জন্ম ও মৃত্যু দুই'ই গর্বের
জন্ম ও মৃত্যু দুই'ই গর্বের
আমি আর পাশের বাড়ির বৌদি গেছিলাম একটু দাদার জন্য উপহার কিনতে। ওদের বাড়িতে ফিরে দেখি ধুমধুমার কান্ড। চারিদিকে সাজসাজ রব, আলো, সানাই, এত্ত কিছুর কারণ হল আজ অনেকদিন পর তাদের ছেলে বাড়িতে ফিরছে। নন্দী কাকিমা তো হরেকরকম রান্না করতেই ব্যস্ত। তার মধ্যে দাদা-বৌদির বিবাহ বার্ষিকীর দিনটাও আজকে। ওই জন্যই তো আমি আর নন্দী বৌদি উপহার কিনতে গিয়েছিলাম। নন্দী কাকু তো সকাল থেকে এটা ওটা আনতেই ব্যস্ত। পাড়ার আরও কয়েকজনকেও নিমন্ত্রণ করেছে শুনলাম। মাঝে মধ্যেই আমার ব্যাপারটা একটু অত্যাধিক মনে হচ্ছিল। কিছু বলিনি কারণ, প্রতিবেশী বলে কথা, আমাদেরকে ডেকেছে ভালোবেসে, যদি খারাপ ভাবে তখন কি হবে। বাড়িতে মানুষের ভিড় বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে পাড়ার দত্ত কাকু হন্তদন্ত হয়ে এসে বললো -টিভির খবরের চ্যানেলটা তাড়াতাড়ি অন করতে। সবাই শুনে খানিকটা ভয় পেয়েছিল, সাথে আমিও। কি জানি কি হলো আবার। নন্দী কাকু খবর চালাতেই শুনি "কাশ্মীরে জঙ্গী হামলায় আহত ত্রিশজন ভারতীয় সেনাসহ বহু সাধারণ মানুষ, নিহতের সংখ্যাও প্রচুর"...................
হ্যাঁ, নন্দী কাকুর ছেলে ' ইন্ডিয়ান আর্মি 'তে চাকরি করতো। নন্দী কাকিমা কোনদিনও চায়নি যে তার ছেলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিক। কিন্ত ঠাকুরদার স্বপ্ন, নন্দী কাকুর প্রত্যাশা, জাতির বিশ্বাস, আর অনেকটা নিজের উদ্যম, ইচ্ছে নিয়ে সে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিল।
আকাশ দা সবসময় চাইতো যে, সে একজন নিষ্ঠাবান ও দেশপ্রেমিক সেনা হয়ে উঠবে ভারতমাতাকে রক্ষার জন্য। আকাশ দা মনে করতো এইটাই একমাত্র কাজ যেখানে জন্ম ও মৃত্যু দুটোই গর্বের। বৌদিরও অভিযোগ ছিল অনেক, কারণ এই চাকরিতে ছুটি ছিল কম, তা নিয়ে কষ্ট তো হত দাদারও, কিন্তু কিছু করার ছিলনা। কারণ সে তো ভারতমাতাকে রক্ষা করার জন্য শপথ গ্রহণ করেছিল। খবরে যখন নিহতদের নামগুলো বলছিল তাদের মধ্যে একটি নাম বীর সেনা আকাশ নন্দীরও ছিল। শোনা গিয়েছিল জঙ্গি হামলার সময় একটি নবদম্পতিকে বাঁচাতে গিয়ে জঙ্গিদের ছোঁড়া গুলিতে সে শেষ হয়ে যায়।
না, বাড়িতে আর আকাশ দার আসা হয়নি সেদিনকে, নিজের বিবাহবার্ষিকীর দিন একটি নবদম্পতিকে বাঁচিয়ে বিবাহবার্ষিকী পালন করেছিল সে। পরের দিন কফিনবন্দী হয়ে সে নিজের বাড়িতে এসেছিল। এই বীর সন্তানের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারও ছিলনা সেদিন। এইবারই হয়তো বোঝা যায় কেন বীর সেনাদের ঘরে ফেরার কথায় সবাই আনন্দে মেতে ওঠে।
"তুমি সেদিন ঐ দস্যুগুলোর সাথে শেষপর্যন্ত লড়েছিলে। দেশের জন্য শহীদ হয়েছিলে। বেঁচে গিয়েছিল সেদিন অনেক প্রাণ-হয়তো তোমারই জন্য"
"তুমি তো বীর সৈনিক, তুমি তো ভয়কে জয় কর। ঝড়, বৃষ্টি, তুষার মাথায় নিয়েও তুমি লড়ে চলেছে, দেশের ভালো চেয়ে তুমি তো আমাদেরও ভালো রেখেছ। এখনও শান্তিতে ঘুমাতে পারি -হয়তো তোমারই জন্য।"
হে বীর, তোমাকে সেলাম, জয় হিন্দ 🇮🇳🇮🇳