লকডাউনের রোজনামচা ৩
লকডাউনের রোজনামচা ৩


ডিয়ার ডায়েরি, ২৭শে মার্চ, ২০২০... লকডাউনের তৃতীয় দিনে "আমার বাবা মা" --------------------------------------------------------- আজ সকাল থেকেই আমার বাবা আর মা দুজনেই আমাকে পালাক্রমে ফোন করে চলেছে। একজনের সাথে কথা বলে ফোন রেখে কোনো কাজে হাত দিতে না দিতেই আরেকজনের ফোন। মহা জ্বালাতনে পড়লাম তো! একেই আমার দুজন ডোমেস্টিক হেল্পারই আপাতত ছুটিতে, তিন সপ্তাহের জন্য। তার পরের কথা তো এখনো আন্দাজেই নেই। তার মধ্যেই বাবা মায়ের ফোনের পর ফোন। দুজনেই অভিযোগ করে যাচ্ছে একে অপরের নামে। কী যন্ত্রণায় পড়লাম! রান্নাবান্না শেষ করে সবে একটু মুখে চোখে জল দিয়ে বসেছি। কোমর ধরে গেছে। খুব গরমও পড়েছে। ফ্যানটা চালিয়ে এক গ্লাস জলে চুমুক দিয়েছি সবে, আবার ফোন। ধরে দেখি মা। যথাসম্ভব মাথা ঠাণ্ডা রেখে বলি, "আবার কী হলো?" ওপাশ থেকে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে মা বললো, "তোর বাবা খালি ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছে। কিছুতেই কথা শুনছে না। তুই একটু বকে দে তো!" আমার তো মাথায় হাত। সর্বনাশ করেছে। বাবা আবার বাইরে বেরোচ্ছে কেন? কী যে করে না! বললাম, "ঠিক আছে, বাবাকে দাও।" উদ্বিগ্ন স্বরে মা বললো, " তোর বাবা তো বাইরে, ঐ কথাই তো বলছি।" অগত্যা বুক ধুকপুকুনি বাড়িয়ে বললাম, "আচ্ছা, তবে বাবা বাড়ীতে ঢুকলেই আমাকে ফোন করবে, বুঝলে?" বলে তো দিলাম, এদিকে আমার সময় আর কাটছে না। মেয়ের আর মেয়ের বাবার স্নান হলেই
খেতে দিতে হবে, তারপর হাজার একটা কাজ ভ্যানভ্যান করছে, তারমধ্যে একি আতান্তর! তবে আপাতত কিছু করারও তো নেই। বাবা মায়ের বাড়ী থেকে আমার বাড়ী লোকাল ট্রেনে ঘন্টা দুয়েকের পথ। বাবা-মা এমনিতে শক্তপোক্তই আছে, তবে বয়স তো হয়েছে। দুশ্চিন্তার আর শেষ নেই! চোখ বুজে বসে রইলাম, কি আর করবো? মেয়ে আর ওর বাবা খেতে বসার জন্য তৈরি, এদিকে ঠিক তখনই আবার ফোন। এবারে বাবা। ফোন ধরে একটু ঝাঁঝিয়েই বললাম, "তোমরা কি শুরু করেছো বলো তো? আমাকে কি একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না? বাইরে বাইরে ঘুরছো কেন তুমি, অ্যাঁ? তোমার কি আক্কেল বিবেচনা সব লোপ পেয়েছে?" বাবা হো হো করে হাসতে হাসতে বললো, "আরে শোনই না, আমি কোত্থাও যাইনি, বাইরে মানে আমাদের বাগানের গেটের তালায় একটু তেল দিচ্ছিলাম। চাবিটা ভালো ঘুরছে না তাই। তোর মা তো আমাকে শোবার ঘরের বাইরেই বেরোতে দিচ্ছে না। এভাবে থাকা যায়?" সত্যিই তো, থাকা যায় না। বাড়ীতে অতবড় বাগান থাকতে বাগানে পায়চারি তো করা যেতেই পারে, ঠিক কথাই তো! মা না, সত্যি, পারেও বটে! বাবা ততক্ষণে মায়ের হাতে ধরিয়েছে ফোন, আমি মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বললাম, "মা, তুমিও সকাল বিকাল দুবেলাই বাবার সাথেই বাগানে পায়চারি করবে। শরীর ঠিক থাকবে। আর হ্যাঁ, শোনো, নিজেদের বাড়ীর বাগানে যাওয়াকে কেউ বাইরে যাওয়া বলে না।" ফোনটা কেটে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। উফ্, এখনো আঠেরো দিন!