লাশকাটা ঘরে
লাশকাটা ঘরে
বাড়িতে থেকে আজ কিছুই খেয়ে বেড়াই নি বুবাই । ছোটবেলা থেকেই রাজত সর্দার মানে বুবাই খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ। আসলে কোন অবস্থায় কোনো ঝুটঝামেলা কিছুর সম্মুখীন হতে চায় না ও। কিন্তু ওর জীবনে সব সময় ঠিক ঝুটঝামেলা এসে হাজির হয়। পিজাতে একটা কামড় বসিয়ে দেখলো পিজাটা এখনও গরম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো মাত্র পোনের মিনিট মধ্যে চলে এসেছে পিজাটা। ওর মনে পরে গেলো , ওর পিসি এক্সিডেন্ট মারা গিয়েছিল। হাসপাতাল থেকে বলেছিলো মাত্র দশ মিনিট আগে আনতে পারলেও হয়তো বাঁচাবার চেষ্টা করা যেতো। সেই দিন থেকে বুবাই এর বাবার মাথায় একটা পাগলামী জেদ চেপে গেলো ছেলেকে ডাক্তার বানাবে। যাতে তার গ্রামে আর কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।
কিন্তু ও ওর বাবার স্বপ্নকে মেরে ফেলে , লাশকাটা ঘরে এই চাকুরীটা নিয়ে নিলো। আসলে ঝুটঝামেলা চায়না নিরাপদ জীবন চায় যেখানে শান্তি থাকলেই হলো ।একটু নিরপেক্ষ বিচার করলে দেখা যাবে ওর এতে কোন দোষ ছিলো না। ও জীবন সেই মৃত স্বপ্নের ময়না তদন্ত কেউ করে না। অথচ ও কত লাশের ময়নাতদন্ত করে আজ।
জানেন ময়নাতদন্ত শব্দটার মধ্যে আরবি শব্দ ময়না এবং সংস্কৃত শব্দ তদন্ত মিলে একটি শব্দ। গোদা বাংলা অর্থ অস্বাভাবিক বা আকস্মিক মৃত্যুর কারণ উদঘাটনের উদ্দেশ্যে শবব্যবচ্ছেদ। ইংরেজিতে শব্দটি "পোস্ট-মর্টেম" । এই শব্দটি ল্যাটিন থেকে পোস্টের জন্য এসেছে, যার অর্থ "পরে" ।আর মর্টেমের অর্থ "মৃত্যু"। এটি প্রথম ১৮৫০ থেকে রেকর্ড করা হয়েছিল।একে Autopsy বিদ্যাও বলা হয়। মৃতদেহ পরিচালনা ও ধোয়ার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি Diener (ডায়নার), ডোম, মর্গ পরিচারক বা ময়নাতদন্তবিদ হিসাবে পরিচিত।
অটোপসি (Autopsy) শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ অটোপসিয়া থেকে। যার অর্থ মৃতদেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা। ময়না শব্দটি আরবি বা ফার্সি বা উর্দু থেকে এসেছে আগেই বলেছি, যার অর্থ ভালো করে খোঁজা বা অনুসন্ধান করা। ফলে ময়না তদন্ত মানে হলো ভালো করে তদন্ত করে দেখা। যেহেতু মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকরা এই কাজটি করে থাকেন, এ কারণেই এর নাম হয়েছে ময়না তদন্ত।
ডায়নার চাকুরীটা ও নিতে বাধ্য হয়েছিলো। কারণ ওকে পড়ানোর জন্য চড়া সুদে, ওর বাবা টাকা পয়সা ধার নিয়েছিল। ও হাউস সার্জেন্ট হওয়া দূরের কথা, ওর পড়াশোনা শেষ হয়নি। বিধুভষণ বাবু ধার শোধের জন্য ভীষন ভাবে অশান্তি করতো , অপমান করতে শুরু করে ওর বাবা কে। বুবাই সেটা মেনে নিতে পারে নি । পরে আসলে অবশ্য সে আবিষ্কার করে বিধু বাবুর আসল উদ্দেশ্য কি। উনার উদ্দেশ্য পাওনা টাকা আদায় নয়।ওর সাথে নিজের মেয়ে সুপ্রিয়র সাথে বিয়ে দেওয়া। গ্রামে আসলে সুপ্রিয়া তার বাচালতার জন্য বদনাম ছিলো। এতেই বুবাই এর বাবার আপত্তি ছিলো।গ্রামে জন্ম হলেও পড়াশুনার জন্য শহর কাটানো সুন্দরী আধুনিকা মেয়েকে বিয়ে করতে কারোই আপত্তি থাকার কথা নয় বুবাই এর মতো ছেলের। তাছাড়া এই বিয়েটা করা মনে রাজ কন্যা রাজত্ব দুই লাভ হবে। তাই বিয়েতে রাজি হয়ে যায় বুবাই। সুন্দরী বউ, সরকারী চাকুরী , জীবনের প্রতি কোন অভিযোগ ছিলো না বুবাইএর । ও শুধু একটা শান্তি চেয়েছিলো। কিন্তু সেটা ও পেলো কোথায়?
লাশকাটা ঘরে ঢুকে , প্রথম মৃত দেহটা পরীক্ষা করতে গিয়ে সে দর দর করে ঘামতে শুরু করলো। একটা লাশ কাটা ঘর অনেক বেশি ঠাণ্ডা হয়। লাশকাটা ঘরে মৃতদেহ রাখা অবস্থায় -১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে (-)৫০ ডিগ্রি সেলসিয়ায় তাপমাত্রায় নিয়ে আসতে হয়। সাধারণত হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলিতে এ তাপমাত্রা ব্যবহৃত হয়, বিশেষত যখন কোনও দেহ সনাক্ত করা হয়। এই তাপমাত্রায় দেহ পুরোপুরি হিমায়িত হয়, এবং লাশ পচে যাওয়া উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। অথচ এই ঠান্ডা ঘরেও ওর ঘামের কারণ একটা চেনা হাসি।
চেনা হাসিটা রিয়ার। ওর সহপাঠী। তবে ওদের মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিলো। রিয়ার ঠোটে লেগে থাকা হাসিটা হঠাৎ যেনো কথা বলতে শুরু করল
" বুবাই তুমি ভালো আছো? জানি তুমি ভালো নেই । সুপ্রিয়া ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে এখনো সম্পর্ক রেখে দিয়েছে। এ নিয়ে রোজ তোমাদের মধ্যে অশান্তি হয়। অথচো তুমি অশান্তি চাও না। বিধু বাবুর শর্তনুসারে তোমরা কেউ বিবাহ বিচ্ছেদ পথেও হাঁটতে পারবে না। তাই এই অশান্তি তোমাকে মেনে নিতেই হবে। যানো আমিও শান্তি চেয়েছিলাম। তোমার কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকলে , যে শান্তি পেতাম সেই শান্তি খুঁজে পাওয়া আপ্রান চেস্টা করেছিলাম , আমিও আমার নতুন সংসারে। কিন্তু মানুষের লোভ। ওরা আমাকে মেরে ফেললো বিষ মাখানো মিষ্টি খাইয়ে। ওরা জানতে পারলো না হাসি মুখে আমি সব মানিয়ে চললেও , আমি তো মেরে গিয়েছিলাম অনেক আগেই। আমি মরে গিয়ে ছিলাম সেই দিনই যে দিন কোন কারণ না দেখিয়েই, আমাকে ছেড়ে সুপ্রিয়াকে বিয়ে করে নিলে। জানি তুমিও কষ্টে আছো। আগে তুমি কষ্ট পেলে আমাকে জড়িয়ে কেঁদতে । আজো একবার আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে নাও। দেখো মনে অনেক শান্তি পাবে। মৃত্যু মতো অন্ধকার একটা শান্তি,,,"
,,,,