Tandra Majumder Nath

Tragedy Classics

3  

Tandra Majumder Nath

Tragedy Classics

গুড়িয়ার জন্মদিন

গুড়িয়ার জন্মদিন

4 mins
544


-মিস্টার দত্তা... 

-ইয়েস স্যার

-আপকে লিয়ে ঘর সে ফোন হ্যায়, যাইয়ে বাত কর লিজিয়ে

-ইয়েস স্যার

বাড়ি থেকে ফোন...! মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে ওঠে মিস্টার দত্ত মানে বীর জওয়ান রঞ্জন দত্তের।

অনেকদিন বাড়ির কারও সাথে কথা হয়নি।

রিসিভারটা তুলে কানে লাগাতেই শুনতে পেল,

-পাপা 

রঞ্জনের চোখ দুটি ছলছল করে ওঠে।

আবারও ওপাশ থেকে মৃদুস্বর ভেসে আসে,

-পাপা

-হ্যাঁ মা বলো, সোনা টা

-তুমি কেমন আছো পাপা।

-খুব ভালো সোনা, তুমি কেমন আছো...? 

-একদম ভালো নেই।

অভিমানের সুরে বলে ওঠে জওয়ান রঞ্জনের বছর পাঁচেকের মেয়েটি।

-কেন...? কি হয়েছে আমার সোনার?

-তোমাকে কতদিন দেখিনি। কতদিন কথা হয়নি তোমার সাথে।

-সেই জন্য অভিমান হয়েছে বুঝি।

- হুম, তাই রাগ করেছি।

-এখন তো কথা বলছি, এখন আর অভিমান নেই তো। 

-না এখনো অভিমান আছে।

-কি করলে আমার সোনা মায়ের রাগ ভাঙবে শুনি।

-আমি যা বলবো তুমি তাই করবে....? তবে রাগ ভাঙবে আমার।

-নিশ্চই করবো। একবার বলে তো দ্যাখো। তোমার পাপা একদম সুপার ম্যান। 

-হুহ, মিথ্যে কথা

-কি মিথ্যে বলছি আমি, আমার সোনা মায়ের জন্য আমি সব করতে পারি।

-মোটেই না। তুমি কথা দিয়ে কথা রাখো না।

-আচ্ছা বেশ বলো কি করতে হবে আমাকে।

-তার আগে বলোতো আর সাতদিন পরে কত তারিখ...? 

- মমমম আর সাত দিন পরে ১৪ তারিখ। একটু ভেবে নিয়ে উত্তর দেয় রঞ্জন।

-বলোতো সেদিন কি....?

-সেদিন সেদিন সেদিন আমার সোনা মায়ের জন্মদিন। তাই না...?

-একদম তাই, তো তুমি আমার জন্মদিনে এবছর আসবে তো...? 

-নিশ্চই আসবো।

-মিথ্যে কথা, তুমি আগের বছরও ছিলে না আমার জন্মদিনে।

-এবার নিশ্চই থাকবো।

-সত্যি...! উচ্ছ্বসিত হয়ে জিজ্ঞেস করে বছর পাঁচেকের মেয়েটি।

-সত্যি সত্যি সত্যি তিন সত্যি।

-আর কি গিফট দেবে তুমি আমায়....?

-আমার পরিটার জন্মদিনে কি চাই শুনি...?

-বার্বি ডল, কথা বলা বার্বি ডল চাই আমার। 

-আচ্ছা ঠিক আছে, তাই হবে।

গুড়িয়া তুমি তো অনেকক্ষণ কথা বললে এবার আমি একটু পাপার সাথে কথা বলি। পাশ থেকে বিশাখা বলে ওঠে।

-হ্যালো

-কেমন আছো..?

-তুমি ছাড়া যে ভালো লাগে না। অপেক্ষা করি তুমি কবে আসবে। আধবোজা গলায় বলে ওঠে বিশাখা।

-আমারও কি আর তোমাকে ছেড়ে গুড়িয়া কে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে...? কিন্তু দেশ মা কে যে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছি, আমাকে আমার কর্তব্য তো করতেই হবে।

- হুম, জানি। তবে গুড়িয়া কে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিলে কেন?

কেন বললে তুমি ওর জন্মদিনে আসছো..?

-গুড়িয়া কে মিথ্যে বলি কি করে, সত্যিই আমি এবার আসছি।

-আমাকে মিথ্যে বলে কি লাভ..?

আমি তো গুড়িয়া নই যে আমাকে ভোলাতে হবে।

-মিথ্যে নয় বিশাখা আমি আসছি। আমি যেখানে আছি সেখানকার পরিস্থিতি আপাতত ঠিক আছে। গতকাল রাতে ঘুম হয়নি সারারাত সীমান্তে ছিলাম। 

-তুমি তাহলে আসছো...?  

-হ্যাঁ, আসছি। 

-প্রমিস করছো তো...?

-তুমিও তো গুড়িয়ার মত কথা বলছো। মৃদু হাসে রঞ্জন।

-বলো না প্রমিস..?

-প্রমিস প্রমিস প্রমিস।

-গুড়িয়া বার বার তোমার কথা জিজ্ঞেস করে?

যা দস্যি মেয়ে, কে সামলাবে ওকে? 

-তুমি তো আছো। গুড়িয়া কে দেশ মায়ের গল্প বোলো। ওকে বোলো আমি যে দেশ মাকে রক্ষা করার প্রমিস করেছি। সেটাও যে আমার রাখার দায়িত্ব। 

আচ্ছা রাখছি, কাল জানিনা উদিত সূর্যের মুখ দেখতে পাব কি না। 

-ছিঃ অমন কথা বলতে নেই। আমি ভগবানের কাছে প্রতিদিন তোমার জন্য প্রার্থনা করি। 

-কারণ এই কদিন আমি সীমান্তেই প্রহরারত থাকবো। তাই আর হয়তো কথা হবে না। আমি একেবারে গুড়িয়ার জন্মদিন আসবো।রাখছি এখন।নিিিজের খেয়াল রেখো।


-ঠিক আছে, আমি তোমার আসার অপেক্ষা করবো।

কয়েকদিন পর...

আজ ১৪ তারিখ, গুড়িয়ার জন্মদিন।

গুড়িয়া আজ একটা গোলাপি রঙের গাউন ফ্রক পড়েছে। মাথায় হেয়ার ব্যান্ড। মনটা আজ তার বেজায় খুশি, কারণ তার প্রিয় মানুষ তার পাপা আজ তার জন্মদিনে আসছে। 

সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চললো বাড়ির ব্যালকনিতে অপেক্ষা করছে গুড়িয়া তার পাপার বাড়ি ফেরার জন্য। পাপার গাড়ি দূর থেকে দেখতে পেলে তবেই সে আজ নীচে নামবে।

নীচে মা, ঠাম্মি, দাদু কি করছে গুড়িয়ার সেসব কোন খোজ নেই।

সন্ধ্যে পেরিয়ে যেতে চললো গুড়িয়া শেষে অধৈর্য্য হয়ে পড়ে। 

মনে মনে ভাবতে থাকে, পাপা কি তবে এবারও আসবে না। এবারও প্রমিস করে কথা রাখলো না, একথা ভাবতেই চোখ দুটি ভিজে আসতে থাকে গুড়িয়ার।

এবারে আর নিজেকে সামলাতে না পারে ডুকরে কেঁদে ওঠে গুড়িয়া।

কিছুক্ষণ পর গুড়িয়া  গাড়ির হর্ণের আওয়াজ শুনতে পায়, ব্যালকনির সামনে গিয়ে আবার দাড়িয়ে দেখে হ্যাঁ সত্যিই একটি গাড়ি আসছে তার বাড়ির দিকে।

এবারে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে গুড়িয়া।

চিৎকার করে বলে ওঠে -পাপা আসছে,   

মা পাপা এসে গেছে, পাপা এসে গেছে বলতে বলতে সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসে গুড়িয়া।

মা কোথায় তুমি, কেক টা নিয়ে এসো পাপা এসে গেছে।

দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় গুড়িয়া, তার পাপা কে নিয়ে আসার জন্য। 

প্রমিসটা সত্যিই রঞ্জন রেখেছিল, এসেছিল গুড়িয়ার জন্মদিনে।

সে এসেছিল বিশাখাকে করা প্রমিস রাখতে, 

কিন্তু কফিন বন্দী হয়ে।

অন্য এক অফিসার এসে বিশাখাকে জানায়, 

বীর জওয়ান রঞ্জন দত্ত আজই বাড়ি ফিরতেন, কিন্তু হঠাৎই সীমান্তে গুলিবর্ষণ হতে থাকে, আর সেখানে শহিদ হয়ে যান তিনি। উনি কোন কিছু অর্ডার করেছিলেন অনলাইনে, বলেই একটি সুন্দর মোড়কে ঢাকা বাক্স এগিয়ে দেয় বিশাখার দিকে,

গুড়িয়া ছুট্টে গিয়ে সেই বাক্স নিয়ে নেয়,

মোড়কে ঢাকা বাক্স টা খুলেই দেখতে পায় একটা সুন্দর বার্বি ডল, হাতের ছোয়া পেতেই বার্বি ডল একা একা বলতে শুরু করে,

হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ

হ্যাপি বার্থডে টু ইউ

হ্যাপি বার্থ ডে মাই সুইট হার্ট গুড়িয়া  

হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy