STORYMIRROR

গুলাল আবু বকর

Comedy Classics Others

4  

গুলাল আবু বকর

Comedy Classics Others

হাস্যকর কিছু কথাবার্তা: পর্ব ২

হাস্যকর কিছু কথাবার্তা: পর্ব ২

6 mins
746

যে কোনও কিছু লেখার সময় আমরা নির্দিষ্ট ছেদযতি চিহ্ন ব্যবহার করে থাকি। এগুলোর যথাযথ ব্যবহার ছাড়া সঠিক মনের ভাব বা বক্তব্য উপস্থাপন করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। যেকোনো ছোট বা বড় বাক্য সম্পূর্ণ করতে অন্তত একটি চিহ্ন দিতেই হবে। এই চিহ্নগুলি বিভিন্ন লেখায় নানানক্ষেত্রে প্রাণ সঞ্চার করে থাকে। বাস্তবিকপক্ষে, আপাত নিরীহ বা নগন্য এই ক্ষুদ্র চিহ্নগুলি ক্ষেত্রবিশেষে খুব শক্তিশালী ভূমিকা গ্রহণ করে। এগুলো যদি উপযুক্তস্থানে ব্যবহার করা না হয় তবে অর্থের এক অনর্থ ঘটে যাবে। এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে কিছু সংখ্যক নমুনা হাজির করবো যা আমার এই বক্তব্যকে সমর্থন করবে।

      লেখার ক্ষেত্রে ছেদযতি চিহ্ন বা বিরাম চিহ্ন, ইংরাজিতে যাকে punctuation বলে, অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো ভালো লেখক/লেখিকার মধ্যে এই ছেদযতি চিহ্নের নিপুণ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তাদের সেই অনুভূতি তখন অক্ষরের মধ্য দিয়ে পাঠক/পাঠিকার অন্তরে প্রবেশ করে। এতে উভয়পক্ষ উপকৃত হন ও উভয়ের উদ্দেশ্য সফল হয়।

      সীমিত কিছু হাস্যকর বা আনন্দদায়ক বাক্য নিয়ে নিচে আলোচনা করবো। এরকমই অনেক কথাবার্তা আমরা মুখে মুখেও বলে থাকি যা হাসির কারণ হয়। সুতরাং এখন শুরু করি :


দৃশ্য / ১

কোনো এক রোগী বহুবিধ শারীরিক পীড়ায় কাহিল হয়ে শেষ মূহুর্তে এক অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। রোগীর কণ্ঠ তখন ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। তাকে জিজ্ঞাসা করে কিছু বোঝার উপায় নেই। ডাক্তারবাবু একখানা সাদা কাগজ ও কলম বাড়িয়ে দিলেন। বললেন, "অসুবিধাগুলো লেখো।"

রোগী যা লিখলো, এখানে তুলে ধরলাম :

ঢেঁকুর জ্বর, হেঁচকি বাত, কানে টন টন গ্যাস, হাইপ্রেসার চুলকানি, পাঁচড়া বমি, হাইতোলা খুস্কি, চুলওঠা কাশি, পা-ফুলো সর্দি, পাতলা পায়খানা খেতে অরুচি..ইত্যাদি.. 

এই সকল অদ্ভুত অসুখের নাম দেখে ডাক্তারবাবু বেশ ঘাবড়ে গিয়ে ঘামতে শুরু করলেন। ডাক্তারবাবুর নিজের শরীর তখন খারাপ লাগতে শুরু করেছে। জীবনে বহু রোগী চিকিৎসা করেছেন কিন্তু এমন সব রোগের নাম শোনেননি। মাথা চুলকাতে লাগলেন। অতঃপর একসময় ইউরেকা বলে চেঁচিয়ে উঠলেন। রোগী নিজে এবার ঘাবড়ে গেলো। ডাক্তারবাবু রোগীকে বললেন, “আপনার আরো একটি রোগ আছে, ওটা আমি নিজে থেকে লিখে নিচ্ছি, 'কমা বিভ্রাট' রোগ।"

রোগীর লেখা আসলে এরূপ হবে :

ঢেঁকুর, জ্বর, হেঁচকি, বাত, কানে টনটন, গ্যাস, হাইপ্রেসার, চুলকানি, পাঁচড়া, বমি, হাইতোলা, খুস্কি, চুলওঠা, কাশি, পা-ফুলো, সর্দি, পাতলা পায়খানা, খেতে অরুচি..

ডাক্তারবাবু তাকে একটা প্রশ্ন করলেন, "আপনার শরীরের কোন্ অংশে কোনো অসুখ নেই বলে মনে হচ্ছে?"

একথা শুনে রোগী চুপ করে রইলো।


দৃশ্য / ২

একটা ওয়ানওয়ে রাস্তার ক্রশিংয়ের কাছে একটা ট্রাফিক বোর্ড ঝোলানো ছিলো। তাতে লেখা ছিলো, "U–টার্ণ নেবেন না"। এসময় যানবাহন ঠিকঠাক চলছিলো, কোনো অসুবিধা হয়নি। এরপর একসময় বোর্ডটি পাল্টানোর প্রয়োজন হলে একটা নতুন বোর্ড লাগানো হলো। তাতে লেখা আছে, "U–টার্ণ নেবেন না?" অভ্যাসবশতঃ কেউ কেউ গাড়ি নিয়ে সোজা বেরিয়ে গেলো। কিন্তু অতি উৎসাহী ও ভাষা-সচেতন কেউ কেউ যখনই U–টার্ণ নিয়ে থাকে, গাড়িতে ধাক্কা খায়। দুর্ঘটনা বেড়ে গেলে ট্রাফিক বিভাগ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। হঠাৎ করে কয়দিনে দুর্ঘটনা এতো বেড়ে গেলো কিভাবে!

     ভালোভাবে তদন্ত করার পর তাদের নজরে এলো, এটা ট্রাফিক-বোর্ডে থাকা একটা "?" চিহ্ন, যার জন্য এই মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।


দৃশ্য / ৩

বাজারের কাছে ঝকঝকে তকতকে একটি গৃহকাঠামো।

বাইরে শুধুমাত্র একটি বিজ্ঞাপন টাঙানো। তাতে লেখা আছে :–


“এদিকে আসুন হাত-পা খোঁড়া বয়স্ক গর্ভবতী শিশুর জন্য শৌচাগার (toilet) পাবেন।”

এর ঠিক নিচে লেখা আছে :–

"এখানে কেনাকাটা করার জন্য ধন্যবাদ!”

      এধরনের লেখা পড়ে যে কেউ বিব্রত বোধ করবেন। আসল ব্যাপারটা হলো, এটা একটা টয়লেট সরঞ্জাম বিক্রির দোকান। লেখাটা হওয়া উচিত ছিলো :–

                 " এদিকে আসুন–

                  হাত-পা খোঁড়া,

                     বয়স্ক,

                    গর্ভবতী,

                   শিশুর জন্য

              শৌচাগার (toilet) পাবেন।

        এখানে কেনাকাটা করার জন্য ধন্যবাদ।”


দৃশ্য / ৪

এক ওয়েবসাইটে সম্প্রতি নজরে এসেছে একটি চিঠি। সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত করে পরিবেশন করলাম।

ছোটভাই মা'কে লিখছে :

"দাদা একটি ছটফটে গরু। দেখে এসেছে মামা, সঙ্গে ছিলো ভাবী। গরুটা পছন্দ করেছে কালো রঙের শাড়ি। পরে ছোট বোন এখানে এসেছে। সবাই যত্ন নেয় তাই প্রতিদিন ৫ লিটার দুধ দেয় ভাবী। আগামী হপ্তায় মায়ের কাছে যাবে গরুটা। এখন ঘাস না পেয়ে খড় চিবাচ্ছে সবাই। দেশবাড়ীতে আছে তারা।”

এমনই হাস্যকর কিছু হয় যখন যতিচিহ্ন দৌড়ে গিয়ে ইচ্ছামতো দাঁড়ায়।

প্রকৃতপক্ষে হওয়া উচিত :

"দাদা একটি ছটফটে গরু দেখে এসেছে। মামা, সঙ্গে ছিলো। ভাবী গরুটা পছন্দ করেছে। কালো রঙের শাড়ি পরে ছোট বোন এখানে এসেছে। সবাই যত্ন নেয় তাই প্রতিদিন ৫ লিটার দুধ দেয়। ভাবী আগামী হপ্তায় মায়ের কাছে যাবে। গরুটা এখন ঘাস না পেয়ে খড় চিবাচ্ছে। সবাই দেশবাড়ীতে আছে তারা।”


দৃশ্য / ৫

এক অধ্যাপক ক্লাস নিচ্ছেন। ক্লাসের প্রয়োজনে শেষের দিকে তিনি একটি লাইন বোর্ডে লিখলেন। এরপর ক্লাস শেষ হয়ে গেলো, তিনি চলে গেলেন। লাইনটি বোর্ডে থেকে গেলো।

তিনি লিখেছিলেন :

"নারী নিজের পুরুষ ছাড়া কিছু হতে পারে না”

বোর্ডের ঐ লেখাকে কয়েকটি ছাত্র ঘুরিয়ে দিলো :

"নারী, নিজের পুরুষ ছাড়া– কিছু হতে পারে না।”

কয়েকটি ছাত্রী এসে বোর্ডের এখনকার লেখাকে আবারও ঘুরিয়ে দিলো :

"নারী নিজের.. পুরুষ ছাড়া.. কিছু – হতে পারে না!!”


দৃশ্য / ৬

একটি অস্বস্তিকর বাক্য সৃষ্টি হয়েছিলো একটিমাত্র ছেদচিহ্নের কারণে।

লেখাটি ছিলো :

"মসজিদের ইমাম সাহেব একটি কুকুর। তাড়ানোর কারণে সবাই একসঙ্গে একপাশে সরে দাঁড়ালো।”

এটি মারাত্মক কথা!

আসলে ভুল সংশোধন করলে হয় :

"মসজিদের ইমাম সাহেব একটি কুকুর তাড়ানোর কারণে সবাই একসঙ্গে একপাশে সরে দাঁড়ালো।”


দৃশ্য / ৭

বানান বিভ্রাটের একটা উদাহরণ দিই। এটা কখনো হাস্যকর কখনো বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়।

বিভিন্নস্থানে দেওয়াল লিখন চোখে পড়ে। বেশিরভাগ লিখনে থাকে রাজনৈতিক বার্তা। কোথাও মনীষী বাণী। কোথাও উপদেশ। কোথাও ছবি।

এমনই এক দেওয়ালে লেখা আছে :

"দেশের মানুষের বালভাসায় সমাজের উন্নতি হয়।”

এখানে একটি শব্দের বানান ভুল আছে। লেখাটি সঠিক করলে হয় :

"দেশের মানুষের ভালবাসায় সমাজের উন্নতি হয়।”


দৃশ্য / ৮

মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় এক জায়গায় একটি পোষ্টার দেখে কয়েকজন তরুণ দাঁড়িয়ে পড়লো। পোষ্টারে লেখা আছে :

"ভাইদের কাছে আবেদন, সালাত (নামাজ) কাইউম করুন।”

কাইউম একটি মুসলিম নামকে বোঝায়। যেমন, আব্দুল কাইউম। লেখাটি পড়ে একজন দর্শক মন্তব্য করলো :

"কাইউম একা শুধু নামাজ পড়লে অন্যেরা কি করবে?”

বানান ভুলের জন্য শব্দার্থ পাল্টে গেছে। এক্ষেত্রে 'কাইউম' এর স্থলে 'কায়েম' শব্দটি হবে। যার অর্থ মজবুত বা দৃঢ়।

" ভাইদের কাছে আবেদন সালাত (নামাজ) কায়েম করুন।”


দৃশ্য / ৯

ছোট মতো একটা স্টলের গায়ে কাঠ-রঙ দিয়ে হাতে লেখা :

"এখানে খাঁটি গরুর দুধের চা, কফি, সিগারেট, পাওয়া যায়।”... গরুর দুধের সিগারেট.. এটা কেমন জিনিস? তাছাড়া খাঁটি গরু ছাড়া অন্য কি গরু থাকতে পারে!

লেখাটি হওয়া উচিত :

"এখানে গরুর খাঁটি দুধের চা, কফি এবং সিগারেট পাওয়া যায়।


দৃশ্য / ১০

সবে নতুন তৈরি হওয়া এক দোকানের সামনে একটা কাগজ সাঁটা আছে। তাতে কাঁচা হাতে লেখা আছে :

"সবাই আসবেন, 'আগামীকাল শুভ উদ্ধোধন হইবে'।”

এমন লিখলে বাংলা ভাষা লজ্জা পাবে। একটি বানান ভুল। 

সঠিক বানানসহ লেখা হবে :

" সবাই আসবেন, আগামীকাল শুভ উদ্বোধন হইবে।” 


দৃশ্য / ১১

কফি-শপের দেওয়ালে নোটিশ :

"চেয়ার টেবিলগুলো শুধু খাওয়ার জন্য, বসে গল্প করার জন্য নয়।”


দৃশ্য / ১২

বাড়ির গেটের বাইরে লেখা–

"শুনুন কুকুর দরজা আস্তে খুলুন।”

দরজা খোলার আগেই যদি এমন খটকা লাগে তবে কে খুলতে চাইবে!

লেখা এইভাবে লেখা উচিত :

                    শুনুন,

                    কুকুর!

               দরজা আস্তে খুলুন।


শেষ দৃশ্য : ১৩

দুই ভদ্রলোক.. আমি দু'জনকে ভদ্রলোক বলেই জানি। দু'জন দুই রঙের জামা ব্যবহার করেন। দু'টো বিপরীতমুখী ভিন্নদলের হয়ে রাজনীতি করেন। দু'জনের মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ।

এক রাজনীতির নেতার ছেলে অপর নেতার মেয়েকে ভীষণ বিরক্ত করে। বাধ্য হয়ে মেয়ের পিতা এক চরমপত্র লিখলেন ছেলের পিতাকে।

হুঁশিয়ারি পত্রের কিয়দংশ তুলে দিচ্ছি, পড়ুন :

"আপনি একটি অবাধ্য গাধা। যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তবে পরিস্থিতি ঘোরালো হবে। আমার মেয়ে তাকে পছন্দ করতো। না বলে সে আসতো না আগে। আমার মতো গাধা। মনে করে তাকে আপনিও স্বীকার করে নেবেন। আবার যেন এখানে আসে। না এলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বহু রাজনৈতিক ব্যক্তির শিক্ষার মান বা শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে সকলে কিছু কিছু অবগত আছেন। যাদের হাতে দেশ ও দেশজ সকল মানুষের বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবনযাত্রা পরিচালিত হয় তাদের দক্ষ ও গুণী না হলে সিষ্টেম ভেঙে পড়ে। রাজনীতির প্যাঁচ আর সুশিক্ষার প্যাঁচ, দু'টোর পার্থক্য আছে।

তিনি যা লিখতে চেয়েছিলেন এবার তা উল্লেখ করলাম :

আপনি একটি অবাধ্য গাধা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তবে পরিস্থিতি ঘোরালো হবে। আমার মেয়ে তাকে পছন্দ করতো না বলে, সেও আসতো না আগে। আমার মতো.. গাধা মনে করে তাকে আপনিও স্বীকার করে নেবেন.. আবার যেন এখানে আসে না। এলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

               <><><><><><><><>

ভুল বানান ও অপরিণামদর্শী বিরাম চিহ্নের কিছু ধারণা এতক্ষণ উল্লেখ করেছি। তবে এই ধারাবাহিক স্রোতকে আমি, আপনি কেউই রুখতে পারবোনা। এটা যার যার অর্জিত জ্ঞান ও শিক্ষা তাকে চালিত করে। লেখার কাজে যিনি যুক্ত আছেন তিনি লিখবেন, পড়ার কাজে যিনি অগ্রসর হবেন তিনি পড়বেন। পাঠ্য বিষয় যথাবিহিত বিবেক ও অনুভূতিতে সাড়া জাগাবে। সেসব নিয়ে আমরা ভাববো, দুঃখ পাবো, উৎসাহ পাবো, আনন্দিত হবো কিংবা হেসে উঠবো।


        || এবার রণে ভঙ্গ দিলাম ||

      🎯 এবার সিরিজের ৩য় পর্ব পড়ুন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy