শেষ বৃষ্টি
শেষ বৃষ্টি


এই সবে বৃষ্টি নামলো। আকাশে মেঘ এতক্ষন কালো হয়ে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলো বোধহয় এইমাত্র অভিমান ভাঙলো তাই এই অভিমানী কান্নায় ভেঙে পড়েছে সে। জানালার সামনে বসে আমি বাইরে তার অঝোরে কান্না দেখছি। জানো তো, এই কান্না দেখলে তোমার কথা ভীষণ রকম মনে পড়ে। সেদিনও ঠিক এইভাবেই কেঁদেছিলে তুমি, আমার দুটো কাঁধ ধরে বলেছিলে, "আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি কি করে থাকবো তোমাকে ছাড়া?"
কিন্তু বিশ্বাস করো কোনো উত্তর ছিল না। কি বা বলতাম? তখন তো আমার আর বৃষ্টি মনে ধরছিল না। কি করে বলতাম যে এত ভালোবাসা পাওয়ার পরে ও ভালোবাসতে পারছিলাম না তোমায়। তখন আমি বৃষ্টি ছেড়ে তপ্ত রোধে পুড়তে চাইছিলাম। পুড়েওছি বেশ কিছুদিন, কিছু মাস, আর পুড়তে পুড়তেই কেমন নিজের অজান্তেই বৃষ্টির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। মনে হতে লাগলো যদি তুমি খোলা চুলে আরো একটিবার এসে দাঁড়াতে আমার সামনে। তোমার সেই খোলা চুলের শীতলতাই হয়তো পারতো আমাকে এই পোড়া থেকে বাঁচাতে। ততদিনে তোমার একটি সুন্দর সংসার গড়ে উঠেছে। তোমার নতুন বাড়ির বাগানে তোমার হাতে লাগানো চারা গাছে কুঁড়ি ফুটেছে। প্রতি সন্ধ্যায় তুলসী তলায় তোমার প্রদীপ জ্বালানো আজ সফল হয়েছে। আর মাত্র কয়েক মাসের অপেক্ষা একটি সুন্দর ফুল ফুটবে তোমার বাগানে। আলোকিত করবে তোমার সব অন্ধকার ঘরগুলোকে।
আমার কাছে এই বৃষ্টিভেজা বিকেলগুলো কেমন যেন খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে।
ইদানিং রাত কে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। সকাল হলেই কেমন জানি সূর্যের আগুন আমায় গ্রাস করতে আসে। সেই সময় এক পশলা বৃষ্টি আমার এই পোড়া হৃদয় কে ভেজায়। একটু হলেও স্বস্তি যোগায়। এরকমই এক বৃষ্টির দিনে তুমি বৃষ্টি ভেজা অবস্থায় আমার কাছে এসেছিলে। হ্যাঁ আমার তোমায় দেওয়া হাজার চোখের জল উপেক্ষা করে ও এসেছিলে। একটি বার জানাতে যে তোমার বাড়ির লোক তোমার জন্য উপযোগী মেঘ খুঁজেছে। যেই মেঘের হাত ধরে তুমি গোটা আকাশ নেচে বেড়াতে পারবে, সে মেঘ তোমায় আগুন ছোঁয়াবে না। সে মেঘ শুধু তোমার সাথে সময় অসময় ঝরবে। শুকনো গাছ-পাতা, যে পথে বৃষ্টি হয়নি বহু বছর, যে শহর দিন রাত পুড়ছে, যে দেশে জলের অভাবে লোক মরছে সেই সব জায়গায় তুমি আর তোমার মেঘের পুষ্পবৃষ্টি ঝরবে। শুধু মনে রেখো একটি বার আমি তোমাকে দেখতে আসবো সেই বৃষ্টি ধারায়। তখন যেন আমাকে ফিরিয়ে দিও না। সেদিন অবশ্য তুমি ফেরাতেও পারবে না সে সাধ্যি কারুর নেই। হাওয়ার সাথে মিশে তোমায় একটি বার বৃষ্টি ভেজাবো। সেই শেষ বার।