পাচ্ছে নানান হাবিজাবি আওয়াজ। শ্রীতমা আবার ঘুমিয়ে পড়লো, নাকি অচৈতন্য হয়ে পড়লো!
******
শ্রীতমা চোখ বন্ধ অবস্থাতেই শুনতে পাচ্ছে অনেক মানুষজনের কথা বলার আওয়াজ। তবে আলাদা করে কোনো আওয়াজ ওর কানে ধরা পড়ছে না। শরীরটা কেমন একটা অবশ ঝিমধরা ভাব হয়ে রয়েছে। মাথাটা ভীষণ ভার। নড়াচড়া করতেও কষ্ট হচ্ছে যেন। চোখদুটো কেউ যেন আঠা দিয়ে শক্ত করে চেপে বন্ধ করে রেখেছে। আপ্রাণ চেষ্টা করেও কিছুতেই চোখ খুলতে পারছে না যেন। অথচ মনে মনে আশপাশটা দেখতে চাইছে। কী যেন এক কাণ্ড ঘটে চলেছে ওর চারপাশে, অথচ ও দেখতে পাচ্ছে না, বুঝতে পারছে না। চোখ খুলতেই চড়া আলোয় শ্রীতমার চোখ ধাঁধিয়ে গেলো। চোখ খুলেই আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো। চারপাশে মৃদু গুনগুন, ফিসফাস! শ্রীতমা ভীষণ কষ্ট করে জোর করে চোখের পাতা খুলে চোখ মেললো।
শ্রীতমার মুখের সামনে ঝুঁকে এসেছে অনেকগুলো মুখ। একে একে স্পষ্ট হচ্ছে মুখগুলো। ডাঃ আসলাম আর একজন নার্স। একে দেখেছে শ্রীতমা আগে। মা, বাবা। শ্রীতমার চোখ ঘুরছে। কাউকে খুঁজছে। পায়ের কাছে মুখচুন করে দাঁড়িয়ে অনুভব। এবার ধীরেধীরে মনে পড়ছে শ্রীতমার। অনুভব হাসপাতালে গেছে এমার্জেন্সি কলে। ভীষণ বৃষ্টি। ঠাণ্ডা আর বৃষ্টিতে একলা ম্যাগাজিন পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তারপর হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখে কারেন্ট অফ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। বৃষ্টি আর অনবরত বাজের শব্দ। তারপর জানালা খুলতেই বিদ্যুতের আলোয় শ্রীতমা দেখলো ওদের কোয়ার্টারের গেটের সামনে একটা রক্তাক্ত মেয়ে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি করে মোবাইল টর্চ ফেলে ভিজে ভিজে গেটের সামনে পৌঁছে শ্রীতমা দেখলো ওখানে কেউ নেই। জায়গাটা ফাঁকা। টর্চ নিভে গেছে। কিছু দেখা যাচ্ছে না অন্ধকারে। তারপর বিদ্যুৎ ঝলকানি। সেই আলোয় দেখেছিলো একটা চকচকে পিস্তল শুধু পড়ে আছে। আর কেউ নেই কিছু নেই। তারপর বিকট বাজের আওয়াজ। আর তারপর... তারপর... তারপর তো আর কিছু মনে পড়ছে না। এখন দেখছে ও হাসপাতালে। মা বাবা, সবাই একসাথে, একই জায়গায়। কিছুতেই হিসেবটা মেলাতে পারছে না শ্রীতমা। সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে শ্রীতমার। গলা দিয়ে স্বর বেরোতেও চাইছে না। আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলো, "মেয়েটা কোথায়? পাওয়া গেছে মেয়েটাকে? বেঁচে গেছে তো?" সবাই চুপচাপ। কারুর মুখে কোনো উত্তর নেই। ডাঃ আসলাম শুধু মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো, "সবাই ভালো আছে, আপনি কেমন আছেন?" শ্রীতমা বললো, "আমার আবার কী হবে? আর আমি এখানে হাসপাতালে কেন? মেয়েটা বেঁচেছে তো?"
---------------------------------
পরবর্তী পর্ব আসছে