Piyali Chatterjee

Romance

3.6  

Piyali Chatterjee

Romance

জীবন খাতার প্রতি পাতায়

জীবন খাতার প্রতি পাতায়

4 mins
700


প্রবাহ মোবাইলের মেসেজটা খুলতেই দেখতে পেল একটি ছবি। বিছানায় বসে পড়লো সে। ঐশীর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল সেটা প্রবাহ জানতো তবে যে বিয়েটা এই মাসেই সেটা ভাবেনি। এই তো দুটো মাস আগেও তারা এক সাথে ছিল। শেষ যেদিন প্রিন্সেপ ঘাটে দেখা হলো সেদিন-

'প্রবাহ আমার মনে হয় আমাদের আর একসাথে থাকা ঠিক হবে না।'

'ঐশী এটা কি বলছিস তুই?'

'ঠিকই বলছি প্রবাহ। তুই জাস্ট ভেবে দেখ তুই লাইফে একটুও এগিয়েছিস কি? সেই দু বছর আগেও যা ছিলিস আজ ও তাই।'

'ঐশী আমি চেষ্টা করছি। নতুন ব্যবসা তাতে একটু ক্ষতি হচ্ছে তবু আমি হাল ছাড়িনি বিশ্বাস কর। দু বছরে একটা আপাদমস্তক ব্যবসা কে দাঁড় করিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। সময় লাগে সফলতা দেখতে হলে।'

'সময়টাই তো নেই আমার কাছে প্রবাহ। গত পাঁচ বছর ধরে আমাদের সম্পর্ক। আমার কি দোষ বল আমি তো এতগুলো বছর সময় দিলাম।'

'ঐশী আমাদের স্নাতকোত্তর শেষ হয়েছে সবেমাত্র দু বছর।'

'আমার কিছু করার নেই প্রবাহ আমি তোর সাথে থাকতে পারবো না।'

দু মাসের মধ্যে ঐশী বিয়েটাও সেরে ফেলবে সেটা প্রবাহের কল্পনার ও অতীত ছিল। ছবিটা প্রবাহ কে তার এবং ঐশীর কলেজের এক বান্ধবী পাঠিয়েছে। প্রবাহের প্রিয় বান্ধবী জিনিয়া। ঐশীর সঙ্গে সম্পর্কের পর জিনিয়ার সঙ্গে প্রবাহের এক অবর্ণনীয় দূরত্ব চলে এসেছিল। ঐশী ঠিক পছন্দ করতো না জিনিয়ার সঙ্গে তার বন্ধুত্বটা ঐশী বলতো, 'বন্ধু না অন্য কিছু কই আমার তো এত ছেলে বন্ধু নেই। তুই যে কোনো একজন কে বেছে নে আমাদের দুজনের মধ্যে।'

না, প্রবাহ কোনো একজন কে বেছে নেয়নি প্রবাহ কোনোরকমে ঐশী কে বুঝিয়েছিল তাদের বন্ধুত্বটা। প্রবাহ বলেছিল, 'দেখ জিনিয়া আমার বেস্টফ্রেন্ড। ওর মত আমাকে আর কেউ বোঝে না। আর তুই যখন ছিলিসনা আমার জীবনে তখন ও ছিল। ও আমার অনেক খেয়াল রাখতো। তোকে যে আমি ভালোবাসি সেটাও আমি নিজে কখনোই বুঝতাম না যদি না ও বোঝাতো। ওই আমাকে তোর দিকে এগোতে সাহায্য করেছে ঐশী।'

ঐশী একটু শান্ত হয়েছিল তবে জিনিয়া কেমন করে জানি তাদের মাঝের এই চিন্তাটা ধরে ফেলেছিল তাই আস্তে আস্তে সে নিজেই সরে গিয়েছিল প্রবাহের জীবন থেকে। সাত বছরের বন্ধুত্বের মাঝে পাঁচ বছরের প্রেম অদৃশ্য দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রবাহ জিনিয়া কে ফোন করলো, সেই চেনা কোলারটিউন বেজে উঠলো প্রবাহ এবং জিনিয়ার প্রিয় গান। একসময় প্রবাহের ফোনেও এই গানটি কোলারটিউন ছিল তবে ঐশীর আবার এইসব পুরোনো গান পছন্দ নয় অগত্যা বদলে ফেলেছিল সে নিজের কোলারটিউন সঙ্গে নিজেকেও। গানটা কিছুটা বাজতেই ওপাশ থেকে চেনা স্বর ভেসে আসলো,

'বল। দেখলি ছবিগুলো?'

'...............'

'প্রবাহ?'

'হুম বল।'

'প্রবাহ তুই ছবিগুলো দেখতে চাইলি তাই পাঠালাম। দেখ যেটা হবার ছিল সেটা হয়ে গেছে। এখন পিছনে না তাকিয়ে সামনে এগোতে হবে।'

'কিন্তু জিনিয়া কেন? আমিই কেন?'

'প্রবাহ শুধু তোর সাথে নয় তোর মত হাজার জন আছে যারা তাদের ভালোবাসা কে পায়না।'

'হুম অভিক কেমন আছে?'

'ভালোই আছে।'

'আচ্ছা জিনিয়া আমি হেরে গেলাম না রে?'

'কিসে?'

'ভালোবাসায়?'

'না রে প্রবাহ। তুই কেন হারবি? তোর ভালোবাসাটাতো মিথ্যে ছিল না।'

'তোর মনে আছে জিনিয়া তুই-ই আমাকে বলেছিলিস ঐশী কে নিজের মনের কথা বলতে। আচ্ছা আমি যে ঐশী কে পছন্দ করতাম সেটা তুই কি করে বুঝেছিলিস বলতো?'

'বাহ রে আমি বুঝবো না!'

'কই আমি তো বুঝিনি তুই আর অভিক যে...'

'প্রবাহ তুই বুঝতে চাসনি হয়তো।'

'মানে?'

'..............'

'জিনিয়া?'

'তোর মনে আছে প্রবাহ আমার আঠারোতম জন্মদিনে তুই যখন আমাকে রাতে ফোন করে জন্মদিনের উইশ করলি আমি বলেছিলাম পরেরদিন সকালে তোকে একটা কথা বলবো....'

'ডোন্ট টেল মি তোর আর অভিকের প্রেম টা ততদিন আগে থেকে চলছে আর আমি জানতাম না।'

'তোর সব কিছুতেই বড্ড তাড়া প্রবাহ। আমাকে বলতে দিবি?'

'ওকে বল।'

'পরেরদিন সকালে তুই আমাকে ক্যান্টিনে দেখা করতে বললি। ক্যান্টিনে যখন তুই আর আমি একটা টেবিলে বসে কথা বলছিলাম তখন তোর মন আমার কথাগুলোর দিকে ছিল না বরং ঐশীর দিকে ছিল। আমি তার আগেও বহুবার খেয়াল করেছিলাম সেটা তবে সেদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তুই ওকে ভালোবাসিস। তোর মনে আছে প্রবাহ সেদিন আমি তোকে কি বলেছিলাম?'

'হ্যাঁ তুই কি যেন বলছিলিস, ক্লাসমেট, বন্ধু, প্রিয় গান....'

'প্রবাহ, ছাড়। তোর মনে নেই আমি জানি। মনটা আমার দিকে ছিলই না। সেদিন আমি তোকে প্রপোজ করেছিলাম। বলেছিলাম, তুই আমার সব চেয়ে কাছের বন্ধু, আমার ক্লাসমেট এবং তোর মধ্যেই আমি নিজের ভালোবাসা খুঁজে পাই। আমাদের প্রিয় গান, 'জীবন খাতার প্রতি পাতায়

যতই লেখো হিসাব নিকাশ

কিছুই রবেনা

লুকোচুরির এই যে খেলায়

প্রানের যত দেওয়া নেওয়া

পূর্ণ হবেনা...' মনে আছে প্রবাহ?

'জিনিয়া আই এম সরি আমি....'

'না না সরি কিসের। দেখ আমি ভালোই আছি অভিক আমাকে অনেক ভালোবাসে ওর মতন একজন কে পেয়ে সত্যিই আমি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবি। আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম জানিস প্রবাহ। ভালোবাসা বলতে শুধু তোকেই বুঝতাম আমি আর চোখের সামনে সেই ভালোবাসা কে অন্য এক পৃথিবীতে বিলীন হতে দেখে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিলাম। অভিক সব জানতো। ওকেই তো বলতাম সব। কেমন করে জানি অভিক সব টুকরোগুলো কে নিয়ে জোড়া লাগিয়ে দিয়েছিল। জানিস আমি ভেবেছিলাম এই কথাগুলো আমি তোকে বলবো না কিন্তু আজ বলতে ইচ্ছে হলো। দেখবি প্রবাহ একদিন তোর জীবনেও এমন একজন আসবে যে তোর ভাঙা টুকরোগুলো কে জোড়া লাগিয়ে দেবে নিজের স্পর্শে। সে তোকে কোনো শর্ত ছাড়াই ভালোবাসবে। দিনের শেষে তুইও বাড়ি ফিরতে চাইবি তার ছোঁয়া পাওয়ার আশায়। ততদিন নিজেকে ভালোবাস, নিজেকে সময় দে, নিজের কাজ কে সময় দে। দেখবি তুইও ভালো থাকবি।'

প্রবাহ ফোনটা রেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। একটা নতুন সকাল হাত বাড়াচ্ছে তার দিকে, সূর্যের আবির্ভাব ধীরে ধীরে মুছে দিচ্ছে রাতের অন্ধকার। জিনিয়া ও আজ অনেকটা হালকা অনুভব করছে মনের কথাগুলো প্রবাহ কে জানাতে পেরে। ওদের পথ এক হলেও গন্তব্য আলাদা ছিল। বোধহয় কিছু কিছু ভালোবাসা এভাবেই আজীবন বন্ধু হয়ে পাশে থেকে যায়। কিছু কিছু ভালোবাসা আজীবন অপরের মানুষটাকে ভালো রাখতে চায়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance