The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sucharita Das

Tragedy Inspirational

3  

Sucharita Das

Tragedy Inspirational

মাধবীলতা

মাধবীলতা

5 mins
935


"মা চলো তাড়াতাড়ি আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে এই মাধবীলতা গাছের নীচে।এমন করছো যেন তোমার সন্তান ও। এদিকে আমাদের যে দেরী হয়ে যাচ্ছে। তোমাকে পৌঁছে তবে তো যেতে পারব আমরা"। ছেলের কথায় সম্বিত ফিরল নিরুপমা দেবীর। নিজের অজান্তেই চোখটা ভিজে গিয়েছিল মনে হয় একটু। কি যেন বলছিলো ঋক, এই গাছটা তার সন্তান। হ্যাঁ, সন্তানই তো এটা তার। নিরুপমা দেবীর কতো সুখ দুঃখের সাথী তার এই সন্তান সম মাধবীলতা। ফিরে গেলেন নিরুপমা দেবী আবার অতীতে-------

"নিরু ও নিরু কোথায় গেলি মা" মায়ের ডাকে নিরু মানে নিরুপমা বাগানের মাধবীলতা গাছের সামনে থেকে দৌড়ে ঘরের ভেতর গেল। বাবার সঙ্গে গিয়ে নিরুপমা এই ছোট্ট মাধবীলতার চারাটা বিমল কাকুর বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিল। তারপর সযত্নে সেই গাছ বসিয়েছিল নিজের বাগানে। ছোট থেকেই নিরুপমার বড়ো পছন্দের গাছ এই মাধবীলতা। লতানে এই গাছে যখন সাদা,গোলাপীর মিশেলে ফুল ফোটে, কি সুন্দর দেখতে লাগে। নিরুপমার নিজের হাতে লাগানো ছোট্ট চারাটা ধীরে ধীরে লতিয়ে উঠছিল গেটের দুপাশে। তারপর যেদিন গাছটাতে প্রথম ফুল ফুটেছিল, নিরুপমার সে কি আনন্দ। বাবা অফিস থেকে ফিরতেই বাবাকে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছিল ফুলগুলো।আর কি সুন্দর মৃদু একটা সুগন্ধে চারপাশ সুরভিত করে রেখেছিল গাছটা। নিরুপমার মনটা একটা অজানা আনন্দে ভরে গিয়েছিল সেদিন। তারপর তো একদিন এই বাড়ি ছেড়ে, প্রিয় মাধবীলতা কে ছেড়ে নিরু পারি দিয়েছিল এক অজানা ঠিকানায়। যেখানে তার সবাই অচেনা। তারপর সেই অচেনা মানুষটি আর সেই অচেনা পরিবেশ কবে যে ধীরে ধীরে নিরুর পরিচিত হয়ে উঠেছিল, তা নিরু নিজেও জানেনা। এক রাতে নিরুর আবদার সেই মানুষটিকে,"আমাকে একটা মাধবীলতা র চারা এনে দেবে? গেটের দুপাশে জড়িয়ে উঠবে।"


এনে দিয়েছিল মানুষটা পরের দিন ই অফিস থেকে ফেরার পথে। ঠিক যেমন নিরুকে ওর বাবা এনে দিয়েছিল। নিরুপমা স্বামীর এনে দেওয়া গাছটাকে সযত্নে রোপন করেছিল বাড়ির প্রবেশ পথে বড়ো গেটের সামনে। নিরুপমার যত্নে সেই গাছ ও ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছিল।তারই মাঝে নিরুপমা জানতে পারলো সন্তান সম্ভবা সে। নতুনের আগমনের রোমাঞ্চিত হয়ে নিরুপমা ভুলে গেল তার অতি প্রিয় সন্তানসম সেই মাধবীলতা কে।এরপর তো নিরুপমা পাকা গিন্নি। স্বামী, সংসার, শ্বশুর শাশুড়ি, পুত্র সব মিলিয়ে ভরাট সংসার তার। এরপর এলো আবার ঘরেতে নতুন অতিথি, নিরুপমার দ্বিতীয় সন্তান।বড়ো ছেলে ঋক আর ছোট ছেলে ঋদ্ধি, নিরুপমার দুই নাড়ি ছেঁড়া ধন।


 এসবের মধ্যেই নিরুপমার সযত্নে লালিত মাধবীলতা তখন তার সবুজের সমারোহে পরিপূর্ণ।ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে সে। কিন্তু নিরুর সময় কোথায় দেখবে তার মাধবীলতা কে এক পলকের জন্য। সে যে এখন বড়ই ব্যস্ত তার সংসার নিয়ে। ছেলেদের মানুষ করতে হবে , তাদের লেখাপড়া শেখাতে হবে, কতো কাজ নিরুপমার। যে মাধবীলতা কে সারাদিনে একবার ও না দেখলে থাকতে পারতো না, সেই মাধবীলতার সামনে যাবার সময়ই নেই তার। এরপর সময়ের কালস্রোতে একদিন নিরুপমাকে ছেড়ে গিয়েছিল তার শ্বশুর, শাশুড়ি। সংসারের দায়িত্বের চাপে নিরুপমার এখন আর জানালা দিয়েও দেখার সময় নেই মাধবীলতাকে। ছেলেরা বড়ো হয়ে চাকরিতে যোগ দিলো। কর্তা তো রিটায়ারমেন্টের পরই নিরুপমাকে একা করে চলে গিয়েছিলেন। হঠাৎই বুকে ব্যথা শুরু হয়েছিল।ডাক্তার ডাকবারও সময় পায়নি নিরুপমা।ছেলেরা তো তখন অফিসেই। মানুষটা ছেড়ে চলে গিয়েছিল নিরুপমা কে চিরকালের মতো। ছেলেদের বিয়ে দেখেও যেতে পারেনি মানুষটা। মানুষটার শায়িত শরীরটা যখন গেটের পাশে রাখা ছিল। মাধবীলতা কিন্তু নিজের সন্তানের মতই নিজের ফুল ছড়িয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিল মানুষটাকে। তাকে যে নিজের হাতে এই বাড়িতে এই মানুষটাই এনেছিল প্রথম। কান্নায় ভেঙে পড়েছিল নিরুপমা মানুষটার অকাল প্রয়াণে। 




এরপর অবশ্য একাকী, নিঃসঙ্গ নিরুপমা আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল এই মাধবীলতাকেই। সেদিন অভিমান হয়েছিল বৈকি মাধবীলতা র। এতদিন কি করে তাকে ভুলে ছিল নিরুপমা। কিন্তু একাকী মানুষটাকে দেখে পারলো কই অভিমান করে থাকতে। সুখ, দুঃখের সঙ্গী হয়ে গিয়েছিল তারা আবার একে অপরের। ছেলেদের বিয়ে দিয়ে নিরুপমা ভেবেছিল আবার সংসারের বন্ধনে জড়িয়ে পড়লো বুঝি সে। কিন্তু ঋক তো বিয়ের আট দিনেই সেই যে বউ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেল, আর এ বাড়ি মুখো হলো না। তার বউ এর নাকি এ বাড়িতে সব কিছুতেই অ্যাডজাস্ট করতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই সে এবার থেকে ওখানেই থাকবে।আর বউ ওখানে থাকলে ছেলে কি করবে এখানে একা। সে স্পষ্ট ভাষায় মাকে জানিয়ে দিলো , তারা দুজনে একসাথে ই থাকবে। এরপর ঋদ্ধি ছিল নিরুপমা দেবীর এই বয়সের আশা, ভরসা, অবলম্বন। ঋদ্ধিকে ওর শ্বশুর বিয়েতে একটা ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছিল। ঋদ্ধি মাকে বলেই রেখেছিল বিয়ের পর ওখানেই শিফ্ট করবে ওরা। 




সেদিন সকাল থেকে নিরুপমা দেবী নিজের জামাকাপড় সব গুছিয়ে নিচ্ছিলেন ছেলের নতুন ফ্ল্যাটে শিফ্ট হবেন আজ সবাই। মনটা খুব খারাপ লাগছে নিরুপমা দেবীর।স্বামীর ভিটে ছেড়ে আবার এক নতুন ঠিকানায় এবার যাচ্ছেন। ছেলের সেই ফ্ল্যাট বাড়িতে তো আর তাঁর প্রিয় মাধবীলতা থাকবে না। ওইটুকু জায়গায় কি করে বসাবেন আবার নতুন করে মাধবীলতা কে।এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে মাধবীলতা র তলায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি নিজেও বুঝতে পারেন নি। ছেলের ডাকে তড়িঘড়ি বললেন ,"হ্যাঁ , বাবা চল্।এই তো যাচ্ছি।" কিন্তু নিরুপমা দেবী কি শুনলেন এটা? ঋদ্ধি তাঁকে কোথায় নামিয়ে দিয়ে যাবার কথা বলছে? ইতিমধ্যেই ঋদ্ধির বউ ও এসে গেছে।ঋদ্ধি আবার তাড়া লাগালো মাকে,"মা চলো, গাড়িতে ওঠো। জিনিসপত্র আমি নিয়ে আসছি।ওখানে কিছু কাজ আছে,সই করতে হবে, টাকা-পয়সা দেব। অনেক কাজ আছে, ওগুলো পুরো করতে হবে তো।" নিরুপমা দেবী এবার আর পারলেন না চুপ করে থাকতে। জিজ্ঞেস করলেন ছেলেকে, "কিসের কাজ? কোথায় টাকা পয়সা দেবার কথা বলছিস বলতো?" ঋদ্ধি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে, "বৃদ্ধাশ্রমে এমনি এমনি রাখে না মা, টাকা-পয়সা দিতে হবে সেখানে। কিছু সইসাবুদ করতে হবে, তবে তো।" নিরুপমা দেবীর মাথাটা একটু টলে গেল।এরা তবে তাকে নিজেদের ফ্ল্যাটে নিয়ে যাচ্ছে না? যাবার সময় বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিয়ে যাবে বলছে। নিরুপমা দেবী দাঁড়িয়ে আছেন গেটের সামনে মাধবীলতার পাশে।

-------কই মা আর কতো দেরি করাবে বলোতো আমাদের।

নিরুপমা দেবী কঠোর কন্ঠে বললেন,"তোরা যা ঋদ্ধি। আমি কোথাও যাব না।"




 নিরুপমা দেবীর নিজের কাছে নিজের স্বীকারোক্তি,"আমার জন্য এই বাড়িটা আছে তো। আর মনের অন্তঃকরণে আর একজনের কথাও স্বীকার করলেন,সে হলো নিরুপমা দেবীর সন্তানসম মাধবীলতা, এটাও যে তাঁর স্বামীর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার তাঁকে। আজ যাদের দেখাশোনার জন্য তিনি তাঁর প্রিয় মাধবীলতা কে অবহেলা করেছেন, কই সে তো‌ কখনও মুখ ফিরিয়ে নেয় নি , ফুলে ফুলে ভরিয়ে রেখেছে নিরুপমাকে সে। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে, এই মাধবীলতা ই তো তাঁর নিঃসঙ্গ জীবনের সঙ্গী হয়ে আছে, ঠিক আগের মতই। সুখে, দুঃখে,অভিমানে একে নিয়েই কেটে যাবে বাকি দিনগুলো। যে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁকে আগলে রাখবে প্রকৃত সন্তানের মতই। এতক্ষণে নিরুপমা দেবী জানতে পারলেন তাঁর জীবনের আসল সত্যটা, তিনি ছেলেদের কাছে তাদের প্রিয়জন না, শুধুমাত্র প্রয়োজন ছিলেন এতদিন।







Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy