কমলা রঙের ভোর
কমলা রঙের ভোর
কাপড়ে টুকরোটা বড় অনিচ্ছুক ভাবে ঢেকে রাখেছে ওর বুকটা । বিভাজিকা উন্মুক্ত। আর স্তন বৃন্তদুটো স্পষ্ট। পেটে খোলা, নাভিটা চাঁদের মতো যেনো জোৎস্না ছড়িয়ে দিচ্ছে। মেয়েদের হাফ প্যান্ট কে হট প্যান্ট বলে তা আজ বুঝতে পারলাম। উষ্ণতা ছড়াচ্ছে ওর ফর্সা মসৃন পা দুটোও। এরকম পোশাক ও কখনো পরে না। আর তাই নিজের জগৎ থেকে দূরে সরে এসেছে। শরীরকে পন্যআয়ন ও করতে পারেনি। নিজের ভাবনা গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রেখে। জিজ্ঞেস করলাম
" ঘরটা অন্ধকার করে রেখেছো যে।"
ও বললো " অন্ধকারটা মায়বী লাগছে তাই"
আমি বললাম " ও" বলে উপরে চলে যেতে যাবো এমন সময় ও জিজ্ঞেস করল " আমাকে কেমন লাগছে বললে না তো।"
আমি বললাম " ভালো কিন্তু বড়ো লোভনীয়... "
ও কাছে এসে গলাটা আলিঙ্গন করে আমাকে শ্বাস প্রশ্বাস দূরত্ব নিয়ে গিয়ে বললো। " তা লোভ সামলে নিলে কেন ? আমি তো তোমারই"
আমি বললাম " ছাড়ো কেউ দেখে ফেলবে। "
ও বলল" বাড়িতে কেউ নেই, রিয়ার বিয়েতে গেছে। আমি তোমার জন্য থেকে গেছি।"
আমি বললাম " এ বাবা কেন? তুমি যেতে পারতে। আমি আসতাম না।"
ও হঠাৎ আমাকে ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল
" আমি আছি বলে তুমি খুশি হও নি? "
বুঝতে পারলাম ওর অভিমান হয়েছে। তাই বললাম " না সেরকম কিছু না কিন্তু তুমি গেলে আনন্দ পেতে। "
ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো " আর আনন্দ, সবাব প্রশ্ন মুখোমুখি হতে ভালো লাগে আর। সেইদিন তো একজন বলেই আমাকে তুমি করবে না। বললো কারণ আমি আর তেমন আকর্ষণীয় না। আমি আর তেমন বোল্ট নয়।"
ওর ভিতরে কষ্টটা বুঝতে পারলাম। ওকে জোর করে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলাম। খরগোশ মতো ওর নরম শরীর। শরীর মধ্যে একটা অজানা শিহরন বয়ে গেল। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ রেখে বললাম।
" বোল্টনেস মানে শুধু শরীর দেখানো নয়। তুমি বিয়ে না করে কতো গুলো অনাথ ছেলে মেয়ে মা। এক হাতে সামলাও স্কুল বৃদ্ধাশ্রমে কাজ। অনেক পুরুষ মানুষ সামলাতে পারে না। তাই তোমার তুলনা হয় না। বিয়ে মানে মনে মিলন। সে তো আমাদের আছেই। সমাজিক স্বীকৃতি নিতে হবে তাই তো? বোকা মেয়ে লোকজন কথায় কাঁদে না।"
ও আমাকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
আমি বললাম " চললো কিছু খেয়ে নিয়ে। আজ সারা রাত ছাঁদে শুয়ে রাত জেগে থাকবো। কখনো তো ভোর হওয়া দেখবো , এক সাথে।"
সত্যি অনেক কয়টা বছর কেটে গেলো আমাদের। ভালো চাকরি ছিলো না , তবু প্রেম করেছি বলেই বিয়ে করলাম নীলুকে। নীলু তখন বাচ্চা মেয়েই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বললাম। উন্নতি করলো চাকুরী পেলো। এদিকে আমার ব্যবসা অবস্থা দিনে খারাপ হচ্ছে। ও অফিস একটা প্রেম করছে জানতে পারলাম। তেমন কিছু অশান্তি না করে বললাম চাকুরী ছেড়ে দিতে। কিন্তু ও আমাকে ছেড়ে দিলো।ওর বাবা বিষয়টা সমর্থন করলো। আমাকে ছেড়ে চলে গেলো ও তার মূল কারণ আমার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। এবং তাদের ধারণা আমি কোন দিন সামলাতে পারবো না নিজেকে। কারণ আমি সৎ এবং উদাসীন।
জীবনটা বদলে ফেলতে চাইলাম। অনেক বড়লোক হতে হবে ভেবে বন্ধু বান্ধব ছেড়ে বিদেশে চাকরি করতে গেলাম। অর্থ উপার্জন করলাম অনেক। কিন্তু সমাজ সেবা কাজে নিয়োজিত ছিলাম বলেই আমার যোতোটা বড়লোক হওয়া প্রয়োজন ততোটা হতেই পারছিনা। যদি নীলু বোধহয় আজ আমার কাছে পরাজিত। তবুও পার্থক্যটা বাড়িয়ে রাখতে চাই অনেকটা। ওকে যতোটা ভালোবাসতাম ততোটাই ঘৃণা করি।
কিন্তু অন্বেষাকে কি আমি ভালোবাসি। বছর চারেক আগে হঠাৎ করে অন্বেষাদের পরিবারের সাথে দেখা এক মফস্বল শহরে । লোক সংস্কৃতি বিষয়ক ক্ষেত্র সমীক্ষায় গিয়েছিলাম। বাবাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। অন্বেষার বাবা আমার বাবা বন্ধু। অন্বেষারা কিন্তু কোলকাতায় থাকতো। অবসর নিয়েছেন আমার বাবাও। অনেক পর দেখা তাই অনেক কথা হলো। ফোন নম্বর বিনিময় হলো। এটুকু দেখেই আমি আমার কর্ম জীবনে ফিরে গেলাম। তারপর ছয়মাস পর যখন আমি বিদেশ থেকে ছুটিতে এলাম। তখন অন্বেষাদের বাড়িতে আমাকে নিয়ে যেতে হলো মা বাবা ভাই, ভাইবৌ সবাইকে। আমি অনুমান করতে পারি নি ওরা যে আমার বিরুদ্ধে একটা মিষ্টি ষড়যন্ত্র করছে। ওদিন আমার সাথে অন্বেষার বিয়ের পাকা কথা বলতে এসেছিলো ওরা এ বাড়িতে। আমি বাবা মায়ের মুখের দিকে চেয়ে সরাসরি না বলতে পারি নি। তবে একটু সময় চেয়ে নিয়েছিলাম।অন্বেষা শিক্ষিত সুন্দরী, শুধু একটাই কিন্তু ছিলো। ওর একটা রহস্যময় অতীত আছে।
একটা সময় উজ্জ্বল সম্ভাবনা নিয়ে ও রূপালী পর্দায় অভিনয় করতে নামে । কিন্তু হঠাৎ করে রহস্যময় ভাবে হারিয়ে যায়। তবে সেই কারণ জন্য আমি ওকে বিয়ে করতে দেরি করছি তা নয়। ও ওই সময় এক সহ অভিনেতা বিয়ে করছিলো। ছেলেটাও ভালো অভিনয় করতো। মুম্বাই কাজ করছে। তাই অন্বেষাও ওর হাত ধরে একটা বিগ বাজেটের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেলো। এখানে একটা বিশেষ ঘটনা ঘটে যার জন্য ও অভিনয় জীবন থেকে সরে আসে, ওর স্বামীর সামনেই এই সিনামার পরিচালক ও নায়ক ওকে কুপ্রস্তাব দেয়। এরপর ও মানসিক ভাবে কিছুটা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, কারণ ওই ছেলেটা ওর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে গেছে। ঠিক এই কারণেই আমি ওকে সত্যিকারের ভালোবাসাতে চাই। আমি ওদের বাড়ি এসে থাকি। শরীরী প্রেম আমাদের নেই তবে নানা জায়গায় ঘুরতে যাই আমরা একসাথে। একসাথে সমাজ সেবার কাজ করি। হুঁ ও আমার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। কিন্তু ভালোবাসা হয়েছে কিন্তু জানি না!!
আজ পূর্নিমা নয়। কয়েক দিন পর বোধহয় অষ্টমী। চাঁদটা গলে গেছে কিছুটা। সারারাত কেটে গেল চোখ নিমিষেই। মাঝে মাঝে আজ আমদের ভিতর শরীরী প্রেম হয়েছে। তাই ও বোধহয় ক্লান্ত। কমলা রঙের ভোর টা ওর বোধহয় দেখা হবে না। ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে কপালে চুমু দিয়ে চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে যাচ্ছি। এমনি ও ওঠে পড়লো । বললো " একএকা কমলা রঙের ভোর দেখবে সেটা হবে না। আমিও যাবো তোমার সাথে।"
নদীটা নিশ্চিন্ত ভাবে বেয়ে যাচ্ছে। ও আমার কাঁধে মাথা দিয়ে অপেক্ষা করছে কমলা রঙের ভোরটার। জানি না এটা ভালবাসা কিনা!! তবে ভালোবাসার রৌদে পুড়তে চাই আমিও।