প্রেমের ফাঁদে
প্রেমের ফাঁদে


সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ফেসবুকে ঢুকলাম। ঢুকেই দেখলাম আমার সাথে এক আজব কান্ড ঘটে গেছে। নীল পরী নামে আমার এক ফেসবুক বান্ধবি। তার দেয়া পোস্ট এ দেখলাম সে আমার সাথে রেলেশনশিপে আছে। একলাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে গেলাম।
নীল পরী এটা ছদ্মনাম। তার আসল নাম মোহিনী গোস্বামী।
গত কয়েকদিন যাবৎ তার সাথে আমার মোটামুটি একটা ভালো বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। কিন্তু তারই মাঝে সে যে আমায় ভালোবেসে যাচ্ছিলো কে জানত তা।
চিন্তা করলাম হাই, হ্যালো না বলে সরাসরি জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়।জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আমাকে ভালো করে চেনেন না জানেন না হঠাৎ কেনো এমন পোস্ট?
নীল পরী-কে বলেছে? আমি আপনাকে ভালো করে চিনি না জানি না।
সে কবে থেকে যে আমি আপনাকে......., জানলে একদম চমকে যাবেন।
আমি-অবাক হওয়া ইমো দিলাম।
কবে থেকে শুনি ?
নীল পরী-আপনাকে আমি ফেসবুকে ...... না থাক আজ বলছি না। পরে কোন একদিন কফি শপ এ কফি পান করতে করতে বলবো।
আমি-মেয়েটার মেসেজ পড়ে খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম। খুশীতে মনটা ছুঁই ছুঁই করছিলো। তারপর জিজ্ঞেস করলাম।
আপনি কী আমার সাথে সত্যিই রিলেশন রাখতে চান?
নীল পরী- হ্যাঁ, সে কবে থেকে কথাটা বলবো বলবো ভেবে যাচ্ছিলাম, কিন্তু কখনো সাহস পাইনি বলতে, তাই আজ সরাসরি পোস্ট করে দিলাম। আপনাকে না জানিয়ে পোস্ট করেছি কিছু মনে করেন নি তো?
আমি-মেয়েটার মেসেজ এ লজ্জা পেলাম। রিপ্লাই দিলাম মনে করার কী আছে?
লাভ ইমো পাঠিয়ে বললাম, কবে থেকে আমায় ভালোবেসে যাচ্ছেন?
নীল পরী-সে অনেক...।
না থাক, আজ বলবো না, লজ্জা লাগে আমার। কোন একদিন চা পান করতে করতে বলবো।
আমি-হাসির ইমো, ঠিক আছে, আপনি যেটা ভালো মনে করেন।এভাবেই পুরোটা দিন মেসেজ করতে করতে কাটিয়ে দিলাম। মনটা আজ ভীষন আনন্দিত এই ভেবে যে কখনো ভাবিনি আমার কপালেও একদিন গার্লফ্রেন্ড জুটবে।
ডিনার সেরে আবার ইনবক্সে গেলাম।
কোন রিপ্লাই পেলাম না। মনে হয় কাজে ব্যস্ত তাই আর বিরক্ত করলাম না।অপেক্ষা করে যাচ্ছিলাম। প্রায়ই ঘন্টাখানেক অপেক্ষারত আছি।
তার মাঝে হঠাৎ রিপ্লাই আসলো, বাবা ভীষন অসুস্হ, হসপিটালে নিয়ে এসেছি।তাই রিপ্লাই দিতে পারিনি। কিছু মনে করো না।
আমি-ছিঃ ছিঃ এটা কি বলছো?
তোমার বাবা মানে এখন আমারও বাবা।কোন হেল্প লাগবে? কোন হসপিটালে আছো?
আমি আসবো?
নীল পরী- না না, আসতে হবে না।
আমি- দুঃখের ইমো,,,, টাকা পয়সা আছে তো?
নীল পরী-ওটা আমি ম্যানেজ করে নেব।
আমি-ম্যানেজ করে নেব মানে?
নীল পরী-............. কোন রিপ্লাই নেই।
আমি- এক্ষুণি একটা paytm
একাউন্ট নাম্বার দাও।
নীল পরী- বলছি তো লাগবে না। ওটা আমি ম্যানেজ করে নিবো।
আমি-নাম্বার না দিলে কিন্তু আমি তোমার সাথে আর কথা বলবো না। উনি তোমার বাবা মানে আমারও বাবা, ওনার প্রতি আমারও একটা কর্তব্য আছে তো।ওটা পূরণ করতে দাও?
নীল পরী-আচ্ছা বাবা দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর, মেসেজ আসলো
এই নাও নাম্বার 6291....... তুমি রাগ করেছো বলেই বাধ্য হয়ে দিয়েছি।
আমি-নাম্বার পেয়ে সাথে সাথে আমার paytm অ্যাকাউন্ট থেকে পাঠিয়ে দিলাম পাঁচ হাজার টাকা। মেসেজ করলাম বাবার চিকিৎসা খরচে এই সামান্য টাকা দিয়ে অংশীদার হলাম।টাকা পেয়েছো কি না জানাও আমাকে।
নীল পরী--লাভ ইমো,হ্যাঁ পেয়েছি।
ডাক্তার আসছে এখন।
আচ্ছা তুমি এখন ঘুমিয়ে পরো। অনেক রাত হয়েছে। কাল কথা হবে। বাবার জন্য ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা কোরো।
আমি -আচ্ছা ঠিক আছে, বলেই চলে গেলাম ঘুমাতে।
সকালে ঘুম ভাঙতেই তাড়াতাড়ি করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলাম। ঢুকেই দেখি নীল পরী স্ট্যাটাস।লিখাটা পড়েই থমকে গেলাম।
চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না।বিছানার এপাশ ওপাশ কাতরাচ্ছি।
স্ট্যাটাস এ লেখা আছে-
(দীর্ঘ ২৪ঘন্টা পর আইডি ফিরে পেলাম।গতকাল কেউ একজন আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেছিলো। অনেকের কাছ থেকে মিথ্যা রিলেশনের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলো।এর জন্য আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।)
মা আমার কান্নার আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো। কি হয়েছে খোকা? কাঁদছিস কেন?
মাকে বললাম, কিছু হয়নি মা, একটা ভয়ানক দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম।