Apurba Kr Chakrabarty

Classics

4.5  

Apurba Kr Chakrabarty

Classics

জন্মভিটের অচেনা রূপ

জন্মভিটের অচেনা রূপ

14 mins
614


আষাঢ়ের শেষদিক, সারাটা দিন বৃষ্টির যেন বিরাম নেই। কখনও মুষলধারা, কখনও টিপ টিপ বৃষ্টিতে মানুষ নাজেহাল।চাষিদের মুখে হাসি,গোটা মরসুমে বৃষ্টির আকাল, চাষের কাজ শুরু হয়নি,ক্ষেত জলে ভরেনি। অপু চাষী নয়, তবে বাপের এক সময় চাষ ছিল, গ্রামে ছোটবেলায় তার কৃষিকাজ ও চাষে অল্প বিস্তর অভিজ্ঞতা ছিল।আজ সে সব অতীত। 


অপু সরকারী কর্মী, আধিকারিক পদে কর্মরত। গ্রাম ছেড়ে সদর শহর বর্ধমানে বাড়ি করে অপু স্থায়ী বসবাস করছে।বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, অপুর মা ,আর স্বামী পরিত্যক্ত মেঝ দিদি ভারতী গ্রামের বাড়িতে থাকে। দিদির এক মেয়ের, বিয়ে পর সরকারী চাকুরে স্বামীর সাথে চন্দননগরে সে থাকে।স্বামীর ভালো বেতন তাই সচ্ছলতার অভাব নেই তার ।

অপুর বাকী তিন দাদা দিদিরা সাংসারিক ব্যস্ততার মাঝে, এখন আর খুব একটা গ্রামের বাড়ির সাথে যোগাযোগ রাখে না। আর থাকেও তারা বেশ দুরে।

বর্ষার দিন আবার রবিবার, অপু দিনটা উপভোগ করছিল। ছোট ছেলেটা বড় ফাঁকিবাজ সামনের বছর সে মাধ্যমিক দেবে, তাকে পড়াতে বসেছিল। গণিতের এককালের ভালো ছাত্র ছিল অপু, তাই বিজ্ঞান অঙ্কটা সে ছেলেদের একটু গাইড করে, অন্তত মাধ্যমিক অবধি কোন সমস্যাই হয়না তার।

হঠাৎই ফোন বেজে ওঠে, গ্রামের বাড়ি থেকে দিদির ফোন, ভীষন উদ্বিগ্ন আর অসহায় ভাবে আবেদন "ভাই তুই এখনই বাড়িতে চলে আয়। মায়ের শরীর মোটেও ভালো নয়।"

প্রতি সপ্তাহেই রবিবার অপু বাড়ি যায়। বৃদ্ধ বাবা মায়ের জন্য ফলমুল এটাওটা কিনে নিয়ে যায়।গত রবিবারও গেছিল।মা বয়স্কা ব্লাড সুগার থাইরয়েড, হাই প্রেসার হাজার রোগ, কিন্ত খুব বাড়াবাড়ি ছিল না। আজ সারাটা দিন বৃষ্টির কারণে তার গ্রামের বাড়ি চক্রধরপুর যাওয়া হয়নি।

ছেলের মন, অপু বলে "মায়ের খারাপ কিছু হল না তো! হঠাৎই এত রাতে দিদি তো ফোন করে না!"

অপুর বৌ বলে, "এত রাতে কি ভাবে যাবে, কাল সকালে যেও!"

অপুর মন সায় দেয় না, "বলে লাস্ট বাস রাত নটায় ছাড়ে,এখন আটটা, রিকশায় গেলে পনের মিনিটের পথ বাসস্ট্যান্ড। "

অর্পিতা জানে অপু এক রোখা যা বলে করবেই,এত রাত, বৃষ্টির মধ্যেইও সে গ্রামের বাড়ি যাবেই। ভাত হয়েছিল, তাড়াহুড়ো করে সে আলু ভাজা ডিমের ওমলেট আর পোস্ত বরা করে ,ডাইনিং টেবিলে খাবার রেডি করল। অপু প্যান্ট শার্ট বদল করে ,কোন মত রাতের খাবার সে গোগ্রাসে খেল। ছাতা মাথায় আর ব্যাগে কিছু রাতের পোষাক আর সঙ্গে একটা করে অতিরিক্ত প্যান্ট শার্ট নিয়ে, দূর্গা দূর্গা করে রওনা দিল।

তাড়াহুড়োর মাঝে মানিব্যাগটা নিলেও, টর্চ নিতে ভুলে গেল।বৃষ্টি টিপ টিপ হলেও কোন ঝড় তেমন ছিল না।

বাসস্ট্যান্ড পৌঁছালে দেখল লাস্ট গাড়ীতে লোক খুব কম।তবে,সকালের ফাস্ট টিপের গাড়ি, ঠিক সময়েই বাস ছাড়ল। চক্রধরপুর বাসস্ট্যান্ড এসে যখন পৌঁছাল রাত দশটা। বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের বাড়ি পাঁচ শত মিটারের কম নয়। এ গ্রামে এঁটেল মাটির রাস্তা কাদায় ভরা, রাস্তায় কোন আলোর ব্যবস্থাও নেই। অগত্যা তপনদার বাসস্ট্যান্ডের মনোহারীর দোকান থেকে একটা টর্চ কিনে নিল।ভাগ্য ভালো বৃষ্টির রাতেও অন্য দিনের মতই লাস্ট গাড়ি আসা অবধি তপনদা দোকান খুলে রেখেছে।

টর্চ থাকায়,তবু অপু অনেকটা রেহাই পেলো।এমন এঁটেল মাটির আঠালো কাদায় দৌড়ঝাঁপ আর ছোটাছুটি করে তার ছোট বেলাটা কেটেছিল।আজ আর সেই অভ্যাস নেই,শহুরে বাবু।অনেক সাবধানে পা টিপে টিপে,প্রায় তখন সাড়ে দশটা। অপু তার আপন জন্ম ভিটে এল।

দিদি দীর্ঘ প্রতিক্ষায় ছিল, তবে ভায়ের দায়িত্ববোধ সে জানে। তবু পথে কোন আপদ বিপদও তো হতে পারে,তাই ভাইকে দেখে চিন্তা মুক্ত মনে বলল, "তোর জন্য ভাত চাপিয়েছি, তরকারি যা আছে দুজনের হয়ে যাবে।"

অপু উদ্বিগ্ন বলে" মা কেমন আছে!"

দিদি ভারতী বলে," মায়ের অবস্থা ভালো নয়, আর আমি তো মরেই যাব, মায়ের আগেই হয়ত।"

অপু বুঝল দিদি তাকে বিভ্রান্ত করে ভয়ে ছুটিয়ে আনল, বলে "আমি বাড়ি থেকে খেয়ে এসেছি, তুই খেয়ে নে। রাত তো অনেক হল।"

সদর দরজা লাগিয়ে, ভারতী একটু আতংকিত মুখে বলল," রাতে যেন, বারান্দার গ্রিল খুলে,বের হয়ে বাথরুম যাবি না।"

"কেন চোর ডাকাতের ভয় বুঝি!"

ভারতী ইশারায় অন্য কিছু বোঝাতে চাইল।অপুর মনে হল,ভুত বা অলৌকিক কিছুর ইংগিত করতে চাইছে। অপু হাত পা ধুয়ে পরিস্কার হয়ে বারেন্দায় ওঠার পর পরেই, মেঝদি ভারতী অতি ব্যস্ততার সাথে বারান্দার গ্রিলের গেটে চাবি লাগাল।

অপু প্রায় প্রতি সপ্তাহেই গ্রামের বাড়িতে আসে, কিন্ত সকালে দশটায় আশপাশে আসে। বিকাল চারটের আগেই  বর্ধমানের তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

চক্রধরপুর গ্রামে এমনিতেই জনবসতি খুব কম, আর তাদের বাড়ীটা আবার, গ্রামের একবারে পুবদিকে। তারপর শিব মন্দির আর মন্দিরের পুবে সংলগ্ন তাদের সব্জির চাষের ক্ষেত, শিব পুকুর, আর তারপর বাগান। আম জাম তেঁতুল তাল,বাঁশ আরও নানা গাছে বন জঙ্গল।দিনেতেই এ বাড়ি নির্জনতায় কেমন খাঁ খাঁ করে,আর রাতে তো কথাই নেই।

অপুদের বাড়ি মস্ত এলাকা জুড়ে, একবারে পশ্চিম চেপে, চার কুঠারি একতলা পাকা ঘর।যার তিনটে দক্ষিণমুখী আর একটা পুবমুখী।ঘরের সম্মুখে এল প্যাটার্ন সাত ফুটের বারেন্দা। অপুর ঘরটি পূর্ব মুখী, তারও দক্ষিণ পাশে বারেন্দা সংলগ্ন রান্নার ঘর।পুব মুখী ঘরের উত্তর সংলগ্ন সিঁড়ি, আর সিঁড়ির উত্তর সংলগ্ন দক্ষিণমুখী পশ্চিমের প্রান্ত ঘরটি অপুর বাবা মায়ের।পৃথক দুটি ছোট তক্তাপোষ পাশাপাশি রাখা, বাবা মা শয়ন করেন ।

দক্ষিণমুখী মাঝের ঘর ভারতীর শয়ন কক্ষ,পুব প্রান্তের দক্ষিণমুখী ঘরটি ঠাকুরের।দক্ষিণ ও পূর্ব মুখী ঘর গুলোর সম্মুখে প্রশস্ত বারান্দার প্রান্ত বরাবর পোক্ত লোহার গ্রিল। দক্ষিণ ও পুবে গ্রিলের দুটি দরজা। রাতে চাবি লাগালে এখন আর সকাল অবধি খোলা হচ্ছিল না। কিন্ত বাথরুম টয়লেট যেতে গেলে গ্রিল খুলতেই হয়। তাই আগে রাতেও গ্রিল খোলার চল ছিল।

 ভারতী অপুকে বলল, বাথরুমের রাতের কাজ এখন রারেন্দায় করে,জল ঢেলে দেওয়া হয়। তাই বারান্দায় বড় বালতিতে জল ভর্তি করে রাখা থাকে। সকালে ফিনাইলের দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। অপুর মায়ের এ কদিন শষ্যাশায়ী দশা। ভারতীর টয়লেটের বেগ পেলেও বেশী রাতে যায় না। আর বাবাকেও রাত দশটার পর গ্রীলের বাইরে ভারতী যেতে দেয় না। 

রাতে পায়খানার বেগ এলে চেপে থাকা ছিয়াশি বছর বুড়োর কর্ম নয়। তাই অস্থায়ী ব্যবস্থার জন্য, দক্ষিণমুখী প্রশস্ত বারান্দার দক্ষিন পুব চেপে রাজ মিস্ত্রির ডেকে অস্থায়ী রাতে টয়লেটের কাজ করার জন্য অনেকটা গর্ত করা হয়েছিল । 

দিন পাঁচ হল এই উদ্যোগ, অপুও তা জানত না, এখন কাজ অদ্ধ সমাপ্ত। কিন্ত এরপরই, বাড়িতে একটা যেন অস্থিরতা,মায়ের বাড়াবাড়ি,আর বাবার কেমন রাতের বেলা অস্বাভাবিক আচরণ, ভারতী অনুভব করছে।

অপুকে ফোন করার কারন, সে আর একটা রাতও দুই বৃদ্ধ বাবা মাকে নিয়ে এ বাড়ীতে থাকতে চায় না।যেটা সে ভাইকে গোপন করেছিল। মা আজই সন্ধ্যারাতে কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন।শয্যাশায়ী হলেও তিনি বেশ সচেতন, কথাবার্তা, জ্ঞানবুদ্ধি সব স্বাভাবিক। ভর সন্ধ্যায় মা ক্ষীণ স্বরে কিছু দেখে বা শুনে ভয়ে চিৎকার করছিলেন। বাবা, উদভ্রান্তের মত মাকে কেমন আগলে বসে, একটানা চন্ডীপাঠ ভঙ্গিমায় মন্ত্র আওরাতে ছিলেন। তা দেখে,ভারতী রীতিমত ভয় পেয়ে অপুকে ফোন করে।এখন এমন কথাই ভারতী অপুকে বলল।

কিছু একটা অস্বাভাবিক এ কদিন যে ঘটছে,ভারতী বেশ বুঝতে পারছিল। কিন্ত কারন কী ! বা কেন! বোধগম্য নয়। তার বয়স পঞ্চান্নর আশপাশ ,শরীর স্বাস্থ্য ভালো।এ কদিনে যদিও সে মানসিকভাবে বিভ্রান্তির শিকার । আর মেয়ে জামাই ফোনে তাতে ইন্ধন দিচ্ছিল লাগাতার। বাড়ির বিস্তীর্ণ প্রায় আট ন কাঠা প্রাঙ্গনে আম,জাম,কাঁঠাল,সবেদা,বাতাবি লেবু,পেয়ারা, নারকেল, সজনে,নানান গাছগাছালি পরিপূর্ণ, ছোটখাটো বাগান।পরিচর্ষার অভাবে এই বর্ষায় বন জঙ্গলে ভরে গেছে।

বাথরুম টয়লেট বাগানের দক্ষিণ প্রান্তে,বারান্দার থেকে পঞ্চাশ মিটারের কম নয় , দিনেই যেখানে যেতে ভয় করে। সাপের দেখা মাঝে মাঝেই মেলে। আর রাতে! ভারতী আকার ইংগিতে অপুকে বাড়ির বাগানে এ কদিন কিছু আলৌকিক উপস্থিতির কথা জানাচ্ছিল।ঠিক খুলে বলছে না। হয় রাতে সরাসরি সত্যি বলতে ভারতীরও ভয় হচ্ছিল বা অপুকে এত রাতে আর বিভ্রান্ত করতে চাইছিল না।রাত তখন প্রায় এগারোটা। তাড়াহুড়োর করে ভারতী মুখে নাকে ভাত গুঁজে, সে নিজের ঘরে ঢুকতে পারলেই বাঁচে।

অপু এঘরে অনেক দিন শয়ন করেনি,একটু অস্বস্তি লাগছে,আবার দিদির কথাবার্তার যা সব ধরন! অপু ভাবছিল রাতে এত কষ্টে না এলেই ভালো হত । সকালের আসার কথা বৌ বলেছিল। তবে অপুর মনে হয়েছিল মায়ের কিছু অঘটন হঠাৎই ঘটেছে বা ঘটতে পারে, তাই রাতেই তার ছুটে আসা।


অপুর ঘুম আসছিল না।বারান্দা দিকে ঘরের পুবের জানালা খোলা। বারান্দার ড্রিম আলো জ্বলছিল, আর উঠানের একটা জোড়াল আলো জ্বলছিল।কিন্ত সীমিত আলো বাগানের পরিসীমার তুলনায় নগন্য। বরং সমগ্র প্রাঙ্গন আলো আধাঁরে ভরা এক রহস্যময় ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি করছিল। শোবার আগে অপু একবার বাবা মায়ের ঘরে ঢুকেছিল। তাদের দেখেছিল,দুজনেই কেমন ঘুমে! না ঘোরে অচেতন বোঝা যাচ্ছিল না।অপু তাদের জাগিয়ে কষ্ট দেয় নি।ভেবেছিল বিশ্রাম নিক,সকালে কথা বলব।

রাত তখন বারোটা, তীব্র কপাটের কড়া নাড়ার শব্দে অপু চমকে ওঠে,তার ঘুম না হলেও,একটা আচ্ছন্ন ভাবে ছিল।পুবের জানালা দিকে দেখে বাবা, ভারতীর ঘরের কপাটে কড়া নেড়ে তোলার চেষ্টা করছেন! সঙ্গে ক্ষীণ স্বরে ডাকছেন, " ভারতী ও ভারতী ওঠ মা,আমি তোর বাবা, " কেমন করুন সেই সুর! অপু থাকতে পারেনা কপাট খুলে বেড়িয়ে বলে, "বাবা কি বলছ! দিদিকে ডাকছ কেন!"

এবার অপুর বাবা হরিনাথ কেমন যেন আশান্বিত, মুখচোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, ব্যাকুল স্বরে বলে , "অপু! তুমি এসেছ বাবা ! "

" হ্যাঁ বাবা,রাতে এসেছি, তখন তুমি মা ঘুমোচ্ছিল তাই আর জাগাই নি। "

"ভালো করেছ বাবা,"তারপর আফসোস করে বলে, "তোমরা বাবা বাড়িতে নেই, বাড়িটা যেন শ্মশান পুরী! তোমার মা আর বেশীদিন নেই, আমার আর মৃত্যু নেই বাবা!" বলতে বলতে কেঁদে ফেলে।

অপু জিজ্ঞেস করে " তুমি দিদিকে তুলছিলে কেন, আমাকে বলবে!"

"হ্যাঁ বাবা বড় ক্ষীদে পেয়েছে, আমাকে একটু মুড়ি আর চিনি বা গুড় দিতে পারো!"

"হ্যাঁ দিচ্ছি বাবা," বলে অপু রান্নার ঘর খুলে এক পাত্রে মুড়ি আর চিনি দিয়ে বলল,"জল নেবে বাবা! "

"জল ঘরে আছে ,তোমাকে ঈশ্বর যেন আজ দুত করে পাঠিয়েছেন, না হলে রাতে অভুক্ত থাকতে হতো, ভারতী এ কদিন রাতে কপাট খুলছে না।আমরা মরে গেলেও ও বাড়িতে থাকলেও উঠবে না,অথচ বাবা, ওর জন্যই তোমার মা তোমাদের নিজের নিজের মত করে বাইরে থাকতে বলেছিল। "

অপু বলে "সে সব পুরোন কথা থাক বাবা, তুমি মুড়ি খেয়ে একটু ঘুমোও।"

"হ্যাঁ বাবা তোমার ঘুম নষ্ট করলাম, তুমি ঘরের কপাট লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। "

রাতটা যেন কাটছে না,অপুর মনে হচ্ছিল, খানিক পর আবার একটু ঘুম ঘুম আসছে, সহসা মনে হল কিছু যেন রারেন্দায় ঘুরছে!,গা ছমছম করছে তার, পুবের জানালা দিয়ে আলো আধাঁরময় বিস্তীর্ণ বাগান,প্রাঙ্গন নজরে আনতে কেমন ভয় করছে।যেন কেউ আছে! তাকালেই সে দেখতে পাবে!

এই বাড়িতে অপুর জন্ম, বড় হওয়া, প্রতিটি বাড়ির অংশ, ধুলি কণা তার চেনা, আজ কুড়িটা বছর তার বাড়ির সাথে অবশ্য সম্পর্ক তেমন নেই। চাকরী ও অন্যান্য অনুসাঙ্গিক কারণে।কেমন আজ যেন সব অচেনা লাগছে তার নিজের বাড়িকে! বিশেষত এই রাত্রির রহস্যঘন পরিবেশে।

কী করবে অপু বুঝে উঠতে পারছিল না, হঠাৎই দরজা খোলার শব্দ, তার পর সব চুপচাপ, জানালা দিয়ে কেউ যেন উঁকি মারছে,অপু চমকে ওঠে! মনে হল বাবা, না আর কেউ! ভয়ার্ত্ত স্বরে বলে, " কে!"

বাবা কেমন উদভ্রান্ত আতংকিত স্বরে বলে "অপু এখন ঘুমোসনি বাবা ! "

"না বাবা' তুমি এখানে কী করছ!"

"বুড়িটা বড় জ্বালাতন করছে!"

বুড়ি বলতে মাকে বলছে! মাকে তো বলবে না, ভীষন ভালোবাসে স্নেহ করে! কপাট খুলে বারান্দায় এবার অপু বের হয়,অনেকটা বাবার সাহসে,বের হয়ে বলে, "বুড়ি কে বাবা!"

"ঐ যে বুড়ি আমার পিসি! দেখেছিস না বাতাবি লেবু গাছে ন্যাংটো বুড়ি উঠছে আর নামছে যেন বাচ্চা!"

অপু বিষ্ময়ে দেখছিল বাতাবি লেবু গাছটা,কেউ গাছে ওঠা নামার মত,বেশ জোরে নড়াচড়া করছে, ডাল নুইয়ে পড়ছে, টিপ টিপ অবিরাম বৃষ্টি হলেও ঝড় কেন,কোন হাওয়া নেই। এমনি এমনি তো এমন গাছটা নড়াচড়া বা ডাল নুইয়ে পড়়ছ না! অপু ভাবে বাবা কী সত্যিই মেনকা দিদুকে দেখছে! বাবার নিঃসন্তান বিধবা পিসি।  পিশেমশাই মারা যাবার  পর, অপুদের বাড়িতে থাকত।অপুর মা নমিতার বাপের বাড়ির সম্পর্কে,বাবার পিশেমশাই আত্মীয়,তাই অন্য ভাইপো নয় হরিনাথ কে সামান্য যা সম্পত্তি গহনা ছিল সব দিয়েছিল।

শেষ বয়সে অন্যের কান ভাঙ্গানিতে বাবা মায়ের সাথে তার অনেক ঝগড়া বিবাদ অশান্তি হয়।বুড়ি এই বাড়িতে পাঁচ বছর বসবাস করে মরেছে।শেষ বয়সে ক্ষীণ শরীরে লজ্জা তার ছিলই না, বাতাবি লেবু তলার পাশে অস্থায়ী তার ব্যবহারের জন্য বাগানের মাটি খুঁড়ে গর্ত কেটে পায়খানার ব্যবস্থা ছিল। বাতাবি গাছে পড়নের কাপড় খুলে রেখে ন্যাংটৌ হয়ে প্রাকৃতিক কর্ম সাড়ত।তখন বাড়িতে বাথরুম টয়লেট কিছু ছিল না।বাড়ির অন্যদের পুকুর পাড়,মাঠ ভরসা ছিল। সে তো ত্রিশ বছর আগে! মৃত্যুর পর বাবার বুড়ী পিসির উপস্থিতি তো কোন দিন তারা টের পায়নি !


বাবা অপুকে বললেন, "এই বাড়িতে বৈষ্ণবদের বাসছিল। বাড়ি তৈরির জন্য যখন ভিত কাটা হয়, রাজ মিস্ত্রির এ বাড়ীর ভিতের জন্য উত্তর আর পুবের দেওয়ালে ভিত কাটার কোন দরকার হবেনা বলেছিল। শক্ত ভিতের মত পুরোন ইট চুন সুরকীর দেওয়াল মাটির নিচে অবশিষ্ট ছিল "

অপু জানে,তখন সে ক্লাস এইটে পড়ে। মাটির প্রদীপ, ভগ্ন মাটির পাত্র,ভগ্ন তুলসীমঞ্চ মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায়। বৈষ্ণবরা তো বাড়িতেই কবর দেয়!হরিনাথের সেটাই সন্দেহ, দক্ষিণ মুখী ঘরের বারান্দায় যেদিন পায়খানার জন্য গর্ত করা শুরু হয়, সেদিন থেকেই এ বাড়ীতে রাতে কেমন সব অলৌকিক ঘটনা ঘটছে।হয়ত ঐ গর্তস্থানটির ঠিক নিচে বৈষ্ণবের কোন কবরের ক্ষুব্ধ আত্মা সক্রিয় হয়ে মৃত বাবার পিসির আত্মাকে সে শক্তি দিচ্ছে ! সবটাই ছিল হরিনাথের অনুমান।

এবাড়ীর বাস্তু স্থানটি, হরিনাথের বাবা বড় পন্ডিত তান্ত্রিক ছিলেন, বলেছিলেন দুশো বছরের আগে এখানে বৈষ্ণব বাড়ি ছিল।তারপর দীর্ঘ সময় ধরে কোন বসতি নেই।স্থানটি অশুভ প্রভাব মুক্ত করতে একটা সুপ্রাচীন রাম সীতা সোনার কয়েন দিয়ে বলেছিলেন, এটা বাড়িতে রাখবি, অশুভ প্রভাব মুক্ত হবে। হরিনাথ বলেন "পিসি মুক্তি পায়নি,স্বপ্নে মাঝে মধ্যেই দেখি,আমাদের বংশে আবার গয়া তে পিন্ড দিতে নেই,বাবার মানা করেছেন। যে পিন্ড দেবে, তার বছর ঘুরতে না ঘুরতে মৃত্যু নিশ্চিত। "

হরিনাথ অপুকে বলে,"বাবা তুমি পুবের জানালাটা বন্ধ করে কপাটে খিল দিয়ে শুয়ে পরো, এ বুড়ীর মতিগতি ভালো নয়।" তারপর সহসা যেন উদভ্রান্ত আতংকিত হয়ে হরিনাথ হন হন করে হেঁটে তার ঘরে চলে গেলেন।

অপু আচমকাই বাবার এই আচরনে ভয় পেয়ে ঘরে ঢুকে জানালার কপাট বন্ধ করে শুয়েছিল। কিন্ত তার কিছুতেই ঘুম আসেনা।মনে হচ্ছিল কেউ সমানে বারান্দায় চলাফেরা করছে! হঠাৎ কপাট খোলার শব্দ! জানালার ফাঁক দিয়ে তার নজরে এল,মেঝদি! বাথরুমের কাজটা বুঝি বারান্দায় করছে!

সাহস করে জানালা একটু খুলে ফাঁক দিয়ে ডাকে "মেঝদি!"

উত্তর এল, "অপু তুই জেগে আছিস!"

অপু দরজা খুলে বলে,"কী ব্যাপার বল তো,বাবা তখন কত তোকে ডাকছিল, কপাটে ধাক্কাধাক্কির করল,তুই শুনতে পাসনি!"

ভারতী থমথমে ভয়ার্ত্ত মুখে বলে,"রাতে বাবা কেমন হয়ে যায়,খাই খাই কেমন স্বভাব এ কদিন দেখছি! চোখমুখে কেমন রহস্য ,আমাকে সহ্য করতে পারে না।কেউ মনে হয় ভর করে,কোন দুষ্ট আত্মা!"

"কি বলছিস তুই! পাগল হয়েছিস!"

"হয়ত তাই ভাববি, বাবা কেমন রুষ্ট হয়ে বলে, বাড়ি ছেড়ে পালা,তোর জন্যই যত সব অশান্তি । মনে হয় বাবা নয় কেউ বাবাকে দিয়ে বলাচ্ছে, দিনে এমন তো বলে না!"

অপু যখন ভারতীর সঙ্গে কথাবার্তা বলছে দক্ষিণ বারান্দায়।একটা কিছু আবছা মনে হল অপুর ঘরে ঢুকল! তৎক্ষণাৎ অপু তার ঘরে দিকে ছুটে এল। দরজায় কাছে আসতেই অপু চমকে ওঠে, একটা ঘন কালো বিড়াল, চোখ গুলো লাল তার দিকেই হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে। অপু বাইরে থেকে ঘরের কপাট ভয়ে লাগিয়ে দিল, যদি আক্রমণ করে! আর মুহুর্তে লোডশেডিং। অপু এবার রীতিমত ভয়ে ছুটে গেল তার মেঝদি কাছে।

ভারতী আতংকিত মুখে বলে "কী হল অপু! ভয়ে হাঁপাছিস যে!"

অপু বলে "আমার ঘরে কালো বিড়াল, মস্ত বড়, লাল চোখ। অন্য কিছু নয়ত!"

ভারতী বলল "ঐ ঘরে আজ আর শুবি না,ঘরটা পড়ে আছে বহুদিন,রাতে কেউ শোয় না।"

অপুর নজরে এল পাশে শিবমন্দিরের পুরোহিতের বাড়ির উঠানে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে।

ভারতী বলে,"প্রতিদিন এমন হয় ,সময়ের কোন ঠিক নেই, সব বাড়িতে আলো জ্বলছে, আমাদের বাড়িতে নেই, একটু পর আবার আলো জ্বলে ওঠে। ফিউজ পুড়ে গেলে তা সম্ভব নয়, আর একটাই তো এ পাড়াতে ফেজ লাইন। "

অপু এবার রীতিমত মত ভয়ে বিভ্রান্ত, এই ঘরে সে তো রাতের অনেকটা সময়ই কাটাল! কেমন সারা শরীর ভয়ে কাঁপুনী দিচ্ছে।

আবার আপনা আপনি বাড়ির আলো জ্বলে উঠল, ভারতীর কথাই ঠিক। এবার অপু পুব দোয়ারি ঘর যে ঘরে সে শুয়েছিল,জানালার দিয়ে দেখার চেষ্টা করল,বিড়ালের গতিবিধি, কিছুই নজরে এল না।

ভারতী আতংকিত চিৎকার করে বলে " কী করছিস অপু! পালিয়ে আয়। ঐ ঘরে তোকে শুতে দেওয়া ঠিক হয়নি,আজ ঠাকুরঘরে শুলেই ভালো করতিস।"

রাত তখন সাড়ে তিনটে, বাকী রাত, বাবা আর ওঠেনি। আর অপু ভারতী দিদির ঘরেই রাতজেগে কাটাল।

সকালে অপুর একটু ঘুম এসেছিল।মেঝদির ডাকে উঠল, ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখে,দিদির মেয়ে জামাই গাড়ি নিয়ে হাজির। ভাগনী অপুকে বলে, "ছোট মামা, তোমারদের বাবা মায়ের দায়িত্ব তোমরা নাও, আমার মায়ের দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি। এ বাড়ীতে অশুভ শক্তি নজর পড়েছে। দাদু দিদাকে এ বাড়ী থেকে নিয়ে যাও, না হলে ওরা মরে যাবে।"

অপু এখন বুঝল, এসব ভারতী আর তার মেয়ে জামাইয়ের আগাম পরিকল্পনা ফল, গত রাতে তাকে ফোন করা একটা চাল, তাকে রাতে এনে, বাড়ির অলৌকিক পরিস্থিতি দেখাল।বাবা মায়ের সুসময়ে সুবিধা স্বার্থ নিয়ে মেয়েকে বড় করল, পড়ালো, বাপ ভায়ের টাকায় ভালো খরচ করে বিয়ে দিল।এখন সব কাজকর্ম মিটিয়ে মৃতপ্রায় শয্যাশায়ী মা, আর বিভ্রান্ত মানসিক ভেঙ্গে পড়া ছিয়াশি বছরে বাবাকে, তার উপর দায়িত্ব চাপিয়ে ,পালাচ্ছে!

এবাড়িতে আর থাকা সম্ভব নয়। অপু দাদাকে ফোন করে, দাদা দূর্গাপুরে এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ।বাড়ি ঘর করেছিল,এক মেয়ে এক ছেলে। ভারতী চলে গেছে শুনে,সে ঐ দিনেই গাড়ী ভাড়া নিয়ে চক্রধরপুর আসে। মাকে দুই ভাই বর্ধমান এক নার্সিংহোমের ভর্তি করে, ভাইকে মায়ের দ্বায়িত্ব দিয়ে, অপুর দাদা বাবাকে নিজের কাছে দুর্গাপুর নিয়ে যায়।


চারদিন অপুর মা নার্সিংহোমের এক কেবিনে ছিলেন।তারপর নার্সিংহোমের ডাক্তারবাবু কঠোর সত্য বলে দিলেন। মা আর বেশীদিন নেই , অপুকে শেষ কদিন তার গৃহে মাকে রেখে কাছ থেকে সেবা যত্নের পরামর্শ দিলেন।

মা তখনও মারা যায়নি, অপুর বর্ধমানের গৃহে ।গ্রামের তাদের প্রতিষ্ঠিত শিব মন্দিরের পুজোর দায়িত্ব ও মাসিক সম্মানিক বিষয়ে মন্দিরের পুরোহিতের সঙ্গে আলোচনার জন্য অপু সেদিন চক্রধরপুর গ্রামে আসবে শুনে,শয্যাশায়ী মা অপুকে বলে, "ঠাকুর ঘরে পিতলের বড় হাড়ির মধ্যে ঠাকুরের ধান আছে,ওর ভিতরে রাখা বহুদিনের পুরোন রাম সীতার সোনার কয়েন আছে, ওঠা নিয়ে আসবি।তোর ঠাকুরদা মস্ত পন্ডিত তান্ত্রিক সিদ্ধ ছিলেন, বাড়ী প্রবেশের সময়, এই কয়েন দিয়ে বলেছিলেন,এটা রাখলে, কোন দুষ্ট প্রভাব তোমার বাড়িতে থাকবে না। "

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের জল মুছে এরপর মা অপুকে বলে, " উনি কেন যে বলেছিলেন জানি না। বাড়িতে কদিন দুষ্ট আত্মার আনাগোনা বেড়েছে মনে হয়। রাম সীতার কয়েনটা আছে কিনা আমার সন্দেহ, যদি থাকে তোর ঘরে রাখবি, তোর মঙ্গল হবে।"

অপু সেদিন ঠাকুর ঘরের চাবি খুলে তন্ন তন্ন করে শুধু ঐ হাঁড়ি নয়, ঠাকুর ঘরটাও খুব খুঁজেছিল, ঐ মন্ত্রপুত রাম সীতা সোনার কয়েন কিন্ত সে পায়নি।

শিব মন্দিরের পুরোহিতের সাথে আলোচনার আগে অপু ঠাকুর ঘরে অন্তত এক ঘন্টারও বেশী ছিল।ঠাকুর ঘরে চাবি দিয়ে, অপুর কেমন মনে হচ্ছিল। মাত্র আট দশ দিন আগেই এ বাড়ীতে মানুষের বসবাস ছিল, আজ যেন এক হানা বাড়ি! চাবি খুলে পূর্ব মুখী ঘরে ঢুকেই আজ ভীষণ গা ছমছম করছে অপুর।তার মনে হচ্ছিল কেউ যেন এ ঘরেই আছে!  অপু ঘর থেকে ভয়ে বেড়িয়ে এসে ভাবে, বাথরুম সেড়ে সে শিব মন্দিরের পুরোহিতের বাড়ি যাবে।

বাড়ির বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গন,এ কদিনে বাথরুম যাবার চলার পথটাও জঙ্গলের লতাপাতায় বর্ষায় ভরে গেছিল। জঙ্গল ভরা বাগান পেরিয়ে অপু যখন বাথরুম যাচ্ছিল,লতায় তার পা দুটো কেমন যেন আপনা আপনিই জড়িয়ে যাচ্ছিল বার বার! একা নির্জন নিঃশব্দ পরিবেশ,একটা পাখির দেখা নেই! অপু ভয়ে উদভ্রান্ত মনে দ্রুত পিছু দিকে হেঁটে হেঁটে বাথরুম না গিয়ে বারান্দার সামনে সিমেন্ট বাধানো সল্প পরিসর চত্বরে এসে দাঁড়াল। বাগান আর ঐ বাতাবি লেবুর গাছটা কেমন যেন বিভীষিকা !

 দুপুর রৌদ্রোজ্জল দিন, কোন হাওয়া ছিল না। হঠাৎই তার নজর এল, আচমকাই একটা এক ফুট ব্যাসের মত দমকা ঘূর্নী হাওয়া বাগানের বাতাবি লেবু গাছ তলা থেকে সৃষ্ট হয়ে,কিছু শুখোনো পাতা ধুলো উড়িয়ে, তার পুব মুখী ঘরের দিয়ে অগ্রসর হল,পরক্ষণেই আবার তার দিকেই ঘূর্নী হাওয়াটা শুখোনো পাতা ধুলো উড়িয়ে ধেয়ে আসছে ! এই দৃশ্য দেখে অপু রীতিমত ভয়ে, এবার সে নিজের জন্মভূমি ভিটে ছেড়ে, সদর দরজার বাইরে, ছুটে রাস্তায় বেড়িয়ে এল।অপুর দৃঢ় বিশ্বাস এটা কোন অশরীরীর আলৌকিক কাজ। 

শিব মন্দিরের পুরোহিতের বক্তব্য ছিল, "তোমার দিদির গুরু কিছুদিন আগেই তোমারদের গৃহে একরাত ছিল। তোমার বাবা মা জানেন কী না, সন্দেহ।সে ঐ রাম সীতার সোনার কয়েন চুরি করেছে এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।এর পিছনে তোমার দিদির হাত আছে, কারণ রাম সীতার কয়েনের রহস্য, এর অস্তিত্ব আর তা কোথায় রাখা আছে, তোমার দিদি ভিন্ন তার পক্ষ জানা সম্ভব নয়।"


বাড়ি ফিরে মৃতপ্রায় শয্যাশায়ী মাকে সব কথা অপু বলেনি কেবল বলল, " ঠাকুর ঘরে রাম সীতার কয়েন নেই "

মা বলে, "তোর মেঝদি কে ফোন কর, আমার সন্দেহ ওটা ওর কাছেই আছে।" 

দিদিকে অপু ফোন করলে সে পুরোপুরি অস্বীকার করে জানায়, এ বিষয়ে সে কিছুই জানে না। অপু তার মৃত্যুপথযাত্রী মাকে আর কিছু বলে নাই। 

শয্যাশায়ী মাকে অপুর বাড়িতে মৃত্যুর আগে, দিদি একদিনের জন্য দেখতেও আসে নেই। যদিও অপুর বাড়িতে বারো দিন থাকার পর মায়ের মৃত্যু হয়। হয়ত তার মায়ের সামনা সামনি হতে ভয় ছিল !

ঐ বাড়িতে আজ কেউ আর থাকে না।রাতে ঢুকতে কেউ সাহসও পায় না। দিনের বেলা মাঝে মাঝেই শিব মন্দিরের পুরোহিত ঠাকুর আর তার বাড়ির লোকজন, সঙ্গে কাজের লোকজন এনে , এ বাড়ির ফল গাছের উপসত্ব ভোগ করে,আর রক্ষণাবেক্ষণ করে।

( আংশিক সত্য কাহিনী)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics