Sanghamitra Roychowdhury

Horror

2.7  

Sanghamitra Roychowdhury

Horror

মায়ার ছায়া (ধারাবাহিক) ১

মায়ার ছায়া (ধারাবাহিক) ১

3 mins
781


মায়ার ছায়া (ধারাবাহিক) পর্ব ১

সংঘমিত্রা রায়চৌধুরী

--------------------------------

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ। এসময় সাধারণত বৃষ্টি বাদল হয় না। তবে এবারের ব্যাপারটা একটু ব্যতিক্রমী হোলো। উপর্যুপরি দু-দুটি গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে, ডিসেম্বরের রোদ ঝলমল আকাশের মুখ ভার। ঘন কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেছে। এই ভরদুপুরে সন্ধ্যে ঘনিয়েছে। শ্রীতমা শীতে এমন বৃষ্টি ভারী অপছন্দ করে। তার ওপর কলকাতা থেকে এতদূরের এক গ্রামীণ হাসপাতালে ওর বর ডাঃ অনুভব সেনগুপ্ত বদলি হয়েছে বছর দুয়েক আগেই। বিয়ের পরে শ্রীতমা এসেছে খুব সম্প্রতি। এতে করেই শ্রীতমা রীতিমতো ট্রমাটাইজড। আজন্ম কাল দক্ষিণ কলকাতার মেয়ের এই ধ্যাদ্ধেরে অজ গ্রামে মানিয়ে নেওয়া কী চাড্ডিখানিক কথা। তবে উপায়ই বা কী? সরকারী নিয়মে গ্রামীণ হাসপাতালে চাকরী করতেই হবে সদ্য পাশ করা ডাক্তারদের। সুতরাং মেনে নিতে হয়েছে নববিবাহিত দম্পতিকে। অগত্যা গ্রামীণ হাসপাতাল লাগোয়া কোয়ার্টারেই শ্রীতমা অনুভবের আস্তানা সেজে উঠেছে।


সকাল থেকে গাঢ় মেঘলা। দুপুর না হতেই মেঘ আরো ঘন হয়ে প্রথমে টিপটিপ, তারপর ঝমঝম বেগে বৃষ্টি নামলো। ঘড়ির সময় দেখে শ্রীতমা বুঝলো সন্ধ্যে হয়েছে। অনুভব হাসপাতাল থেকে ফিরতে পারে নি তখনো। এমনিতেই দুজন মাত্র ডাক্তার এই হাসপাতালে। তার ওপর আরেক ডাক্তার আসলাম আখতার বোনের বিয়ে উপলক্ষ্যে কদিনের ছুটিতে আছে। সুতরাং অনুভব মুখ তোলার সময় পাচ্ছে না। সেই কোন সকালে বেরিয়েছে। দুপুরের খাবার পৌঁছে দিয়ে এসেছিলো রামরতি। রামরতি সারাদিন থাকে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সব কাজ সেরে, রাতের খাবার দাবার বানিয়ে রেখে সন্ধ্যের আগেই চলে যায়। কোনো কামাই টামাই করে না, তবে সন্ধ্যের আগেই ওর ফিরে যাওয়া চাই। ওর বস্তি নাকি একেবারে ঝাড়খণ্ড বর্ডারে। পথে জঙ্গল পড়ে। দিনকাল ভালো না। দেরী করতে পারে না তাই। ঘরে ওর দুটো ছোট ছোট বাচ্চা আছে। ওর মরদ রাস্তা তৈরীর কাজ করে। কন্ট্রাক্টরের কাজ। কখন কোথায় পাঠায় ঠিক নেই। এছাড়া কুলিকামিন মানুষ, কাজ না থাকলেও এধার ওধার পড়ে থাকে হাঁড়িয়া মহুয়া খেয়ে। রামরতি তাই সন্ধ্যে হবার ঝুঁকি নিতে পারবে না, কাজে বহাল হবার সময়ই জানিয়ে দিয়েছে। জোরজার তো খাটানো যায় না। রাতের খাবারটা শ্রীতমা নিজেই গরম করে নেয়। অনুভব শ্রীতমাকে নিয়ে এখানে আসার পর থেকে ডাঃ আসলামই যেচে অনুভবকে রাতের ডিউটি নিতে দেয় নি। অনুভব সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত সামলে দেয় একাই। এটুকু দুই ডাক্তারের ব্যক্তিগত বোঝাপড়ার সম্পর্ক।


তবে এরকম এমার্জেন্সি ছুটি নিয়েছে যখন আসলাম তখন অনুভবকেই সবটা সামলাতে হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তবে গত দু'বছরে দেখেছে অনুভব শীতের সময় এখানে রোগীর সংখ্যাও যেন কেমন আশ্চর্যজনক কমে যায়। অবশ্য এখানকার রোগীদের একটা বড় অংশ সাপে কাটা, নয়তো জ্বর জারি, আন্ত্রিক জাতীয়। আগে নাকি সাপে কাটা রোগীরা হাসপাতালে আসতো না। ইদানিং অনেক রকম এনজিও গ্রামবাসীদের বুঝিয়েছে, সাপে কাটার ওষুধ ইঞ্জেকশন আছে। শুধু শুধু ওঝার ঝাড়ফুঁকের ভরসায় ফেলে রেখে রোগীর জীবন সংশয় ঘটানোর কোনো মানে নেই। শীতকালে সাপের উপদ্রব কমই থাকে। আর শীতে মানুষের রোগবালাইও কমই হয়। তবে আজকাল কিছু কিছু ডেলিভারি পেশেন্ট আসছে। এজন্য অনেকসময় রাতবিরেতে ডাক পড়ে অনুভবের। আর সেই অবস্থায় যেতেও হয়। সেদিন সেরকমই পেটে বাচ্চা ঘুরে গেছে, এরকম একটা কেস এলো। বেশ রাত, সবে রাতের খাবার খেয়ে উঠেছে অনুভব শ্রীতমা, ঠিক তখনই হাসপাতালের জমাদার ঝড়ু ভিজতে ভিজতে এসে খবর দিলো। বৌটার অবস্থা নাকি বেশী সুবিধার নেই, ডাক্তারবাবু এসে দেখে সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপার। অনুভবের চোখেমুখে কেমন এক ইতস্ততঃ ভাব দেখে শ্রীতমা অনুভবকে বললো, "আমি থাকতে পারবো, কিছুক্ষণের তো ব্যাপার। ডেলিভারি করিয়ে দিয়ে এসো। মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে তো!" "দরজা বন্ধ করো, খুব সাবধানে থেকো", বলে অনুভব ছাতা নিয়ে ঝড়ুর সাথে বেরিয়ে গেলো। মুখে শ্রীতমা বললো বটে, তবে বুকটা একটু কেঁপে উঠলো অনুভব বেরিয়ে যাবার পরে। যথেষ্ট রাত হয়েছে। চোখ ঘুমে লেগে আসছে। অনুভব ফেরে নি তখনো। শ্রীতমা একটা ম্যাগাজিন খুলে বসলো।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror