লকডাউনের রোজনামচা ১১
লকডাউনের রোজনামচা ১১
ডিয়ার ডায়েরি, ৪ঠা এপ্রিল, ২০২০... লকডাউনের একাদশ দিনে "লিকুইড হ্যাণ্ড ওয়াশ শেষ"
গত কয়েকদিন যাবৎ লিকুইড হ্যাণ্ড ওয়াশের ব্যবহার এতো বেড়ে গেছে যে আজ আমার বাড়ীর লিকুইড হ্যাণ্ড ওয়াশ শেষ। মাথায় ছিলো এক শিশি স্টকে আছে। ভুল তথ্য মাথায় ছিলো। কখন যে সেই স্টকে থাকা শিশিটাও বেরিয়ে পড়েছে এবং পুরোটাই খরচও হয়ে গেছে তা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম। যাকগে, কি আর করা যাবে? আনতে হবে নতুন একটা। সকালে যাহোক করে কাজ চালিয়ে নেওয়া গেলো শিশির তলানিটুকু ধুয়ে টুয়ে নিয়ে। কিন্তু আর চলা অসম্ভব। আনতেই হবে। আমাদের এখানে খুব ভালো মতোই সোশ্যাল এবং ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিং মেনেই দোকান বাজার চলছে। সকালে চা জলখাবার খেয়ে হাজব্যান্ড গেলো দোকানে। ঘন্টা দেড়েক পরে খোলা থাকা কাছাকাছি সবকটা দোকান ঘুরে নিরাশ হয়ে ফিরলো। পাওয়া যায়নি লিকুইড হ্যাণ্ড ওয়াশ। দোকানে স্টক শেষ। বিকল্প হিসেবে কয়েকটা আমলা শ্যাম্পুর পাউচ এনেছে। কাজ চালাতে হবে আপাতত এতেই। দোকান থেকে ফিরে নিজেই ঐ কিনে আনা আমলা শ্যাম্পুগুলোর পাউচ কেটে খুব ধৈর্য্য সহকারে লিকুইড হ্যাণ্ড ওয়াশ ডিসপেন্সারে ঢাললো। দোকানদার বলেছে আপাতত স্টক আসার সম্ভাবনাও নেই। সুতরাং এতেই কাজ চালাতে হবে এখন। কিন্তু মুশকিল হলো যে এই আমলা শ্যাম্পু দিয়েও খুব বেশিদিন চলবে না। লকডাউন মিটতে এখনো গোটা দশদিন। তাতে দিনে কমপক্ষে আটবার হাত ধোওয়ার দরকার। মানে তিনজনের জন্য চব্বিশটা হ্যাণ্ডূ ওয়াশের মতো ডিসপেন্সিং লাগবে। ভাবনাটা মাথায় রয়েই গেলো। সন্ধ্যেবেলায় অনেক ভেবে চিন্তে একটা উপায় খুঁজে বের করলাম নিজেই। গায়ে মাখার সাবান দিয়ে কি করা সম্ভব লিকুইড হ্যাণ্ড ওয়াশ? যেমন ভাবা অমনি কাজ। অনেকগুলো গায়ে মাখার সাবান আছে। শীত শেষ হয়ে গেছে তাই গ্লিসারিন সাবান আপাতত আর ব্যবহার হচ্ছে না... পড়েই আছে প্যাকেট বন্দী হয়ে। দেখা যাক ওটা দিয়ে কিছু করতে পারি কিনা। বসে বসে গ্রেটার দিয়ে কুরিয়ে ফেললাম একটা গ্লিসারিন মেন্থল সাবান। তারপর ঐ গুঁড়ো গুঁড়ো কুরোনো সাবানটা হাফ লিটার ফুটন্ত গরম জলে ভিজিয়ে রেখে দিলাম। বাহ্, ঘন্টাখানেকের মধ্যেই দেখি বেশ ঘন লেইয়ের আকার নিয়েছে। পুরো ঠাণ্ডা করে নিলাম ফ্যানের হাওয়ায় রেখে। আর বিটার দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে একেবারে আক্ষরিক লিকুইড হ্যাণ্ড ওয়াশের মতো তরলটি ঢেলে রাখলাম পরিষ্কার একটি খালি বোতলে। এখন রাতভর অপেক্ষা। দেখাই যাক বস্তুটি আদৌ ব্যবহারযোগ্য হয় কিনা এবং কাজ চালিয়ে নেওয়া যায় কিনা আমার এই হোমমেড লিকুইড সোপ হ্যাণ্ড ওয়াশ দিয়ে। যুগে যুগে প্রমাণিত সত্য যে Necessity is the mother of invention... এক্ষেত্রে আজ আমি নতুন কিছু আবিষ্কার করিনি। আবিষ্কার করেছি ছোট্ট একটি কাজ চালানো গোছের পথ কেবলমাত্র। জীবন কতকিছুই না শেখায়!