The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sayandipa সায়নদীপা

Classics

2  

Sayandipa সায়নদীপা

Classics

ঈর্ষার বৃত্ত(তাতাইয়ের গল্প-৯)

ঈর্ষার বৃত্ত(তাতাইয়ের গল্প-৯)

5 mins
783


আজ কলেজে ক্লাস শেষ হতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। খিদেয় পেটের মধ্যে ছুঁচোয় ডন মারছে অনেকক্ষণ থেকে। ক্লাস থেকে বেরিয়েই এক ছুটে ক্যান্টিনে চলে এসেছে তাতাই। কিন্তু হায়, ক্যান্টিন বন্ধ!! গেট থেকে বেরিয়েও ঝালমুড়ি কাকুকেও দেখা গেল না। অগত্যা কোনো উপায় না দেখে ফুচকার ঠেলার দিকে এগোলো তাতাই। ফুচকা খেয়েই পেট ভরাতে হবে। ফুচকার দোকানে রোজগার মত প্রচুর ভীড়, ননি কাকু ইশারায় বললেন একটু অপেক্ষা করতে। মাথা নাড়ল তাতাই। আর তৎক্ষণাৎ মাথার পেছনে একটা গাঁট্টা এসে পড়ল।

---- শান… 

দাঁতে দাঁত চিপে বলল তাতাই। লোকটাকে না দেখেও বলে দেওয়া যায়,এমন কাজ শান ছাড়া আর কে করতে পারে!


---- তুই কি হেংলু রে, একটুও অপেক্ষা করতে পারলিনা আমার জন্য! সোজা খেতে ছুটে এলি।


---- হুহু বেশ করেছি। আমার ভীষণ খিদে পাচ্ছে।


   আজকের বিকেলটায় কেমন একটা সোনালী আলো ছড়িয়ে আছে, একটুও তাপ নেই আলোটার। অপূর্ব দেখাচ্ছে আশপাশটাকে। একটা মৃদু মন্দ বাতাস দিচ্ছে বেশ। তাতাইয়ের খোলা চুলগুলো উড়ছে অদ্ভুত ভাবে। সকালে পড়তে পড়তে দেরি হয়ে গিয়েছিল বলে বেঁধে আসা হয়নি। চুলগুলো সামলে ফুচকা খেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। একটা বড়সড় ফুচকা তেঁতুল জলে ডুবিয়ে মুখটা তুলতেই অবাক হয়ে গেল তাতাই। শান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

---- কিরে কি হল?

মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করল তাতাই।

ওর চোখের দিকে তাকিয়ে খানিক বেখেয়ালেই যেন শান বলে উঠল,

---- অপূর্ব লাগছে...


---- কি?


---- কিছু না কিছু না। তাড়াতাড়ি খা না খেপি, বাস চলে যাবে যে।

নিজেকে সামলে নিয়ে তড়িঘড়ি কথাগুলো বলল শান।


    বাসে উঠে আজ সিট পেয়ে গেল তাতাই। কানে হেড ফোনটা গুঁজে বাসের সিটে মাথাটা এলিয়ে দিলো সে। ওর চোখের সামনে ভাসছে একটু আগে দেখা শানের মুখটা। অজান্তেই হাসি খেলে গেল তাতাইয়ের ঠোঁটে। চোখ দুটো বন্ধ করল সে…



                  ★★★★★


তখন তাতাইয়ের ক্লাস ইলেভেন। ফ্রকের সময় পেরিয়ে সবে শাড়ি উঠেছে গায়ে। স্কুল যাওয়া আসার সময় স্কুল গেটের সামনে দেখতো বন্ধুদের জন্য অপেক্ষারত প্রেমিকদের ঢল। বয়েজ স্কুলের ছেলেরা স্কুল ছুটি হওয়া মাত্রই রুদ্ধশ্বাসে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যেত তাতাইদের স্কুলের সামনে। একেকজন ছেলের বিশেষ একেকজনকে পছন্দ ছিল। তাকে এক ঝলক দেখার জন্য সাইকেলে চেপে স্কুলের উঁচু প্রাচীর থেকে মুখ বাড়াতো তারা। এপারের গল্পটাও কিছু ভিন্ন ছিল না। তবে তাতাই জানতো তার জন্য কোনো উৎসুক চোখ কোনোদিনও অপেক্ষা করেনা। তাতাই জানতো তার গায়ের রং চাপা, নাকটা বোঁচা, নাকের নীচে একটা মস্ত আঁচিল… সব মিলিয়ে চোখে লাগার মত কিছু নেই তার মধ্যে। তাতাইয়ের অবশ্য খুব একটা কিছু যায় আসতো না তাতে, কিন্তু তাও মাঝেমাঝে বৈশাখী বিকেলে হঠাৎ করে একবার মনটা বলে উঠত--- "যদি আমার জন্যও কেউ থাকতো!"


   তারপর সত্যি সত্যিই বৈশাখী ঝড় পেরিয়ে এসেছিল দুরন্ত বর্ষা। ঋদ্ধিমান চক্রবর্তী… নামটা বহুদিন থেকেই ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় ছিল। তাতাইদের পাড়ার এক দাদার প্রিয় বন্ধু সে। তা আচমকা সেই বর্ষার বর্ষণের মাঝে এসেছিল সেই তরফে একটা বার্তা। আজ আর ঠিক মনে নেই কথাটা শুরু হয়েছিল কিভাবে। শুধু মনে পড়ে শুরু যে হয়েছিল তারপর থামেনি একবারও। সকাল থেকে সন্ধ্যে, সন্ধ্যে থেকে রাত… তাতাইয়ের ছোটো ছোটো গল্প, ঋদ্ধিমানের অনেক কবিতা… এমন করেই বর্ষায় একটু একটু করে সিক্ত হয়েছিল তাতাইয়ের মন। কবিতা পাগল তাতাইয়ের জীবনে ঋদ্ধিমানের কবিতা এনেছিল জলোচ্ছ্বাস। ঋদ্ধিমান বলেছিল তাতাই নাকি ওর কলমের নদী, আপাত শান্ত স্নিগ্ধ কিন্তু স্পর্শ করলেই চঞ্চল। 


  ঋদ্ধিমান কোনোদিনও মেয়েদের স্কুলের সামনে এসে দাঁড়ায়নি অন্যদের মত, চাতক পাখির নজরে অপেক্ষা করেনি তাতাইকে দেখার জন্য। সে অপেক্ষা করত এক না দেখার তীরে, শুধু কণ্ঠস্বরের ওপারে। ওদের এই আলাপের খবর ছিল না কারুর কাছে, একমাত্র জানতো তাতাইয়ের বান্ধবী নিশা। এমনি করে বেশ কেটে গিয়েছিল দু তিনটে মাস। তারপর একদিন হঠাৎ ফেসবুকে তাতাই দেখে ঋদ্ধিমানের জন্মদিন। ঋদ্ধিমান জানতো না কিন্তু তাতাইয়ের ডায়েরীটা জানতো ওখানে ঋদ্ধিমানকে নিয়ে জমে আছে কত কবিতা। সেদিন সাহস করে তাতাই একটা কবিতা তুলে নিজের রং তুলি দিয়ে সাজিয়ে ফেলেছিল একটা জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা।


---- ঋদ্ধি দা আজ একবার আমার স্কুলের সামনে আসবে?


---- তুই তো জানিস আমি এসব পছন্দ করিনা।


---- শুধু আজকের জন্য। প্লিজ। একবার এসো।


---- আচ্ছা দেখছি। 


   ঋদ্ধিমান এসেছিল সেদিন। নিশাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে তাতাই তাকে দিয়েছিল গ্রিটিংস কার্ডটা। তারপর বাড়ি ফিরে দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করছিল ওপ্রান্ত থেকে কিছু শোনার জন্য। শুনেছিল তাতাই,


"তোর সাথের মেয়েটা কে রে? নিশা? দারুণ দেখতে তো…"


   হুমম নদীটা সাগরে মেশার আগেই শুকিয়ে গিয়েছিল। তার জায়গা নিয়ে নিয়েছিল অন্য কেউ। তাতাই জানতো নিশা সুন্দর, সবার বলতো নিশা সুন্দর। কিন্তু এর বেশি আর কিছু ভাবেনি কোনোদিনও। নিশা তার বন্ধু ছিল, তার মনের কথা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গী ছিল… তাতাইয়ের কাছে এটাই ছিল বড় কথা। কিন্তু সেই নিশাই তাতাইয়ের কাছ থেকে এমন একজন মানুষকে ছিনিয়ে নিল যে মানুষটার ভাগ কাউকে দেওয়া যায়না। জীবনে প্রথমবারের মত তাতাইয়ের হিংসা হয়েছিল, ভীষণ হিংসা হয়েছিল। ছোটবেলার থেকে মা বলতো কাউকে কোনোদিনও ঈর্ষা করতে নেই, কাউকে ঈর্ষা করে নিজে বড় হওয়া যায়না। কিন্তু তাতাই সেদিন পারেনি মায়ের কথাটা মনে রাখতে। ঈর্ষায় বুক জ্বলে গিয়েছিল ওর। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নখ দিয়ে আঁচড় কেটেছিল নিজের গালে,

"কেন আমি ওর মত সুন্দর নই?"

লুকিয়ে লুকিয়ে মায়ের ফেয়ার এন্ড লাভলী খুব করে ঘষেছিল গালে,

"আমাকে ওর মত ফর্সা হতেই হবে।"

মাঝে মাঝে নিজের মনেই ভাবে,

"ওর তো সব আছে। তাও…"

নিশাকে সামনে দেখলেই ইচ্ছে করত ওর হাতটা টেনে প্রশ্ন করে,

"তোর সামনে পেছনে তো এতো ছেলে লাইন দিয়ে থাকে, তবু আমার যে ছিল তাকেই কেড়ে নিতে হল?"


  নাহ এসব কথা তাতাই কোনোদিনও সামনাসামনি বলতে পারেনি। ওর আত্মসম্মানে লাগত। তবুও নিজেকে সুন্দর করার প্রচেষ্টা ওর চলতে থাকল। যে তাতাই নিজের রূপ নিয়ে কোনোদিনও সচেতন ছিল না সে আজ দু বেলা ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখে গায়ে। লেবু, ডিম, বেসন যা যা টোটকা শোনে সব প্রয়োগ করে নিজের ওপর। সময় চলে যায়, তাতাইয়ের ভেতরটা আরও বেশি করে জ্বলতে পুড়তে থাকে। তাতাই যেন একেক সময় নিজের মধ্যে থেকেই হারিয়ে যায়। ওর দুনিয়াটাই যেন কেমন অন্যরকম হয়ে যায়। তাতাই জানে না এর শেষ কোথায়…


   এরই মাঝে ক্লাস ইলেভেনের বাৎসরিক পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোয় একদিন। তাতাই অনেক নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে। স্কুলের দিদিমনিরা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করেন, বন্ধুরা সব অভিনন্দন জানাতে থাকে। বহুদিন পর তাতাইয়ের মনটা বেশ ফুরফুরে লাগে। কিন্তু এসবের মাঝেই তাতাই হঠাৎ খেয়াল করে নিশার চোখে জল। নিশা এগিয়ে আসে ওর দিকে। হাত বাড়িয়ে অভিনন্দন জানায়। তারপর আদ্র কণ্ঠে বলে, "ইংরেজিতে কোনোদিনও হারাতে পারলাম না তোকে।" এই বলে চলে যায় নিশা। ইংরেজি নিশার প্রিয় বিষয়, এটা নিয়েই ভবিষ্যতে পড়বে সে… জানতো তাতাই। 

বুকে হঠাৎ একটা বড়সড় ধাক্কা লাগে তাতাইয়ের। কোথাও যেন গিয়ে একটা ঈর্ষার বৃত্ত সম্পূর্ণ হতে দেখে চোখের সামনে। ওরও তবে কিছু না পাওয়া আছে? নিশাও তবে তাতাইকে ঈর্ষা করে কিছুর জন্য? তাতাইয়ের আনন্দ হয়না, কিন্তু মনটা অদ্ভুত রকমের হালকা হয়ে যায় হঠাৎ করে। মনে পড়ে যায় এবারের পরীক্ষায় লিখে আসা ভাব সম্প্রসারণটার কথা,


"নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস

ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।।"



                  ★★★★★


বাসটা আচমকা ব্রেক কষতেই চোখদুটো খোলে তাতাই। কখন যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় দু'বছর আগের স্মৃতিতে ভেসে গিয়েছিল সে। পিং করে মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। ফোনটা হাতে তুলে দেখে তাতে লেখা,

"তোকে আজ পেঁচির মত দেখাচ্ছিল😜"

তাতাই উত্তর দেওয়ার আগেই ভিডিও কল ঢোকে। ওপ্রান্তের মানুষটা বলে ওঠে, 

"ভাবলাম তোর পেঁচির মত মুখটা আরেকটু দেখি।"

ফ্রন্ট ক্যামেরায় তাতাইয়ের মুখটা ভাসছে---- আগের মতোই কালো, উলঝুলো, বোঁচা নাক…

তাতাই আর ফর্সা হওয়ার চেষ্টা করেনি কোনোদিন, বুঝেছিল প্রয়োজন নেই তার, আজ আবার নতুন করে উপলব্ধি করল সেটাই।


Rate this content
Log in

More bengali story from Sayandipa সায়নদীপা

Similar bengali story from Classics