মাতৃত্বের স্বাদ
মাতৃত্বের স্বাদ
আমি হলাম ঋত্বিকা সেন আমার হাজব্যান্ড সৌরভ সেন। আমাদের ভালোবাসা করে বিয়ে। আমার মা বাবা আর সৌরভের মা বাবা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছিল, তারা আমাদের বিয়ে ঠিক করে। দেখতে দেখতে কিছু মাস কেটে যায় আজ আমাদের বিয়ে, একে একে দধিমঙ্গল, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হল। বিকেল হতেই পার্লার থেকে আমাকে সাজাতে আসল। সাজানো হয়ে গেলে ওনারা চলে গেল। হঠাৎ বাইরে থেকে আওয়াজ আসল 'বর এসেছে বর এসেছে' বর এসেছে শুনে আমার মনে কেমন একটা হচ্ছিল। আস্তে আস্তে শুভদৃষ্টি, মালা বদল বাকি সব নিয়ম শেষ হল;শেষে সিঁদুর দান সৌরভ আমার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিল, আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হল।
সকালে কনে বিদায়ের সময় খুব কেঁদে ছিলাম মা বাবাকে ছেড়ে চলে যাওয়া যে কি কষ্ট সেটা মেয়েরা বোঝে। কিছুক্ষণ পর শশুর বাড়িতে আসলাম। শাশুড়ি মা আমাকে বরন করে ঘরে তুলল। তারপর একে একে স্ত্রী আচার পালন হল। আজ কালরাত্রি কেও কারও মুখ দেখবে না তাই আমরা আলাদা ঘরে শুলাম।
পরেরদিন আমার বউভাত সকালে সৌরভ আমার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিল। বিকেলে রেডি হয়ে অনুষ্ঠান জায়গায় গেলাম আস্তে আস্তে সবাই আসল মা বাবা আসল তাদের সাথে অনেক কথা বললাম। রাত হতেই সবাই চলে গেল আমাকে সৌরভের ঘরে দিয়ে চলে গেল। সৌরভ ঘরে আসতেই আমি ফ্রেস হতে চলে গেলাম। তারপর ধিরে ধিরে আমরা ভালোবাসায় ডুবে গেলাম।
এই ভাবে দেখতে দেখতে কয়েকমাস কেটে গেল। আমি জানতে পারলাম আমি প্রেগন্যান্ট। সবাই খুব খুশি সৌরভ তো বাবা হবে বলে পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু ওই যে বলে সুখ বেশি দিন থাকে না তাই হয়তো আমার কপালে বেশি দিন সুখ ছিল না। আমার প্রেগন্যান্সির সময় আমি খুব ভার হয়ে গেছিলাম মাঝে মাঝে শরীর খুব খারাপ লাগে কিন্তু আমি কাওকে বলিনি। সেদিন বাথরুমে গিয়ে হঠাৎ পড়ে গেলাম পড়ে গিয়ে ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলাম। আমার চিৎকার শুনে সৌরভ চলে আসল সৌরভ আমাকে এমন অবস্থায় দেখে আমাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি হসপিটালে গেল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না আমি বাঁচলেও আমার বেবিকে বাঁচানো গেল না। আর এও বলল আমি কোনো দিন মা হতে পারবো না। এটা শুনে আমি পাগলের মতো কাঁদছিলাম, কিছুদিন পর আমাকে বাড়িতে নিয়ে গেল। আমি কারও সাথে কথা বলতাম না চুপ করে থাকতাম। সবাই আমাকে খুশি করার চেষ্টা করত কিন্তু আমি কিছু শুনতাম না জানলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। হঠাৎ একদিন সৌরভ তোয়ালে মরিয়ে একটা বাচ্চাকে নিয়ে আসল। বাচ্চাটা কে দেখে আমি সৌরভের দিকে তাকালে সৌরভ হেসে বলল, আমাদের মেয়ে সিন্ধুজা আমাদের তিন্নি সোনা। হ্যাঁ সৌরভ বাচ্চাটা কে এডোপ্ট করেছে। আমাদের মেয়ে শুনে আমি বাচ্চাটা কে কোলে নিয়ে ওর মুখে অসংখ্য চুমু একে দিয়ে কেঁদে দিলাম আজ আমি মাতৃত্বের স্বাদ বুঝতে পারলাম। তারপর সৌরভ আমার কাছে এসে আমাদের মেয়ে তিন্নি কে কোলে নিয়ে আমাকে একহাতে জড়িয়ে ধরল।
🌼সমাপ্ত🌼
