হালদার বাগান
হালদার বাগান


শীতের মরশুমে চড়ুইভাতির মজাই আলাদা। এই চড়ুইভাতির কথা উঠলেই মনটা কেমন যেন উরু উরু করে।আমাদের বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম আগামী 25 শে ডিসেম্বর একটা জমিয়ে চড়ুইভাতি করবো। আমাদের মূল উদ্যোক্তা অরিত্র ও আমি। আমরা ঠিক করলাম এবারেরটা হালদার বাগানেই সম্পন্ন করবো। এই হালদার বাগান সম্পর্কে বিভিন্ন আজগুবি কথা শুনেছিলাম ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু কোনোদিন সেখানে যাওয়া হয় নি। মনে মনে একটা ভীতি থাকলেও কোথাও যেনো একটা রোমাঞ্চ অনুভব করলাম। সেই মত আমরা সবাই মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম। আগের দিন রাতের মধ্যে আমরা সমস্ত গোছগাছ করে ফেললাম। পরের দিন ঠিক সকাল 7 টায় আমরা হালদার বাগানের উদ্দেশ্যে রওনা দেব। এদিকে একটু রাত হয়ে গেলো অরিত্রর বাড়ী থেকে আমার বাড়িতে ফিরতে ।
একটা জনমানব শূন্য অঞ্চল পেরিয়ে আর একটা নির্জন অঞ্চলের দিকে ধীরে ধীরে আমাদের গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে। মৃত্তিকাময় প্রশস্ত পথের দুধারে সারি সারি গাছপালার সমাহার। হালদার বাগান পৌঁছে যেনো একটা অদ্ভুত নির্জনতা গ্রাস করলো আমাকে। বাগানের রাস্তাটা এমন অদ্ভুত যেনো দিনের বেলাতেও সেখানে কোনো রকম সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে না বললেই চলে। ওপর দিকে তাকিয়ে দেখি, দুই ধারের প্রকান্ড বাঁশ গাছের পাতা দিয়ে যেনো ঐ ছায়াময় রাস্তাটাকে আবৃত করে রেখেছে। কিছুদূর এগোতেই এক সাদা কাপড় পরিহিতা ঘোমটা টানা এক থুড়থুড়ে বুড়ি এসে বললেন "এখানে কেনো তোরা এসেছিস? তোদের সবাইকে বারণ করা সত্ত্বেও কেনো আসিস?" আমি হতবাক হয়ে তাকে দেখার চেষ্টা করলাম কিন্তু তাকে ঠিক মত দেখতে পারলাম না। সামনে একটু এগিয়েই দেখলাম একটা বড়ো পুকুর আর ঠিক পাশেই আছে একটা ভগ্নদশা সম্পন্ন এক বাড়ী। কিন্তু এই বাড়িতে কস্মিনকালেও কেউ এসেছে বলে মনে হয় না। একটা অবাক কাণ্ড লক্ষ্য করলাম, যতই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ততই মনে হচ্ছে আমার পা দুটো খুব ক্লান্ত হয়ে পরছে। আর যেনো সামনের দিকে এগোতে পারবে না। খুব সাহস করে বাড়ীর মূল ফটকের সামনে যেতেই দেখি দরজার এক পাল্লা ভাঙ্গা। তবে ভিতরের থেকে কিসব গুনগুন করে শব্দ আসছে বলে মনে হলো। উৎসাহ বশে সেদিকে দেখার চেষ্টা করতে যাবো এমন সময় পুকুরের থেকে এক জোড়ে শব্দ এলো, যেনো কেউ দৌড়ে এসে জলে ঝাঁপ দিল বলে মনে হলো। কিন্তু অবাক কাণ্ড সেখানেও কাউকে দেখতে পেলাম না। কৌতুহল নিয়ে ওই দরজার ভিতর প্রবেশ করতেই বিপত্তি, হঠাৎ কিসের যেনো ঝাপটা আমার দিকে এগিয়ে এলো। তাকিয়ে দেখি একটা কালো রঙের পাখি দরজা দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলো। আমার তখন অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণের মাত্রা অনেকগুণ বেড়ে গেছে।
এমন সময় আমার ঘাড়ে একটা হাত এসে পড়লো। আর আমি শুনতে পেলাম -"তাড়াতাড়ি ওঠ ভাই, কিরে ৭টা বেজে গেছে রে।সবাই বাইরে তোর জন্য অপেক্ষা করে আছে।" তাকিয়ে দেখলাম অরিত্র আমাকে ডাকছে আর আমি আমার অসারদেহ নিয়ে বিছানাতে পরে আছি।