Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Ajoy Kumar Basu

Classics

3  

Ajoy Kumar Basu

Classics

জীবন গাড়ির পেট্রোল

জীবন গাড়ির পেট্রোল

4 mins
743


এত বছর বেঁচে কম কাজ তো করিনি। এখন একটু ধীরে ধীরে চলছে জীবনের গাড়িটা। তাইতো ভাবি চলার পেট্রোল পাচ্ছি কোথা থেকে ? আমার পয়সার হাল আর বাজারের দামের কোনো মিল নেই। এক সময়ে ভালো হুইস্কি খেতাম ,এখন সস্তার হুইস্কি খাই ;এখনও ধেনোতে নামিনি ,সেটাই স্বান্ত্বনা। তবে বুঝে গেছি আর বেশীদিন টিকবোনা। হুইস্কি বিনা অনাহারে মরবো না ঠিক ,তবে অন -পানে শুকিয়ে যাবো। থাক সে দুঃখ্যের কথা , ফিরি অজ্ঞাত পেট্রোলের সন্ধানে। বুঝেছি পেট্রোলটা বাইরের বাজারে কেনা নয়। আমার ভেতরেই তেলের উৎস। যেটা থামে না ,ক্রমাগত উপচে পড়ছে।

অনেক যোগ -বিয়োগ সাধনা করে বার করেছি তেলের কুয়ো। আমার জিনের মধ্যে। ব্যাপারটা হচ্ছে আমি born হিংসুটে। নিরোদ চৌধুরী সত্যতা অনেক দিন আগে বুঝেছিলেন , তাই লিখেও গেছেন ,বাঙালির ধৰ্ম হিংসে। আমার জিনে বঙ্গ পরিচয় মিলে মিশে আছে ,তাই হিংসে করা আমার জন্মগত অধিকার ,গীতার ভাষায় স্বভাবজ characteristics .

মিথ্যে বলবো না আমি সব সময়ে ,সব কিছুকেই হিংসে করি। আমার হিংসের জগত কোনো জাতি ভেদ নেই ,কোনো ধৰ্ম ভেদ নেই ,নেই কোনো ছোঁয়াছুঁয়ি। আমার হিংসে মানুষে সীমাবদ্ধ নয় , পুরুষ -নারী তো নায়েই ,এমনকি প্রাণী -নিষ্প্ৰাণী ভাগ করে না। আছে শুধু আমি আর non -আমি। আমার হিংসে পবিত্র ,নিষ্পাপ ,সর্বভূতে ,সর্বকালে, সবজায়গায় সমান ভাবে থাকে ,ঠিক যেন কৃষ্ণ। একে আগুনে পোড়াতে পারে না , আঘাতে মাথা ভাঙতে পারে না,আমার আত্মার মতো।

সব সময়ে হিংসের ফল ভালো হয়না ঠিকই। সেই তো কোন ছোটবেলায় বাগানে দেখি একটা সাপ ,এঁকে বেঁকে মাটির তলার গর্তে ঢুকে পড়লো। আমার খুব হিংসে হয়েছিল ,ভাবলাম একটা সাপ যা করতে পারে আমি করতে পারবোনা ? মাটিতে শুয়ে সাঁতার কেটে কেটে চেষ্টা করলাম ,মাটি কাদা মাখামাখি। সেদিন মা একটু বেশি রেগে গেছিল ,রুটি বেলার বেলুন দিয়ে পিঠে কটা মার্ ,অনেক দিন ব্যাথা ছিল। মায়ের হাতে এত জোর আগে বুঝিনি।

কিন্তু হিংসের positive দিকও আছে। পড়াশুনায় খারাপ ছিলাম না ,তাই বলে প্রথম হবো ভাবিনি। কিন্তু ঝঞ্ঝাট বাধালো হিংসে। মায়ের কোন দূরের আত্মীয়ের ছেলে ম্যাট্রিকে ফার্স্ট হয়ে বসলো। মায়ের সে কি উচ্ছাস ,যেন নিজেই ফার্স্ট হয়েছে। মায়ের এই বিশ্বাসঘাতকতা আমার মোটেই ভালো লাগেনি ,মনের ভেতরটা হিংসেয় জ্বলতে লাগলো। তার তাড়নায় খাওয়া -দাওয়া ছেড়ে বই মুখস্ত করতে বসলাম। সত্যিকারের উপবেশন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভুল করে আমার নামটা প্রথম শ্রেণীর প্রথমে ছাপিয়ে দিলো। সেই থেকে আমার পাঠ্য জীবন দুর্বিসহ হয়ে গেল। বেশি পড়লে টিটকিরি ;মুখস্থ করেই ফার্স্ট হয় ;একটু আয়েস করলেই মুখ ঝামটা ;একবার ফার্স্ট হয়ে লায়েক হয়েছে ,ভাবছে সবজান্তা। সাপের ছুঁচো গেলা শুনেছি ,আমার দশা সাপের গরু গেলার মতো।

বড়ো হয়ে analysis করতে শিখলাম ,পৃথিবীর চারদিকে তাকিয়ে দেখি একমাত্র হিংসেই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ছুঁচোবাজির মতো পেছনে ধাওয়া করেছে।সেই আদ্দিকালের কথা ভাবো। মানুষ জানোয়ারদের ওপর হিংসে করে প্রথমে পাথরের অস্ত্র বানালো ,তাতেও থামলো না ;তৈরী হলো আগ্নেয়াস্ত্র ,আর সেই শুরু এখনও বানিয়ে চলছে এটম বোমা অব্দি। কিন্তু ভাবো হিংসের power ;আমার কাছে দশটা বোমা আছে আর একজনের কাছে ২০টা -ব্যাস আমাকে ৩০টা বানাতেই হবে-.একবারেও ভাবছে না দুতিনটেতেই দুনিয়া সাবাড় হবে ,পাঁচ আর ছ নম্বর বোমাটা ফেলবে কে ?

বুদ্ধিতেও হিংসে। গাছের তলায় বসে দিবা নিদ্রার প্ল্যান করছিলেন নিউটন সাহেব। একটা আপেল মাথায় পড়তেই মাথা ফুলে ঘিলু নড়ে গেল। নানা আঁকা কষে তিনটে নিয়ম বার করলেন।ভালো কথা ,জগৎটা ভালোই চলছিল। কিন্তু হিংসে কি কাউকে শান্তি দেয় ? এই নিউটনের ভুল ধরবার জন্যে এক গাদা লোক কোমর বাঁধলো। ভুল প্রমাণ না করে থামলো না,গালভরা থিওরী ,আপেক্ষিকবাদ -চলেছো কি ওজন বাড়বে ,চর্বি হবে।

আগে তো রাজাদের ছড়াছড়ি ছিল ,হিংসে ছাড়া কেউ রাজত্ব করেছে? এ ওকে মারছে ,ও তাকে মারছে। অরে এক রাজার বৌ সুন্দরী ,তাকেই চাই -শুরু হলো লড়াই ,স্বর্গের কাজ ফেলে দেবদেবীরা যোগ দিলো। সবাই মরে তবে হিংসের ইতি হলো।

এই যে আমরা কত রকমের টাকা দেখি ,কেন? হিংসে ,আর কিস্সু নয়। লাল নীল সবুজ হলদে টাকার সঙ্গে একজন কালো টাকা তৈরী করলো আর বড়োলোক হলো। অন্য বড়লোকদের কি হিংসে -ধর ধর কালো টাকাওয়ালাদের। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতেও পিছোলো না। নিজের টাকাটাকেই বাতিল করে বসলো ,সব লোকেদের কি ঝঞ্ঝাট। একটাও কালো টাকা পাওয়া গেল না। তাতেও লজ্জা নেই ,আবার নতুন প্ল্যান করে চলেছে।

তাই অনেক ভেবে আমি বিশ্ব চরাচরে সমভাবে বিরাজমান হিংসাকে জীবন গাড়ি চলবার পেট্রোল বলি - পেট্রোলের সব গুণ হিংসের মধ্যে দেখতে পাই. পেট্রোল নিজে পুড়ে গাড়িকে চালায় ,তাই তো কবিগুরু বলে গেছেন ,'এই করেছো ভালো ----আমার এ ধূপ না পোড়ালে গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে,আমার এ দীপ না জ্বালালে দেয় না কিছুই আলো '-হিংসের উদ্দেশ্যে লেখা এই মহাবাণী।

পেট্রোল চলবার শক্তি দেয় ,কিন্তু কোনদিকে চলবে তার ভার চালকের। সামনে যাবে,না কি পেছনে ,না কি দাঁড়িয়ে থাকবে সেটা নির্ভর করছে যার গাড়ি তার।

এই যে কেউ বলে গেছেন ,'অদ্য বাঙালী যাহা ভাবিবে ,কল্য ভারত তাহা ভাবিবে' ,কথাটার ভেতরের ভাবটা বুঝেছো কি ? ভারতের অন্য জায়গার লোকেদের থেকে বাঙালীর হিংসে বেশ বেশি। অন্যরা হিংসে না করতে করতে দাস ভাবাপন্ন হয়ে গ্যাছে ,যা পাই তাই সই ,অন্যের কিছু ভালো লাগলো তো বসে থাকে যদি কোনোদিন সেই অন্য দয়া করে একটু এদিকে ফ্যালে।

ওদিকে চীনদেশকে দ্যাখো : আমেরিকাতে অনেক ইলেকট্রিসিটি ,সব দিক আলোতে ঝলমল করছে। আর চীনে ইলেক্ট্রিসিটির অভাব ,আলোটা জ্বলবে কী করে ? তাই তো চীনের হিংসের তাড়নায় L E D আলোটাই বানিয়ে ফেললো যাতে কম বিজলিতে ঝলমলে আলো পেতে পারে ,আর আমরা চীন থেকে আলো এনে রাস্তা সাজালাম। হিংসা হীন আমাদের লজ্জা বলে কিছু নেই ,দাসেদের লজ্জা থাকে নাকি ?

হিংসে বিনা জগৎটাকে কল্পনার চোখে দেখি। মাঝে একবার পেট্রল নিয়ে গণ্ডগোল হয়েছিল ;পেট্রোল একটু কমতেই দুনিয়া টলোমলো ,কি না গাড়ি চলা কমছে। আর জীবন গাড়ির পেট্রোল যা থাকলে দুনিয়া থাকবে না। কেউ কিছু চাইছে না ,সবাই গভীর ধ্যান মগ্ন ,কেউ চলছে না ,কেউ হাসছে না ,কেউ সন্তান চাইছে না,সবাই বুড়ো হয়ে মরার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি ওই দলে নেই। যতদিন বাঁচবো ,হিংসের পেট্রোলে জীবন চালাবো।

হিংসায় চলন্ত পৃথিবী -মানুষের প্রাণ শক্তি।


Rate this content
Log in

More bengali story from Ajoy Kumar Basu

Similar bengali story from Classics