লকডাউনের রোজনামচা ১৯
লকডাউনের রোজনামচা ১৯
ডিয়ার ডায়েরি, ১২ই এপ্রিল, ২০২০... লকডাউনের উনবিংশতিতম দিনে "আমার আত্মোপলব্ধি"
ইতিমধ্যেই আমরা সবাই জেনে গেছি লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটাও একরকম সকলের কাছেই প্রত্যাশিতই ছিলো। তবে এই বিষয়ে লিখতেই হবে এমনটা বাধ্যতামূলক নয়। তবু্ও কিছু লিখছি। কারণ সারাদিনে কয়েকবার ফেসবুক খুললেই দেখা পাই গৃহবন্দী অনেকগুলো মানুষের। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি শুধুমাত্র নিজের মনোবল বাড়াতে আর আরও কিছু জানতে বা দেখতে। এর আরও একটা প্রধান কারণ অধিকাংশ সময়ই টিভি বা সংবাদমাধ্যমে খবর দেখে মনখারাপ বা বিভ্রান্তি বাড়াতে চাই না বলে। এমনিতেই বিরাট চাপে রয়েছি সবাই। এমন পরিস্থিতিতে কারুরই বাছাই করার মতো বিলাসিতা থাকে না। যা পাচ্ছি সেটাই যথেষ্ট, এরকম ভাবনাটাই মনে আসে। স্বল্প জিনিসে ও অল্প আয়াসে কিভাবে দিনাতিপাত করা যায় তা আপাতত আমরা শিখে নিয়েছি। কাজেই আমাদের কাছে লকডাউন মারাত্মক একটা বোঝাস্বরূপ বা চূড়ান্ত একঘেয়েমির বিষয় এইমুহূর্তে একেবারেই নয়।
লকডাউন বরঞ্চ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলেই মনে হয় এই পরিস্থিতিতে। আসলে অনেকেই দেখছি ভীষণরকম অসুবিধায় আছে, এটা হচ্ছে না, ওটা পাচ্ছে না বলে ভয়ানক হাহাকার করে চলেছে। কিন্তু সেইগুলোর মধ্যে কোনগুলো অপরিহার্য আর কোনগুলো ছাড়াও চালিয়ে নেওয়া যায়, সেটাও বর্তমানে আমাদের বুঝে নেওয়ার সময় এসেছে। কী করবো, কখন করবো বা কেন করবো তা সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিনির্ভর হলেও পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে এইসময়ে অসীম ধৈর্য্য রেখে চলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কেননা অধৈর্য্য হলেই বিপদের সমূহ সম্ভাবনা।
ভুললে চলবে না অনেক মানুষ ভালো নেই। কিছু সচ্ছল মানুষের থেকেও পরিস্থিতি এক দমকা ঝড়ের মতো লহমায় অনেককিছু কেড়ে নিয়েছে। তাই সশরীরে না পারলেও যেভাবেই হোক মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ এসময়। এই পরিস্থিতিতে নানাভাবে মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া আবশ্যিক। যেভাবেই হোক, যতটুকুই হোক, যেখানেই হোক অসহায় মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াটা এখন আমাদের নাগরিক কর্তব্য। কে জানে আগামীতে আমরা কে থাকবো আর কেইবা থাকবো না! অন্তিমযাত্রায় তো সঙ্গে করে কিছুই নিয়ে যেতে পারবো না কেউ। তাই এই অনিশ্চিত সময়ে নিজের ভাগের সামান্য কিছুও অপরের অসহায়তায় ভাগ করে নিলে নিজের মনে অন্ততঃ খানিকটা হলেও স্বস্তি হবে। এইটুকুই সংকল্প থাক। লকডাউন বোধোদয় ঘটাক মানুষের মনে।