Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Piyali Chatterjee

Tragedy Classics

5.0  

Piyali Chatterjee

Tragedy Classics

জীবনের সাঁঝবাতি

জীবনের সাঁঝবাতি

4 mins
467


"এই নে এই টাকাটা গিয়ে জমা দিয়ে আয়। আজ তো লাস্ট ডেট টাকা জমা দেওয়ার।" - মুক্তা মেয়ে স্বাতীর হাথে বারো হাজার টাকা দিয়ে বললো।


"এতগুলো টাকা কোথায় পেলে মা? আমি তো তোমাকে বলেই দিয়েছিলাম যে আমার জন্য তোমায় টাকা আনতে হবে না। তুমি একটি সাধারণ অফিসে মোছামুছির কাজ করে এত টাকা কি করে আনলে?"

-স্বাতী বিরোক্তিভাব নিয়ে বললো মুক্তা কে।


টাকাটা জোর করে মেয়ের হাতে গুঁজে দিয়ে বললো- "আমি ধার করে নিয়ে এসেছি বলেছি আস্তে আস্তে শোধ করে দেবো। যা আগে পরীক্ষার টাকাটা জমা করিয়ে আয়।"


স্বাতী কথা না বাড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। আজকাল আর স্বাতীর বাড়িতে থাকতে ভালোই লাগে না। এইতো পরশুদিন ও কিছু পাওনাদার তাকে কলেজে যাওয়ার পথে আটকিয়ে কত কথা শোনালো কিন্তু কি করবে সে এই পৃথিবীতে তার মা ছাড়া আর কেউ নেই। হ্যাঁ আর একজন আছে যে স্বাতী কে অনেক ভালোবাসে স্বাতীর কলেজেই পরে সে নাম রাহুল। স্বাতী ভয় পায় যদি রাহুল কখনো তার আর্থিক অবস্থার সম্বন্ধে কিছু জানতে পারে তাহলে কি হবে।


স্বাতীর মনে পড়ে স্বাতীর ছোটবেলায় তাকে একা রেখে তার মা কাজে চলে যেত। স্বাতী তখন কত ছোট। একা একা মায়ের ফেরার অপেক্ষায় প্রায় ঘুমিয়ে পড়তো সে। বলা যেতে পারে তার শৈশবটা আর পাঁচটা বাচ্চার মতো কাটেনি। স্বাতী তো তার বাবা কেও চেনে না। সে এটাও জানে না তার বাবার সাথে আদেও তার মায়ের বিয়ে হয়েছিল কিনা। না! এভাবে আর থাকা যাবে না। স্বাতী ঠিক করলো এই পরীক্ষাটা দেওয়ার পর একটা চাকরি পেয়েই সে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। এই লজ্জায় মুখ লুকিয়ে আর বাঁচবে না সে।


বাস থেকে নেমে হাটতে হাটতে কলেজের দিকে যাচ্ছে স্বাতী এমন সময় পিছন থেকে একজন ডাকলো :-


"মা একটু সাহায্য করবে মা। মেয়েটা আমার ভারী অসুস্থ অনেক জ্বর। ওষুধ কিনতে হবে মা দয়া করে একটু সাহায্য করো।"


স্বাতী পিছন ফিরে দেখলো একটি মাঝময়স্ক মহিলা হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে ধুলো মাখা ময়লা শাড়ী। চোখের কোনায় জল। এমনিও স্বাতীর পরীক্ষার জন্য এগারো হাজার পাঁচশো টাকার প্রয়োজন তাই স্বাতী বাকি টাকাটা সেই মহিলা কে দিয়ে দিলো। টাকা পেয়ে সেই মহিলাটি খুব খুশি হয়ে বললো:-


"কি করে যে তোমার এই ঋণ শোধ করবো জানিনা মা, তবে তোমার জন্য মেয়েটার মুখে ওষুধ দিতে পারবো। আমি তোমার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো মা।"


স্বাতী কিছু বললো না শুধু আলগা ভাবে হাসলো। কলেজে গিয়ে টাকাটা জমা করে একটা ফাঁকা ক্লাসরুমে গিয়ে বসলো। সকালে মায়ের সাথে ওই ভাবে কথা বলাটা বোধহয় উচিত হয়নি তার। কোনোদিন মা কে একটু সাজতে পর্যন্ত দেখেনি স্বাতী। সবসময় মেয়েকেই সাজিয়েছে টাকা দিয়ে। মেয়েকেই শিক্ষিত করেছে। স্বাতীর আর পাঁচজনের কথায় কিছুই যায় আসেনা তবে স্বাতীর একটাই রাগ তার মা তাকে তার বাবার পরিচয় কিছুতেই দেয়না। আজ যাই হয়ে যাক স্বাতী তার মায়ের থেকে তার বাবার পরিচয় জানবেই। তাকে জানতেই হবে কি কারণে তার মায়ের এমন অবস্থা। তার বাবা কি আদেও বেঁচে নেই নাকি বেঁচে থেকেও তাদের কে এমন নারকীয় জীবনের পথে ঠেলে দিয়েছে। আর এভাবে চলা যাবে না উঠে পড়লো স্বাতী বাড়ির পথে বেড়ালো সে।


বাড়ি পৌঁছে দরজায় কড়া নাড়তেই মুক্তা হাসি মুখে দরজা খুলে দিল। সকালের কথাগুলো হয়তো তার মনেই নেই। স্বাতী তার মা কে জড়িয়ে ধরে বললো :-


"কি করে পারো মা সবসময় এত হাসি খুশি থাকতে? তোমার কষ্ট হয়না?"


"কিসের কষ্ট? তোর হাসি মুখটাই আমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। একদিন তুই অনেক বড় মানুষ হয়ে আমার সব কষ্ট মুছে দিবি।"


"আচ্ছা মা আমার বাবার কথা আমাকে বলোনা কেন? কে আমার বাবা? সে কি জানেনা আমাদের কষ্টের কথা? আমরা কেমন করে জীবন কাটাচ্ছি? বলো না মা। তোমাকে আমার দিব্যি আজ তোমায় বলতেই হবে মা।"


"বলবো আজ তোকে সব সত্যিটা বলবো। তখন আমার পঁচিশ ছাব্বিশ বছর বয়স হবে। বাড়িতে বাবা মায়ের নিত্যদিনের অশান্তি লেগে রয়েছে আমার বিয়ে নিয়ে। মায়ের ইচ্ছা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার বিয়ে দিয়ে দেওয়ার। বাবার কাছে তেমন টাকা ছিল না আমাকে বিয়ে দেওয়ার এই কারণে মায়ের গায়ে হাত ও তুলতো। একদিন বাবা নেশা করে মায়ের গায়ে আগুন ও লাগিয়ে দিতে যায়। সেদিনই ঠিক করি যে নিজেকে শেষ করে ফেলবো। আমার কারণেই যত অশান্তি তাই বাড়িতে একটা চিঠি লিখে মাঝরাতে বেরিয়ে পড়লাম মা গঙ্গার কোলে নিজেকে উৎসর্গ করে দিতে। গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে নিজের অন্তিম সময় কে আলিঙ্গন করতে যাবো এমন সময় শুনতে পাই একটা শিশুর কান্নার আওয়াজ। কিছুটা দূরে গিয়ে দেখতে পাই একটি শিশুকন্যা মাটিতে পড়ে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদছে। সেদিন সেই শিশুটিকে কোলে তুলে আর মৃত্যু বরণ করতে পারিনি। অনেক দূরে চলে এসেছিলাম সেদিনের সেই শিশুকন্যাটাকে নিয়ে। সেই ফুলের মত শিশুকন্যটিই তুই।"


স্বাতী বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল তার মায়ের দিকে। স্বাতী তার নিজের সন্তান না জেনেও সারাজীবন নিজেকে নিঃস্ব করে তাকে কোলে পিঠে মানুষ করে তুলেছে। আর কিছু বলতে পারলো না স্বাতী শুধু মা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো সে।


Rate this content
Log in

More bengali story from Piyali Chatterjee

Similar bengali story from Tragedy