Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Sonali Basu

Classics

2  

Sonali Basu

Classics

মা, তোমাকে চিঠি

মা, তোমাকে চিঠি

4 mins
684


বাসবী বইয়ের আলমারি গোছাচ্ছে। কাল এসেছে ও শিলং, ওর দাদুর বাড়িটা দেখতে। হয়তো শেষবারের জন্যই। চাকরির কারণে ও দিল্লীর বাসিন্দা। মনে মনে আসার ইচ্ছে থাকলেও আসা হয়ে ওঠে না। এদিকে মাধব কাকাও খুব বুড়ো হয়ে পড়েছেন। ওনার পক্ষে বারিটার রক্ষণাবেক্ষণ করা অসুবিধেজনকখ্যে উঠেছে। তাই তিনিই ওকে বারেবারে আসতে অনুরোধ করেছেন ফোনে। শেষ অব্দি মনে একটা বিষয় ঠিক করে এসেছে। ইচ্ছে আছে এটা বিক্রি করে ফিরে যাওয়ার। ওকে এতদিন পরে দেখে মাধব কাকা খুব খুশি হয়েছেন সেই কথা উনি মুখে খুব বেশি না বললেও ওনার হাবভাবই বুঝিয়ে দিচ্ছে ওনার আনন্দের কথা। কাল উনি বাসবীর পছন্দের কয়েকটা রান্না করে খাইয়েছেন। আজও সকাল থেকেই রান্নাঘরে হাতা খুন্তির টুংটাং তরকারি ভাজার ছ্যাঁকছোক শোনা যাচ্ছে। বাসবী জানে বারণ করলেও মাধব কাকা শুনবে না তাই ও সেই রাস্তায় হাঁটেনি। মাধব কাকা নাকি মাকে ছোট থেকে বড় করেছে। এই গল্প ও শুনেছে দাদু দিদার কাছে। বিয়ের পর মায়ের সাথে মায়ের শ্বশুরবাড়ি এসেছিল কাকা আবার মা শিলং চলে এলে সেও চলে এসেছিল। সেই হিসেবে দেখতে গেলে ওকে দাদু বলতে হয় তবে মাধব কাকাই ওকে কাকা ডাকা শিখিয়েছে। পুরনো কথা ভাবতে ভাবতেই আবার আলমারির কথা মনে পড়লো বাসবীর।

 কতদিন হয়ে গেলো এই আলমারিতে হাত পড়েনি। মা এই আলমারিটা কিনেছিল শখ করে গল্পের বই পড়ার বই কিছু পুতুল এসব সাজিয়ে রাখার জন্য। মাও চলে গেছে বহু বছর হয়ে গেলো। তারপর থেকে এই বাড়িতেই তো আসা হয়নি ওর। বাবাও কি এক অদৃশ্য অভিমানে তার জগতে বন্দি থেকে থেকে শেষে পরপারে চলে গেলো। আর ওর স্কুল কলেজ জীবন হস্টেলের ভাত খেয়েই কেটে গেলো। পেরিয়ে যাওয়া সময় নিয়ে বাবা মাকে বলার অনেক কিছু থাকলেও দুজনেই হাতের নাগালের বাইরেই থেকে গেলো, বলা হল কৈ। কিন্তু বুকের ভেতরটা মাঝে মাঝে গুমরে ওঠে কেন? নানান ভাবনা চিন্তার মধ্যেই ও ওর কাজ করে চলেছিল। বেখেয়ালে হঠাৎই হাত থেকে একটা বই মাটিতে পড়ে গেলো। চমকে বাস্তবের জগতে ফিরে এলো বাসবী। বইটা খুলে গিয়ে ভেতর থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ মাটিতে পড়েছে। বইটা তুলে রাখতে গিয়ে কাগজের ওপর চোখ পড়লো ওর। কি এটা, প্রশ্ন উদয়ের সাথেই কাগজটা কৌতুহলের সাথে তুলে নিলো ও। খুলতেই দেখলো একটা চিঠি। কার উদ্দেশ্যে লেখা বা কে লিখেছে তাদের নাম নেই কিন্তু চিঠিটা পড়ে ও বুঝতে পারলো চিঠিটা বাবার উদ্দেশ্যে মায়ের লেখা। অভিযোগে ভরা চিঠি! কেন তার সাথে এমন করেছিল বাবা আরও কত কি! চিঠিতে তারিখ লেখা পর্যন্ত লেখা হয়েছিল পাঠানো হবে এই উদ্দেশ্যে কিন্তু শেষ অব্দি পাঠানো হয়নি। তারিখ দেখে বাসবী বুঝলো চিঠিটা মা মারা যাওয়ার অনেক আগেই লিখেছিল।

আজ বাসবীর মনে হল ওর মায়ের উদ্দেশ্যে একটা চিঠি লেখা উচিত। মায়ের ভুলগুলো ভেঙে দেওয়া উচিত। কাগজ কলম নিয়ে বসলো ও। কিন্তু চিঠি লিখবে কি ভাবে? সেই স্কুলে যা চিঠি লেখা শিখেছিল। বাস্তবে কোনদিনই তা প্রয়োগ করেনি। আর এখন তো কম্পিউটার আর মোবাইলই যোগাযোগের মাধ্যম। চিঠি লেখে কে? কিন্তু ও তো ভেবেছে লিখবে! মায়ের চিঠিটাতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে তারপর শুরু করলো নিজেরটা।


মা,

       জানি না কেন আজ তোমায় চিঠি লিখতে ইচ্ছে হল আর তাই কাগজ কলম নিয়ে বসলাম। হয়তো এই ইচ্ছেটা তোমার বেনামী চিঠিটাই এর উৎস। আশা করি যে জীবনে চলে গেছো সেখানে ভালোই আছো। বাবাও সেই জগতে গিয়ে পৌঁছেছে। হয়তো দেখা হয়েও যেতে পারে। পৃথিবীতে থাকাকালীন তোমাদের মধ্যে যেসব বিষয়ে মনমালিন্য ছিল আশা করি ওপারে দেখা হওয়ার পর সব মিটে গেছে নিশ্চই কিন্তু আমার জীবনটা তো অগোছালো গেলো যা ঠিক করে উঠতে পারছি না।

কারো কাছে যে মনের কথা বলে তার সাহায্য চাইবো সেই উপায়ও তো দেখি না। বাবা ছিল যখন তখনো তাকে পাইনি মনের কথাগুলো জানাতে। তাছাড়া সব কথা কি আর বাবার সাথে ভাগ করে নেওয়া যায়? যায় না তো! তুমি থাকলে তবু হতো কিন্তু তুমিও বাবার সাথে মিথ্যে অভিমান করে চলে গেলে। যদি জেনে যেতে তোমার যাওয়ার পর তার কি ভাবে দিনগুলো কাটলো?

সেও নিজেকে ঘরে বন্দি করে ফেলেছিল। হয়তো ভেবেছিল তোমার মতোই জীবনটাকে শেষ করে দেবে, কিন্তু দিতে পারেনি একমাত্র ওই চন্দ্রা মাসির কারণেই যাকে তুমি যা নয় তাই বলেছো, সতীন বলে গালাগালিও দিয়েছ। তোমার নিজের ভালোবাসার ওপর বিশ্বাস ছিল না নিজের ভালোবাসার মানুষের বিশ্বাস ছিল না? নাহলে ভাবলে কি করে সেই মানুষ অন্যের প্রেমে পড়ে তোমায় ভুলে যাবে? অথচ চন্দ্রা মাসিকে ঘিরে তোমাদের দুজনের মধ্যে যে পাঁচিল গড়ে উঠলো তা কেউ তোমরা ভাঙতে চেষ্টা করলে না। তুমি চলে যাওয়ার পর বাবা যে কেমন হয়ে গেলেন তা যদি তুমি চোখে দেখে যেতে। তার প্রাণের আঁকার জগৎ থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। চন্দ্রা মাসি অনেক চেষ্টা করে বাবাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তবে বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে বেরোলো না আর কোনদিন। মাঝেমধ্যে যা আঁকতো তা কেউ খবর পেয়ে কিনে নিয়ে যেত তো ভালো নাহলে ঘরের কোণেই পড়ে থাকতো। যদি ভুল বোঝাবুঝিটা করতে তাহলে হয়তো তোমরা দুজনে এভাবে চলে যেতে না আর আমার জীবনটাও হয়তো অন্য খাতে বইতো।      

আর আমি? তোমাদের দুজনকেই কাছে পেলাম না। তোমাদের পরিণতি দেখে আমার তো ভালোবাসা শব্দটাতেই আতঙ্ক লাগে। ভালোবাসার মানুষ তো দূর অস্ত দুটো মনের কথা বলার বন্ধুই পাইনি। আমাকে হয়তো এভাবেই একা একা জীবন কাটাতে হবে। একজন যদিও মনের দরজায় কড়া নাড়ছে ইদানিং, বুঝতে পারছি না দরজা খুলে ধরবো নাকি বন্ধ করে রাখবো. যাই হোক ভগবানের কাছে প্রার্থনা তার জগতে যদি তোমাদের দেখা হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে যেন তোমাদের মধ্যে সব ভুলের অবসান হয়ে যায়।

ইতি-

তোমার মেয়ে

বাসবী

চিঠিটা পোষ্ট করার ব্যাপার নেই কিন্তু যার উদ্দেশ্যে লিখেছে তাকে কি ভাবে দেবে। দুপুর পেরিয়ে একটু বিকেলের দিকে পাহাড়ি রাস্তায় বেড়াতে বেরিয়ে ও খেয়াল করলো বেশ জোরে হাওয়া দিচ্ছে। আকাশে মেঘও জমছে, মনে হয় বৃষ্টি নামবে। রাস্তার এক কিনারায় দাঁড়িয়ে হাওয়ার ভেলায় চাপিয়ে দিলো চিঠিটাকে। খানিকক্ষণ তাকিয়ে দেখলো কেমন উড়ে চলেছে চিঠিটা। ওর মন বলল মা ঠিক পেয়ে যাবে। 


Rate this content
Log in

More bengali story from Sonali Basu

Similar bengali story from Classics