Manab Mondal

Abstract Tragedy Inspirational

3.5  

Manab Mondal

Abstract Tragedy Inspirational

কার্নিশের কান্না

কার্নিশের কান্না

4 mins
549


আজকাল আর বিকেলে গুলো ছাদে ফাঁকা পাওয়া যায় না। সারা পাড়ার লোক, প্রায় ছাদে ঘর সংসার নিয়ে উঠে পড়ে । এ দেখে হাত নাড়ে তো,ও বলে কী রে খবর কী! শাক বেগুন এর গল্প শুরু করে দেয় । ঝুমা কাকিমা বললেন "দেখো না, কাজের মাসির তো ছুটি, বাসন মেজে আর ঘর মুছে শরীর কাহিল, কী রোগ এলো বলো দেখি, কী করে চলবে গো এভাবে! "  আমাকে দেখে বললেন " যাইহোক নতুন বৌতো তোমার সব কিছু সামলে নিচ্ছে " আমার শাশুড়িও হাসলো জেনো জোর করে। একটা কথাও খরচ করবে না জানি উনি আমার প্রশংসায় । আমার রাগ উনি কেন আমাকে "নতুন বৌ " ডাকবে । ঝুমা কাকিমা কি আমার নাম জানে না! পাশের ফ্ল্যাটের ছাদে দেখি জোর কদমে ব্যাডমিন্টন খেলা চলছে। বেশ টিম বানিয়ে বাবা মেয়ের জুটি সিরিয়াস মুখে খেলে যাচ্ছে । সুগার পেশেন্ট আমার শ্বশুরমশাই তো গোটা চল্লিশ - পঞ্চাশ পাক খেলেন ছাদে। জল ফড়িংয়ের মত বাচ্চাগুলো নেচে বেড়াচ্ছে ছাদময়। ফ্ল্যাট দিকে তাকিয়ে একটু দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন বোধহয়। ওটাকে g 4 করতে চেয়েছিলেন উনি। এখন ভাবছেন আরেক টু উচ্চ হলে, সবচেয়ে উঁচু বাড়ির হওয়ার , উনার দম্ভটা বোধহয় আর থাকতো না।

ছোটবেলা জুড়ে আছে এই ছাদ । বিকেল হলে টুক করে ছাদে চলে আসতাম এই ছাদে শিউলির সাথে গল্প করতে। ছাদের কার্নিশে হাত দিলে মনে হতো এটাই আমার একলা পৃথিবী। এই ছাদ জুড়ে আচারের দুপুর, ঘুড়ির বিকাল,শীতের রোদ মাখা দুপুর, বৃষ্টি ভেজা বর্ষা, লোডশেডিং এর রাত, তারাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব , প্রেমের চিঠির ঘ্রাণ। ছাদ বাগানের আনন্দ ।ফ্ল্যাট বাড়ির ছাদকে ওসব আছে নাকি! উনি হয়তো ওসব বুঝবেন না। টাকাপয়সা ছাড়া কিছুই বোঝেন না উনি। বেঁচে গেছি উনার ছেলে অমন হয়নি।



আমি রোজ দুপুরে ছাদে আসি একটু একা থাকতে। "ও " একটা কবিতা লিখে ফেলো তা নিয়ে। ব্যপারটা লক্ষ্য করেছে "ও"। আসলে সম্পর্কটা আমাদের হয়তো তেমন সুস্থ নেই। কবিতা পড়তে দিলো আমায় "ও"....

যদি কাব্য কখনো উপন্যাস এর ব্যাথা বোঝে কি?

সেই এক মেকি হাসি

সেই ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুম্বন...

সেই এক মিথ্যে ভালোবাসা

সেই এক দুঃখে ক্রন্দন...

সেই আবার আবার প্রেমে পড়া

সেই মনের ভেতর ক্ষয়...

সেই এক পুরোনো জিজ্ঞাসা

ভেঙেছে নিঃশব্দে হৃদয়...

চিলেকোঠা জানে বিষাদ কতটা ভারী

ফুসফুস জানে ধোঁয়ায় কতটা বিষ

কিছু অভিমান লিখে রাখা দরকারি

বলে গিয়েছিল জল জমা "কার্নিশ"




টবে জল দিতে গিয়ে দেখলাম কিছু গাছের ডাল পালা ঝুঁকে আছে কৌতুহলে আমার বাড়িটার দিকে। কার্নিশটা বাধা দিচ্ছে । এ বাড়ির মানুষ গুলো র মনের মতো কার্নিশটা থেকে ও ছোট।একটা বিড়াল খুব সতর্ক পায়ে হেঁটে যাচ্ছে কার্নিশেটা দিয়ে। এই কার্নিশ পথেই ও নিয়ে আসে হাড়ির খবর। ওদিকে কার্নিশে একটা বটগাছ হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও কেউ মারতে পারেনি ওটাকে। ওই বট গাছের মতো একদিন ধংস স্তুপে পরিণত করতে চাই , আমি এই বাড়িটাকে। মনে পরে গেলো সেইদিনএর ভয়ঙ্কর স্মৃতিটা। গুড্ডুর বায়না মেটাতে ঘুড়ি পাড়তে গিয়ে, এই কার্নিশ থেকে ই পড়ে মারা গেছিলো বাবা।

সবাই এটাকে দূর্ঘটনা বলে। " ও "যে আমার ওপর দুর্বল সবাই জানতো। আমার বিয়ের কথা তুলতেই সাত তারাতারি ওকে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। উনি মানে "ওর" বাবা, আমার বাবাকে বলতে থাকলো আমাদের জমিটা দিয়ে দিতে প্রোমোটারির জন্য। দুইটো পাশাপাশি জমি এক সাথে করলে অনেক বড়ো অঙ্কের লাভ পাতো ওরা। বাবা রাজি হয়নি। তাই বারবার মনে হয় , আমার বাবাকে ওরা মেরে ফেলেছে। তরিঘড়ি আমাদের বিয়ে দিয়ে ধামা চাপা দিয়েছে সব কিছু। মহানুভব হয়েছে সবার কাছে।

আমি যদিও ও জমিতে হাত দিতে দিয় নি। ওটা আমাদের ভিটে। ঐ তুলসী মঞ্চ, পেয়রা গাছ, আম গাছের ঝুলন্ত দোলনা, ঝুল বারান্দা, গোল বারান্দাতে কত স্মৃতি। তাই আজ এ বাড়ির কার্নিশটার মত আমি "এ"বাড়িতে অপ্রয়োজনীয় । অথচ ভেঙে দিতে পারেও না আমাদের সম্পর্কটা ওঁরা। বাংলা কথায় কার্নিশ ছাদ বা দেওয়ালের যে অংশ বাহিরে থাকে।যতোদূর এটা ইতিলিয়ান শব্দ বোধহয়। ফরাসি শব্দও হতে পারে।গ্রিক শব্দ korōnid-, korōnís মানে বাঁক-কোণবিশিষ্ট, বাঁকা, অংশ। কার্নিশটি বিল্ডিংয়ের দেয়ালগুলিকে বৃষ্টির জল মুক্ত রাখতে। ইউরোপের স্থাপত্য কার্নিশের বিভিন্ন ডিজাইন করা হতো। সাধারণত একমাত্র বাংলার মন্দিরের স্থাপত্য একটু হলে শিল্প কলার নিদর্শন দেখা যায় কার্নিশে।অন্যান্য সাধারণ গঠনশৈলীতে রয়েছে বক্রাকার কার্নিশ ও প্যারাপেট। এ ধারা বাংলার কুড়ে ঘরের বাঁকানো চালার অনুকরণে নির্মিত। তবে মন্দিরের ক্ষেত্রে তাতে পোড়ামাটির অলংকরণ যুক্ত হয়েছে। তবে আজকাল তো বাড়িতে কার্নিশ ও দেখা যায় না। অথচ আমাদের বাড়ি ঝুল বারান্দাটা তো কার্নিশে ই ।

কার্নিশে একটা ছোট পাখি বসে একবার আকাশে দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কি চাই? প্রতিশোধ নিতে না মুক্তি পেতে চাই? বুঝতে পারি না ওই আকাশের দিকে তাকিয়ে।



ফুল সজ্জার রাতে "ও " বুঝতে পারছিলো আমার মধ্যে অনেক বদল এসেছে। বুঝতে পড়েছে ভালোবাসা টা হারিয়ে গেছে। আজকাল শহরের বাড়িগুলোতে ঘুলঘুলি থাকে না। "ও"র ঘরে ঘুলঘুলি ছিলো। প্রায় দিন আমার ঘুম ভেঙে ঐ ঘুলঘুলির পাখি দম্পতির ঝগড়া ঝাটিতে। "ও "বলেছিলো - "এ বাড়ির সবচেয়ে ছোট ঘর ওদের। ঝগড়া ঝাটি করে কিন্তু খুব সুখী ওরা। তুমি কথা বললো মন খুলে কথা, ঝগড়া করো ,কি হয়েছে বলো। ছোট বাড়িতে মানুষ সুখি হয়। ভালো ভালো খাবার, ভালো আসবাবপত্র দিয়ে সুখ আসে না। পান্তা ভাত খেয়ে, মাটিতে শুয়েও সুখে থাকা যায়।যদি ভালোবাসা থাকে "

ভালোবাসা থাক ভালো ভাবে কথাও বলিনি আমি "ও" সাথে। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। রোমান্টিক আবহাওয়া। আমার মনে কান্না জমছে। জানালার কার্নিশ থেকে ফোঁটা ফোঁটা কান্না হয়ে ঝড়ে পরছে বৃষ্টির জল।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract