STORYMIRROR

NILAY CHATTERJEE

Classics

4  

NILAY CHATTERJEE

Classics

খেজুর গুড়

খেজুর গুড়

4 mins
13

খেজুর গুড়

দুখিরামের গাড়ী নেই । কিন্তু হাড় জিরজিরে এক

জোড়া গরু আছে । তাই দিয়ে সে কোন মতে বিঘে

দুই জমি ভাগ চাষ করে । কিন্তু এখন চাষের অবস্থা

খুবই খারাপ । একেতো বৃষ্টি হয় না। হলেও সময়ে হয় না । যদিও হয় পর্যাপ্ত হয় না । এরপর আছে সূর্যের উর্দ্ধমুখী তাপ । তাপ তো দিনে দিনে বাড়ছে।

এরপর হয়তো ফলনের মুখে এমন বৃষ্টি হলো - ধান সব জলের তলায় । যেমন এ ব্ছর হলো । সামান্য চাষ । তাই নিয়ে দুখিরমের দিন গুজরান । এবছর

ধান আর ঘরে ঢোকাতে হয় নি । যা টেনেটুনে ঘরে

এনেছিল দুখিরাম । তার থেকে মালিক কে ভাগ দিয়ে কতো টুকুই বা থাকে । নেহাত ওরা স্বামী, স্ত্রী

আর বড় ছেলেটা , এই তিনজন মিলে গায়ে গতরে

খাটে । তাই কোনো রকমে চলে যাচ্ছে । তবে দুখিরামের আরো ধান্দা আছে । যেমন ও বাঁশের

ঝুড়ি , ধামা , কুলো তৈরী করতে পারে । ঢাকও বাজাতে পারে । দুর্গা পূজা , কালী পূজায় ঢাক বাজায় আর একটা কাজ ও ভালোই করতে পারে ।

সেটা হলো গুড় তৈরী । সেটাও কিন্তু ভাটার মুখে ।

প্রকৃতি যা ছবি নিজের তৈরী করেছে তাতে করে

মানুষের বেঁচে থাকাটাই একটা বিরাট সমস্যা ।

কালী পূজাটা পার হলেই যখন শীত শীত ভাবটা গায়ে লাগে তখন থেকেই ওর কাজ শুরু হয়ে যায় ।

খেজুর গুড় তৈরির সরঞ্জাম ওর সবই আছে । নেই

শুধু খেজুর গাছ । গোটা গাঁয়ে কতো খেজুর গাছ ছিলো- পৌষ ,মাঘ দুটো মাস ও গুড় তৈরি করতো ।

গুড় বিক্রি করতো । ভালোই রোজগার হতো । কিন্তু

খেজুর গাছ গুলো যেন উধাও হয়ে গেলো--অবাক !

গাঁয়ের শেষে তাল পুকুরের পাড়ে পাঁচ ছটা খেজুর

গাছ । মন্ডলদের চালতা বাগানে গোটা চারেক । এদিক ওদিক করে আরো আট দশ টা । সকালে চাছা। বিকেলে হাঁড়ি টাঙানো । আবার পরের দিন

ভোর হতেই সে গুলোকে নামিয়ে আনা । তারপর ডেকে ফুটানো । আজ দু ব্ছর সেটাও বন্ধ ।

তাই দুখিরাম দিনু খুড়োর গাড়িটা এক দিনের জন্য

চেয়ে নিল । ওর হাড় জিরজিরে গরু গুলো জুতে

গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো । উদ্দেশ্য একটাই --

যেখানে ও খেজুর গাছ দেখতে পাবে সেখানেই ও

মহল বানাবে । অন্তত দশ পনেরো টা পেলেই হবে ।

ওর যন্ত্রপাতি , একটা কাপড়ের পুটলীতে কিছুটা

মুড়ি , পেঁয়াজ, লঙ্কা আর একটা হাঁড়িতে জল নিয়ে

বেরিয়ে পড়লো ওরা বাপ ছেলে । বৌকে বলে গেলো -- সে যেন ভাত রান্না করে রাখে । ওদের

ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে ।

পাশাপাশি গ্রাম গুলো চার পাঁচ ক্রোশের মধ্যেই ।

মাঝখানে একটা জোড় মতো আছে । সারা ব্ছরই

জল থাকে । সেই জলে কিছু চাষও হয় ।

দুখিরাম গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । আর এদিক

ওদিক তাকাচ্ছে । খেজুর গাছ যে একেবারে দেখতে পাচ্ছে না এমন নয় । তবে ঐ দু একটা ।

দুপুর গড়িয়ে গেলো । খেজুর গাছের দেখা মিললো

না। আর দু একটা গ্রাম ঘুরে বাঁকা পথে ওরা বাড়ি

ফিরে যাবে এটাই ঠিক করলো ওরা ।

কাঁসাই এর ক্যানেল থেকে একটা শাখা নদী দুটো গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে । বরষা ছাড়া জল

থাকে না । বলির ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে

ওরা পার হয়ে গেলো । ওপারের রাস্তাটা পাকা হয়েছে । দু একটা নতুন দোকানও হয়েছে ।

একটা দোকান খোলা দেখে দুখিরাম বিড়ি কিনতে

গেলো । ছেলেটা বললে , 'বাবা একটু জল খাবো ।

দেখো না গুড় আছে কি না ।'

গুড় জিজ্ঞাসা করতেই দোকানদার বললে , 'হ্যা আছে । একশো টাকা কিলো । '

দুখিরাম বললে , একটা শাল পাতার ঠোঙায় পাঁচ

টাকার দাওয়ও । ছেলেটা জল খেতে চাইছে ।শুধু জল..টা ...'

দোকানদার হাতায় করে একটু গুড় দুখিরামকে

দিল । দুখিরাম এবং ওর ছেলে ঐ গুড় দিয়ে জল

খেলো একটু । গুড় কিন্তু দুখিরামের ভালো লাগলো

না । সে জিজ্ঞাসা করলো , এটা খেজুর গুড় ?

দোকানদার বললে -- খাটি খেজুর গুড় ।

দুখিরাম কপাল চাপড়াতে লাগলো । মনে মনে ভাবলে হায় রে এটা যদি খেজুর গুড় হয় তাহলে

আমি যেটা বিক্রি করি সেটা কি ?

সূর্য অস্ত যাবার সময় ওরা ঘরের পানে চলতে লাগলো । পথে দেখলে একজন কাঁধে বাঁক নিয়ে

দু খানা হাড়ি ঝুলিয়ে চলেছে । দুখিরাম ওকে জিজ্ঞাসা করলে , ' ও ভাই কোথায় মহল দিয়েছ ?

লোকটা বললে --আমিও তোমার মতো খেজুর গাছ

খুঁজতে বেরিয়েছি ।

দুখিরাম আর ওর ছেলে সন্ধ্যা বেলায় ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে এলো । গিন্নি বললে -- কিছু ব্যবস্থা হলো ? দুখিরাম বললে না । হলো না ।

---আর মহল হবে না । শীতও বেশি পড়ে নি । আর

খেজুর গাছেরও আকাল । গিন্নি বললে -- যাও টপ

করে চান টা করে এসো । ভাত বেড়ে দিচ্ছি ।

.................................................................



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics