Sanchari Bhattacharya

Abstract Fantasy Inspirational

4.6  

Sanchari Bhattacharya

Abstract Fantasy Inspirational

জ্ঞানগঞ্জ

জ্ঞানগঞ্জ

18 mins
29.6K


জ্ঞানগঞ্জ - হিমালয়ের রহস্যময় নগরী 


বরফের চাদরে ঘেরা তিব্বত, আজও রহস্যের ঘেরাটোপে আবৃত |হিমালয়কে এমনিতেই পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে | আজও এখানে এমন কিছু রহস্য রয়েছে যা বৈজ্ঞানিকদের চোখেও ধোঁয়া দিতে পারে |শুধু হিন্দু ধর্মই নয়, কৈলাস এবং মানস সরোবরকে পুণ্যভূমি বলে মনে করা হয় বৌদ্ধ‚ জৈন এবং বন ধর্মবিশ্বাসেও । 


ভৌগোলিক ভাবে কৈলাস পাহাড় আছে তিব্বত মালভূমিতে‚ চিন-তিব্বত ভূখণ্ডে । ছটি পর্বত শ্রেণী পদ্ম ফুলের পাপড়ির মতো ঘিরে আছে কৈলাস পাহাড়কে । ২২ হাজার ফিট উচ্চতার কালো পাথরের এই পাহাড়কে প্রাচীন কাল থেকেই পৃথিবীর স্তম্ভ বা আক্সিস পয়েন্ট বলে মনে করা হয় , যা নাকি ধরে রেখেছে পৃথিবীর ভর । প্রাচীন বিশ্বাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে আধুনিক সন্ধানেও । রুশ ভূবিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন‚ কৈলাস শুধু পাহাড় নয় , বরং এটির অবস্থান একটি অক্ষ বা অ্যাক্সিসের মতো কারন ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জ থেকে এর দূরত্ব ঠিক 6666 কিমি , আবার এই একই 6666 কিমি দূরত্ব কৈলাসের সাথে নর্থপোলের ।আবার সাউথ পোলের সাথে এই দূরত্ব ঠিক দ্বিগুণ 13332 কিমি । অনেকে আবার একধাপ এগিয়ে মনে করেন ভিন গ্রহের মানুষ এসে বানিয়ে গেছে কৈলাস পাহাড় এবং এটি একটি পিরামিড। সবথেকে আশ্চর্যজনক হল‚ কৈলাস পাহাড় এখনও কেউ জয় করতে পারেননি , যেখানে এর উচ্চতা মাত্র 6634 মিটার । 


বিশ্বের নানা দেশ থেকে এসে চেষ্টা করেছেন পর্বতারোহীরা কিন্তু তাঁদের কারও প্রয়াস সফল হয়নি । কৈলাস থেকে গেছে অধরা । অথচ এই পাহাড় কিন্তু দুর্গম নয় । এর থেকে অনেক বেশি দুর্গম শৃঙ্গ জয় করেছেন পর্বতারোহীরা, যেমন এভারেস্ট (8848 মিটার)। কিন্তু কোনও এক রহস্যময় কারণে তাঁদের কাছে অজেয় কৈলাস । সংস্কৃতে কেলাস (Crystal) কথা থেকে কৈলাস কথাটির উৎপত্তি । কারণ বরফে ঢাকা কৈলাসকে দেখতে লাগে স্ফটিকের মতো । তিব্বতি ভাষায় এর নাম গাঙ্গো রিনপোচে । তিব্বতে বৌদ্ধ গুরু পদ্মসম্ভবাকে বলা হয় রিনপোচে । তাঁর থেকেই নামকরণ হয়েছে কৈলাস পর্বতের । অর্থ হল বরফের তৈরি দামী রত্ন ।


তিব্বতে প্রচলিত প্রাচীন কিংবদন্তি গুরু মিলারেপাই শুধু পা রাখতে পেরেছিলেন কৈলাস-শীর্ষে । ফিরে এসে তিনি নিষেধ করেছিলেন এই পর্বত জয়ে যেতে । কারণ একমাত্র সে-ই মানুষই পারবে এর শীর্ষে যেতে‚ যার গায়ে কোনও চামড়া নেই । আধুনিক পর্বতারোহীরাও বলছে মাউন্ট কৈলাসা ইজ আটারলি আনক্লাইম্বেবল । কেন‚ সে কারণ অস্পষ্ট ।সূর্যাস্তের সাথে সাথে কৈলাসে পতিত সূর্যালোক স্বস্তিকচিহ্নের ছায়া তৈরী করে ।

কৈলাস পাহাড়ের পায়ের কাছে আছে মানস সরোবর এবং রাক্ষসতাল । এ দুই হ্রদ এশিয়ার বেশ কিছু দীর্ঘতম নদীর উৎস । ১৪‚৯৫০ ফিট উচ্চতায় মানস সরোবর বিশ্বের উচ্চতম মিষ্টি জলের হ্রদ ।এও প্রকৃতির আজব সৃষ্টি কারন মানস-রাক্ষস দুই হ্রদ পাশাপাশি আছে , অথচ, মানসে আছে মিষ্টি জল আর রাক্ষসে নোনা জল । মানস সরোবরের জল শান্ত । কিন্তু রাক্ষস তালের জল অশান্ত । রামায়ণে বলা হয়েছে শিবের পরম ভক্ত রাবণ তপস্যাবলে সৃষ্টি করেছিলেন এই হ্রদ । কৈলাস পাহাড়ের আবহাওয়ায় এমন কিছু আছে যাতে নাকি মানুষের চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ দ্রুত ফুটে ওঠে । 


সাধারণভাবে মানুষের নখ-চুল যে হারে বাড়ে‚ কৈলাস পাহাড়ে অন্তত ১২ ঘণ্টা কাটালে নাকি এই বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ হয়ে যায় । এছাড়াও কৈলাসের হাওয়ায় মানবশরীরে বয়সের ছাপ পড়ে দ্রুত ।এরকমই হাজারো বিস্ময়ের ধারক ও বাহক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধ্যানস্থ মহাদেবের আবাস কৈলাস পর্বত ।পুরানমতে কৈলাস হলো স্বর্গ এবং মর্ত্যের সংযোগস্হল ।


এবার আসি কৈলাস সংলগ্ন সবচেয়ে রহস্যময় এবং মানুষের চোখে অদৃশ্য মঠ জ্ঞানগঞ্জ জ্ঞানপীঠ এর কথায় । হিমালয়ে অবস্থিত এই জ্ঞানগঞ্জ আশ্রম সাংগ্রিলা, সাম্ভালা এবং সিদ্ধাশ্রম নামেও পরিচিত। অনুমান করা হয় এখানে সবার ভাগ্যের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হিমালয়ে অবস্থিত এই জায়গাটির সঠিক স্থান সম্পর্কে কেউ জানে না। শুধুমাত্র ভারতেই নয়, তিব্বতেও এই স্থানটি বিখ্যাত।শুধুমাত্র সিদ্ধপুরুষগণই এখানে যেতে পারবেন। এখানে সাধারণ মানুষের যাওয়া সম্ভব নয়। জ্ঞানগঞ্জে কারোর মৃত্যু হয় না। এখানে বসবাসকারী কোটিসিদ্ধ সন্ন্যাসীদের বয়স বাড়ে না। কালচক্র এখানে গতিহীন । এই আশ্রমে সময়কে যিনি স্হির করে দিয়েছেন তিনি সন্ন্যাসী মহর্ষী মহাতপা যিনি সত্যযুগ থেকে অবস্হান করছেন রাজরাজেশ্বরী মঠে । মহর্ষি মহাতপা কলির শুরুতে শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে ধ্যানমগ্ন হয়ে যান যাতে এই সৃষ্টি বজায় থাকে। তাঁর উপর আশীর্বাদ ছিলো ধ্যান করার জন্যে যেখানে যেদিকে তিনি যাবেন সেদিকে পথের সৃষ্টি হতে থাকবে। তিনি যেখানে ধ্যান করেছিলেন সেই স্থানের নাম মহাতপা বিল।


" তথাপি মমতাবর্ত্তে মোহগর্ত্তে নিপাতিতাঃ ।

মহামায়াপ্রভাবেণ সংসারস্থিতিকারিণা ।।


তন্নাত্র বিস্ময়ঃ কার্য্যো যোগনিদ্রা জগৎপতেঃ ।

মহামায়া হরেশ্চৈতত্তয়া সংমোহ্যতে জগৎ ।।


জ্ঞানিনামপি চেতাংসি দেবী ভগবতী হি সা ।

বলদাকৃষ্য মোহায় মহামায়া প্রযচ্ছতি ।।


তয়া বিসৃজ্যতে বিশ্বং জগদেতচ্চরাচরম্ ।

সৈষা প্রসন্না বরদা নৃণাং ভবতি মুক্তয়ে ।।


সা বিদ্যা পরমা মুক্তের্হেতুভূতা সনাতনী ।

সংসারবন্ধহেতুশ্চ সৈব সর্ব্বেশ্বরেশ্বরী ।। " -


শ্রীশ্রী দেবীমাহাত্ম্য চণ্ডী।


পুরাণে আছে মহাতপা বিলে আজও অনেক মহর্ষি ধ্যানমগ্ন আছেন কীটপতঙ্গ রূপে, শৈবাল রূপে, বাদুড়ের রূপে। মহাতপা বিলে গিয়ে ধ্যান করলে জন্মজন্মান্তরের চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । আশ্চর্যের বিষয়টি হলো স্যাটেলাইটেও এই স্থানটি দেখা যায় না। এই জায়গাটি কোনও বিশেষ ধর্ম বা সংস্কৃতির জন্য নয়।


রহস্যময় জ্ঞানগঞ্জ, যার কথা প্রথম লোকসমক্ষে আসে ১৯৩৩ সালে জেমস্ হিলটনের লেখা 'লষ্ট হরাইজন' বইটির মাধ্যমে ৷ গহিন হিমালয়ের কোলে গিরিখাতের দুর্গমতম প্রদেশে গিরিবর্ত্মের আড়ালে একটি চিরসবুজ উপত্যকা ফুলের মত ফুটে আছে।সাধারণের কাছে নিষিদ্ধ, রহস্যে ঘেরা এই উপত্যকায় আজও পর্যন্ত কেউ পৌঁছতে পারেনি। সেনা-নায়ক, গুপ্তচর, প্রকৃতিপ্রেমিক সবাই নাকি ব্যর্থ। ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রী উত্তর অক্ষরেখার মাঝে অবস্থিত এই আশ্চর্য ভূমি – যার নাম শাংগ্রীলা [সাংগ্রীলা] ঘাঁটি। দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে লেখা হিলটনের ‘দ্য লষ্ট হরাইজন’ উপন্যাসটি এই আশ্চর্য উপত্যকার প্রেক্ষাপটে রচিত। ১৯৩৩ সালে উপন্যাসটি চলচিত্রে রূপায়িত হওয়ার পর [যদিও কাহিনি কাল্পনিক ছিল] শাংগ্রীলাকে নিয়ে মানুষের কৌতূহল তুঙ্গে ওঠে।


রামায়ণ ও মহাভারতেও জ্ঞানগঞ্জের উল্লেখ রয়েছে। এখানে এর নাম হলো সিদ্ধাশ্রম । তিব্বতী বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন ভগবান বুদ্ধ তাঁর জীবনের শেষ সময়ে কালচক্রের সম্পর্কে জেনে গেছিলেন । তিনি যে সমস্ত ব্যাক্তিদের জ্ঞান দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজা সুচন্দ্র। তিনি যখন এই জ্ঞান নিয়ে তাঁর রাজ্যে ফিরে গেছিলেন তখন থেকে তিব্বতে এই স্থানটি সাম্ভালা নামে পরিচিত হয়। এই স্থানটি আধ্যাত্মিক ক্ষমতার কেন্দ্র। বার বার একটি রাষ্ট্র ভারতের ওই অঞ্চলকে আক্রমণ করেছে , শাংগ্রীলা অধিকারই ছিল বা আছে তাদের গোপন এজেণ্ডা - অসমর্থিত সূত্ররা একথা বলে।এর নক্সাটিও অতি গোপনে রাখা, কেউ আজও খুঁজে পায়নি।


অরুনাচলের সীমা থেকে তিব্বতের উত্তরপূর্বের পশ্চিমাংশে যে অঞ্চল অবস্থিত -সেটিই শাংগ্রীলা। এই এলাকাটি ভূ-শূন্য এবং বায়ুশূন্য। চতুর্থ আয়াম [ফোর্থ ডাইমেনশন] দ্বারা প্রভাবিত - দেশ, কাল এবং নিমিত্তের ঊর্ধ্বে মহাযোগীদের তপ:প্রভাবে সৃষ্ট। ৩য় এবং ৪র্থ আয়ামের সংযোগ স্থলে থাকায় এটি অদৃশ্য থাকে। এই রকম এলাকায় ব্ল্যাক হোলও থাকে। এইসব কৃষ্ণসুরঙ্গের মাধ্যমে অতীন্দ্রিয় লোকের সঙ্গে শাংগ্রীলা নাকি যুক্ত। ভূমি সংস্থানের মাহাত্মে যোগীরা হাজার হাজার বছর অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে বেঁচে থাকেন ,আমাদের কাছে অদৃশ্যও থাকেন। ৩য় আয়ামের বাসিন্দা আমরা ওখানে যেতে পারিনা ,অক্সিজেনের অভাব বোধ হয়। ওখানে ৪০০বছর পার করা এক যোগী আছেন,কায়াকল্প যোগে এটি তাঁর ৪র্থ শরীর। অনেকের মতে এখানে এক Time Zone থেকে অন্য Time Zone - এ চলে যাওয়ার পথ আছে।


সিদ্ধযোগীরা আকাশচারী, অবিশ্বাস্য ক্ষমতার অধিকারী। তিব্বতি ভাষায় লেখা ‘কালবিজ্ঞান’ এই জগতের কথা বলে। কেউ বলেন এটি বৈদিক যুগে সৃষ্ট, কেউ বলেন পৌরাণিক যুগে।পুরাণে এটির বানান দেখা যায়- শ্রাংগ্রীলা। স্বর্গীয় বাতাবরণে ডুবে থাকা এই অঞ্চল নাকি ২১কিমি লম্বা, সংকোচন-প্রসরণশীল এই এলাকা সময়ানুসারে গুটিয়ে ১কিমি পর্যন্ত রূপ নেয়। এই স্থান মহাযোগীদের চরম ইচ্ছাশক্তির প্রকাশ। মননশক্তির পূর্ণপ্রকাশ হোল বিজ্ঞান,ইচ্ছাশক্তির পূর্ণ বিকাশ হোল যোগ।পৃথিবীর বিজ্ঞানসাধনায় ইচ্ছে ও মনন আছে, কিন্তু শক্তি নেই, তাই এই বিজ্ঞান বিনাশের কারণ হবে ,ভবিষ্যৎবাণী এঁদের । ১১টি সিদ্ধমঠ নিয়ে এই ঘাঁটি। তাদের মধ্যে সবচেয়ে অলৌকিক মঠ শাংগ্রীলার কোলে অলৌকিক রহস্যময় জ্ঞানগঞ্জ মঠ - টাইম চেম্বার - ভারতের মাত্র কয়েকটি স্থানে এর শাখা আশ্রম আছে। এগুলিকে সঙ্গে নিয়ে তিব্বতের জ্ঞানগঞ্জই মূল কেন্দ্র। প্রথম জ্ঞানগঞ্জ ব্যাবহারিক, বহু সিদ্ধ মহাযোগীদের আবাস এটি।এর পঞ্চপদার্থ [ মাটি ,জল,অগ্নি,বায়ু,আকাশ] এঁদের তেজ দ্বারা প্রকটিত। যে আলোকচিত্রগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি খুব সম্ভবত: এই প্রথম জ্ঞানগঞ্জের।কিন্তু আমি আলোচনা করতে চলেছি দ্বিতীয় জ্ঞানগঞ্জকে নিয়ে, যেটি পারমার্থিক , যোগের চরম শিখরে যাঁরা আছেন, কেবল তাঁদেরই দ্বারা অনুভবযোগ্য।


আমাদের ভারতের উত্তরদিকের শেষপ্রান্ত গাড়োয়াল হিমালয় এবং তিব্বতের মধ্যবর্তী এক বিশাল তুষারক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থিত এই সিদ্ধাশ্রম জ্ঞানগঞ্জ |যেখানে আমাদের মত সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ তা তিনি যতই বলশালী বা প্রভাবশালী হোন না কেন। তবে এ নিয়মের ব্যাতিক্রম আছে। সেখানকার শ্রদ্ধেয় মহাত্মাগণ যদি মনে করেন কোনো সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যে সেখানে পৌঁছবার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছেন তবে তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী কেউ কেউ সেখানে পৌঁছতে পারেন অবশ্যই।


বর্ধমানের বন্ডুলগ্রামে ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় জন্ম গ্রহণ করেন ৷ ইনিই পরবর্তীকালের যোগীরাজ স্বামী বিশুদ্ধানন্দ পরমহংস , কৈশোরে তাঁকে একটি পাগলা-কুকুর কামড়ায়, গ্রামে চিকিৎসায় সুস্থ না হওয়ায় চন্দননগরের পার্শ্ববর্তী নোঁদালপাড়ায় চিকিতৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয়| তাতেও কোনও উপকার না পাওয়ায় তিনি হুগলিতে আসেন৷ সেখানে এক দিন দেখেন এক জটাজুটধারী সন্ন্যাসী নিরন্তর গঙ্গার জলে ডুবছেন এবং উঠছেন আর গঙ্গাজল তাঁর সঙ্গে সঙ্গে স্তম্ভের মতো স্ফীত হয়ে উঠছে পড়ছে৷ সন্ন্যাসী বিখ্যাত জ্ঞানগঞ্জের পরমহংস নীমানন্দ স্বামী৷ সন্ন্যাসী স্পর্শমাত্র ভোলানাথকে সুস্থ করেন এবং কিছু দিনের মধ্যে তাঁকে এক অলৌকিক উপায়ে জ্ঞানগঞ্জে নিয়ে আসেন যেখানে নীমানন্দের গুরু মহর্ষি মহাতপা, যাঁর বয়স ১২০০ বছরেরও অধিক, ভোলানাথকে দীক্ষাদানে শিষ্যরূপে গ্রহণ করেন৷


এই জ্ঞানগঞ্জ সম্মন্ধে আমরা সর্বপ্রথম জানতে পারি জ্ঞানগঞ্জের সূর্যবিজ্ঞান সিদ্ধ সাধক পরমহংস শ্রীশ্রীবিশুদ্ধানন্দ ওরফে কাশীর বিখ্যাত গন্ধবাবার সুযোগ্য শিষ্য সর্বশাস্ত্র পারঙ্গম ও বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন লাইব্রেরিয়ান মহামহোপাধ্যায় ড:গোপীনাথ কবিরাজ মহাশয়ের লেখনী থেকে| তাঁর সম্পাদিত "বিশুদ্ধবাণী" বইটিতে জ্ঞানগঞ্জের শ্রদ্ধেয় মহাত্মাগণ পরমহংস বিশুদ্ধানন্দ বাবার সাথে কিভাবে পত্রালাপের মাধ্যমে তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে পোষ্ট কার্ডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন , তাঁদের সেই চিঠিপত্রের অরিজিনাল কপি বইটিতে ছাপানো আছে। এখন কথা হচ্ছে চিঠিগুলি কিভাবে গন্ধবাবার কাছে আসতো ? কেননা জ্ঞানগঞ্জে কোনো লেটারবক্স নেই। কোনো কোনো সময় চিঠিগুলিতে পাঞ্জাবের গোনা নামক এক স্থানের ডাক অফিসের শীলমোহর থাকত। আবার কখনো কখনো ডাক অফিসের কোনো শীলমোহর ছাড়াই চিঠিগুলি গন্ধবাবার কাছে এসে পৌঁছত। ভাবতে অবাক লাগেনা এই বিজ্ঞানের যুগে ডাক অফিসের পরিষেবা ছাড়াই চিঠিপত্র কিভাবে কারোর কাছে আসতে পারে? 


এই জ্ঞানগঞ্জে প্রবেশের দুটি মাত্র পথ। এক পাঞ্জাবের গোনা হয়ে না হলে গাড়োয়াল হিমালয়ের ভারতের শেষ গ্রাম মানা হয়ে তিব্বত। বলা হয়েছে এখানে সাধনরত মহাত্মাদের কারো কারো বয়স হাজার দুহাজার এমনকি তারও বেশী। মঠের যিনি প্রধান মহারাজ তাঁর নাম মহাতপা মহারাজ যিনি দুহাজার বছর ধরে সেখানে সাধনরত এবং আশ্রমের কর্মাধ্যক্ষ হিসাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে যারা সাধনার প্রথম স্তর অর্থাৎ শিক্ষানবিশ হিসাবে রয়েছেন তাঁদের পানীয় জলের একটি মাটির পাত্র এবং তীব্র শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র একটি কম্বল দেওয়া হয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে তাঁরা সাধনায় যেমন যেমন সাফল্য লাভ করেন তেমন তেমন সময়ে তাঁদের কম্বলের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। তবে সেটা অন্যকারণে। 


মাইনাস ৪০/৫০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় আশ্রমের হিমশীতল সরোবরে স্নান সেরে নিয়ে ভিজে কাপড় পরেই তাঁদের ধ্যানে বসতে হয় ভিজে কম্বল গায়ে দিয়ে। শিক্ষাগুরুরা তখন শিক্ষার্থীর শরীর থেকে একের পর এক শুকিয়ে যাওয়া কম্বল সরিয়ে নিয়ে আবার একটি ভিজে কম্বল জড়িয়ে দেন। হাজার শীত অনুভূত হলেও আসন ছেড়ে ওঠা বারণ। যিনি যত তাড়াতাড়ি বেশী সংখ্যক ভিজে কম্বল শুকোতে পারবেন তাঁর তত তাড়াতাড়ি সিদ্ধিলাভ সম্ভব।এটাই এখানকার নিয়ম। আসলে সাধকের যোগাবস্থায় শরীর থেকে নির্গত প্রচন্ড উত্তাপ ভিজে কম্বল গুলিকে নিমেষে শুকোতে সাহায্য করে। সাধকের উন্নত আধার এইভাবেই পরীক্ষা করা হয়। সাধকেরা তাঁদের খাদ্যবস্তু তাঁদের ঘরে বসেই পেয়ে যান বায়বীয় স্তর থেকে এজন্য তাঁদের ঘরের বাইরে বেড়োতে হয় না। এখানকার সাধক সাধিকাদের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয়ে থাকে , যেমন - সূর্যবিজ্ঞান,বায়ুবিজ্ঞান, ভূমিবিজ্ঞান,জলবিজ্ঞান, নক্ষত্রবিজ্ঞান,স্বরোদয় শাস্ত্র ইত্যাদি।


এখানকার মহাত্মাগণ সকলের অলক্ষ্যে বায়ুপথে বিচরণ করে থাকেন এবং নিমেষে তাঁদের গন্তব্যস্থানে পৌঁছতে পারেন। তাই ঋষি অরবিন্দ ঘোষ তাঁর প্রিয় শিষ্য স্বর্গীয় শ্রীদ্বীজেন্দ্র লাল রায়ের পুত্র প্রখ্যাত সুরকার ও গায়ক শ্রীদিলীপ রায়কে একদিন বলেছিলেন 'দিলীপ রোজ ব্রাহ্ম মুহূর্তে ধ্যানে বসবে কেমন, কেননা সেসময় জ্ঞানগঞ্জের শ্রদ্ধেয় মহাত্মাগণ বায়ুপথে বিচরণ করেন'। এই দিলীপ রায়ের গুরুদীক্ষা নিয়ে একটা মজার ব্যাপার আছে। এক সময় তিনি দীক্ষা নেওয়ার জন্য বড় ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন। কার কাছ থেকে দীক্ষা নেওয়া যায় এই ব্যাপারে মন স্থির করতে পারছিলেন না। কখনো ভাবছেন দেওরাহা বাবার কাছে দীক্ষা নেবেন,কখনো ভাবছেন স্বামী বিবেকানন্দের গুরুভ্রাতা স্বামী অভেদানন্দের কাছে নেবেন এবং তা প্রায় ঠিক হয়েও গেছিলো। এই সময় তাঁর এক বন্ধু তাঁকে যোগাচার্য বরদাচরণ মজুমদার মহাশয়ের কাছে নিয়ে যান। কথায় কথায় দিলীপবাবু তাঁর গুরুদীক্ষার প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে বরদাবাবু বলেন আমি এক্ষুনিই আপনার সংশয় দূর করে দিচ্ছি। বলে তিনি তাঁর ঘরে প্রবেশ করে দরজা ভেজিয়ে দিলেন। কিছুসময় পর দরজা খুলে বেরিয়ে এসে দিলীপবাবুকে স্মিত হেসে বললেন 'আপনার গুরু দেওরাহা বাবা নন কিংবা স্বামী অভেদানন্দও নন,আপনার গুরু স্বয়ং ঋষি অরবিন্দ'। দিলীপবাবু তিনি কেমন করে তা জানলেন সে প্রশ্ন করাতে বরদাবাবু বললেন 'আমি যখন ধ্যানরত তখন দেখলুম শ্রীঅরবিন্দ আমার সামনে উদয় হয়ে বললেন, " বরদা দিলীপকে চিন্তা করতে নিষেধ করো। আমিই ওকে দীক্ষা দেব। আমিই ওর গুরু "। 


পরবর্তী সময়ে ঋষি অরবিন্দের কাছেই দিলীপ রায় দীক্ষাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ঋষি অরবিন্দ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ জায়া সারদা মার বিশেষ স্নেহধন্য ছিলেন। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য গন্ধবাবা শ্রীশ্রীবিশুদ্ধানন্দ পরমহংস কৈবল্যনাথ শ্রীশ্রীরামঠাকুর মশাই,বাবা লোকনাথ, বহেরাবাবা,দেওরাহাবাবা, বর্ফানী দাদাজী, শ্রী তৈলঙ্গস্বামী,রামদাস, শ্যামাচরণ লাহিড়ী, কালিপদ গুহরায়,এর মত ঋষি অরবিন্দও একজন জ্ঞানগঞ্জ সিদ্ধ সাধক। প্রসঙ্গতঃ এটাও জানিয়ে রাখা দরকার অনেক তন্ত্র সাধকের মতে জ্ঞানগঞ্জ মহাচীনাচার ক্রমের উৎপত্তি স্থল , যেখান থেকে মহর্ষি বশিষ্ঠ দেব মা তারার সাধন প্রণালী এবং তারাপীঠের ভৌগোলিক অবস্থান সম্বন্ধীয় সূত্র ওনার শিক্ষাগুরু বুদ্ধরূপী জনার্দনের কাছ থেকে অবগত হন। বিতর্কের বাইরে থেকে, আরেকটি তথ্য অনেক আধ্যাত্মবাদীর মতে যিশু খ্রীস্ট এবং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস জ্ঞানগঞ্জ সিদ্ধ সাধক। সাধক ও লেখক নিগুড়ানন্দের লেখাতেও জ্ঞানগঞ্জ প্রসঙ্গ রয়েছে।


৩-ডি এবং ৪-ডির মাঝে সংবদ্ধ অপূর্ব এক অব্যক্ত, অকল্পনীয় , ভাষায় অপ্রকাশ্য স্থানে জ্ঞানগঞ্জের অবস্থান। জ্ঞানগঞ্জ ভূমির থেকে বিযুক্ত, অথচ অদৃশ্য ভিত্তিভূমি।এখানে যাঁরা থাকেন, কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার বছরও আয়ু নিয়ে এঁরা বেঁচে আছেন। আহার নিদ্রার প্রয়োজন হয়না। শরীরকে ভারশূন্য [অ্যান্টি-গ্র্যাভিটি] করে আকাশচারী হন, কখনও বা পরমাণুর আকারে লোকে লোকান্তরে ভেসে বেড়ান।শরীরের ঘুমিয়ে থাকা ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফোর্সকে যোগপ্রক্রিয়ায় আচার অভ্যাসে উজ্জীবিত করে নাকি অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা অর্জন সম্ভব। পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা এবং শারীরবিদ্যা- এই ত্রিশক্তির চূড়ান্ত সংহত প্রকাশই যোগশক্তি, যা নাকি অলৌকিক ইচ্ছাশক্তিরও জন্ম দেয়। তাই বলা হয়, যোগবিজ্ঞান হল ফলিত [অ্যাপ্লায়েড] বিজ্ঞানের চূড়ান্ত ফল। পুরাণের অতিজাগতিক দেবতাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলির কথা আমরা চিরকাল পড়ে এসেছি।


পারমার্থিক জ্ঞানগঞ্জ যোগসাধনায় লব্ধ প্রবল ইচ্ছাশক্তি দিয়েই তৈরি।এখানে বসবাসকারী যোগীদের রক্তের রঙও জিনগতভাবে পরিবর্তিত, ঘাসের মত সবুজ রং। [ এ প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ে গেল রসওয়েলস্-এর ঘটনা। ১৯৪৭ সালের জুনমাসে নিউমেক্সিকোতে একটা ইউএফও[UFO] ভেঙে পড়ে।৬জন মৃত এলিয়েনকে তুলে নিয়ে গিয়ে গোপনে নানা পরীক্ষা করা হয়। তাদের রক্তের রঙও নাকি ছিল সবুজ। এ প্রসঙ্গে আমেরিকা আজও মুখ খোলেনি।] প্রায় ১৬ হাজার ফুটেরও বেশী উচ্চতায় কুয়াশায় ঢাকা জনহীন বৃক্ষহীন তুষারময় এই স্থান, কিন্তু জ্ঞানগঞ্জ আলোকময়, ঊষ্ণ।চাক্ষুষ করে আসা যোগীরা এক অশ্রুতপূর্ব গঠনশৈলীর বর্ণনা করেন।


আধুনিক বিজ্ঞানের মতে বার্ধক্য একটি রোগ। ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়ার মত দেশে, দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে যদি শরীরে নতুন কোষ নির্মিত হয় এবং অরগ্যানগুলি যদি সবসময় সুস্থ থাকে তাহলে মানুষ 1000 বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে। সাধারণ মানুষ মনে করেন এই জায়গাটি কোন বিশেষ ধর্ম বা সংস্কৃতির জন্য নয়। 1942 সালে একজন ব্রিটিশ অফিসার এলপি ফ্রল এই জায়গাটির সম্পর্কে বিশেষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কারোর কারোর মতে জ্ঞানগঞ্জ আশ্রম তিব্বতের পশ্চিম অঞ্চল থেকে 16 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত , এই প্রাচীন আশ্রমটির সংস্কার ও নির্মাণ করেছিলেন পরমহংস জ্ঞানানন্দ।


জ্ঞানগঞ্জ উত্তরাপথের মধ্যে একটি অতি দুর্গম যোগাশ্রম ও সিদ্ধভূমি৷ এর অবস্থান তিব্বতীয় হিমালয়ের স্থলভূমিতে হলেও এ কোনও ভৌম স্থান নয়৷ লোকচক্ষুর অগোচরে এই অদৃশ্য যোগভূমি কোনও পর্যটকের দৃশ্য নয়৷ এখানকার অধিষ্ঠাতৃবর্গের আনুকূল্য ব্যতীত এই স্থান অগম্য৷ এই স্থানটি এত গুপ্ত যে সুদীর্ঘকালেও চিন, ব্রহ্মদেশ ও আসামের বারো জন ছাড়া আর কেউ এই স্থানের সন্ধান জানত না৷ একজন গ্রিক পর্যটক বলেন যে এই মঠের মত অদ্ভুত স্থান পৃথিবীতে কোথাও নেই৷ তাঁর মতে এটিই প্রকৃত 'Heaven on Earth '। 


শ্যঙ্গড়ী-ল্যা বা সাম্বালা উপত্যকা,তিব্বত-ভারত-চীন লাগোয়া এলাকা,যেখানে যুগ যুগ ধরে চলেছে

বিদেশী চরদের খোঁজ, যা আজও অব্যাহত৷ যখন আমরা ভারতীয়রা পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমাদের অন্ন সংস্থানের প্রথম সোপান করে নিজেদের জাগতিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি নানাদিক দিয়ে আপন করে নিতে ব্যাস্ত, তখন আমাদের অজ্ঞাতে বিদেশীরা আমাদের পুরাতন সংস্কৃতি, আধ্যাত্ব ভাবনা, যোগ, তপস্যা প্রভৃতি ভারতীয় সভ্যতাকে আপন করে নেবার জন্য আমাদেরই অজ্ঞাতে সাধনা করে যাচ্ছে ৷ এই রহস্যময় জ্ঞানগঞ্জ, যেখানকার খোঁজে এরা নিজেদের বাড়ি ঘর ছেড়ে আমাদের দেশে বহুবৎসর ধরে গবেষণা করে যাচ্ছে ৷

অ্যাধাত্মিক ব্যাখ্যায়, তন্ত্র শাস্ত্র ,যোগ শাস্ত্র, সহজীয়া ও বাউলতত্ত্বে প্রত্যেক মানবশরীরে অবস্থিত এই জ্ঞানগঞ্জ হল পবিত্র 'কূটস্থ' স্থান যা কিনা সমস্ত দেব-দেবী তথা জ্ঞান বা প্রজ্ঞার

পীঠস্থান এবং যৌগিক উপলব্ধিতে এটাই হলো হৃদ্দেশে অনাহত চক্র , এখানেই তাঁর আত্মসাক্ষাতৎকার হয়ে থাকে।

আরশিনগর জ্ঞানগঞ্জ, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের পিতা, পণ্ডিত শ্রী সুরীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের যোগতত্ত্ব-বারিধি অনুযায়ী " চতুর্থ চক্র হৃদয়ে অবস্থিত, ইহার নাম অনাহত চক্র । এই স্থানে বায়ু-বীজ বা “হংস” ইতি জীবাত্মা বাস করেন । “হং” শ্বাস ও “স” প্রশ্বাস । নিরন্তর এতধ্যানে জগৎ বশীভূত হয় ; কেন না, – তুমি, আমি, সে ও সব এক, তাহা বুঝিতে পারা যায় । যখন সে বুদ্ধি আসিল, তখন জগৎ তোমার বশ না হইবে কেন ?" ।

" যো মাং পশ্যতি সর্বত্র সর্বঞ্চ ময়ি পশ্যতি।

তস্যাহং ন প্রণশ্যামি স চ মে ন প্রণশ্যতি।।

সর্বভূতস্থিতং যো মাং ভজত্যেকত্বমাস্থিতঃ।

সর্বথা বর্তমানোঽপি স যোগী ময়ি বর্ততে।।

আত্মৌপম্যেন সর্বত্র সমং পশ্যতি যোঽর্জুনঃ।

সুখং বা যদি বা দুঃখং স যোগী পরমো মতঃ।।

যে ব্যক্তি সর্বত্র আমাকে দেখিয়া থাকে এবং সকল বস্তুতে আমাতে দেখিয়া থাকে, তাহার নিকট আমি কখন অদৃষ্ট থাকি না, সে কখনও আমার দৃষ্টির দূরে থাকে না। যে ব্যক্তি জীব ও ব্রহ্মে অভেদদর্শী হইয়া আর্বভূতস্থিত আমাকে ভজনা করে, যে কোন অবস্থাতেই থাকুক না, সেও যোগী আমাতেই অবস্থান করে। হে অর্জুন, সুখই হউক, দুঃখই হউক, যিনি নিজের তুলনায় সকলের প্রতিই সমদর্শন করেন, সেই যোগীই আমার মতে সর্বশ্রেষ্ঠ। " - [গীতা, ৬।৩০, ৩১, ৩২]।

" যেখানে দেহ সেখানেই কর্ম :- যেখানে দেহ সেখানেই কর্ম,তা হতে কারও মুক্তি নেই৷তবু দেহকে প্রভুর মন্দির করে তার দ্বারা যে মুক্তি পাওয়া যায় সকল ধর্মই তা প্রতিপাদন করছে৷ কর্মমাত্রেরই কয়েকটি দোষ আছে৷মুক্তিতো দোষহীন শুদ্ধচেতারই লভ্য৷তা হলে কর্মবন্ধন হতে অর্থাত্‍ দোষ স্পর্শ হতে মুক্তি পাওয়া যাবে কেমন করে ? গীতা বেদের অনুবর্তন করে অত্যন্ত স্পষ্টভাষায় তার নির্দেশ করেছেন - ' নিষ্কাম কর্মের দ্বারা, যজ্ঞার্থ কর্ম করে, কর্মফল ত্যাগ করে, 

সমস্ত কর্ম শ্রীকৃষ্ণে অর্পণ করে -অর্থাত্‍ দেহ মন বাক্যকে আহূতি দিয়ে৷' কিন্তু নিষ্কামভাবে কর্মফলত্যাগ তো শুধু মুখের কথা নয়৷ এটি কেবল বুদ্ধির ব্যাপার বা প্রয়োগ নয় ; হৃদয়মন্থন করে এই ভাব প্রস্ফুট হয়৷এই ত্যাগশক্তি উত্‍পন্ন করার জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন৷বাচকজ্ঞানী অনেক আছেন, 

শাস্ত্র তাঁদের কণ্ঠস্থ, কিন্তু ভোগে আসক্ত ।

ভগবদ্ভক্তির কুঙ্কুম চন্দনে যাঁর হূদয় নিষিক্ত ও চর্চিত, তাঁরই জ্ঞান সার্থক৷ ভক্তি বিনা জ্ঞান ব্যর্থ৷ 

ভক্তি থাকলে স্বতঃই জ্ঞান আসে৷ গীতাতে স্থিতপ্রজ্ঞের যে লক্ষণ আছে, প্রকৃত ভক্তের লক্ষণও তাই৷ আমার বাবা বলতেন, ভক্তি হল ভোগের প্রতি ইতি৷ভোগাসক্তি গেলেই জ্ঞান আসে, 

ভক্তি আসে৷বলা বাহুল্য এই ভক্তি বীর্যহীনতা নয়,অন্ধ শ্রদ্ধা ভাবালুতা প্রভৃতির কোন ফেনিল উচ্ছ্বাসও নয়৷

লৌকিক কল্পনায় ভক্ত বলতে ধরা হয় এক নিবীর্য মালাজপ নিরত ব্যক্তি,সেবাকর্মেও তার মালা জপে বিক্ষেপ আসে৷ কিন্তু মালা তিলক দণ্ড কমণ্ডলু ধারণ বা ভস্মত্রিপুন্ডাদি লেপন ভক্তের লক্ষণ নয়, 

সন্ন্যাসীর লক্ষণ নয়৷ যিনি অদ্বেষ্টা, যিনি করুণার ভাণ্ডার,যিনি মমতাশূন্য, নিরহঙ্কার, যাঁর কাছে সুখ ও দুঃখ, শীত ও উষ্ণ সমান,যিনি ক্ষমতাশীল সর্বদা সন্তুষ্ট , যাঁর আত্মা সংকল্পে দৃঢ়,যিনি মন ও বুদ্ধি শ্রীভগবানে অর্পণ করেছেন, যিনি লোকের ভয়ের কারণ নন, যাঁর কোন লোকের ভয় নাই, যিনি হর্ষ শোক ভয়াদি হতে মুক্ত, যিনি পবিত্র,কার্যদক্ষ হয়েও তটস্থ,যিনি শুভাশুভ ত্যাগ করেছেন,

শত্রু মিত্রে তাঁর সমভাব,মান অপমান যাঁর কাছে তুল্যমূল্য, যিনি স্তুতি দ্বারা উত্‍ফুল্ল বা নিন্দা দ্বারা দুঃখিত হন না,যিনি মৌনব্রতী, একান্ত প্রিয় স্থিরবুদ্ধি তিনিই ভক্ত৷ এর দ্বারা আমরা বুঝতে পারি প্রকৃত সন্ন্যাসী হওয়া ও প্রকৃত ভক্ত বা জ্ঞানী হওয়া একই কথা৷ " - শৈলেন্দ্রনারায়ণ ঘোষাল শাস্ত্রী।

" [ On The Tantric Cult And The Vedanta Philosophy ]

অচিন পাখি -

শৈব সুখের অন্তরালে -

যে জন মগ্ন সহস্রারে ,

মিথ্যা লাগে তাঁর কাছে সব -

সংস্কারের জগৎ টাকে ।

তাঁরই - ওগো মিথুন দেখার ,

যে জন পায় দুঃখ যে সার ;

অর্ধ নারী অর্ধ পুরুষ - দুইয়ে মিলে ,

একই যে সুর ।

একের তত্ত্বে পৌছালে ভাই -

বিভেদ রেখা থাকে না । 

কেই-বা ছোট ? 

কেই-বা বড় ? 

কার-ই জন্য জীয়ন-মরণ ,

সৃষ্টি - স্তিতি - প্রলয় - সখা-

তোমার জন্য - 

তোমার বরণ ।

জানতে গেলে আনন্দ সুর ,

কাঁদতে কাঁদতে - 

নাঁচতে হবে ,

হরির প্রেমে মজলে এ-মন ,

প্রিয়ার প্রেমে ধন্য হবে ।

ভক্তি সুধা পান করিলে ,

জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ পাবে ।

আনন্দরেই আনন্দ রাগ -

মনের ভেতর খেলাতে হবে ।

অঙ্কুরীত বীজ-ই সখা , 

বটবৃক্ষে তৃপ্ত হবে । " - স্বরচিত।

In the Beginning the Quantum Fluctuations of the Zero Point Field, the Phoenix, generated a huge Fluctuation represented by a “Cosmic Orgasm (Shiva and Shakti made Love)” and a real particle, a Photon (“In the Beginning was the Light“), came into existence. This Single Photon, One Wave of Light, bouncing against the expanding walls of the Universe, was enough to Create the Whole Universe.

Quantum Fluctuation is a Statistical Theory. Statistical Theories don’t explain the Universe. They are an approximation of a deeper structure we still don’t know. The ancient scientists used a metaphor out of Nature to explain this deeper structure. This metaphor was called the Tree of Life.

When we use Logic, the first step in Creation generates a Trinity. This Trinity consists of Gravitation (Expansion), the Strong Force (Compression) and the Void, the Empty Set. The concept of the Trinity with different names comes back in every Ancient Religion. }

ওঁ মনোবুদ্ধ্যহংকার-চিত্তানি নাহং ন চ শ্রোত্রজিহ্বে ন চ ঘ্রাণনেত্রে।

ন চ ব্যোম ভূমির্ন তেজো ন বায়ু-শ্চিদানন্দ-রূপঃ শিবোহং শিবোহম্।।১

ন চ প্রাণসংজ্ঞো ন বৈ পঞ্চবায়ুর্ন বা সপ্তধাতুর্ন বা পঞ্চকোষাঃ।

ন বাকপাণিপাদং ন চোপস্থপাযু চিদানন্দরূপঃ শিবোহং শিবোহং।। ২

ন মে দ্বেষরাগৌ ন মে লোভমোহৌ মদো নৈব মে নৈব মাৎসর্য্যভাবঃ।

ন ধর্মো ন চা্র্থো ন কামো ন মোক্ষ-শ্চিদানন্দরূপঃ শিবোহং শিবোহম্ ।।৩

ন পুণ্যং ন পাপং ন সৌখ্যং ন দুঃখং ন মন্ত্রো ন তী্র্থং ন বেদা ন যজ্ঞাঃ।

অহং ভোজনং নৈব ভোজ্যং ন ভোক্তা চিদানন্দরূপঃ শিবোহং শিবোহম্ ।।৪

ন মৃত্যুর্ন শঙ্কা ন মে জাতিভেদঃ পিতা নৈব মে নৈব মাতা ন জন্ম।

ন বন্ধু্র্ন মিত্রং গুরুর্নৈব শিষ্য-শ্চিদানন্দরূপঃ শিবোহং শিবোহম্।৫

অহং নির্বিকল্পো নিরাকাররূপো বিভুত্বাচ্চ সর্বত্র সর্বেন্দ্রিয়াণাম্।

ন চাসঙ্গতং নৈব মুক্তির্ন মেয়-শ্চিদানন্দরূপঃ শিবোহং শিবোহম্ ।।৬

আরশিনগর = জ্ঞানগঞ = হৃদপদ্ম বা কমল =

অনাহত চক্র = শ্মশান :-

" আশ্রয় কোথায় পাবি এ সংসারমাঝে!

এ জগৎ অন্ধকারে প্রকাণ্ড গহ্বর—

আশ্রয় আশ্রয় বলে শত লক্ষ প্রাণী

বিকট গ্রাসের মাঝে ধেয়ে পড়ে গিয়া,

বিশাল জঠরকুণ্ডে কোথা পায় লোপ।

মিথ্যা রাক্ষসীরা মিলে বাঁধিয়াছে হাট,

মধুর দুর্ভিক্ষরাশি রেখেছে সাজায়ে,

তাই চারি দিক হতে আসিছে অতিথি।

যত খায় ক্ষুধা জ্বলে, বাড়ে অভিলাষ,

অবশেষে সাধ যায় রাক্ষসের মতো

জগৎ মুঠায় করে মুখেতে পুরিতে।

হেথা হতে চলে আয় — চলে আয় তোরা।"

" হায় হায়, ইহাদের বুঝাব কেমনে!

সুখ দুঃখ সে তো, বাছা জগতের পীড়া!

জগৎ জীবন্ত মৃত্যু — অনন্ত যন্ত্রণা!

মরণ মরিতে চায় মরিছে না তবু—

চিরদিন মৃত্যুরূপে রয়েছে বাঁচিয়া।

জগৎ মৃত্যুর নদী চিরকাল ধরে

পড়িছে সমুদ্রমাঝে, ফুরায় না তবু —

প্রতি ঢেউ, প্রতি তৃণ, প্রতি জলকণা

কিছুই থাকে না, তবু সে থাকে সমান!

বিশ্ব মহা মৃতদেহ, তারি কীট তোরা

মরণেরে খেয়ে খেয়ে রয়েছিস বেঁচে—

দু-দণ্ড ফুরায়ে যাবে কিলিবিলি করি,

আবার মৃতের মাঝে রহিবি মরিয়া। "

" ছিছি, জনমিল প্রাণে এ কী এ বিকার!

সহসা কেন রে এত করিল চঞ্চল!

কোথা লুকাইয়া ছিল হৃদয়ের মাঝে

ক্ষুদ্র রোষ, অগ্নিজিহ্ব নরকের কীট!

কোন্‌ অন্ধকার হতে উঠিল ফুঁসিয়া!

এতদিন অনাহারে এখনো মরে নি!

হৃদয়ে লুকানো আছে এ কী বিভীষিকা!

কোথা যে কে আছে গুপ্ত কিছু তো জানি নে।

হৃদয়শ্মশান মাঝে মৃতপ্রাণী যত

প্রাণ পেয়ে নাচিতেছে কঙ্কালের নাচ,

কেমনে নিশ্চিন্ত হয়ে রহি আমি আর " -

প্রকৃতির প্রতিশোধ, 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

" শ্মশানে জাগিছে শ্যামা

অন্তিমে সন্তানে নিতে কোলে

জননী শান্তিময়ী বসিয়া আছে ঐ

চিতার আগুণ ঢেকে স্নেহ–আঁচলে।

সন্তানে দিতে কোল ছাড়ি’ সুখ কৈলাস

বরাভয় রূপে মা শ্মশানে করেন বাস,

কি ভয় শ্মশানে শান্তিতে যেখানে

ঘুমাবি জননীর চরণ–তলে।।

জ্বলিয়া মরিলি কে সংসার জ্বালায়

তাহারে ডাকিছে মা ‘কোলে আয়, কোলে আয়’

জীবনে শ্রান্ত ওরে ঘুম পাড়াইতে তোরে

কোলে তুলে নেয় মা মরণেরি ছলে।। " -

কাজী নজরুল ইসলাম।

" জাগো বীর, ঘুচায়ে স্বপন, শিয়রে শমন, ভয় কি তোমার সাজে?

দুঃখভার, এ ভব-ঈশ্বর, মন্দির তাহার প্রেতভূমি চিতামাঝে॥

পূজা তাঁর সংগ্রাম অপার, সদা পরাজয় তাহা না ডরাক তোমা।

চূর্ণ হোক স্বার্থ সাধ মান, হৃদয় শ্মশান, নাচুক তাহাতে শ্যামা॥ " -

স্বামী বিবেকানন্দ।


সাধনগত যত উপলব্ধি, যত দর্শন, যত ভূত-ভবিষ্যৎ জ্ঞান সমস্ত কিছু এখানেই আয়নার মত প্রতিফলিত হয়ে থাকে।যে কারণে দেখা যায় সিদ্ধ সাধকগণ যখন কোন ভবিষ্যতবাণী করেন তখন সবই চোখ বুঝে এখানে দেখে নিয়ে তবে যা বলার তা বলেন। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ বাইরের চোখে দেখে আর যোগী বা ব্রহ্মজ্ঞানী মহান ব্যক্তিগণ বাইরের স্থূল চক্ষু বন্ধ করে অন্তর্দৃষ্টিতে দেখেন এই দর্পণের সৌজন্যে। মরমিয়া সাধকগণ কেউ কেউ এই পবিত্র স্থানটিকে 'আরশিনগর', কেউ বা 'জ্ঞানগঞ্জ' বলে বর্ণনা করেছেন । এই দর্পনের 'দর্শন' মহিমার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো যে এখানে যা কিছু 'দৃশ্যমান' হয় তার কোন নিকট-দূর সম্পর্ক নেই এবং দশদিকেরই যুগপৎ'দর্শন' হয়ে থাকে অবাধে। একটা সরিষা দানা তার সঠিক পরিমাণেই দেখা যাবে কাছে বা দূরে যেখানেই অবস্থিত হোক না কেন - এ দর্পনের এমনই মহিমা।


" কিবা মন্ত্র দিলা গোঁসাঞি কিবা তার বল।

জপিতে জপিতে মন্ত্র করিল পাগল।।

হাসায় নাচায় মোরে করায় ক্রন্দন।

এত শুনি গুরু হাসি বলিলা বচন।।

কৃষ্ণনাম মহামন্ত্রের এইত স্বভাব।

যেই জপে তার কৃষ্ণে উপজয়ে ভাব।। "

- চৈতন্যচরিতামৃত আদিলীলা ৭-৮৩

জয় গুরু গৌরাঙ্গ জয়তুঃ

নাম ভজ, নাম চিন্ত, নাম কর সার ।

অনন্ত কৃষ্ণের নাম মহিমা অপার ।।

যেই নাম, সেই কৃষ্ণ, ভজ নিষ্ঠা করি ।

নামের সহিত আছেন আপনি শ্রীহরি।।

নামরূপে কৃষ্ণ অবতার ।

নাম হইতে হয় সর্ব্ব জীবের নিস্তার ।।


References :-

the Himalayan Glaciers". Fourth assessment report on climate change. IPPC. 2007. Retrieved 22 January 2014.

Shi, Yafeng; Xie, Zizhu; Zheng, Benxing; Li, Qichun (1978). "Distribution, Feature and Variations of Glaciers in China" (PDF). World Glacier Inventory. Archived from the original (PDF) on 24 April 2013.

Henderson-Sellers, Ann; McGuffie, Kendal (2012). The Future of the World's Climate: A Modelling Perspective. pp. 199–201. ISBN 978-0-12-386917-3.

"Vanishing Himalayan Glaciers Threaten a Billion". Reuters. 4 June 2007. Retrieved 13 March 2018.

"Glaciers melting at alarming speed". People's Daily Online. 24 July 2007. Retrieved 17 April 2009.

O'Neill, A. R. (2019). "Evaluating high-altitude Ramsar wetlands in the Sikkim Eastern Himalayas". Global Ecology and Conservation. 20 (e00715): 19. doi:10.1016/j.gecco.2019.e00715










Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract